বুধবার, ২১শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২২শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
নতুন ওয়ায়েজদের প্রতি কিছু পরামর্শ
গতকাল ২০/১২/১৭ প্রথম মাহফিল ছিলো নেত্রোকোনার কেন্দুয়া পৌরসভাস্থ আলীপুরে। সাহেবে দাওয়াত প্রিয় কবি সাইফ সিরাজ ভাই। নিয়মিত সফরসঙ্গী ছাড়াও সাথে ছিলেন প্রিয় বন্ধু মুফতী সালাহুদ্দীন মাসউদ ভাই। এশার আগে আগেই পৌঁছি কেন্দুয়ায়। পূর্ব থেকেই অপেক্ষারত সাইফ ভাই রিসিভ করলেন। বাদ এশা বয়ান। এলাকার মানুষগুলো বেশ সহজ-সরল। ধার্মিক। আলেমপ্রিয়। স্বল্প সময়ের জন্য হলেও আমার উপস্থিতিতে তারা আপ্লুত। সাইফ ভাইর সাথে এর আগে সাক্ষাত হলেও তেমন কথা বলার সুযোগ হয়নি। কাল কিছুক্ষণ আলাপ হলো। মনখোলা মানুষ। যথেষ্ট আন্তরিক। তার উপস্থাপনায় মুগ্ধ না হয়ে উপায় আছে? বয়ান শেষে ২য় মাহফিল কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম।
রাস্তাঘাট মোটামুটি ভালো হওয়ায় ঘন্টা খানিকের মধ্যেই পৌঁছে যাই মাহফিলস্থলে। একটি কওমী মাদরাসার মাহফিল। প্রতি বছর বেশ বড়সড় মাহফিলের আয়োজন করে থাকে মাদরাসাটি। এটি ছিলো ৯ম বার্ষিক। এবার নাকি প্যান্ডেলের সাইজ একটু বেশীই বড় করেছে। মাহফিলে ঢোকার ১০০০গজ পূর্বে একটি গেট। মরিচা বাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে চমৎকারভাবে। কি করি? ফোন দেয়া হলো কর্তৃপক্ষকে। মাহফিল প্যান্ডেলের আশপাশেও নাকি ঝাড়বাতি ছিলো। মিনিট বিশেক পর তারা এসে বাতি বন্ধ করলো। মাহফিলে প্রবেশ করলাম। পর্দানশীন মহিলাদের জন্য উপযোগী দুটি মহিলা প্যান্ডেলও রয়েছে। রাত ১০.৩০। কুয়াশাচ্ছন্ন পুরো এলাকা। শীতটাও কেমন বেশীই অনুভূত হলো।
পূর্বের ওয়ায়েজের বয়ানের স্টাইল শুনে বুঝতে পেরেছিলাম বয়ানের ময়দানে নতুন আগমন করেছে। কথাগুলো অগোছালো। প্রত্যেক শব্দে অতিরিক্ত চিৎকারে কথা বোঝা মুশকিল ছিলো। আমাকে বসিয়ে রেখে বিশ মিনিটের মতো কথা বলেছে। এটা ওয়াজের স্টেজের আদব নয়। নতুন ওয়ায়েজদের প্রতি পরামর্শ থাকবে- পরবর্তী ওয়ায়েজ স্টেজে গেলে বয়ান শেষ করে ফেলা। প্রত্যেক শব্দে চিৎকার না দেয়া। ব্যাখ্যামূলক কথায় সূর না দেয়া। আলোচ্য বিষয় লক্ষ্য রেখে কথা বলা এবং শ্রোতাদের প্রয়োজনীয়তা বুঝে বয়ানের বিষয় নির্ধারণ করা।
একজন আলেম বললেন- আপনার অমুক তো এক কি.মি. পর্যন্ত বাতির গেট পেরিয়ে মাহফিলে গেছে কিন্তু কিচ্ছু বলেনি। আপনিও কিছু না বলে হেকমত অবলম্বন করতে পারতেন। আমি বললাম- আমি অমুক নই, আমি হাবিবুর রহমান মিছবাহ। অতএব মানুষ যেহেতু দুইজন, সেহেতু চিন্তাধারও ভিন্ন হওয়াটাই স্বাভাবিক। আর হেকমতে কথা বলছেন? আপনাদের কাছে হেকমতের ব্যাখ্যা কি আমি জানি না, আমার কাছে কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে তাদের মাধ্যমে বাতি বন্ধ করাটাই হেকমত মনে হয়েছে। অন্যায় মেনে নেয়া কোন ধরণের হেকমত তা আমার বোধগম্য নয়। লোকটি মাহফিল কমিটির কেউ নয়। মাদরাসা কর্তৃপক্ষেরও কোনো সদস্য নয়। না কোনো শিক্ষক। আমজনতার সামনে একটু হেকমতগিরি দেখাতে এসছিলেন।
অথচ মাহফিল কর্তৃপক্ষ বাতি নিভানোর ব্যাপারে ছিলো যথেষ্ট আন্তরিক। সামনে আর এগুলি করবে না বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। দীর্ঘ বয়ান শেষে হাফেজ ছাত্রদের দস্তারবন্দী ও মুনাজাত সম্পন্ন করে বিদায়বেলা আরেক হুজুর বললেন, ভাই না জেনে অন্যের কথায় আপনার নামে অনেক বদনাম করেছি। মেহেরবানী করে ক্ষমা করে দিবেন। আজকের সাক্ষাতে আমার ধারণা সম্পূর্ণ পাল্টে গেলো। বরং সব ঘৃণা ভালোবাসায় পরিণত হলো। বুকে টেনে নিলাম ভাইটিকে। কিশোরগঞ্জ-মোমেনশাহী মাহফিল করার ব্যাপারে আমার অনাগ্রহের অন্যতম কারণ বয়ানের সময়ের ব্যাপারে কথার খেলাফ করা। দশটায় বললে বারোটায় বয়ানে দিবে। তা যে কোনো বাহানায়ই হোক না কেনো। কালও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ১০.৩০এর কথা থাকলেও বয়ান শুরু করতে হয়েছে একঘন্টা পর। বাকি কর্তৃপক্ষের সার্বিক আন্তরিকতায় আমি মুগ্ধ।
মুফতী হাবিবুর রহমান মিছবাহ র ফেইসবুক টাইমলাইন থেকে