শনিবার, ২০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২রা রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

মাদরাসায় জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া বাধ্যতামূলক ; কিছু ব্যাথা , কিছু কথা – সাখাওয়াত রাজি


মাদরাসায় জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া বাধ্যতামূলক না করার নির্দেশেনা চেয়ে যে রিট করা হযেছিল সেটি খারিজ করে দিয়েছে হাইকোর্ট। আমি মনে করি বিষয়টি অতি স্বাভাবিক। যা হবার তাই হয়েছে। ব্যতিক্রম হয়নি। বরং করুণা হচ্ছে রিটকারীদের উপর। তারা বাংলাদেশে বসবাস করেও বাংলাদেশের আইন আদালত কীভাবে চলে খোঁজ-খবর রাখে না। আদালতের বিরুদ্ধে লাঠি মিছিল, আদালত ভাঙচুর, বিচারপতিদের হেনস্থার ঘটনা যে দেশে সহজেই ঘটে, আবেগের বশবর্তী হয়ে স্পর্শকাতর বিষয়ে সে দেশের আদালতের শরণাপন্ন হওয়া বোকামি ছাড়া আর কিছুই না। এ বিষয়ে কয়েকটি কথা না বললেই নয়।

Default Ad Content Here


১) মাদরাসায় জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে নির্বাহী বিভাগ থেকে। এ সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হলে নির্বাহী বিভাগের দ্বারস্থ হতে হবে। প্রয়োজনে আন্দোলন করতে হবে। আদালতে মামলা চললেও মাঠে সংগ্রাম অব্যাহত না রাখলে রেজাল্ট আসবে না।


২) কোন বিষয় জাতীয় হলেই সেটিকে বাধ্যতামূলক করতে হবে কেন? বাংলাদেশে অনেক জাতীয় বিষয় আছে; কিন্তু সেগুলো বাধ্যতামূলক নয়। যেমন জাতীয় পোশাক পায়জামা-পাঞ্জাবি, অথচ বাংলাদেশের মানুষের জন্য তা পরিধান করা বাধ্যতামূলক নয়। জাতীয় মাছ ইলিশ, জাতীয় ফল কাঁঠাল, জাতীয় ফুল শাপলা কোনটার ব্যাপারেই বাধ্যবাধকতা নেই।


৩) মনে রাখতে হবে, জাতীয় সংগীত নিয়ে বিতর্ক শুধু বাংলাদেশে নয়; পৃথিবীর অনেক দেশেই এ নিয়ে বিতর্ক হয়েছে, হচ্ছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও এ নিয়ে বিতর্ক আছে। আর যেখানে সংবিধান পরিবর্তন করা যায় সেখানে জাতীয় সংগীত পরিবর্তন করলে সমস্যা কোথায়? এছাড়া তালাশ করলে দেখা যায়, পৃথিবীর প্রায় চল্লিশ দেশের জাতীয় সংগীত নেই। জার্মানি রাশিয়া ইরাকসহ নয়টি দেশ তাদের জাতীয় সংগীত পরিবর্তন করেছে। বাংলাদেশে এ নিয়ে বাড়াবাড়ি কেন?


৪) কোন জাতীয় বিষয় নির্ধারণে দেশের মানুষের বিশ্বাস ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রতি অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। আমরা মনে করি বর্তমান জাতীয় সংগীত নির্ধারণে এদেশের মানুষের বিশ্বাস ইতিহাস ঐতিহ্যের প্রতি খেয়াল রাখা হয়নি। সে কারণেই সচেতন সমাজ এবং আলেম-ওলামারা বর্তমান জাতীয় সংগীতকে জাতীয় সংগীত হিসাবে মানতে নারাজ।


৫) রিট খারিজ করতে গিয়ে বিচারপতিদের মন্তব্য আমাকে অবাক করেছে। তারা জানতে চেয়েছেন কোরআনে জাতীয় সংগীত না গাওয়ার কথা আছে কিনা। আরে! শরীয়তের দলীল তো চারটি। সব বিষয় কোরআনে থাকতে হবে কেন? এমন প্রশ্ন কতটা অজ্ঞতাপ্রসূত!
আর তারা কোরআন মানছেন কোথায়? কোরআন তো বলছে- যারা আল্লাহর কোরআন তথা আল্লাহর বিধান অনুযায়ী ফয়সালা না দেয় তারা ফাসেক, তারা জালেম, তারা কাফের। অথচ তারা কোরআনের বিধান অনুযায়ী বিচারকার্য পরিচালনা করছেন না।


৬) তারা আরো বলেছেন, ইসলাম নাকি দিন দিন উন্নত হচ্ছে। এর মানে কি? ইসলাম কখনো অনুন্নত ছিল নাকি? তাদের এ বক্তব্য কীসের ইংগিত বহন করে? তারা কি ইসলামকে মনগড়া রুপ দিতে চান?

লেখকঃ মুফতি সাখাওয়াত হোসেন রাজি

Archives

October 2024
S S M T W T F
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031