বুধবার, ২৯শে ফাল্গুন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ৩রা রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক্যবাদঃ প্রস্তাবিত কর্মপদ্ধতি – শামসুল আরেফীন

ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক্যবাদঃ প্রস্তাবিত কর্মপদ্ধতি
ডা. শামসুল আরেফীন
 একটা ছোট্ট ঘটনা দিয়ে শুরু করি। প্রথম রাবী আমার মুহতারাম আব্বাজান, দ্বিতীয় রাবী আমি। আব্বু তখন ৩ চিল্লার সফরে, প্রফেসর এস আর খান স্যারের জামাতে, বারিধারার কোন এক মসজিদে। ওনাদের দায়িত্ব ঢাকার অভিজাত এলাকাগুলোতে, সচিবালয়ে, ঢাকা ভার্সিটির স্যারদের উপর দাওয়াতের কাজ করা। মহল্লার এক যুবক আব্বুসহ আরেক অফিসারকে নিয়ে যাচ্ছেন ঢাবির এক রিটায়ার্ড প্রফেসরের কাছে। সুরম্য ইমারত, নাম ‘মিথুনমহল’। তো ঐ যুবক আব্বুকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন রাস্তায় যেতে যেতে, এই মিথুন ঐ যুবকের বন্ধু, আর ওনারা দাওয়াতে যাচ্ছেন মিথুনের বাবার কাছে, রিটায়ার্ড প্রফেসর, নাস্তিক। বেশ ক’বছর আগে উনি কথায় কথায় চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন, আল্লাহ বলে যদি কেউ থাকেন তবে ৭ দিন সময় দিলাম, পারলে আমার কোন ক্ষতি করে দেখাক। ৫ দিনের দিন সুইমিংপুলে ডাইভ দিয়ে মাথায় আঘাত পেয়ে মারা যায় তাঁর একমাত্র ছেলে মিথুন। ছেলে হারানোর অনুভূতি হিসেবে উনি জাস্ট এতটুকুই বলেছিলেন, এত তাড়াতাড়ি হবে ভাবিনি। ভদ্রলোক এখনো নাস্তিক। তো আমার আব্বু হযরত উনাকে কিছু কথা বলে চলে এলেন, বা বাসায় ছিলেন না আমি ভুলে গেছি। রাবী হিসেবে আমি নিতান্ত যয়ীফ কি না।
ঘটনাটা বলার উদ্দেশ্য হল, নাস্তিককে আপনি যত যুক্তিই দেখান না কেন, সে কোনভাবেই মানবে না। আল্লাহ নিজে ভদ্রলোককে দেখিয়ে দিলেন যে আমি আছি। এর চেয়ে বড় আর কোন যুক্তি হতে পারে? আর কী প্রমাণ হতে পারে? কোন প্রমাণ কোন দলিল কোন যুক্তি কারো হিদায়াতের জন্য যথেষ্ট নয়। হিদায়াত একমাত্র একমাত্র আল্লাহর হাতে। ফেসবুকে অনেক ভাই আলহামদুলিল্লাহ বেশ দরদী। আল্লাহ এই দরদকে উম্মতের ফায়দায় ব্যবহার করুন। তারা নাস্তিকদের পোস্টে কমেন্টের পর কমেন্ট করতে থাকেন, তার চেয়েও বেশি ব্রেনওয়ার্ক করতে থাকেন, বিতর্ক করতে থাকেন। আল্টিমেট রেজাল্ট কি?
  • নাস্তিকটা যে প্রশ্নটা তুলেছে সেটা তো সে জানার জন্য তোলে নি। জানতেই যদি চাইত তবে ফেসবুকে পোস্ট দিত না। উপযুক্ত লোকের কাছেই প্রশ্নটা করতো। সে প্রশ্নটা পোস্ট করেছে ট্রল করার জন্য, টিটকারি দিয়ে সমমনাদের সাপোর্ট আর মুমিনদেরকে কষ্ট দেবার জন্য। আপনি কমেন্টে সময় ব্যয় করছেন মানেই সে সফল, সে আপনাকে কষ্ট দিতে পেরেছে। আপনি Angry রিঅ্যাক্ট দিচ্ছেন। সে খুশি, এটাই তো সে চেয়েছিল।
  • আর ব্যাপারটা কি এমন যে এই একটা প্রশ্নের জবাব পেয়ে গেলেই সে আস্তিক হয়ে যাবে, তার সব সংশয় দূর হয়ে সে ৫ ওয়াক্ত নামায পরা শুরু করে দেবে? কখনোই না। এক তো, সে জবাব পাবার জন্য পোস্ট করেনি যে সে আপনার জবাব নিবে। আর দুই, এই জবাব দলিলসহ আপনি দিলেন, লিংক দিচ্ছেন। এগুলো সে দেখবেও না। তাকালেও তার হঠকারিতা তার পরিবেশ তাকে জবাব অনুধাবন করতে দেবেনা। কারণ সে তো বুঝতেই চায়না।
  • আপনার দেয়া জবাব-লিংক সে বুঝার জন্যও পড়ছে না, সে পড়ছে কাউন্টার দেবার জন্য। সে বুঝে পড়ার অবস্থায় তো নেই। ফলে আপনি যে উদ্দেশ্যে দিচ্ছেন তা কোন কাজেই আসছে না।
মাঝখান থেকে আপনার ২/৩ ঘণ্টা আনপ্রোডাক্টিভ লস। এই দুই ঘণ্টা আপনি পড়াশুনা করতে পারতেন, দ্বীনী কোন ইলম হাসিল করতে পারতেন, আমল করতে পারতেন, পরিবারকে সময় দিতে পারতেন, বন্ধুদের সাথে কোথাও বেড়াতে যেতে পারতেন। ফলে নীট রেজাল্ট শূন্য। না না, শূন্য না। নীট রেজাল্ট নেগেটিভ। কীভাবে?
  • তাকে বুঝাতে না পারায় আপনার মন খারাপ হবে, সারাটা দিন মন খারাপ থাকবে। আরো সময় নষ্ট হবে। তাকে আরো কি প্রমাণ দেয়া যায় বা যেত সেগুলো মাথায় ঘুরপাক খাবে। আপনি কোন কাজে মন বসাতে পারবেন না।
  • নামাযে-যিকিরে ধ্যান নষ্ট হবে। নামাযের মধ্যেও ওগুলো মনে আসবে। স্বাদ পাবেন না।
  • কাউন্টারের সময় সে তীর্যক, চূড়ান্ত অশ্লীল কিছু কথা বলবে। সেগুলো আপনি পড়েছেন। আপনার মন তেতো হয়ে থাকবে,গা গুলাবে, বমিও হতে পারে। আসিফ, থাবাবাবার লেখা পড়ে আমি বমিই করেছিলাম।
  • কাফিরকে গালি দিলে যে সোয়াব হবে এমন কোন কথা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেননি। গালি সর্বাবস্থায় জবানের গুনাহ, সে আপনি যাকেই দেন। আপনি তার গালির জবাবে কিছু গালি দিবেন, তার মুমিন বাপ-মাকেও দিবেন। গালি-উত্তেজনার শারীরিক মানসিক সব ক্ষতি তো হলোই, ওর তো গুনাহ হিসেব হবেনা, বিনা হিসেবে দোযখ। মাঝখান থেকে আপনি কিছু কবিরা গুনাহ কামালেন।
– খুব লাভ হল। আপনারও, ওরও।
– কী বলেন ভাই, আপনারা যদি এই কথা বলেন? ওদের হেদায়েতের জন্য চেষ্টা করতে হবে না?
ওদের হেদায়েতের চেষ্টা করার চেয়ে নিজের পৈতৃক ঈমান বাঁচানোর চেষ্টা আরো জরুরি। নিজে ফজরের নামায শীতে মসজিদে পড়তে যাবার মত ঈমানের তাকত নেই, আমি বাঁচাচ্ছি নাস্তিকের ঈমান। এটা শয়তানের নেক সুরতের ধোঁকা যে, ঐ নাস্তিকের হেদায়েত আমার হাতে। আমি জবাব দিলেই ও লাইনে এসে যাবে, আরে আমার জবাব আর অন্যদের জবাব এক হল? এমন যুক্তি দিয়ে জবাব দেব না, জাকির নায়েক ফেল। নাস্তিক/ নাস্তিকদের পেজের একটা’দুটো পোস্ট পড়ে আপনার হাসি পাবে— ধুর, কী সব লেখে, বদ্ধ ছাগল সব। হাসছেন-হাসছেন-আপনি হেসেই যাচ্ছেন, মাঝে মাঝে দু’একটা কমেন্ট, লিংক দিচ্ছেন। আরো পোস্ট পড়ছেন হা হা হা হা , কীসব গাধা গরু হা হা হা। হঠাৎ একটা পোস্ট আপনার বোধ-ইন্টেলেক্ট-জ্ঞানকে ছাড়িয়ে যাবে। যে বিষয়ের ব্যাখ্যা আপনি জানেন না, যেটা আপনার চিন্তায়ও ধরে না। এমন একটা গর্ত যেখান থেকে উঠার ক্ষমতা আপনার নেই। স্টেপ বাই স্টেপ আপনাকে সেই গর্তে নিয়ে যাবে। শয়তান তো এজন্যই আছে। আল্লাহ নিষেধ করেছেন শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে। যে গর্তটা চেনে সে হয়তো এটা দেখেও হেসেছে, তার গর্তটা সামনে। আর আপনি এখানেই পড়ে গেছেন। কারণ নাস্তিকদের সব প্রশ্নের জবাবই সরল নয়, এমন অনেক ইন্টেলেকচুয়াল তত্ত্বমূলক, গভীর প্রশ্ন ওদের আছে যেগুলোর জবাব আমরা আম পাবলিকদের মগজে সহসা আসে না, কেউ বুঝিয়ে দিলে তখন আসে। এমন একটা আয়াত তুলে দিল মাঝখান থেকে যার শানে নুযুলো আপনি জানেন না, পরের আয়াতেই উত্তর আছে তাও আপনি জানেন না, নবীজী হাদিসে ব্যাখ্যা দিয়ে গেছেন তাও জানেন না এজন্য ওদের প্রোফাইলে-পেজে আনাগোনা, আপনার ঈমান হরণের কারণও হতে পারে। কওমীর এক ছাত্র হাফেজ আমি পেয়েছি, তার এই অবস্থা। সে এখন তার উত্তর পাওয়ার জন্য সায়েন্স নিয়ে পড়ছে। আল্লাহ তাকে হিদায়াতে ফিরিয়ে আনুন।
আরে ভাই, আমার ঈমান এত ‘কচুপাতার পানি’ না। আরেক তালেবে এলেম আমাকে এই জবাব দিয়েছেন। আরিফ আজাদ যখন ছিল না তখন তিনি ব্লগে নাস্তিকদের সাথে ডিবেট করতেন আলহামদুলিল্লাহ। আমি তাকে বলেছিলাম, এখন না, আপনি পড়াশুনা শেষ করেন, এরপর ওসব হবে। জবাবে উনি আমাকে এটা শোনালেন। কাঁচা বয়স, কাঁচা এলেমে নাস্তিক দর্শনের সংস্পর্শ কি ফলাফল দেয় তা আমরা ক’দিন আগেই দেখেছি। ইফতা পাশ (মুফতি না)মাসুদ ডিবেট করতো শুনেছি, মুফাসসিলও নাস্তিকদের সাথে ডিবেট করতো। তারাও ধারণা করতো তাদের ঈমান অনেক পাক্কা। এতোই পাকা যে শেষমেশ পচেই গেল। মিনার ভাইয়ের কাছে শুনেছি এক ভদ্রলোক ২৭ বছর নিজ ওয়েবসাইট থেকে নাস্তিক-মিশনারীদের খণ্ডন করতেন, এখন নাস্তিক। তাই নিজের ঈমান নিয়ে এতো কনফিডেন্সও কাম্য না। তাহলে আল্লাহ কুরআনে এই দুয়া শিখাতেন না— “রব্বানা লা- তুঝিগ ক্বুলুবানা বা’দা ইয হাদাইতানা ওয়া মিল্লাদুনকা রহমাহ, ইন্নাকা আনতাল ওয়াহহাব” হে আল্লাহ, হিদায়াতের পরে আমার অন্তরকে গোমরাহীর দিকে ঘুরিয়ে দিয়েন না। আমরা কি উমার বিন খাত্তাবের (রাঃ) চেয়ে বেশি ঈমানদার? আকুল হয়ে ‘নবীজীর রহস্যবিদ’কে প্রশ্ন করছেন, ও হুযাইফা, সব মুনাফিকের নাম না বল বলো না, কমসে কম এতটুকু বল যে, ঐ লিস্টে আমি আছি কিনা। কে বলছেন? উমার বিন খাত্তাব। যার ব্যাপারে নবীজী সাঃ বলেছেন, আমার পর কেউ নবী হলে সে হত উমার। রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম আজমাঈন। আর আমরা আজ নিজেদের ঈমানের ব্যাপারে কনফিডেন্ট। ভাই, নিজ ঈমানের ব্যাপারে ভয়ে ভয়ে থাকাটাই ঈমানের আলামত। ফকিরের কোন টেনশন নেই, যার পকেটে বাণ্ডিল, তার টেনশন। আশা ও ভয়ের মাঝে ঈমান। নিজ ঈমান নিয়ে ভয়ে থাকা, সব সময় ঈমান বাঁচানোর চেষ্টা করা এটাই ঈমানদারের লক্ষণ, আর ঈমানের ব্যাপারে বীরত্ব ফলানো শয়তানের ধোঁকা ছাড়া আর কিছুই নয়।
আচ্ছা আমি একটা প্রশ্ন করি—
– ওদের প্রোফাইল আমরা কেন ফলো করি? ওদের পেজ আমরা কেন লাইক করি?
– ওরা কি লেখে, কি বলে তা জানার জন্য।
– ওরা কি বলে তা জানা ‘আপনার’ কি দরকার? আপনি কি ওদের খণ্ডন করে বই লিখছেন? বা কিছু করতে চান সামনে, কোন মুভি বা ডকুমেন্টারি? বা জানলে কোন সওয়াব, বা কোন উপকার?
– না , তা না। এমনিই।
– তাহলে জেনে নিন, যে কাজে দুনিয়া বা আখিরাতের কোন লাভ হয় না তাকে বলা হয় লাইয়ানি কাজ, অহেতুক কাজ। আর আমাদের নবীজী বলেছেন, মানুষের ইসলামের সৌন্দর্য হল অহেতুক কাজ ও কথা থেকে বেঁচে থাকা। তার আম্নে আপনার ইসলাম সুন্দর না, আপনি ভাল মুসলিম না, তাই কি?
– না, মানে। ওরা যা বলে যা করে তা থেকে আমি দূরে থাকব। এটা তো জানা দরকার, তাই না?
– কোন কোন জিনিস থেকে দূরে থাকবেন তা কি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল আপনাকে বলেননি? নাকি কুরআন-হাদিসে যা নিষেধ করা আছে সেগুলো সব আপনি মেনে ফেলেছেন। এখন আরো নতুন নির্দেশনা দরকার? আচ্ছা, ওরা কি বলে, কি বলবে, কি বলতে চায়— তা কি আপনি জানেন না?
আসলে খেয়াল করে দেখেন, নাস্তিকরা কী বলে, কী বলতে চায় এটা আমরা কিন্তু জানি। ওরা কী বিষয়ে প্রশ্ন তোলে এগুলো আমাদের অজানা না কিন্তু। তাহলে আমাদের আর কি দরকার পড়েছে ওদের প্রোফাইলে যাবার? ইন জেনারেল ওদের বক্তব্য সবাই আমরা জানি। পয়েন্ট বাই পয়েন্ট তো সবার জানা দরকার নেই। যারা গবেষণা করেন তাঁদের দরকার হতে পারে। আমাদের জেনারেল মানুষদের কিন্তু জানার দরকার নেই ডিটেইলস। বরং আমাদের বেশি জানতে চাওয়াটা ক্ষতিকর হতে পারে আগেই বলেছি। যা দরকার নেই তা অতিরিক্ত জানতে চাওয়াটাও শয়তানের ধোঁকা। ও কিন্তু মেহনত করেই যাচ্ছে।
তাহলে ওরা এগুলোর জবাব জানবে কীভাবে যদি আমরা না বলি? ভাই, আমি আগেই বলেছি ওরা জানার জন্য পোস্ট দেয় না। ধরেন আপনি জানতে চান, ইসলামে দাসপ্রথা কেন অনুমোদিত। আপনি কী করবেন? বিজ্ঞ আলিমের কাছে জিজ্ঞেস করবেন, জবাব যদি আপনাকে সন্তুষ্ট না করে তাহলে আরেকজনকে। কারণ আপনি জানতে চাচ্ছেন আসলেই। আপনার জানাটা দরকার। কিন্তু এটা না করে আপনি করলেন কী, আপনি একটা বিলবোর্ড ভাড়া করে লিখলেন “একুশ শতকে এসেও ইসলামে দাসপ্রথা অনুমোদিত, জবাব চাই”। মানে কী? মানে হল, আপনার জবাব দরকার নেই, আপনার জনমত দরকার। প্রশ্নের ধরন দেখলেই বুঝা যায়, সে জবাব চায়, নাকি ট্রল করতে চায়। নবীজী সাঃ এর সাথে ঘটা একটা ঘটনা থেকে ওদের মানসিকতা আরো ক্লিয়ার হবে—
হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিতঃ সুর্যাস্তের পর উতবাহ, শাইবাহ,আবু সুফিয়ান,আবুল বাখতারী,আসওয়াদ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব,যামআহ ইবনে আসওয়াদ,ওলীদ ইবনে মুগিরাহ,আবু জেহেল ইবনে হিশাম,আব্দুল্লাহ ইবনে আবী উমাইয়া,উমাইয়া ইবনে খালাফ, আস ইবনে ওয়ায়েল,নুবাইহ, মুনাব্বাহ একত্র হয়ে কাবার চত্বরে নবীজী সাঃ কে ডাকাল।অনেক প্রলোভনেও যখন রাসূলুল্লাহ সাঃ ইসলাম প্রচার থেকে বিরত হতে রাজি হলেন না, তখন তারা হুজুর সাঃ এর কাছে দলিল দাবি করল। বলল, আমরা আপনার উপর ঈমান আনব যদি আপনি যদি আপনার আল্লাহর কাছে দুআ করে-
১) এই পাহাড়গুলো সরিয়ে দেন।
২) আমাদের মক্কা শহরকে প্রশস্ত করে দেন।
৩) সিরিয়া ও ইরাকের মত আমাদের এলাকায়ও নহর জারি করে দেন।
৪) কুসাই বিন কিলাব সহ আমাদের বাপদাদাদেরকে জীবিত করে দেন। তারা আপনার সত্যতা স্বীকার করলে আমরা আপনাকে মেনে নেব।
৫) একজন ফেরেশতা নিয়ে আসুন যিনি আপনার সত্যতার সাক্ষ্য দেবে।
৬) আপনার জন্য বাগ-বাগিচা, ধনভাণ্ডার, স্বর্ণরূপার মহল বানিয়ে নেন।
৭) আমাদের মাথার উপর আসমান ভেঙে ফেলুন।
৮) আল্লাহ তাআলাকে ও ফেরেশতাদেরকে দলে দলে আমাদের সামনে হাজির করুন। ( নাউযুবিল্লাহ)
এরপর বলছে, আপনি আকাশ পর্যন্ত সিড়ি স্থাপন করুন।সেই সিড়িতে পা রেখে আমাদের সামনে আকাশে উঠে যান। কিতাব নিয়ে ৪ জন ফেরেশতা সহ নেমে আসুন যারা আপনাকে সত্য বলে সাক্ষ্য দেবে। যদি আপনি এটাও করেন তবু আপনাকে সত্য বলে মানতে পারব না।( তাফসীরে ইবনে কাছীর, হাঃসাঃ ১/১১৬-১২১)
দেখেন শেষমেশ কী বলল, যাই দেখান আমরা বিশ্বাস করব না, করব না, করব না। ইসলামবিদ্বেষীদের মেন্টালিটি এমনই। তাহলে কি আমরা কিছুই করবো না? হ্যাঁ, করব। দুয়া করব। নবীজী সাঃও আবু জেহেল আর উমার রাঃ এর একজনের হিদায়াতের জন্য দুয়া করেছেন। আমরাও ওদের হিদায়াতের জন্য দুয়া করব। আমাদের আরো কিছু করণীয় আছে—
  • তালেবে ইলমগণ যারা এই সেক্টরে কাজ করতে চান, অবশ্যই দাওরা শেষ করে তারপর। কখনোই পড়াকালীন নাস্তিক লেখকদের বইপত্র পড়া যাবে না। মোবাইল ব্যবহারও আমি সমর্থন করি না ১৮ বছরের নিচে। ইন্টারনেট ব্যবহারও ফারেগ হবার পর। অভিভাবক ও সম্মানিত উস্তাযগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। ভাত পচলে তাও খাওয়া যায়, পোলাও পচলে আর খাওয়া যায় না।
  • আমরা যারা আম পাবলিক, এই সেক্টরে কাজ করার পরিকল্পনা নেই এই মুহূর্তে, আমরা সব নাস্তিক আইডি আনফলো করে দিব, সব নাস্তিক পেজ আনলাইক করে দেব, সব নাস্তিক তর্কবিতর্কমূলক গ্রুপ আনফলো করে দিব। এগুলো ঈমান হরণের প্রথম স্টেপ।
  • নাস্তিকদেরকে ওদের অবস্থার উপর ছেড়ে দিব। ক্বলু সালামা। পারলে দুয়া করব। গালি দিবো না একদম।
  • প্রশ্নের ভঙ্গি দেখে যদি মনে হয় সে আসলেই জানতে চায় তবে লিংক, বই ইত্যাদি দিব। আপনার জবাবের চেয়ে লিংক, বই এগুলোতে সে বেশি ভাবনার সুযোগ পাবে। (আমার প্রোফাইলে, ওর প্রোফাইলে না)
  • কোন নাস্তিক তর্কাতর্কি করার চেষ্টা করলে জবাব দেব না। ঠিক আছে ভাই, তুমি তোমার মত, আমি আমার মত।
  • ওদের স্ট্যাটাসে আপনার কমেন্ট, রিঅ্যাক্ট, ফলো, শেয়ার এগুলোতে ওদেরই লাভ হয়। পাবলিসিটি বাড়ে। নিউজ ফীডে উপরে চলে আসে বার বার।
  • ব্যক্তিগত ইলম চর্চার উপর গুরুত্ব দিব। বেঁচে যাওয়া সময় নফল আমল, যিকির, তিলওয়াতে লাগাব। আত্মশুদ্ধি, আলিমদের লেকচার (বয়ান) শোনার মধ্যে লাগাব।
  • আরিফ আজাদ সমগ্র, মিনারসমগ্র (আসিতেছে), সত্যকথনসমগ্র সংগ্রহে রাখব। আক্বীদার ব্যাপারে সঠিক ধারণা রাখব।
  • আলিমগণের সাথে উঠাবসা করব। প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে তাঁদের পরামর্শ নিব।
  • নিজের ঈমান-আমল হেফাজতের জন্য আল্লাহর কাছে সবসময় দুয়া করব। বাড়িয়ে দেবার দুয়া করব।
  • দ্বীনের কোন বিষয়ে খটকা লাগলে ইস্তিগফার, আঊযুবিল্লাহ পড়ে বাম দিকে তিনবার থু থু ফেলা। এই আমল করব। প্রথমেই কাউকে বলব না। বার বার এমন হলে কোন সম্মানিত আলিমের সাথে পরামর্শ করব। সবাইকে বলে বেড়াবো না।
  • যে বিষয়ের খটকা লাগবে ঐটা বলেই মানুষকে দাওয়াত দিব। ধরেন, মিরাজ নিয়ে আপনার হঠাৎ সমস্যা হচ্ছে। তো আপনি সবাইকে মিরাজের কুদরত, আল্লাহর অসীম ক্ষমতা নিজ রাসূলকে কাছে নেবার, উনি চাইলে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবেই নিতে পারেন। আল্লাহর রাসূল যে খবর আমাদেরকে দিয়েছেন সেটাই সত্যি, যদিও তা আমাদের বুদ্ধিতে ধরেনা— এগুলো বলে বলে দাওয়াত দিবেন।
সাজিদ, ডাবল স্ট্যান্ডার্ড, সত্যকথন, আরজু— সব যুক্তি তর্ক শেষে ‘না দেখে বিশ্বাস’ করাটাই ঈমান। যুক্তিতর্কে বিশ্বাসের নাম ঈমান না। আমরা না দেখে বিশ্বাস করি, আমরা মুমিন্স। তবে আমাদের সে বিশ্বাসই মানুষ হয়ে জন্মানোর উদ্দেশ্য, সার্থকতা। অন্য প্রাণি না দেখে বিশ্বাস করতে পারে না। আমরা পারি ‘না দেখে’ বুদ্ধি বিবেচনা দিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে। তাই আমরা মানুষ। যারা পারে না তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত, উলাইকা কাল আনআম। শরীর, ইন্দ্রিয়, কৌশল, বুদ্ধি অন্য প্রাণীরও আছে। কখনো কখনো বেশিও আছে। হাতি-তিমির শরীর দেখে আমরা অবাক, কুকুরের ঘ্রাণ/বাদুড়ের শ্রবণ/ঈগলের দৃষ্টি আমাদের অবাক করে। মৌমাছির এয়ার কন্ডিশনিং টেকনোলজি, পিঁপড়ার আর্কিটেকচার আমাদের অবাক করে। একটা জিনিসেই আমরা শ্রেষ্ঠ, ‘না দেখে বিশ্বাস’ আভাসের আলোকে। কিছু আভাস দেখে আমরা বিশ্বাস করি, যে আভাস তোমরা দেখ না । ওই আভাসগুলোর ব্যাখ্যা (interpretation) আর তোমাদের বুদ্ধির জট ছাড়ানোর জন্যই আমরা লিখি এগুলো।
কিন্তু আমাদের ‘না দেখে বিশ্বাস’ই আমাদের মনুষ্যত্বের পক্ষে একমাত্র যুক্তি।
বিনা যুক্তিতে আল্লাহ আছেন
বিনা যুক্তিতে মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বিনা যুক্তিতে রাসূল যা বলেছেন সব সত্যি, তিন সত্যি।
আলহামদুলিল্লাহ।

Archives

March 2024
S S M T W T F
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031