মঙ্গলবার, ৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ৯ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

উচ্চবিত্তের ধর্মপালনঃ আমাদের সতর্ক মন্তব্য উপকার বৈ অপকার হবে না ইনশাআল্লাহ – লুৎফর রহমান ফরায়েজী

 

ইদানিং সারাবিশ্বেই মুসলিম হচ্ছেন অনেক হাইপ্রোফাইল। নিকটতম সময়ে বাংলাদেশসহ আমাদের উপমহাদেশে বেশ কিছু সেলিব্রেটি ফিরে এসেছেন প্রা‌ক্টি‌সিং ইসলামে। ভারতের নন্দিত সংগীত তারকা এ আর রহমান। পাকিস্তানের মুহাম্মদ ইউসুফ যেমন পূর্ব ধর্ম ছুড়ে ফেলে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছেন। তেমনি পাপের দুনিয়া ছেড়ে মুসলিম নামের খোলস খুলে সত্যিকার মুসলিম হবার চেষ্টায় আত্মনিয়োগ করেছেন নামী ক্রিকেটার ইনজামামুল হক, সাকলাইন মুস্তাকসহ অনেকে। পপ সংগীতের জৌলুসের দুনিয়া ছেড়ে তাবলীগের ঘাটুরী মাথায় তুলেছিলেন জুনায়েদ জামশেদ রহঃ। বলিউডের নষ্টামীর জগত ছেড়ে দ্বীন পালনের প্রত্যয়ী হয়েছেন ভিনা মালিক। বাংলাদেশের সেলিব্রেটি নায়ক অনন্ত জলিলও এখন তাবলীগের একান্ত দাঈ। কাজী ইরতেজার মত আপাদমস্তক বিজনেসম্যানরাও সময় দিচ্ছেন দাওয়াত ও তাবলীগে। নায়িকা হ্যাপীরাও নগ্নতার জগত ছেড়ে নিজেকে ঢাকছেন বোরখার পবিত্র চাদরে। কখনো সখনো শুনা যায়, চলচিত্রের রঙ্গীন দুনিয়ার কতিপয় ব্যক্তিরাও মাওলানা উসামার বদৌলতে ফিরে আসছেন দ্বীনে ফিতরাতে। আলহামদুলিল্লাহ!

আমরা যারা রক্ষণশীল পরিবারে বড় হয়েছি। ছোট থেকেই পেয়েছি দ্বীনী পরিবেশ। পর্দাবৃত পেয়েছি নিজের স্বজনদের। দেখেছি বাদে তাহাজ্জুদে মায়ের শেষ রাতের ক্রন্দন। বাবার জিকির। শুনেছি বোনদের তিলাওয়াতে কুরআন। কিছু না বুঝার আগেই ছুটেছি কুরআন হাতে মক্তবে। বড় হয়েছি ইলমে ওয়াহীর চাদর ঘেরা নিরাপদ আশ্রয়ে। তাদের কাছে বাহিরের জগতকে বড় বিস্ময়কর লাগে। আমাদের বোনেরা, ভাগ্নিরা মেয়েদের উদ্দাম চলাফেরায় আশ্চর্য হয়। এভাবে মুখ খুলে, সৌন্দর্য প্রকাশ করে মেয়েরা চলে কিভাবে? পরপুরুষের সাথে অনবরত কথা বলে কিভাবে?
আমিতো পর্দানশীন এমন অনেক স্বজনকে দেখেছি যারা বিয়ের জন্য ছেলে দেখতে আসলেও সামনে যেতে আড়ষ্ট হয়ে যেতে। ভয়ে কুঁকরে যেতে। অঝরে কেঁদে দিতে। এতদিন কারো সামনে যাইনি। এখন এক পরপুরুষের সামনে যাবো কিভাবে?

এটা এক জগত। দ্বীনী পরিবেশে বড় হওয়া মানুষদের স্বাভাবিক জীবনই ধর্ম পালনে উদ্ভুদ্ধ করে। এটাকেই স্বাভাবিক জীবন হিসেবে মেনে নেয়। তাদের কাছে বাহিরের উদ্দাম জগত এক নষ্টামী ও অস্বাভাবিকই শুধু নয়। কষ্টকরও বটে।

কিন্তু ঠিক এর বিপরীতে জেনারেল শিক্ষিত পরিবারে। উপরে গেলে উচ্চবিত্ত পরিবারে নারী পুরুষ অবাধে মেলামেশা এতো স্বাভাবিক। পর্দায় ঢাকা নারী সেতো মধ্যযুগীয় বর্বরতা। ধর্মীয় জীবন এতো ঈদের জামাত, কুরবানীতেই সীমাবদ্ধ। ভোগ, বিলাস, সুনাম সুখ্যাতি, অর্থবিত্ত। এটাই দুনিয়া। এটাই সুখের ঠিকানা।

সুখ ও শান্তি আসলে আপেক্ষিক বিষয়। দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়। দৃষ্টি উল্টে দিলেই পরিবেশ পাল্টে যায়। মন বদলে যায়। বিস্বাদও স্বাদে-আহলাদে গদগদ হয়। দশতলার মালিক বিশতলার মালিককে দেখে যেমন দুঃখী হতে পারে, তেমন উদ্বাস্তুকে দেখে সুখের সাগরে ভাসতে পারে। পার্থক্য দৃষ্টিতে। মানসিকতায়।

অর্থবিত্তের সুখের খাটিয়ায় যাদের জন্ম। সোনার চামচ মুখে দিয়ে যাদের দুনিয়ায় আগমণ। এ মানুষগুলো হঠাৎ করে পুরোদস্তুর প্রেক্টিসিং ধার্মিক হওয়া আসলে কঠিন।
এটা আমাদের বুঝতে হবে। তাদের পরিবেশ ও পরিস্থিতি অনুপাতেই ভাবতে হবে বাস্তবতা।
হ্যাঁ, অবশ্যই হ্যাঁ। পূর্ণাঙ্গ মুসলিম হওয়াই ইসলামের বিধান। আধা মুসলিম হওয়া নয়। ইসলামের প্রতিটি বিধান যথাযথভাবে পালন করাই প্রতিটি মুসলিমের কর্তব্য। কিন্তু তা আমরা জোর করে কারো উপর চাপিয়ে দিতে পারি না। বাজারে রাস্তায়, যত্রযত্র, সমালোচনার তীরে বিদ্ধ করে ধর্ম পালনে নতুন আগ্রহীকে হতাশ করতে পারি না। নোংরা জগত ছেড়ে আসা মানুষটিকে শুরুতেই মঈনুদ্দীন চিশতী আর ইব্রাহীম বিন আদহামের আসনে বসিয়ে কল্পনা করতে পারি না। এটা অদূরদর্শীতা। স্থুল চিন্তা ছাড়া আর কী’ই বা হতে পারে?

কাছে যাই। বুঝাই। কাছে টানি। ইসলামকে সুন্দর করে উপস্থাপন করি। বিধানগুলোর বাস্তবতা তুলে ধরি। ইনশাআল্লাহ যে মানুষ সুখের গড্ডালিকা খানিক ছাড়তে পেরেছেন তিনি আমাদের মেহনতে হয়তো পুরো দস্তুর মুত্তাকীই হয়ে যাবেন। আশায় বুক বাঁধি।

আমরা সবাই সব কাজ করতে পারি না। পারবোও না। এটা সম্ভব নয়। তবে পরস্পরের কাজকে সাপোর্ট দিতে হবে। সহনশীল হতে হবে। অন্যের কাজকে শ্রদ্ধা করতে হবে। উৎসাহ দিতে হবে।
সমালোচনা করা যতোটা সহজ। কাজ করা ততোটা সহজ নয়। যারা কাজ করে তারাই সমালোচনার লক্ষ্যবস্তু হয়। এটাই স্বাভাবিক।
আমি কী করছি? কিভাবে করছি? এটাই আগে ভাবা উচিত। অন্যের ভাল কাজের নিন্দা, অহেতুক দোষ খোঁজার নোংরা মানসিকতা থেকে বিরত থাকতে হবে।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে তার দ্বীনের খাদিম হিসেবে কবুল করুন। আমীন। ছুম্মা আমীন।

বিঃদ্রঃ এটা কেবলি আমার ব্যক্তিগত মতামত। ভিন্নমত থাকাই স্বাভাবিক। সকল যৌক্তিক ভিন্নমতকে আমি শ্রদ্ধার নজরেই দেখি আল্লাহর রহমাতে।

Archives

March 2024
S S M T W T F
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031