শুক্রবার, ১৬ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৯শে রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
ইযাযুল হক
ছড়াকার
(অর্পণ : কবি মুসা আল হাফিজ শ্রদ্ধাস্পদেষু)
বৃষ্টিরিমঝিম সকালে ক্ষণে ক্ষণেই মন ছুঁয়ে যাচ্ছিল শরতের হিমেল হাওয়া। হৃদয়ের ক্যানভাসে ছড়িয়ে পড়ছিল শুচিতা ও নির্মলতার শুভ্র-নরোম আঁচড়! চোখের পাতায় ভর করছিল রাশিরাশি স্বপ্নকাব্যের স্বর্ণালি রেখাচিত্র! হিজিবিজি কল্পনার ডানা যেন উড়াল দিতে চায় উদাস আকাশের বুকে!
অদ্ভুদ এক ভালোলাগা দিয়ে শুরু হয় দিনটি। সকাল সাড়ে দশটায়, সেই বৃষ্টিভেজা মুহূর্তে, হঠাৎ চোখে পড়ল এক রোদের ঝিলিক! মনের উঠোনে আকুলিবিকুলি করে নেচে উঠল এক ফালি রোদ্দুর! প্রিয়কবি মুসা আল হাফিজ চট্টগ্রামে অবস্থান করছেন- কবি আলাউদ্দিন কবীরের দেওয়া সংবাদে ব্যাকুল হলাম। তাঁর সান্নিধ্যলাভের জন্য আনচান করে উঠল এই সবুজ মন!
****
গাড়িতে চড়ে বসলাম। হাতে রবীন্দ্রনাথের ‘ভ্রমণ সাহিত্য’ থাকলেও তাঁর ভ্রমণসঙ্গী হওয়া গেল না। বরং স্মৃতির ডায়রিতে আনমনে হাতড়াচ্ছিলাম মুসা আল হাফিজকে! ছোটবেলা থেকে সচেতন পত্রিকাপাঠ-ই আমাকে পরিচয় করিয়ে দেয় মুসা আল হাফিজের সাথে। তার লেখা পড়তাম দৈনিক থেকে মাসিক- বিভিন্ন পত্রিকায়। একসময় জানলাম, তিনি নিবৃতচারী আলেম কবি, লেখক ও চিন্তাবিদ। আলোড়িত হলাম। চমৎকৃত হলাম! তখনো তার কোনো বই নজরে পড়ে নি।
কয়েক বছর পর বেরোল মরমী মহারাজ! পাঠকপ্রিয়তা পেলো।
এরপর আরো দুয়েকটা ‘মহা’ বেরোল। পড়া হলো না। বেরোল প্রাচ্যবিদদের দাঁতের দাগ। পড়লাম। মুগ্ধ হলাম। তাঁর ভাষার অসাধারণ প্রাঞ্জলতা ও রসময়তায় হারিয়ে গেলাম। বিষয়ের গভীরতায় ডুব দিয়ে তুলে আনলাম কাঁড়িকাঁড়ি মুক্তোদানা। এটি পড়েই তাঁর (প্রায়) ভক্ত হয়ে গেলাম!
কবিতার পাতায় তাঁর কবিতা পড়তাম। শুনতাম, তিনি উভয় বাংলায় তরুণ শক্তিমান কবি! বামপাড়ায়ও প্রশংসিত হচ্ছেন তিনি। তারপর তাঁকে সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় হতে দেখলাম। বিভিন্ন স্থানে প্রোগ্রাম করছেন তিনি। ফেসবুকে ফলো করলাম। দেখলাম, একজনকে কষে এক ‘থাপ্পড়’ বসিয়ে দিলেন তো, আরেকজনকে দিলেন আস্ত এক লাত্থি! আবার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে গিয়ে ঘোমটা খুললেন ‘দৃশ্য কাব্যে ফররুখে’র! এরপর ‘পরম সাঁতারে’ আবিস্কার করে ফেললেন আমেরিকা! – ব্যাস! এই ত আমার জানা মুসা আল হাফিজ। এটুকুই খুঁজে পেলাম স্মৃতির ঝুলি হাতড়ে-হাতড়ে।
****
চকবাজার ‘হোটেল-চক-ইন’ এর তৃতীয় তলার একটি কক্ষে আড্ডা চলছিল। সগীর চৌধুরী, আলাউদ্দিন কবির, নকীব নজরুল, মিনহাজ উদ্দীনসহ কয়েকজন তরুণ লেখক কবিকে তন্ময় হয়ে শুনছিলেন। আমিও ১১:১০ টার দিকে শামিল হলাম সেই মিছিলে। প্রথমেই আমার একটি ধারণা মিথ্যা প্রমাণিত হয়। তাঁর কথায় যে এত প্রাণ, এত তেজ ও গাম্ভীর্য থাকবে- কল্পনা করিনি। তার দিলের দরদ চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ছিল মায়াঝরা কথা বেয়ে। তিনি খুঁজছেন এই চট্টগ্রামের বিশজন তরুণকে, যারা কাজ করবেন উম্মাহর জন্যে। জীবনের সব স্বপ্ন ত্যাগ করে যারা আগামী প্রজন্মের সাংস্কৃতিক ভীত দাঁড় করাতে কোমর বাঁধবেন। শাণিত করবেন আমাদের মরীচাধরা চেতনাকে! মেরামত করবেন তিতুমীর-রজব আলীর ভাঙ্গা তলোয়ার! ওড়াবেন ফররুখের হারিয়ে যাওয়া আদর্শ-কেতন!
তিনি বলেন, ‘এই চট্টগ্রামে হুমায়ুন আজাদকে নিয়ে বছরে ডজনখানেক অনুষ্ঠান হয়। তার চিন্তাকে তারুণ্যের চেতনায় শান দেয়া হয়। কিন্তু ফররুখদের চিন্তা নিয়ে কী আয়োজন হয়? হয় কি অনুষ্ঠান ও চর্চা?’
কেমন হবেন তারা’? -জিজ্ঞেস করলেন কবি আলাউদ্দিন।
তিনি বললেন, ‘প্রথম শর্ত হল, তারা সম্পূর্ণ দলীয় সংকীর্ণতামুক্ত হবেন।’
তিনি তার পরিকল্পিত সংগঠনের একটি নাম দিলেন এবং প্রতিপাদ্যও ঠিক করে দিলেন।
আরো অনেক কথা হলো। হাসাহাসি, খোঁচাখুঁচি, প্রশ্নোত্তর, মতবিনিময়, – সব মিলিয়ে সংক্ষিপ্ত পরিসরে জম্পেশ এক আড্ডা হল।
সবশেষে আলাউদ্দিন কবির ও সগীর চৌধুরীর বইহাদিয়া দেওয়ার মুহূর্তটি স্মৃতির অ্যালবামে সংগ্রহে রাখতে ক্যামেরার ফ্লাশ ক্লিক ক্লিক আলো ছড়াল।…
****
আমি বেশি কথা বলতে পারি না। কবির সাথেও তৃপ্তিভরে কথা বলতে পারলাম না। লজ্জা, ভয় ও জড়তা কাজ করে হয়ত। তবে নীরবে কাউকে পাঠ করার কাজটা ভালোই পারি। কবিকেও শুধু নীরবে তারিয়ে তারিয়ে গভীর অমনিবেশে পাঠ করলাম। একদম সাদা মনের মানুষ। গোছানো-পরিপাটি। নম্র-বিনয়ী। অহংকারের লেশমাত্র নেই। সবার সাথে বন্ধুসুলভ মুগ্ধকরা আচরণ। কথায় কথায় ঠিকরে পড়ছিল বিশ্বাসের জ্যোতির্ময়তা। যেন এক ‘বোধের দরবেশ’!!
সিএনজিতে চড়ে বসলেন তিনি। গন্তব্য পটিয়া। আমি যাব না যাব না বলেও কেনো যেন উঠে পড়লাম গাড়িতে। পেছনের সিটে গাদাগাদি করে বসলাম আমরা চারজন। জানি, কবির যথেষ্ট কষ্ট হয়েছে। ঠাসাঠাসি করে বসায় তাঁর শুভ্র জামায় লেগে যায় ময়লা! লাগুক, তাতে কী! অন্তরটা ত তাঁর কাচের ন্যায় স্বচ্ছ-নির্মল। মোটেও বিরক্ত হননি তিনি। বরং হৃদয়োষ্ণ কথামালা দিয়ে মুগ্ধতা ছড়িয়ে গেছেন। চলমান বিভিন্ন ইস্যু থেকে নিয়ে একান্ত ব্যক্তিগত সুখদুখও শেয়ার করলেন তাঁর ভাবশিষ্যদের সাথে।. .
****
কবি নদীপ্রেমী। নদীমাতৃকার প্রতি নাকি তাঁর স্বভাবজাত দুর্বলতা! কর্ণফুলী ব্রীজ পৌঁছার আগ থেকেই তিনি তা দেখতে ব্যাকুল হয়ে উঠলেন। চাক্তাইয়ের শাখা নদীগুলো দেখে বললেন, ‘এটি কি কর্ণফুলী? এমন কর্ণফুলী তো আশা করিনি!’ আমরা হাসলাম। আশ্বস্ত করলাম, আপনার স্বপ্ননদী এখনই আপনাকে বরণ করবে।
গাড়ি যখন ব্রীজে ওঠে, বৃষ্টি উপেক্ষা করে গাড়ির কাঁচ খুলে দিলেন। নিসর্গের কবি চোখ ফেললেন বৃষ্টিবিক্ষুব্ধ কর্ণফুলীর তরঙ্গমালায়! তাঁর সেই অদ্ভুদ চাহনিতে দেখেছি ঝাঁকে ঝাঁকে কবিতারা জড়ো হচ্ছে রুপালি ইলিশের মতো। আমি মিনহাজ ভাইকে বললাম, চলুন, আমরাও কবির চোখে নদী দেখি।..
****
ভাবছিলাম, কবিকে কী প্রশ্ন করা যায়? অনেক প্রশ্নই তো জমা আছে বুকপকেটে। কিন্তু কোনটি বলব? ফররুখ-অধ্যয়ন বিষয়ক একটি প্রশ্ন গলা পর্যন্ত এসে আটকে গেল। আমি যে এখনো তাঁর ‘দৃশ্যকাব্যে ফররুখ’ই পড়িনি! মনে মনে লজ্জা পেলাম। হালের কবিদের মধ্যে কাকে পড়তে পারি- এধরনের একটি প্রশ্নও আসতে চেয়েছিল। আসেনি।
আধুনিক কবিতা নিয়ে আমাদের মহলে অনেক নেতিবাচক কথা শুনি। এসবকে কবিতা মানতে নারাজ অনেক বড়জনও। এ-ব্যাপারে জানতে চাইলাম তাঁর মতামত। তিনি বললেন, ‘এ তর্কের উৎস অজ্ঞতা। যে তর্ক জন্ম নেয় অজ্ঞতা থেকে,তার সমাধান অজ্ঞতা দূর করা। তাদেরকে পড়াও। জানাশোনা বাড়ুক তাদের।শিল্প- সাহিত্য ও সমকালীন বৈশ্বিক ও দেশীয় সাহিত্যের গতিপ্রকৃতির সাথে স্থাপিত হোক তাদের জ্ঞানগত সংযোগ।’
আলাউদ্দিন কবিরের প্রশ্ন ছিলো, মাওলানা আব্দুর রহীমকে নিয়ে বলুন। তিনি বললেন, ‘একজন বিশ্বমানের লেখক ছিলেন তিনি। যদি তিনি আরবি লেখক হতেন, আমরা তা অনুবাদ করে ধন্য হতাম। যদি উর্দু লেখক হতেন, আমরা তা ভাষান্তর করাকে সৌভাগ্য-জ্ঞান করতাম।…’
***
কবি এগারো বছরেই হিফজ শেষ করেন। সেই সময়ই তিনি পড়েছিলেন বাংলাসাহিত্যের দুই অমর গদ্যগ্রন্থ: ওয়াজেদ আলীর ‘মরুভাস্কর’ ও শাহেদ আলীর ‘মক্কার পথ’। তিনি বলেন, ‘এই দুই ‘আলী’ই আমার গদ্যচর্চার ভীত তৈরি করে দেন। মোড় ঘুরিয়ে দেন চিন্তা-চেতনার। দুজনই অসাধারণ কথাশিল্পী!’
আমরা নড়েচড়ে বসলাম। ভাবলাম, জীবনের প্রথম প্রহরে যিনি এমন সব কাঁচামাল পেয়েছেন, এই ছত্রিশে এসে একজন পরিপক্ব মুসা আল হাফিজ হয়ে ওঠা মোটেও আশ্চর্যের নয়!
কবির মতো একদম ছোটবেলায় না হলেও আমিও পড়েছিলাম গোলাম মোস্তফার অনন্য সৃষ্টি ‘বিশ্বনবী’। আমার ছেলেবেলায় পড়া অসাধারণ এক গদ্যগ্রন্থ। কবিকে জানালাম। তিনি বিশ্বনবীর গদ্যশক্তির সত্যায়ন করলেন।
***
আল্লামা ইকবাল নিয়ে কথা হলো। তাঁকে কবি নতুন আঙ্গিকে বলতে শুরু করেন, ‘ইকবাল কবি নন শুধু; পৃথিবীর প্রথম সারির দার্শনিক বটে! যার চিন্তায় ভর করে পৃথিবীর বুকে গড়ে উঠেছে একটি রাষ্ট্র। আল-কিন্দী, ইবনে রুশদ, গাজালী, শাহ ওয়ালীউল্লাহর পর ইকবালের মতো উঁচুমাপের দার্শনিক জন্ম দেয়নি মুসলিমবিশ্ব। অনেকটা তাঁর ইতিহাসবোধ ও দর্শনের উপর নির্মিত হয় আবুল হাসান আলী নদভী রহ. এর চিত্তপ্রসাদ। আলী নদভীর প্রতিটি বক্তৃতা আল্লামা ইকবালের কোনো না কোনো কবিতার ব্যাখ্যা। তাঁর প্রত্যেকটি রচনাই ইকবালের কোনো না কোনো কবিতার ব্যাখ্যা! আসরারে খুদি, রুমূযে বে-খুদি, দারবে কালীম, বাঙ্গে দারা, বালে জিবরিল- এসব কাব্যের একেকটি পঙক্তি নিয়ে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লেখা যাবে। ইকবাল কবিতাতে দর্শন আনেন নি, বরং দর্শনকেই কবিতা বানিয়ে ছেড়েছেন।’
শেষবাক্যটি দারুণ লাগলো। আলাউদ্দিন কবির ও আমি আবার আওড়ালাম। বেশ ইন্টারেস্টিং কথা!
****
ফেসবুকে কবির আইডিতে গেলাম। দেখলাম, ‘সময়ের সেরা আলেম কবি’র সম্মাননা তিনি নেবেন না। হুম। নেননি। অসাধারণ এক সাহসী সিদ্ধান্ত। সময়োচিত পদক্ষেপ! কবির প্রতি আরেকবার মুগ্ধ হলাম। কেউ নিজেকে ফুটাতে চান, কেউ নিজেকে লুকাতে চান! এই হলো ফারাক! এই হলো সৌরভের বিচিত্রতা!!
সময়ের সেরা আলেম কবি হওয়াতে আমার দ্বিমত নেই। তবে এই শিরোনামে সম্মাননা দেওয়াটা আপত্তিকর হতেই পারে! কারণ, তাতে অনেক ফাঁকফোঁকর আছে। দৃশ্যত এই শিরোনাম স্বতঃস্ফূর্ত নয়। বিভাজন সুস্পষ্ট। সময়ও এটির পক্ষে না। সুযোগসন্ধানীদের জন্যে তা হতে পারে তির্যক মন্তব্যের খোরাক। হয়েছেও।
তবে পরে হলেও কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্তে সংশোধনী এনেছেন, তা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। এসবের পরও যারা এই বিতর্কে সরব আছেন, সেরা কি সেরা না, তা নিয়ে চায়ের কাপে ধোঁয়া তুলছেন, তারা আশা করি থামবেন।
****
খেতে বসলাম কবির সাথে। নোঙর রেস্তোরাঁয়। জিহান ভাইয়ের আতিথেয়তায়। সাথে আছেন আমার বড় মুহসিন শ্রদ্ধাভাজন মুহাম্মাদ হাবীবুল্লাহ, মুহতরম লিসানুল হক, খন্দকার হামিদুল্লাহ ভাইসহ আরো অনেকেই! আমি ভোজনরসিক না হলেও ভালোই খেলাম। থ্যাঙ্কু জিহান ভাই!
কবি খাবার টেবিলেও নীরব নন! তিনি বলেই চলেন নানান কথা। বেশ পরিপাটি করে। গেঁথে গেঁতে! চট্টগ্রামে একটি প্লাটফর্ম দাঁড় করানোর কথা আবারো বললেন। বললেন এর বিবিধ উপকারিতার কথা।
‘পাশ্চাত্য দর্শনে মুসলমানদের অবদান’ সম্পর্কে জানতে চাইলেন সাজ্জাদ ভাই।
তিনি সংক্ষেপে আলোচনা করলেন বইটির প্রেক্ষাপট, ধরন, উদ্দেশ্য ও সারমর্ম। আমরা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনলাম। অপূর্ব এক দার্শনিক বিবরণ। কবির চিন্তা, জ্ঞানগভীরতা ও গবেষণাসরোবরে আবারো তলিয়ে গেলাম।
তিনি বলেন, ‘ডেকার্টে, হেগেল, কান্ট প্রমুখকে মনে করা হয় দর্শনের পয়গম্বর। তা-ই গিলছে আমাদের শিক্ষিত সমাজ। তাদের দর্শন যে মুসলমান দার্শনিকদের কাছ থেকে আহরিত- তা-ই বয়ান করেছি এই বইয়ে। এটিকে ‘মতন’ বলতে পারেন। দীর্ঘ ‘শরাহ’ও লেখা যাবে তা নিয়ে।’
****
বক্তৃতার মঞ্চে আবিষ্কার করলাম অন্য এক মুসা আল হাফিজ। প্রথমেই আন্দোলিত হলাম হবিগঞ্জী হযরতের খলিফা জানতে পেরে! এরপর জিহান ভাইকে স্পীকার এগিয়ে দেওয়ার দৃশ্যটি আমাকে কেন, পুরো অডিয়েন্সকেই মুগ্ধ করেছে।
তিনি বক্তৃতা দিলেন। শ্রোতাদেরকে সঙ্গে নিয়ে ডুব দিলেন ইতিহাসের পাতায়। তুলে আনলেন অসংখ্য মুক্তোদানা! ইসলামের ইতিহাসের উত্থান-পতনে দুলতে দুলতে একসময় তীরে ভিড়লেন। কথায় তাঁর অদ্ভুদ ধীর তবে তেজস্বী উচ্চারণের সহজাত গতীময়তা। তৃষ্ণার্ত শ্রোতারা পান করলেন তাঁর সেই অবিরাম মধুবর্ষণ। একঝাঁক স্বপ্নবাজ তরুণ বুকপকেটে সযত্নে ভরে নিলেন আগমী দিনের পাথেয়। দরদি দিলের মানুষটির প্রতি সবার শ্রদ্ধা-ভালোবাসা বেড়ে যায় বহুগুণে।
কী বলেছিলেন তিনি সেখানে? তা ভিডিওতে আপনারা পাবেন। তবে যে কথাটি এখানে বলার লোভ সামলাতে পারছি না, তা হলো, ‘চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কাকে এগিয়ে আসতে হবে?’ -প্রশ্ন রাখলেন শ্রোতাদর্শকের কাছে। তারা বললেন, ‘আমাদেরকে।’ তিনি বললেন, ‘নাহ, ভুল! বরং আমাকে, আমাকে এবং আমাকে!’ বড় তাৎপর্যপূর্ণ কথা!
অনুষ্ঠান শেষে কবি পড়লেন ভক্তদের খপ্পরে! কেউ মুসাফাহা, কেউ ছবি-সেলফি, কেউ অটোগ্রাফ শিকার করে নিলো। চমৎকার সব কথা লিখে দিলেন অটোগ্রাফে। ছবি তোলার প্রতি তাঁর তেমন আপত্তি না থাকলেও আগ্রহও যে নেই- বুঝলাম। তারপরও সেলফি যুগের ভক্ত বলে কথা!
কবিকে শোধালাম, কেমন লাগল অনুষ্ঠান? বললেন, ভালোই তো! সুন্দর আয়োজন!
****
আহমদ প্রকাশনে কফিচক্র চলছে। ভাবলাম, কবির সাথে ছবি তো তোলা হলো না, অটোগ্রাফও কি নেওয়া হবে না? ইতোমধ্যে কবির ব্যাগ থেকে বের হলো দুটি ‘পরম সাঁতার’। প্রায় কেড়েই নিয়ে ফেললাম একটি। অটোগ্রাফও শিকার করে নিলাম এক নিমিষেই! লিখলেন, ‘ছড়াকার ইযাযুল হক তোমার জন্য ভালোবাসা।’
এতক্ষণে মুহতরম লিসান ভাইসহ জড়ো হলেন অনেকে। আবার শুরু হলো কবির আলাপচারিতা। জীবনের বাঁকে বাঁকে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন অভিজ্ঞতা আলোচনায় ওঠে এলো।
কবি বই কিনলেন আহমদ প্রকাশন থেকে। টাকা দিলেন জোর করে। এটি তাঁর অভ্যেস। শেখার মতো।
প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই কবিকে বিদায় জানালাম। তাঁর সারল্য, অমায়িক আচরণ, দরদমাখা কথা আর একরাশ ভালোলাগা-ভালোবাসা বাতাসে আতরের মোহনীয় ঘ্রাণ ছড়িয়ে দেয়। আমি তাতে সাঁতার কাটি; পরম সাঁতার।…
ইযাযুল হক
চট্টগ্রাম
২৩/১০/১৭