বুধবার, ৯ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ই মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

আল্লাহর কাছে শুধু পৌঁছে বান্দার তাকওয়া – তারাবীহ ১৪ তম পাঠ

This entry is part [part not set] of 27 in the series দরসে তারাবীহ


আজ ১৪তম তারাবিতে সূরা আম্বিয়া এবং সূরা হজ পড়া হবে। পারা হিসেবে আজ পড়া হবে ১৭তম পারা।

২১. সূরা আম্বিয়া: (মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ১১২, রুকু ৭)

সূরাটিতে ১৮ জন নবী (আ.) এর আলোচনা থাকায় সূরার নাম ‘আম্বিয়া’। সূরাটিতে চারজন নবীর দোয়া কবুল প্রসঙ্গে আলোচনা থাকায় সূরার অপর নাম ‘সূরাতুল ইস্তিজাবা’ দোয়া কবুলের সূরা।

সূরার শুরুতে দুনিয়ার জীবনের ক্ষণস্থায়িত্বের চিত্র তুলে ধরে বলা হয়েছে, কেয়ামত এবং হিসাব-নিকাশের সময় খুবই কাছে। কিন্তু এই ভয়ংকর দিনের ব্যাপারে মানুষ বড়ই গাফেল, অসতর্ক। (১)।

নবী সম্পর্কে মোশরেকরা যেমন-তেমন উক্তি করত। সূরাটিতে তাদের এসব আপত্তির জবাব রয়েছে। এরপর আল্লাহর একত্ববাদের দলিল পেশ করা হয়েছে। বিশ্বের এ উন্মুক্ত পাঠশালায় রাব্বুল আলামিনের একত্ববাদের বহু দলিল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। এ বিশ্বচরাচরে জমিন, আসমান, সূর্য-চন্দ্র এবং রাত-দিনসহ যা কিছু আছে, সেগুলোকে আল্লাহ তায়ালা অনর্থক-বেহুদা সৃষ্টি করেননি, বরং এসবের পেছনে এক বিশেষ হেকমত ও উদ্দেশ্য রয়েছে। আর তা হলো, বান্দা যেন এগুলো নিয়ে চিন্তাফিকির করে এবং শিক্ষা লাভ করে। এ দুনিয়ার সবকিছুই আল্লাহর অনুগত এবং প্রশংসামুখর। শুধু কাফের ব্যক্তিই আল্লাহর বন্দনা থেকে বিমুখ হয়। (১৬-২০)।

এরপর মোশরেকদের ভর্ৎসনা করা হয়েছে, তাদের কাছে প্রমাণ চাওয়া হয়েছে, তাদের পূজনীয় মূর্তিগুলো কি সত্যিই ইবাদতের উপযুক্ত? (২১-২৪)। স্পষ্ট কথা, তাদের কাছে শিরক ও মূর্তিপূজার পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই। মোশরেকদের ভ্রান্ত মতবাদ খ-নের পর সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের বিভিন্ন প্রমাণ পেশ করা হয়েছে। আসমান ও জমিন উভয়টি মিলিত ছিল, আল্লাহ এ দুটিকে পৃথক করেছেন। প্রত্যেকটি জীবকে তিনি পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন। জমিনের ওপর তিনি পাহাড় বানিয়েছেন, যাতে জমিন স্থির থাকে। জমিনে সহজে চলাচলের রাস্তা বানিয়েছেন। আসমানকে তিনি নিরাপদ ছাদস্বরূপ বানিয়েছেন। রাতদিন, চন্দ্র-সূর্য সৃষ্টি করেছেন। এগুলো ক্রমাগত একটির পর আরেকটি আসে-যায়; কিন্তু শৃঙ্খলায় কোনো ব্যত্যয় ঘটে না।

আরো পড়ুন: এবারের রমজান মুসলমানদের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ: মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক

সূরায় তাওহিদ, রিসালাত, আখেরাত ও হিসাব-নিকাশের দলিল-প্রমাণ উপস্থাপনের পাশাপাশি ১৮ জন নবীর বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন, ১. মুসা (আ.), ২. হারুন, ৩. ইবরাহিম, ৪. লুত, ৫. ইসহাক, ৬. ইয়াকুব ৭. নুহ, ৮. দাউদ, ৯. সুলায়মান, ১০. আইয়ুব, ১১. ইসমাইল ১২. ইদ্রিস, ১৩. জুলকিফল, ১৪. ইউনুস, ১৫. জাকারিয়া, ১৬. ইয়াহইয়া, ১৭. ঈসা আলাইহিমুস সালাম এবং ১৮. রহমাতুললিল আলামিন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

সূরার ৯৬ ও ৯৭ নম্বর আয়াতে ইয়াজুজ-মাজুজের আলোচনা রয়েছে। দয়ার নবী মুহাম্মদ (সা.) এর আগমনের উদ্দেশ্য, জান্নাত, জাহান্নাম এবং কেয়ামতের বিবরণের মাধ্যমে সূরা আম্বিয়া সমাপ্ত হয়েছে।

২২. সূরা হজ: (মদিনায় অবতীর্ণ, আয়াত ৭৮, রুকু ১০)

যেহেতু এই সূরায় হজের ‘ফারজিয়াত’ আবশ্যকীয়তার বিধানটি ঘোষিত হয়েছে; তাই এই সূরাকে ‘সূরা হজ’ বলা হয়।

সূরার শুরুতে কেয়ামতের ভয়াবহ অবস্থার বিবরণ দেওয়ার পর একজন মানুষকে পৃথিবীতে অস্তিত্ব লাভের জন্য যেসব ধাপ অতিক্রম করতে হয় তার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। মূলত এর মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা মানুষকে আবার সৃষ্টি করতে অবশ্যই সক্ষম। মৃত বা অনুর্বর জমিন বৃষ্টির পানি পেয়ে যেভাবে নতুন জীবন লাভ করে মৃত মানুষকেও তদ্রুপ আল্লাহ তায়ালা ফের জীবিত করতে সক্ষম। এসব প্রমাণ সত্ত্বেও কিছু লোক ভ্রষ্টতার পথ বেছে নিয়েছে, আর কিছু লোক দ্বিধাদ্বন্দ্বের। পার্থিব উপকার পেলে কিছু ইবাদত-বন্দেগি করে; কিন্তু দ্বীনের পথে কোনো পরীক্ষা বা বিপদাপদের সম্মুখীন হলে ইবাদত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। (১-১১)।

আরো পড়ুন: টিভির লাইভে ইমামের অনুসরণে তারাবি, কী বলছেন ইসলামী চিন্তাবিদরা!

এভাবে মানুষ বহু দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। (১৭)। কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তাদের মধ্যে চূড়ান্ত ফায়সালা করবেন। আল্লাহর হুকুমে ইবরাহিম (আ.) কর্তৃক বায়তুল্লাহ নির্মাণ এবং হজের ঘোষণা প্রসঙ্গে আলোচনা রয়েছে সূরার ২৬-৩৩ নম্বর আয়াতে।

এরপর মোমিন বান্দার চারটি আলামত বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহর ভয়, বিপদে ধৈর্যধারণ, নামাজের প্রতি যত্নশীলতা, নেক কাজে অর্থ দান। (৩৪-৩৫)। সূরায় আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পশু কোরবানির আদেশ দিয়ে বলা হয়েছে, এ সব পশুর রক্ত-মাংস কিছুই আল্লাহর কাছে পৌঁছে না; বরং আল্লাহর কাছে শুধু পৌঁছে বান্দার তাকওয়া। (৩৭)।

আরো পড়ুন: ১৩তম তারাবি: দাওয়াতের কাজে চাই অবিচলতা

এরপর মুসলমানদের জিহাদের অনুমতি প্রদান প্রসঙ্গে আলোচনা রয়েছে এবং জিহাদের বিধানের যৌক্তিকতা সম্পর্কে বলা হয়েছে, যদি আল্লাহ তায়ালা জিহাদ অনুমোদন না করতেন, তাহলে শত্রুরা সীমা ছাড়িয়ে যেত, মাথায় চড়ে বসত এবং মোমিনদের বিনাশে মেতে উঠত। ফলস্বরূপ ইবাদতখানা বিরান হয়ে পড়ত। কিন্তু যখন শত্রুরা ইটের পরিবর্তে পাটকেল খাওয়ার ভয়ে থাকবে, তখন তারা হামলা করার আগে শতবার চিন্তা করবে যে, কী করা যায়। (৩৯-৪০)।

শয়তানের কাজ হলো সত্যের মধ্যে সংশয় সৃষ্টির পাঁয়তারা করা, পক্ষান্তরে আল্লাহ তায়ালার দস্তুর ও নিয়ম হলো শয়তানের সৃষ্ট সংশয়-সন্দেহকে বিদুরিত করে দেওয়া। (৫২-৫৩)।

পরবর্তী আয়াতগুলোতে আল্লাহ তায়ালার ক্ষমতা এবং কুদরতের প্রমাণ বর্ণনা করা হয়েছে এবং কাফের-মোশরিকদের উপাস্যদের বাতুলতা তুলে ধরে সূরার শেষে মুসলমানদের জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ, সালাত কায়েম এবং জাকাত প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং বলা হয়েছে, মুসলমানদের জন্য আল্লাহই উত্তম বন্ধু ও সাহায্যকারী।

লেখক:মাওলানা রাশেদুর রহমান ।। পেশ ইমাম ও খতীব, কেন্দ্রীয় মসজিদ, বুয়েট

Series Navigation

Archives

July 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031