বুধবার, ৯ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ই মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

নওমুসলিমদের সাক্ষাৎকার [পর্ব-০৩] :: ভারতীয় নওমুসলিমা সফিয়্যা (সরোজ শালনী) -এর সাক্ষাৎকার


মাওলানা সাহেব বললেন। এসব রোগীই আমার। এজন্য আমাদের বড়রা বলেছেন, সকল মানুষ একই মা-বাপের সন্তান। এখানে ভর্তি সকল রোগীর সঙ্গেই আমার রক্তের সম্পর্ক রয়েছে। যেই মালিক আপনাকে এবং আমাকে সৃষ্টি করেছেন। তাঁর কাছে এই ‘আমার-তোমার’ একেবারেই পছন্দ নয়। আর যা পড়ে আমি ফুঁক দিচ্ছি তা সেই মালিকের কালাম (বাণী) যিনি তাঁর কালামে একথা বলেছেন আর আপন সংবাদ বাহক হযরত ইবরাহীম এর মুখ দিয়ে একথা বলিয়েছেন। আর হযরত ইবরাহীম তো তিনি যাঁর নামের ওপর ভারতের লোকেরা নিজেদের ব্রহমন (ব্রাহ্মণ)বলে। তিনি স্বীয় মালিকের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছেন, আমার মালিক তো তিনি, আমি পীড়িত হলে যিনি আমাকে সুস্থ করে তুলেছেন।

আপনি প্রতিদিন দেখে থাকবেন, দেখছেন, আপনি আপনার চিন্তা-ভাবনা থেকে রোগীর জন্য ভাল ভাল ওষুধ প্রেসক্রাইব করছেন। রোগী সেসব ওষুধ খেয়ে সুস্থ হচ্ছে, এর পর মারা যাচ্ছে। আবার কখনো কোন রোগীর ভুল চিকিৎসার পর রোগী ভাল হয়ে যাচ্ছে। 

ডা.সফিয়্যা


আসমা : আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।

সফিয়্যা :ওয়া আলাই কুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।

প্রশ্ন : ডাক্তার সাহেবা! আজমীর থেকে আব্বু ফোন করেছিলেন। তিনি বলেছেন যে, আপনার ফোন এসেছিল। আমি যেন আপনাকে আমাদের এখানে আসতে খবর দেই এবং আপনার সঙ্গে কিছু কথা বলি। আপনি হয়তো জানেন যে, আমাদের এখানে ফুলাত থেকে একটি উর্দূ পত্রিকা প্রকাশিত হয়। যার উদ্দেশ্য হলো আমাদের রক্ত সম্পর্কীয় ভাই-বোনদের বিশেষত দেশবাসী অমুসলিম ভাইদের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছানো এবং তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বাাঁচাবার চিন্তা-ভাবনা ও দায়িত্ববোধ সৃষ্টিকরা, মসলমানদের সজাগ ও সচেতন করা । এতে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ কারী  সৌভাগ্যবান ভাই-বোনদের আত্মকাহিনী প্রতি মাসে প্রকাশিত হয়। আব্বুর একান্ত ইচ্ছা ছিল ২০০৫সনের আগামী সংখ্যায় আপনার সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হোক।

উত্তর : আমি পনের দিন যাবত মাওলানা সাহেবকে ফোন করার চেষ্ট করছিলাম। আমার কাছে তাঁর ইউ.পি ও দিল্লীর ফোন নম্বর ছিল। কিন্তু পাচ্ছিালাম না। গতকাল আকস্মিকভাবেই উনার ফোন পেয়ে যাই। তিনি আমাকে দিল্লীর বাসার ফোন নম্বর দেন এবং খুব তাকীদ দিয়ে বলেন আমি যেন আপনাকে ফোন করে চলে যাই। কারণ, ম্যাগাজিন প্রেসে পাঠাতে হবে আর এটি ছিল প্রেসে পাঠাবার একদম শেষ তারিখ। মাওলানা সাহেব আমাকে আরও বলেছেনÑ এই সব সাক্ষাৎকার দাওয়াতের পরিবেশ সৃষ্টিতে বড় ধরণের ভুমিকা পালন করছে। আমি মনে করলাম এই মহত কাজে আমারও কিছুটা অংশ থাকুক। এখন আপনি আমার থেকে যা চান জানতে পারেন।

নওমুসলিমদের সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসুন 

প্রশ্ন : শুকরিয়া। প্রথমে আপনি আপনার পরিচয় দিন।

উত্তর : আমার পুরনোর নাম সরোজ শালনী। ১৯৭৮ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর লক্ষেèৗর কাছে মোহন লালগঞ্জে এক ব্রাহ্মণ পরিবারে আমার জন্ম। আমার পিতা ড.কে.এ.শর্মা ছিলেন একজন অধ্যাপক এবং কার্ডিওলাজিতে তিনি ডি.এম (ডক্টর অব মেডিসিন) করেছেলেন। এরপর তিনি বেশ কিছু কাল পান্থ হসপিটালে থাকেন। দশ বছর যাবত লক্ষেèৗ বাসার কাছাকাছি চেষ্টা-তদবীর করে বদলী হন। আমার মা একজন গৃহিনী। আমার পিতা মেযাজে একজন হিন্দুস্তানী। তিনি কেবল প্রাচ্য সভ্যতা-সংস্কৃতির প্রতি ঐকমত্য পোষণ করেন। এজন্য তিনি আপন পরিবারের সদস্যদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে বহু ডাক্তার ছেড়ে আমার মা’কেই পসন্দ করেন ও বিয়ে করেন। আমার দুই ভাই । একজন বানারস ইউনিভার্সিটিতে রীডার এবং অপরজন বি,এইচ,এল-ল ইঞ্জিনিয়ার। দু‘জনেই আমার বড়। আমি ইন্টার সায়েন্স বায়োলজিতে প্রথম বিভাগে পাশ করি। এরপর পি,এম,টি, প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণ হই। লক্ষেèৗ মেডিক্যাল কলেজ থেকে এম,বি,বি,এস করি এবং মওলানা আযাদ মেডিক্যাল থেকে এস,ডি,করি। অতঃপর পিতার ইচ্ছানুক্রমে কার্ডিউলজি (হৃদরোগ) কে বিষয় হিসাবে নির্বাচন করি। এখন আমি অওগঝ  থেকে উগ করছি এবং বর্তমানে অওগঝ –এ কার্ডিওলজি ডিপার্টমেন্টে চাকুরীও করছি। আমি এখন থেকে এক বছর চার মাস চার দিন দু‘ঘন্টা আগে ২০০৪ সালে ২০মে রোজ বৃহস্পতিবার বেলা এগারটার সময় গ্রীন পার্ক মসজিদে গিয়ে আপনার আব্বুর হাতে ইসলাম গ্রহণ করি।

প্রশ্ন: আপনার ইসলাম কবুলের ঘটনা এবং এর কারণ সম্পর্কে একটু বিস্তারিতভাবে বলুন!

উত্তর : ২০০৩ সালের জুনে ল.প.প.ঁ শিশুদের ওয়ার্ডে আমি ডিউটিরত ছিলাম। দেখলাম একজন মওলানা সাহেব হরিয়ানার একটি শিশুকে দেখতে এসেছেন। শিশুর পাশে একজন এটেন্ডন্ট। বাচ্চার মা হরিয়ানার শিশুটির পাশে দাঁড়িয়ে গেল এবং তাঁর বাচ্চাকে ফুঁক দিতে বলল। মাওলানা সাহেব বাচ্চাটিকে কিছু পড়ে ফুঁক দিলেন। এরপর পাশেই অপর এক বাচ্চার মাও দাঁড়িয়ে তার চাচ্চাটিকে ফুঁক দিতে বলল। মাওলানা সাহেব তার বাচ্চাকেও ফুঁক দিলেন। এভাবে তিনি ছয়টি বাচ্চাকে তাদের পাশে দাঁড়িয়ে ফুঁক দিলেন। ডিপার্টমেন্টের হেড ডাক্তার ত্যাগীর এসময় ছিল রাউন্ড দেবার সময়। আমি সামনে থেকে দেখতে ওয়ার্ডে এলাম এবং মাওলানা সাহেবকে বললামÑ আপনার রোগী কে? আপনি কখনো এ রোগীর কাছে আবার কখনো ও রোগীর কাছে যাচ্ছেন এবং ঝাড়-ফুঁক করছেন। এটা ল.প.প.ঁ এখানে রোগীর ইনফেকশন হবার সমূহ আশংকা বিদ্যমান।

মাওলানা সাহেব বললেন। এসব রোগীই আমার। এজন্য আমাদের বড়রা বলেছেন, সকল মানুষ একই মা-বাপের সন্তান। এখানে ভর্তি সকল রোগীর সঙ্গেই আমার রক্তের সম্পর্ক রয়েছে। যেই মালিক আপনাকে এবং আমাকে সৃষ্টি করেছেন। তাঁর কাছে এই ‘আমার-তোমার’ একেবারেই পছন্দ নয়। আর যা পড়ে আমি ফুঁক দিচ্ছি তা সেই মালিকের কালাম (বাণী) যিনি তাঁর কালামে একথা বলেছেন আর আপন সংবাদ বাহক হযরত ইবরাহীম এর মুখ দিয়ে একথা বলিয়েছেন। আর হযরত ইবরাহীম তো তিনি যাঁর নামের ওপর ভারতের লোকেরা নিজেদের (বারাহিমী) ব্রাহ্মণ বলে। তিনি স্বীয় মালিকের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছেন, আমার মালিক তো তিনি, আমি পীড়িত হলে যিনি আমাকে সুস্থ করে তুলেছেন।

আপনি প্রতিদিন দেখে থাকবেন, দেখছেন। আপনার ধারণা অনুযায়ী রোগীর জন্য ভাল ভাল ওষুধ প্রেসক্রাইব করছেন। রোগী সেসব ওষুধ খেয়ে সুস্থ হওয়ার পরিবর্তে মারা যাচ্ছে। আবার কখনো কোন রোগীর ভুল চিকিৎসার পরও রোগী ভাল হয়ে যাচ্ছে।

এধরনের কথা আমি এই প্রথম শুনলাম। গত সপ্তাহে আমাদের ওয়ার্ডে ছয়জন শিশু মারা গিয়েছে। এদের মধ্যে চারটি বাচ্চা ছিল খুব সুন্দর। দু‘সপ্তাহ ওয়ার্ডে থাকার কারণে তাদের প্রতি আমার একটি মায়াও বসে গিয়েছিল। তাদের মৃত্যুতে আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। মাওলানা সাহেবের মুহাব্বত ভরা কথা শুনে আমার মনে হল তাঁর আরও কথা আমার শোনা দরকার। আমি মাওলানা সাহেবকে আমার কেবিনে আসতে অনুরোধ করি। তিনি আমার ডকে সাড়া দেন। মাওলানা সহেব আমাকে বললেন, আপনি আমার ছোট বোন বা আমার সন্তানের মত। আপনি আমাকে ভালবেসে এখানে ডেকে এনেছেন। আপনার কাছে আমার বিনীত আবেদন, আপনার ওয়ার্ডে আগত রোগীদের আপনি নিজের সন্তান কিংবা ভাই বা বোন মনে করবেন এবং তাদের ব্যথা ও কষ্টকে সেইভাবে নেবেন। মালিক আপনাকে কত সুন্দর সুযোগ দিয়েছেন যে, পেরেশান-হাল লোকদের দুঃখ ও ব্যথায় আপনাকে শরীক করেছেন। আপনি খুব পরিমাপ করে থাকবেন যে, যেই মার বাচ্চা হয়েছে আর সে এতটা অসুস্থ যে, তাকে ল.প.প.ঁ তে ভর্তি হতে হয়েছে। আর সাধারণত সরকারী হাসপাতালগুলোতে তারাই ভর্তি হয় যাদের কোথাও আশ্রয় নেই। তাদের সঙ্গে এতটুকু সদয় ও সহানুভূতিপূর্ণ আচরণ যদি আপনি করেন তাহলে তাদের প্রতিটি পশম বরং তাদের অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে আপনার জন্য দুআ বের হবে।

পরিশেষে তিনি খুুব দরদের সাথে আমার নাম জিজ্ঞেস করলেন এবং বললেন, ডক্টর শালনী! আপনি আমার রক্ত সম্পর্কীয় বোন! এজন্য আমি আপনাকে উপদেশ দিচ্ছি না, বরং আপনাকে ওসিয়্যত করছি। আর ওসিয়্যত তো তাকে বলা হয় যা কোন মৃত্যুপথযাত্রী মৃত্যুর পূর্বে তার সন্তানদের উদ্দেশ্য করে অন্তিম কথা হিসেবে বলে। আর তা এই যে, আপনি আপনার ওয়ার্ডে আগত প্রত্যেক রোগীর চিকিৎসা সবচে‘ বড় পূজা মনে করে করবেন। আপনি শত বছরের তপস্যা ও কঠিন পূজার মাধ্যমে মালিকের কাছ সেই আসন পাবেন না যা কোন দুঃসহ ব্যথা-বেদনাকাতর ও বিপদগ্রস্ত মাতা-পিতাকে সান্তনা দানের মাধ্যমে পাবেন।

আমি মাওলানা সাহেবকে অনেক ধন্যবাদ জানালাম এবং ওয়াদা করলাম যে, আমি চেষ্টা করব। মাওলানা সাহেব চলে গেলেন। ডাক্তার সাহেবের-রাওন্ডের পর আমি পানিপথ হরিয়ানার ঐ বাচ্চার বাপ থেকে জানতে চাইলাম মাওলানা সাহেব কে? তিনি বললেন, ইনি আমাদের হযরতজী। তিনি খুব ভাল মানুষ। তাঁর হাতে হাজার হাজার হিন্দু মুসলমান হয়েছে।

এরপর অনেক দিন পর্যন্ত তাঁর কথার প্রভাব আমার মনের ওপর ছিল। বিশেষ করে সেই কথাটি যে, এসব রোগীই আমার। যেই মালিক আমাদের সৃষ্টি করেছেন। তার কাছে এটা আমার আর ওটা তোমার পছন্দনীয় নয়। আমিও অনুভব করি যে, মাওলানা সাহেবের ঝাড়-ফুঁকের পর রোগীদের মধ্যে আশ্চর্য ধরণের পরিবর্তন এসেছে। সব রোগীই সুস্থ হয়ে ওয়ার্ড থেকে বিদান নিল। কিন্তু কিছুদিন অতিবাহিত হবার পর ক্রমান্নয়ে এ স্মৃতি ঝাঁপসা হতে থাকল।

মাওলানা আযাদ মেডিক্যাল কলেজে আমার রুম পার্ঠনার ছিল ডা.রীনা সেহগাল। সে গাইনীতে এম,এস করছিল। পরে সে সফদর জঙ্গ হাসপাতালে গাইনী বিভাগে চাকুরী পায়। আমাদের ভেতর ভাল বন্ধুত্ব ছিল। একদিন সে আমাকে খাবার খেতে ডাকল। খাবার দাবারের পর আমরা আলাপচারিতায় লিপ্ত হলাম। তার এখানে একজন মুসলিম মহিলা কাজ করতে আসত। ওই মহিলা খাবার রান্না থেকে শুরু করে সব কাজই করত। আমি তাকে বললাম, তুমি রান্নার জন্য মুসলমান বাবুর্চি রেখেছ কেন? কোন হিন্দু মহিলা পাওনি? সে বলল, এই যে মেয়েটি তুমি দেখছ বড় ভাল মেয়ে। খুবই সৎ ও ঈমানদার। কয়েক বার আমার টাকার পার্স (মানিব্যাগ) পড়ে গেছে, যে অবস্থায় পেয়েছে সেই অবস্থায় আমার হাতে তুলে দিয়েছে। অতঃপর কথায় কথায় মুসলমানদের কথা উঠল। ডা. রীনা বলল, আমাদের দেশে বরং বিশ্বের যেখানেই মুসলমানদের বিরুদ্ধে মিডিয়াতে কথা উঠছে মানুষ মুসলমান হচ্ছে। কত বড় বড় বিরাট ব্যক্তিত্ব মুসলমান হয়ে যাচ্ছেন। মাইকেল জ্যাকসন সম্পর্কে তুমি হয়তো জেনে থাকবে, সেও মুসলমান হয়ে গেছে। দূরে কি স্বয়ং আমাদের হাসপাতালেই কার্ডিওলজি বিভাগের এক যুবক ডা. বলবীর সেও বছর দুয়েক আগে মুসলমান হয়ে গেছে। সে তো এও চায় যে, গোটা হাসপাতালের সকলেই মুসলমান হয়ে যাক।

আমি একজন রোগীর চেক আপের জন্য তাকে ডেকে পাঠাই। এসেই সে আমাকে বলল, যদি মৃত্যুর পর নরকের হাত থেকে বাঁচতে চাও তাহলে মুসলমান হয়ে যাও।

একথা শুনে আমার ওয়ার্ডে আগত মাওলানা সাহেবের কথা মনে পড়ল। এবং তাঁর সকল কথা জীবন্ত হয়ে উঠল। আমি ডা. রীনাকে বললাম ডা. বলবীরের সঙ্গে আমার দেখা করিয়ে দাও। সে আমাকে পরের দিন ফোন করতে বলল। ফোন করতেই বলল, রবিবার দিন ডা. বলবীরকে আমি আমার রুমে আসতে বলেছি। আপনি বেলা দশটায় আমার রুমে চলে আসুন। রবিবার দিন আমি ডা. সেহগালের রুমে যাই। ডা. বলবীরও আসে। শ্যামলা রঙের খুবই উজ্জল যুবক যেন কোনো গভীর চিন্তায় ডুবে আছে। আমি তার কাছে জানতে চাইলাম তিনি কত দিন আগে ইসলাম কবুল করেছেন। তিনি বললেন আট নয় বছর পূর্বে । আমি তাকে ইসলাম গ্রহনের কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, কেবল ইসলামই সত্য ও সর্বপ্রথম এবং অন্তিম (সর্বশেষ) ধর্ম। আর ইসলাম ছাড়া মৃত্যুপরবর্তী জীবনে মুক্তি পাওয়া যাবে না।  পরিণতিতে চিরদিনের জন্য নরকযন্ত্রণা ভোগ করতে হবে। আর ইসলাম কবুল করা আপনার জন্য এতটাই প্রয়োজন, যতটা জরুরী আমার জন্য। আমি জানতে চাইলাম, আপনি কি আপনার নামও পরিবর্তন করেছেন? তিনি উত্তরে বললেন, হ্যাঁ, আমার ইসলামী নাম ওয়ালিউল্লাহ যার অর্থ আল্লাহর অর্থাৎ, ঈশ্বররের বন্ধু। আমি তাকে বললাম এক-দেড় বছর আগে আমার ওয়ার্ডে একজন মাওলানা সাহেব এসেছিলেন। তিনি আমাকে কিছু কথা বলেছিলেন যা আজ পর্যন্ত আমার মনে গেঁথে আছে। তিনি ওয়ার্ডের সব রোগীকেই ঝাড়-ফুঁক করছিলেন। তাঁর রোগী কোনটি জানতে চাইলে তিনি আমাকে বলেন, সব রোগীই আমার। আমরা সকলেই একই পিতা-মাতার সন্তান, রক্ত সম্পর্কীয় ভাই। ‘এটা তোমার আর ওটা আমার’ এসব পয়দা করনেওয়ালা মালিকের আদৌ পছন্দ নয়। ডা. বলবীর বলতে লাগলেন, মাওলানা সাহেব খুবই সত্যকথা বলেছেন। এ তো ইসলামের এবং আমাদের সকলের রসূল হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বিদায় হজ্বের ভাষণে একথাই বলেছিলেন। আমি বললাম, সেই ভাষণ কি ছাপা পাওয়া যায়। তিনি বললেন, আমাদের নবীর প্রতিটি কথা সম্পূর্ণরুপে নিরাপদ ও সুরক্ষিতরূপেই পাওয়া যায়। আমি সংগ্রহ করে ডা. রীনার হাতে আপনাকে পাঠিয়ে দিব।

দু-চারদিন পর ডা. রীনা সেহগাল ইংরেজী ভাষায় অনূদিত ও মুদ্রিত আমাদের নবী করীম সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সেই হজ্জ ভাষণটি এনে আমাকে দিল। সেটি পড়ে আমি তো বিস্মিত হয়ে যাই। বিশেষ করে মেয়েদের সম্পর্কে বারবার আলোচনা ও সতর্কীকরণ আমার হৃদয়ে গভীর দাগ কাটে। মাওলানা সহেবের কথা আমার মনে পড়ল। ধারণা করলাম কতইনা ভাল হত আমি যদি মাওলানা সাহেবের ঠিকানা জেনে নিতাম। হাসপাতালে আমি পুরনো রোগীদের ফাইল খুঁজলাম যাতে করে পানি পথের রোগীর ঠিকানা পাই। তাহলে আমি নিজেই রোগীর বাড়ি গিয়ে মাওলানা সাহেবের ঠিকানা জেনে নেব। কিন্তু আমি পেলাম না। ইসলাম সম্পর্কে পড়া ও ইসলাম সম্পর্কে জানার জন্য আমার ভেতর আগ্রহ সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিল। আমি ডা. বলবীরের ফোন নিলাম এবং তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় নিধারণ করলাম । সফদর জঙ্গে হাসপাতালে গিয়ে তার ওয়ার্ডে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম। অতঃপর তাকে ইসলামের ওপর লিখিত বইপুস্তক ও সাহিত্য দেবার জন্য বলি। দ্বিতীয় দিন তিনি আমার হাসপালে আসেন এবং আমাকে হিন্দীতে লিখিত ছোট একটি পুস্তক ‘আপকী আমানত আপকী সেবা মে’ দেন ও বলেন ইসলামের অবশ্যকতা এবং এ সম্পর্কে জানার জন্য এই ছোট্ট পুস্তিকাটি একশটি বইরেয়র একটি। ব্যস! পুস্তিকাটি খুব মন দিয়ে পড়বেন। একজন সত্যিকারের সংবেদনশীল বন্ধুর কথাগুলো কেবল আমাকেই বলছেন। আপনি পড়লে আপনার নিজেরও এমনটাই লাগবে। আমি এই পুস্তিকার লেখকের হাতে ইসলাম গ্রহণ করেছি। পুস্তিকার দু‘টি শব্দ এর প্রমাণ। আপনি পুস্তিকাটি পড়লে পুস্তিকা এবং পুস্তিকার লেখক সম্পর্কে জেনে যাবেন। ডা. বলবীর আমাকে বলেছেন যে, তিনি দিল্লী পার্শ্ববর্তী ইউ.পির একটি শহরের রাজপুত বংশের সঙ্গে সম্পর্কিত। পুস্তিকাটি দিয়ে এবং কিছুক্ষণ চা পান ইত্যাদি সেরে তিনি চলে যান। আমি ওয়ার্ডে বসে ব্যস! এক নিঃশ্বাসেই বইটি পড়ে ফেলি। বইটি পড়ার পর মাওলানা সাহেবের কথা খুব মনে পড়ল। বইটি আমার মনে স্থান করে নেয়। বইটি পড়ে আমি ডা. বলবীরকে ফোন করি এবং তাকে বলি যে, লেখকের আর কোন বই আছে কিনা। থাকলে দিতে বলি। এ-ও বলি যদি লেখকের সঙ্গে আপনি সাক্ষাত করিয়ে দেন তাহলে আমার ওপর আপনার এক মহা অনুগ্রহ হবে।

চার দিন পর ছিল ১৮ই মে। ডা. বলবীরের ফেন এল। তিনি বললেন, আপনি যদি ছুটি নিতে পারেন তাহলে ‘আপকি আপমানত’ এর লেখক মাওলানা মুহাম্মদ কালীম সিদ্দিকী সাহেবের সঙ্গে গ্রীন পার্ক মসজিদে দেখা হতে পারে। আমি তখনই রেডি হয়ে গেলাম। অটো কার যোগে গ্রীন পার্ক মসজিদে পোঁছি। মাওলানা সাহেব এগারোটার পরিবর্তে সাড়ে দশাটায় সেখানে পোঁছে যান। তাঁর সফর ছিল সামনে। মাওলানা সাহেবকে দেখে এতো খুশী লাগল যে, আমি তা ভুলতে পারবনা। আমি দেখালাম ‘আপকী আমানত’ এর লেখক মাওলানা কালীমই সেই মাওলানা সাহেব যিনি দেড় বছর আগে হরিয়ানার বাচ্চাকে দেখার জন্য আমার ওয়ার্ডে এসেছিলেন। যাকে আমি এতদিন খুঁজছিলাম। ভক্তি ও ভালবাসার আতিশয্যে আমি তার পায়ের ওপর গিয়ে পড়ি। মাওলানা সাহেব খুব কঠিনভাবে আমাকে নিষেধ করেন এবং আমাকে বলেন। এখন আর দেরী কেন? ‘আপকী আমানত’ পড়ার পর আর কোনো সন্দেহ আছে? আমি মাওলানা সাহেবের সঙ্গে দেখা করতেই এসেছিলাম। কিন্তু আমি আর আমাকে ধরে রাখতে পারলামনা। আমি মওলানা সহেবকে বললাম যে, আমি মুসলমান হতেই এসেছিলাম। মাওলানা সাহেব খুব খুশী হলেন এবং সাথে সাথেই আমাকে কালেমা পড়ালেন। আমার ইসলামী নাম রাখলেন সরোজ শালনীর পরিবর্তে সফিয়্যা শালনী (এস,সালনী)। মাওলানা সাহেব আমাকে কিছু কিতাবের নাম লিখেদেন এবং নামায শেখা ও পড়ার তাকীদ করেন।

প্রশ্ন : ইসলাম গ্রহণের পর আপনি এর ঘোষণা দিয়েছেন কিনা?

উত্তর : মাওলানা সাহেব এর ঘোষণা দিতে কঠোরভাবে নিষেধ করেন। কিন্তু তারপরেও আমি আমার বিশেষ লোকদের কাছে তা বলেছি। কখনো কখনো আমর আবেগ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে যে, ইসলাম যখন সত্য তখন একে লুকানো এবং লুকোচুরি করে বেঁচে থাকা কেমন কিন্তু সাথে সাথেই আমর মনে পড়ে, যখন এমন একজন মানুষ যার দরুন আমার ধারণার বিপরীত অন্ধকার আবর্জনার মধ্যে পড়ে থাকা কীট ইসলামের আলো পেল, তাঁকে রাহবার (পথ-প্রদর্শক) মানল, এখন তাঁর কথা মানাই ভাল।

প্রশ্ন : আপনার বান্ধাবী ডা. রীনা হেগালকে আপনি বলেছেন?

উত্তর : আমি কেবল তাকে বলেই দিই নাই বরং আমি এবং ডা.ওয়ালিউল্লাহ (বলবীর) দু‘জনে তার সঙ্গে লেগে আছি। আলহামদুলিল্লাহ। সে কলেমা পড়েছে। সে বিবাহিতা এবং তার স্বামী ডা.বি.কে. সেহগালের নিজের ক্লিনিক আছে। খুবই কট্টর গোড়া হিন্দু পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কিত। ওদিকে কয়েক বছর যাবত তিনি রাধাস্বামী সত্য সংঘের সঙ্গে জড়িত হয়েছেন। এ জন্য সে তার কারণে চেপে আছে।

প্রশ্ন : ডা.ওয়ালিউল্লাহর সঙ্গে আপনার যোগাযোগ আছে?

উত্তর : আসলে ডা.ওয়ালিউল্লাহ নিজেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গেছেন। তিনি এমন এক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন। যার ফলে ক্রমান্বয়ে তিনি দুর্বল হয়ে যাচ্ছেন এতে করে সেখানে পেসমেকার লাগাতে হচ্ছে। তার নিজের চিকিৎসার সূত্রে আমার সঙ্গে বেশি যোগাযোগ। আমি তার চিকিৎসার ব্যাপারে খুব ভূমিকা পালন করি। সরকারী চাকুরে এক যুবতীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের আগেই সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে, মুসলমান হবার পর বিয়ে হবে। এরপর বংশীয় রেওয়াজ মাফিক বিবাহ অনুষ্টিত হবে। তাকে কালেমা পড়িয়ে বিয়েও করেছিলেন। কিন্তু পরে মহিলাটি ইসলামের প্রতি আকর্ষণ রাখতে পারে নি। এক্ষেত্রে তার চাকুরীও এতে বাঁধা ও প্রতিবন্ধক হয়। ইসলামের প্রতি তার স্ত্রীর অনাগ্রহ ও অনাকর্ষণ তার মনকে কুরে কুরে খেতে থাকে। ফলে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। এলোপ্যাথিক চিকিৎসা কার্যকর না হওয়ায় মাওলানা সাহেব তাকে হার্বাল মেডিসিন ব্যবহারের পরামর্শ দেন। আল্লাহর মেহেরবানী দু‘মাসেই তিনি প্রায় সুস্থ হয়ে ওঠেন। মাওলানা সাহেব তাকে আরব দেশগুলোতে যাবার পরামর্শ দেন এবং পরে তার স্ত্রীকেও সেখানে নিতে বলেন। সেখনে সে পরিবেশ পাবে। আল্লাহর শোকর সৌদীতে তার চাকুরী মিলে যায়। গত মাসে তিনি তার স্ত্রীকেও নিয়েগেছেন। তার যাওয়ায় তার সমস্যার তো সমধান হয়ে গেছে। কিন্তু আমি একাকী হয়ে গেছি। ডা. রীনা যার নাম আপনার আব্বুর পরামর্শে রাখা হয়েছিল ফাতিমা। তার স্বামীর ওপর ডাক্তার ওয়ালিয়্যুল্লাহ দাওয়াতী কাজ করছিল, সেই দাওয়াতী কাজটি কমে গেছে। আমি খোলাখুলিভাবে তার সাথে কথা বলতে পরিনা ।

প্রশ্ন : আপনার বাবা-মা কি আপনার মুসলমান হবার ব্যাপারটি জেনে গেছেন।

উত্তর : হ্যাঁ, আমি আমার পিতাকে পরিষ্কার বলে দিয়েছি। তিনি খুশী মনে তা গ্রহণ করেন নি। কিন্তু এখন ক্রমান্বয়ে তার অসন্তোষ কমে আসছে।

প্রশ্ন : আপনার বিয়ে হয়েছে কি?

উত্তর : ছ‘-সাত বছর থেকে আমার পিতা আমার বিয়ে নিয়ে চিন্তিত। অনেক ভাল সম্পর্ক তাঁর ছাত্রদের ভেতর থেকেই এসেছিল। কিন্তু সম্ভবত আল্লাহর ইচ্ছা ছিল অন্যরূপ। এজন্য আমি নিজেকে এর জন্য প্রস্তুত করতে পারছিলাম না। আমি ডি.এম.করার বাহানায় নিষেধ করে দিই। আমি কয়েক বার মাওলানা সাহেবের কাছে আমার ইসলামের ঘোষণা দেবার অনুমতি চাই। কিন্তু তিনি চুপচাপ থেকে নীরবে পরিবারের সদস্যদের ওপর কাজ করতে বলেন। আমি যখন আমার নামায-রোযার কষ্টের কথা বললাম তখন তিনি কোন আরব রাষ্ট্রে চাকুরীর বাহানায় যাবার জন্য বললেন। এজন্য তিনি ডা. ওয়ালিউল্লাহর সঙ্গে ফোনে কথাও বলেন। আলহামদুলিল্লাহ জেদ্দায় কিং আব্দুল আযীয় হাসপাতালে আমি নিয়োগ পাই। এবং দুবছরের ছুটিও পাই। আমার বর্তমান কর্মস্থল থেকে তিন মাস থেকে প্রস্তুতিমূলক ছুটি কাটাচ্ছি।

বোন আসমা! আপনি বিয়ের এমন এক প্রশ্ন করেছেন যে, এই প্রশ্ন স্বয়ং আপনার জন্যই কৌতুকের হবে। আপনার জানা আছে যে, পিজিআই  চন্ডিগড়ের একজন সার্যন ডা. আসআদ ফরিদীর সাথে আপনার বিয়ের প্রস্তাব এসেছিল এবং তিনিও খুব চেষ্টাকরে ছিলেন যাতে করে আপনার সঙ্গে তার সম্বন্ধ হয়ে যায়। তিনি ছিলেন তার হাসপালের ইতিহাসে শেরওয়ানী পরিহিত ও শ্মশ্রুমন্ডিত একমাত্র ডাক্তার। কিন্তু আপনার সম্বন্ধ ভাগ্যে লিখিত ছিল আলীগড়ে বিধায় সেখানেই হয়। মাওলানা সাহেব একবার আমার থেকে জানতে চেয়েছিলেন। আমি যদি রাজী থাকি তাহলে তিনি এই সম্বন্ধের ব্যাপারে চেষ্টা করবেন। আমি বলি, এরচেয়ে বেশি আনন্দের বিষয় আর হতে পারেনা। কিন্তু একদিন আপনি আমার ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দানের অনুমতি দিচ্ছেন না, অপর দিকে এই ফয়সালা কিভাবে হতে পারে। তিনি আমাকে বললেন, আপনি আগে তো রাজী হন তাহলে আমি সমস্যার সমাধান করছি। আমি আমার সম্মাতি জানিয়ে দিই। ডা. আস‘আদের পোষ্টিংও জেদ্দার কিং আব্দুল আযীয হাসপাতালে হয়ে যায়। তিনিও দরখাস্ত করে রেখেছিলেন। তিনি ৬ সেপ্টেম্বর জেদ্দায় চলে যান। আমার ভিসাও প্রসেসিং হচ্ছে। আমার ইচ্ছা ভিসা সত্বর এস গেলে আল্লাহ তাআলা যেন আমাকে এ বছরেই হজ্জ করার তৌফীক দান করেন।

আসমা : একজন শ্মশ্রুমন্ডিত ও শেরোওয়ানী পরিহিত মুসলমানকে বিয়ে করতে নিজেকে পরিবেশগতভাবে আশ্চর্য লাগেনি?

উত্তর : আলহামদুলিল্লাহ মোটেই না। আল্লাহর শোকর ইসলামের সব বিষয়ই আমার ভেতর থেকে পছন্দ। সত্য বলতে কি ইসলাম আমার ভেতরকার স্বভাজাত ধর্ম। যখন আমি শুনলাম যে. আমর স্বামী ডা. আস‘আদ পি.জি.আই-এর ইতিহাসে শেরোওয়ানী পরিহিত শ্মশ্রুধারী একমাত্র ডাক্তার তখন আমার মন চাইল আমি ইসলামের ঘোষেণা দিয়ে বোরকা পরব এবং অলইন্ডিয়া মেডিক্যাল ইনসস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সাযেন্সে একমাত্র বোরকাধারী ডাক্তার হবো। কিন্তু মাওলানা সাহেব আমার এই আবেগকে উৎসাহিত করত আরও দু’-চার বছর সৌদী আরব থেকে আসার জন্য বললেন। আমার ধারণা এবং আমার এই ধারণায় আমি আরও মজা পাই যে, গোটা হাসপাতালে একমাত্র বোরকাধারিনী নওমুসলিম ডাক্তার, গোটা হাসপাতালের লোকদের ইসলাম সম্পর্কে অবগতি লাভের মাধ্যম হবে। এটি একটি উত্তম পদক্ষেপ।

প্রশ্ন : আপনার পিতামাতার অনুমতি ছাড়াই বিয়ে করে ফেললেন। এতে আপনার পিতামাতা কষ্ট পান নি?

উত্তর : আমার বিয়ে তো হঠাৎ করে হয়ে গেল। মাওলানা সাহেব আমার পিতামাতাকে ছেলে দেখান এবং বলেন যে, একটি পয়সা কিংবা একটি আংটি যৌতুক ছাড়াই এ বিয়ে হয়ে গেছে। আর সামাজিক বিতর্ক এড়াবার জন্য আমরা করব কি, প্রথমে ডা. আস‘আদ যাবেন। পরে যাবেন ডা. শালনী। কেউ জানবে না। পরে মনে করবে সৌদী আরবে গিয়ে এই বিয়ে হয়ে থাকবে।  এতে করে আত্মীয় স্বজন ও আপন জনদের বেশি খারাপ লাগবে না। তারা রাজী হয়ে যান। বিশেষ করে তারা ডা. আস‘আদকে দেখে খুব খুশী হন। বারবার আমার পিতা আমাকে বলেন। শালনী! তোর সৌভাগ্য এমন চাঁদের মত তুই স্বামী পেলি। আসলেই তিনি আমার চেয়ে অনেক সুন্দর। তিনি ডা. আস‘আদকে বিদায় জানাতে দিল্লী এয়ার পোর্ট পর্যন্ত এসেছিলেন এবং তাকে খুব আদরও করেন।

প্রশ্ন : আসলেই আপনি খুব ভাগ্যবতী। আল্লাহ গায়েব থেকে আপনার জন্য এমন সুন্দর এন্তেজাম করেছেন।

উত্তর : নিঃসন্দেহে আল্লাহর বহুত মেহেরবানী। আমি যখনই মনে করি আল্লাাহর দরবারে সিজদায় বহুক্ষণ পড়ে থাকি। আসলে আমি এবর যোগ্য ছিলাম কোথায়! কুফর ও শিরকের অন্ধকারে আমার ইসলাম জুটল। এই ময়লা আবর্জনার ওপর আমার মালিকের এ অনুগ্রহ।

প্রশ্ন : আপনি নিজের ঘরের লোকদের ইসলামের দাওয়াত দেন নি?

উত্তর : আল্লাহর শোকর। আমি ক্রমান্বয়ে কাজ করছি এবং এখন ইসলামের সঙ্গে তাদের দূরত্ব খুবই কমে যাচ্ছে।

প্রশ্ন : আরমুগানের মাধ্যমে আপনি কি মুসলমানদের উদ্দেশ্যে কোন উপদেশ দিতে চাইবেন?

উত্তর : আমার মনে জাগে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই উন্নত বিশ্বের কেবল ইসলামের প্রয়োজন এবং ইসলাম ছাড়া এই দুনিয়া একদম কাঙাল। বোন আসমা! আমি এটা কোন কাব্য করছিনা। বরং এই উন্নত বিশ্বকে খুব কাছে থেকে দেখেই এই কথা বলছি। এই কাঙাল দুনিয়াকে কেবল ইসলামই গড়তে পারে। অন্যথায় এই দুনিয়াটা দেউলে হয়ে গেছে। এর দেউলেপনা ও অন্ধকারের চিকিৎসা কেবল মুসলমানদের কাছে আছে। তারপরও এই কাঙাল পৃথিবী থেকে আমরা ভীত কেন? আমার আফসোস হয় এবং বিস্ময় জাগে যখন আমি অনুভব করি যে, এই দেউলিয়া ও অন্ধকার পৃথিবীতে নিজেদের কাছে দেউলেপনার চিকিৎসা এবং সবচে’ বড় সম্পদ থাকা সত্ত্বেও আমরা হীনমন্যতাবোধে আক্রান্ত কেন? আমাদের তো এজন্য কৃতজ্ঞ থাকা উচিত বরং গর্ব করা দরকার এবং এই দেউলে পৃথিবীর জন্য করুনা অনুভব করা দরকার আমাদের এই অর্থে নিজেরদের দাতা এবং দুনিয়াটাকে নগন্য ও তুচ্ছ মনে করা উচিত। ব্যস!

প্রশ্ন : বহুত বহুত শুকরিয়া ডা. সফিয়্যা! আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। আল্লাহ আপনাকে নিরাপদ ও সুস্থ রাখুন।

উত্তর : আপনাকেও ধন্যবাদ বোন আসমা. ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

সাক্ষাৎকার গ্রহণে

আসমা যাতুল ফাউযাইন

মাসিক আরমুগান, ডিসেম্বর ২০০৫ ইং

Series Navigation

Archives

July 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031