রবিবার, ২১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩রা রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

রোহিঙ্গাদের আর্তনাদ – এসো গল্প শুনি: ১ – শায়েখ হাসান মুহম্মদ জামিল

Khutbah Tv 

গল্প সিরিজটা অবশেষে শুরুই করে ফেললাম। আরকানী মোহাজিরদের গল্প। এ গল্প হাসির নয়, নয়তো বানানো কল্পকাহিনী!
এ গল্প তাওহীদে বিশ্বাসী নির্যাতিত এক জাতির। এ গল্প আমার নিজ চোখে দেখা বাস্তব কিছু হৃদয় চূর্ণ করা উপাখ্যান!

Image may contain: 1 person
গতকাল (২৭/৯/১৭) সকালেই বের হই অবস্থানস্থল উখিয়া থেকে।
গন্তব্য শাহ পরীর দ্বিপ; নতুন মুহাজিরদের খেদমতে।
টেকনাফ জামেয়া হয়ে নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছলাম। প্রথমেই গেলাম আশ্রয় কেন্দ্রে, যেখানে প্রায় তিনহাজার মুহাজিরদের স্থায়ী ক্যাম্পে পাঠানোর ব্যবস্থা করছেন আমাদের গর্ব সেনারা। এক জায়গায় চোখ আটকে গেল, নারী-শিশুসহ বিশ-পঁচিশজনের ছোট্ট গ্রুপ। দেখেই বুঝা যাচ্ছিল এরা সম্ভ্রান্ত পরিবার। সবাই ছুটাছুটি করলেও এরা চুপচাপ। সবার মুখে ক্লান্তির ছাপ। বাচ্চাগুলোর চেঁচামেচিতে বুঝতে কষ্ট হচ্ছিলো না পেট খালি! আমাদের দিকে তাদের করুন চাহনি হৃদয় ছেদ করছিল।

Default Ad Content Here

Image may contain: 4 people, people standing, wedding, sky, child and outdoor
এক দৃশ্যে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারিনি, মনে পড়েছে নিজের সন্তানদের কথা, অশ্রু টলমল, সব ঝাপসা লাগছিল, হারিয়ে গিয়েছিলাম আশংকার দূর ভবিষ্যতে!
সঙ্গীদের হুকুম করলাম, দোকানের সব কলাগুলো নিয়ে আস, আহ একেকটা কলা যেন একেকটা চাঁদ!
ছুটলাম আবার মূল দ্বিপের দিকে, যে নদীতে আমার ভাইয়ের পবিত্র রক্ত মিশে আছে, তাতে অযু করলাম। অদূরে দেখা যাচ্ছে ঝলসে যাওয়া বাড়ীঘর। দেখছি আর ভাবছি, হাজ্জাজ বিন ইউসুফের চেয়েও আমি বড় আত্মমর্যাদাহীন, ঈমানী গাইরাত প্রায় শূন্য। ধর্ষিতা বোনের আর্তচিৎকার আমাকে জাগাতে পারেনি। ছিন্নবিচ্ছিন্ন ভাইয়ের গোঙ্গানি আমার হৃদয় নাড়ায়নি; আমি অথর্ব এক বাকশক্তি সম্পন্ন জিব!
এসব ভাবতে ভাবতেই ফিরছিলাম। গন্তব্যস্থান উখিয়া।
আমাদের গাড়ী একটি মিনি ট্রাক ক্রস করতেই নজরে পড়লো ট্রাক খালি নয়, কিছু আদম সন্তান গরু-ছাগল স্টাইলে ভেতরে। সুবিধামত জায়গায় গাড়িটি থামালাম। সবাই নামলাম। রাজ্যের হতাশা নিয়ে সবাই চেয়ে আছে আমাদের দিকে। এরাও মাত্র ঢুকেছে। ট্রাক ড্রাইভারও নেমে আসলো। ওর মাধ্যমেই কথা বললাম, সেই পুরনো প্রবলেম; পেট খালি! 

Image may contain: 4 people, people smiling, people sitting, child and outdoor
একজন মহিলার সামনে যেতেই কলজেটা মোচড় দিয়ে উঠলো। ছলছল নয়নে তাকিয়ে আছে। বুঝাই যাচ্ছে-কেঁদে চলেছে অবিরাম। ছোট ছোট বাচ্চাদের জড়িয়ে বসে আছে। কেউ ঘুমাচ্ছে, কেউ সজাগ। ইশরায় জিজ্ঞেস করলাম-খেয়েছে কি না? ইশারায় উত্তর-দুইদিন হলো খায়নি কিছু!
আর দেরি নয়, সাথীদের হুকুম করলাম, দোকানের সব কলা, কেক, রুটি যা আছে জলদি হাজির করো। আমি পানি নিয়ে সবাইকে দিলাম। আহ বাচ্চাগুলোর খাওয়ার দৃশ্যে পাষাণহৃদয় ছাড়া কেউ চোখের পানি আটকাতে পারতো না!
তাদের বিদায় দিয়ে আবারো ছুটলাম সামনে। কিছুদূর যেতে আরো একদলের সাক্ষাত, সংখ্যায় আগের চেয়ে তিনগুণ।
আগের মত গাড়ী থামালাম। ড্রাইভার ভাড়া নিয়ে কিছু আপত্তি জানাচ্ছিল, সেনারা জোর করে কম পরিষোধ করে উঠিয়েছে। তাকে আস্বস্ত করলাম, ওদের সাথে কোন দূর্ব্যবহার নয়, তোমার চাহিদা আমি মেটাবো।
এবার ওদের সাথে কথা, সেই একই সমস্যা, ক্ষুধার জ্বালা!
চার-পাঁচ বাচ্চাকে জড়িয়ে থাকা মায়ের সামনে দাঁড়ালাম, তিনি নিজেকে আড়ালের চেষ্টা করছেন। বুঝলাম-দুনিয়া হারালেও দ্বীন হারাননি!
একটা বাচ্চা খুব কাশছিল, বমি করছিল। তাদের কষ্টের দৃশ্যে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারিনি, ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলাম, আল্লাহ রহম করুন!
কল্পনায় শুধু নিজের সন্তান! আল্লাহ পানাহ চাই!
তাদের হালকা নাস্তা দিয়ে বিদায় জানালাম….
আমরাও ফিরে আসলাম গন্তব্যে, এভাবেই চলছে আমাদের গল্প আঁকা।
الحمد لله الذى عافانى مما ابتليك به وفضلنى على كثير ممن خلق تفضيلا

Archives

October 2024
S S M T W T F
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031