বৃহস্পতিবার, ২৫শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১০ই জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

কোরআনের উপদেশ সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য – তারাবীহ ২০তম পাঠ

This entry is part 20 of 27 in the series দরসে তারাবীহ


আজ ২০তম তারাবিতে সূরা ইয়াসিন (২২-৮৩ আয়াত), সূরা সাফফাত, সূরা ছাদ এবং সূরা জুমার (১-৩১) পঠিত হবে। পারা হিসেবে আজ পড়া হবে ২৩তম পারা।

Default Ad Content Here

৩৬. সূরা ইয়াসিন: (২২-৮৩) পারার শুরুতে হাবিব নাজ্জার নামের এক ব্যক্তির আলোচনা রয়েছে। তিনি ছিলেন নিজ জাতির হিতাকাক্সক্ষী। কিন্তু জাতি তার দরদমাখা নসিহত শোনেনি। (২০-২৭)। এরপর নবীদের উপহাস ও তার পরিণতি প্রসঙ্গে আলোচনার পর আল্লাহ তায়ালার অস্তিত্ব, একত্ববাদ ও কুদরতের কিছু দলিল উপস্থাপন করা হয়েছে। এরপর কেয়ামতের ভয়াবহতা এবং শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়ার আলোচনা রয়েছে। (৪৯-৬৬)। সূরাটির বেশিরভাগ আলোচনা যেহেতু মৃত্যু-পরবর্তী জীবন সম্পর্কে; তাই এর সমাপ্তিও হয়েছে মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের আলোচনা দিয়ে। (৮১-৮২)। ৩৭.

সূরা সাফফাত: (মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ১৮২, রুকু ৫)

সূরাটির সূচনা হয়েছে সেসব ফেরেশতার আলোচনা দ্বারা, যারা আল্লাহর ইবাদত এবং তাঁর সপ্রশংস তাসবিতে রত থাকেন। এরপর জিনদের প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, তারা যখন লুকিয়ে লুকিয়ে ঊর্ধ্ব মহলের সংবাদ শোনার চেষ্টা করে, তখন জ্বলন্ত উজ্জ্বল অঙ্গার তাদের পেছনে ধাওয়া করে এবং সবদিক থেকে তাদের ওপর মার পড়ে। সূরায় পুনরুত্থান, হিসাব-নিকাশ ও প্রতিদান প্রসঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। (১৯-৩৫)।

আরো পড়ুন: এবারের রমজান মুসলমানদের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ: মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক

এরপর জাহান্নামিদের একে অপরকে দোষারোপ প্রসঙ্গে আলোচনা শেষে জান্নাতিদের পারস্পরিক কথোপকথন বিষয়ে আলোচনা রয়েছে। (৮৩-৯৮)। এরপর হজরত নুহ, ইবরাহিম ইসহাক, মুসা, হারুন, ইলিয়াস, লুত এবং ইউনুস (আ.) এর বিভিন্ন ঘটনা আলোচিত হয়েছে। নবীদের এসব ঘটনা শেষে এরশাদ হচ্ছে, ‘আমার প্রেরিত বান্দাদের ব্যাপারে আমার ফয়সালা নির্ধারিত যে, তারাই সাহায্য লাভ করবে এবং বিজয়ী হবে আর আমার লশকরের জয় হবেই হবে।’ (৭৫-১৭৩)।

সূরার শেষে হঠকারীদের থেকে বিমুখ থাকার নির্দেশনা প্রদান করে আল্লাহর হামদ ও সানা এবং সপ্রশংস তাসবির বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।

৩৮. সূরা ছাদ: (মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ৮৮, রুকু ৫)

সূরার সূচনায় আল্লাহ তায়ালা কোরআনের শপথ করেছেন। এই শপথের মাধ্যমে কোরআনের অলৌকিকতা এবং নবী মুহাম্মদ (সা.) এর সত্যতার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। সূরায় মোশরেকদের বিভিন্ন আপত্তির জবাব দেওয়া হয়েছে এবং পূর্ববর্তী বিভিন্ন অহংকারী ও অবিশ্বাসী জাতিগোষ্ঠীর পরিণতির কথা উল্লেখ করে রাসুলে আকরাম (সা.) কে সবরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আরো পড়ুন: টিভির লাইভে ইমামের অনুসরণে তারাবি, কী বলছেন ইসলামী চিন্তাবিদরা!

এরপর হজরত দাউদ (আ.), তার পুত্র সুলাইমান, আইয়ুব, ইবরাহিম, ইসহাক, ইয়াকুব, ইসমাইল, ইয়াসা ও জুলকিফল আলাইহিমুস সালামের সংক্ষিপ্ত বিবরণ এসেছে। তারা ছিলেন আল্লাহর অনুগ্রহপ্রাপ্ত এবং শুকর গুজার বান্দা।

এরপর হজরত আদম (আ.) ও অভিশপ্ত ইবলিসের কাহিনি কিছুটা বিস্তারিত আকারে উল্লেখ করা হয়েছে। সূরার শেষে আল্লাহ তাঁর নবীকে হুকুম দিয়েছেন, ‘(হে নবী) তুমি বলে দাও, আমি তোমাদের কাছে কোনো পারিশ্রমিক চাই না এবং আমি নিজেকে বাড়িয়েও দেখাই না। এই কোরআন সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য উপদেশ ছাড়া আর কিছু নয়। আর অচিরেই তোমরা এর ইতিবৃত্ত জানতে পারবে।’ (৮৬-৮৮)।

৩৯. সূরা জুমার: (মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ৭৫, রুকু ৮)

সূরা জুমারের মূল আলোচ্য বিষয় তাওহিদের আকিদা। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর একত্ববাদের বিশ্বাসই হলো ঈমানের বুনিয়াদ ও ভিত্তিমূল। সূরার সূচনা হয়েছে খাতামুল আম্বিয়া (সা.) এর অন্যতম মোজেজা ‘কোরআন কারিমের’ আলোচনা দ্বারা।

আরো পড়ুন: ১৯তম তারাবি: নবীজির প্রতি দুরুদ ও সালাম

এরপর নবী (সা.) এর মাধ্যমে সমগ্র উম্মতকে হুকুম দেওয়া হয়েছে যে, ইবাদত যেন শুধু আল্লাহর জন্যই হয়, লোকদেখানো বা রিয়ার কোনো দুর্গন্ধ যেন এতে না থাকে। সামনের আয়াতগুলোয় শৈলী পরিবর্তন করে করে রাব্বুল আলামিনের একত্ববাদের বাহ্যিক দলিল ও প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে।

এখানে বিশেষ লক্ষণীয় একটি বিষয় হলো- মায়ের উদরে মানুষের সৃষ্টি প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, “মায়ের পেটে আল্লাহ তোমাদের সৃষ্টি করেন তিনটি অন্ধকারের মধ্য দিয়ে”। (৬)।

আল্লাহর একত্ববাদ সাব্যস্তকরণ এবং শিরকের খণ্ডনের পর আল্লাহ তায়ালা একত্ববাদে বিশ্বাসী এবং শিরকের অন্ধকারে নিমজ্জিত দুই দলের দুটি উদাহরণ দিয়েছেন। মোশরেকের উদাহরণ হলো সে এমন দাসের মতো যে কয়েকজন মালিকের মালিকানাধীন। মালিকদের মেজাজ এবং আচার-আচরণও একধরনের নয়, মিল-মহব্বত বা কোনো ধরনের ঐক্য কিংবা সমঝোতা নেই তাদের মাঝে। এক মালিক দাসটিকে ডানে পাঠালে অন্যজন তাকে বাঁয়ে যাওয়ার হুকুম দেয়। একজন বসার কথা বললে অপরজন দাঁড়িয়ে থাকতে বলে। দাসটি পেরেশান যে, সে কার কথা শুনবে আর কারটা ছাড়বে।

পক্ষান্তরে একত্ববাদে বিশ্বাসীর উপমা হলো এমন দাসের মতো, যার মালিক একজন। মালিকের চরিত্রও ভালো এবং সে তার দাসের প্রয়োজনও বিবেচনায় রাখে। (২৯)। সন্দেহ নেই, এই গোলাম একনিষ্ঠতার সঙ্গে মনিবের খেদমত করে যাবে এবং মনিবের পক্ষ থেকে সে কল্যাণ ও ইহসানেরই আশা রাখবে। এখন মালিক যদি হন রাব্বুল আলামিন আর বান্দাও যদি শুধুই তাঁর হয়ে যায়; তবে তার মনের আনন্দ ও প্রশান্তির ওপর হাজারও রাজত্ব কোরবান করা উচিত।

লেখক:মাওলানা রাশেদুর রহমান ।। পেশ ইমাম ও খতীব, কেন্দ্রীয় মসজিদ, বুয়েট

Series Navigation<< নবীজির প্রতি দুরুদ ও সালাম – তারাবীহ ১৯তম পাঠআল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না – তারাবীহ ২১তম পাঠ >>

Archives

May 2025
S S M T W T F
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31