শুক্রবার, ২৪শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ই শাবান, ১৪৪৬ হিজরি
লুৎফর ফরায়েজীঃ প্রথম সফরে শিশু ও নারী মুহাজিরদের বিশাল ঢল দেখে একেবারেই স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলাম। অপরিকল্পিত তাঁবু, ঝোঁপঝারে মাথাগোঁজার ছোট্ট ছাউনী। আকাশে মেঘ। ক্ষণে ক্ষণে বৃষ্টি। রাস্তার দু’পাশে হাজারো রোহিঙ্গা শিশুর উদ্ভ্রান্ত পথচলা। গোসল ও খাবার পানির তীব্র সংকট। ওষুধ ও চিকিৎসা সেবার অপ্রতুলতা।
কর্মসংস্থানহীন লাখো যুবক। কী করবে এরা? আমরা আমাদের ছোট সাধ্য দিয়ে তাদের জন্য কতটুকু করতে পারি?
বাহির থেকে আসা কোটি টাকা সুষ্ঠু বন্টন হবে কি? নাকি পদ্মা সেতু আর শেয়ার মার্কেটের মত সিংহভাগই গিলে খাবে কোন বেজন্মা পেটুক?
আবেগটা থাকবে কিছুদিন। আমরা আসছি। সারা দেশ থেকে ধর্মপ্রাণ মানুষ আসছেন। উলামায়ে কেরামের বাঁধভাঙ্গা স্রোত টেকনাফের পথে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনও সোচ্চার।
কিন্তু ক’দিন? আমাদের দেশের মত নানা প্রতিবন্ধকার দেশে। নানা প্রতিকূলতার দেশে। এক কথায় দরদী কিন্তু দারিদ্রতার কষাঘাতে জর্জরিত জনপদে ক’দিন চলবে এ ত্রাণ কার্যক্রম?
যাদের অঢেল পয়সা আছে। তারা কি স্থায়ীভাবে রোহিঙ্গাদের জন্য কিছু করবেন? কিছু ভাববেন? অতীত বলে ভাববে না।
যারা ভাববে। যারা কাঁদবে। যারা আফসোস করবে। আসলে তাদের করার কিচ্ছু নেই। দিল ভরা দরদ আছে কিন্তু হাত ভরা টাকা নেই। মন ভরা ভালবাসা আছে কিন্তু ব্যাংক ভরা অর্থ নেই। হৃদয় উজার করা উদারতা আছে কিন্তু গোলা ভরা ধান নেই।
আর বিশ্ব বিবেক শুধু উদ্বেগ প্রকাশ করবে। মুখে মুখে আফসোস করবে। হয়তো দেখানোর জন্য কিছু ত্রাণ ও পাঠাবে।
তারপর?
সর্বত্র নেমে আসবে ভয়াল নীরবতা। ভয়ানক নীরবতা। হাত গুটিয়ে বসবে সবাই। [আল্লাহ না করুন। আল্লাহ না করুন]
সবাই মগ্ন হবে আপন কাজে। আর অপরদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে নেমে আসবে মানবতার মৃত্যুসংহারী আজরাইল। বিশুদ্ধ পানির অভাবে, সুস্থ্য সেনিটেশনের অভাবে, চিকিৎসা সেবার অভাবে সেখানে আসলে কী হবে? বাকিটা আর ভাবা যায় না। কল্পনা করা যায় না।
দু’দিন যাবত পত্রিকার পাতার নিউজগুলো আমার সেই ভয়ানক ধারণাগুলোকে অতি দ্রুত বাস্তবতার ভয়ার্ত সংকেত দিচ্ছে। কমে গেছে ত্রাণ তৎপরতা। কমে গেছে বিশ্ব মিডিয়ার তোলপাড়। জবান বন্ধ জাতিসংঘসহ সকল বিশ্বমোড়লদের। খোশ মেজাজে জালিমেরা।
আমরা প্রথমবার যাবার সময় যে ছোট্ট সংগ্রহ নিয়ে গিয়েছিলাম এর সিকিভাগও এবার নিয়ে যেতে পারছি না। এর মানে আমরা স্তব্দ হয়ে যাচ্ছি। থেমে যাচ্ছি। আপন কাজে মগ্ন হতে চলেছি। রোহিঙ্গাদের ক্ষুধার্ত, রক্তাক্ত চেহারাগুলো আমাদের কাছে স্বাভাবিক হতে চলেছে।
দশ বারো লাখ মানুষ।
বাংলাদেশের একজন ধনী একজন মানুষের দায়িত্ব নিলে এ সমস্যা সমাধান সম্ভব। আমাদের দেশে এমন এ কোটি মানুষ পাওয়া যাবে যারা আরেকজন মানুষের দায়িত্ব নিতে পারেন। কিন্তু পরিকল্পিতভাবে আমরা কি দায়িত্ব নিবো?
মালিক! তু রহম ফরমা। করম ফরমা!