বৃহস্পতিবার, ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

মানুষ বড়ই অকৃতজ্ঞ – তারাবীহ ২২তম পাঠ

This entry is part 22 of 27 in the series দরসে তারাবীহ


আজ ২২তম তারাবিতে সূরা হা-মিম সাজদা (৪৭-৫৪), সূরা শূরা, সূরা জুখরুফ, সূরা দুখান এবং সূরা জাসিয়া পঠিত হবে। পারা হিসেবে আজ পড়া হবে ২৫তম পারা।

Default Ad Content Here

৪১. সূরা হা-মিম সাজদা: (৪৭-৫৪) কেয়ামতের আলোচনা দিয়ে পারার সূচনা হয়েছে। এরপর সুখে-দুঃখে মানুষের অবস্থার বিবরণ রয়েছে। দুঃখের সময় মানুষ লম্বা-চওড়া দোয়া শুরু করে, আর সুখের সময় আল্লহকে ভুলে যায়। মানুষের এমন অকৃতজ্ঞ আচরণের প্রসঙ্গ উল্লেখের পর আল্লাহ তায়ালা বলছেন, ‘অবশ্যই আমি তাদের দেখিয়ে দেব আমার সেসব নিদর্শন, যা বিশ্বজগতে এবং মানুষের মাঝে বিদ্যমান, তখন তাদের কাছে সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে যে, এ কোরআনই চিরসত্য।’ আল্লাহ তায়ালার এ ওয়াদা চিরসত্য।

সেদিন বেশি দূরে নয়, যখন কোরআনের সামনে জ্ঞানীমাত্রই মাথা ঝোঁকাতে বাধ্য হবে। তবে এর জন্য চাই সত্যের জন্য উন্মুখ হৃদয় এবং সাম্প্রদায়িকতামুক্ত অন্তর।

৪২. সূরা শূরা: (মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ৫৩, রুকু ৫)

পবিত্র কোরআনের আলোচনা দিয়ে সূরার সূচনা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা নবীজি (সা.) কে সম্বোধন করে এরশাদ করেছেন, ‘তোমার কাছে এবং তোমার পূর্ববর্তীদের কাছে আল্লাহ তায়ালা ওহি প্রেরণ করেন, যিনি মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়।’ সুতরাং ওহির উৎপত্তিস্থল একটাই, পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সবার কাছে এক আল্লাহই ওহি পাঠিয়েছেন।

এরপর আল্লাহ তায়ালার কুদরতের কথা বর্ণনা করার পর ফের ওহির আলোচনা করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালার কাছে মনোনীত একমাত্র ধর্ম হলো ইসলাম। নবী-রাসুলরা নিজ নিজ সম্প্রদায়কে এই একই দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে প্রত্যেক নবী-রাসুলের কাছে প্রেরিত দ্বীন ও শরিয়তে ক্ষেত্রবিশেষে কিছু ভিন্নতা থাকলেও মৌলিকভাবে তা একই ধর্ম ছিল। আর তা হলো ইসলাম। হজরত নুহ, ইবরাহিম, মুসা ও ঈসা (আ.) কে এই দ্বীনের প্রচার-প্রসারের জন্য প্রেরণ করা হয়েছিল। তাদের অনুসারীদেরকে পরস্পর বিবাদ ও বিভেদ সৃষ্টি করতে বারণ করা হয়েছিল। কিন্তু তারা হিংসা-বিদ্বেষের বশবর্তী হয়ে নিষিদ্ধ কাজে জড়িয়ে পড়ে।

আরো পড়ুন: ‘সদকাতুল ফিতর নগদ অর্থে আদায় করা গরিবের জন্য বেশি সুবিধাজনক’

তাদের পরস্পর বিবাদ ও বিভেদ মেটানোর নিমিত্তে আল্লাহ তায়ালা রাসুল (সা.) কে পাঠান। তাঁকে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আদেশ করা হয়, ‘আপনি দ্বীনের প্রতি লোকদের দাওয়াত দিতে থাকুন এবং আপনিও এ দ্বীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকুন, মানুষের কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ আপনি করবেন না। আপনি তাদের বলে দিন, যে কিতাব আল্লাহ তায়ালা নাজিল করেছেন, আমি তার ওপর দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করেছি।’

রিসালাত ও ওহির আলোচনার পাশাপাশি এ সূরায় বস্তুজগতে আল্লাহ তায়ালার সৃষ্ট নিদর্শনগুলোর প্রতি দৃষ্টিপাত করা হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে মোমিন বান্দাদের কিছু গুণের কথাও আলোচনা করা হয়েছে। সূরায় বলা হয়েছে, জীবনে বিপদাপদ আসে মূলত মানুষের গোনাহের কারণেই।

আরো পড়ুন: এলাকার পক্ষ থেকে পারিশ্রমিক দিয়ে কাউকে ইতিকাফ করালে কি সহিহ হবে?

সূরার শেষ দিকে বলা হয়েহে, কন্যা বা পুত্র সন্তান দেওয়া অথবা সন্তান একেবারেই না দেওয়া সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর এখতিয়ারাধীন। ওহি এবং রিসালাতের আলোচনা দিয়ে যেভাবে সূরার সূচনা হয়েছিল অনুরূপ এ আলোচনার মাধ্যমেই সূরাটি সমাপ্ত হয়েছে।

৪৩. সূরা জুখরুখ: (মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ৮৯ রুকু ৭)

পবিত্র কোরআনের আলোচনা দিয়ে সূরার সূচনা। এরপর নবীর আদর্শ-বিমুখ জাতির পরিণতির কথা বলা হয়েছে। সূরায় আল্লাহর কিছু নিদর্শন তুলে ধরা হয়েছে। এরপর জাহেলি যুগের কিছু ঘৃণ্য প্রথার সমালোচনা করা হয়েছে। যেমন জাহেলি যুগে কন্যাসন্তান হলে পিতার মুখ কালো হয়ে যেত। কন্যাকে জ্যান্ত পুঁতে ফেলা হতো। ইসলাম নারীকে তার আসল মর্যাদায় উন্নীত করে।

আরো পড়ুন: ২১তম তারাবি: আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না

এরপর সূরায় নবী ইবরাহিম ও মুসার (আ.) আলোচনা রয়েছে। সূরায় এ কথাও বলা হয়েছে, পৃথিবীর যাবতীয় ধনসম্পদ থেকেও উত্তম হল আল্লাহর করুণা। সূরার শেষাংশে আল্লাহ তায়ালা রাসুল (সা.) কে নির্দেশ প্রদান করে বলছেন, আপনি জাহেলদের এড়িয়ে চলুন এবং বলুন সালাম, অচিরেই তারা নিজেদের পরিণতি জানতে পারবে। (৮৯)।

৪৪. সূরা দুখান: (মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ৫৯, রুকু ৩)

মক্কার মোশরেকরা দুর্ভিক্ষের দিনে যে ধোঁয়াচ্ছন্ন অবস্থা দেখতে পেয়েছিল তার বিবরণ রয়েছে এ সূরায়। তাই একে সূরা দুখান বলা হয়। আল্লাহ তায়ালা মানবজাতির জন্য হেদায়েত ও রহমতস্বরূপ এ কোরআন নাজিল করেছেন। (১-৮)।

আরো পড়ুন: সাক্ষাৎকার: যেভাবে কাটতে পারে করোনাকালীন ইতিকাফ

কিন্তু মক্কার কাফের-মোশরেকরা এ কোরআন ও পুনরুত্থান দিবসের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করে বসে। তাদেরকে হজরত মুসা (আ.) এর বিরুদ্ধাচরণের ভয়াবহ পরিণতির কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। (৯-২৯)। কাফেরদের জন্য প্রস্তুতকৃত ভয়াবহ শাস্তি এবং মোমিনদের জন্য সুসজ্জিত নেয়ামতগুলোর বর্ণনা দিয়ে সূরাটি সমাপ্ত হয়েছে। (৪৩-৫৭)।

৪৫. সূরা জাসিয়া: (মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ৩৭, রুকু ৪)

‘জাসিয়া’ শব্দের অর্থ হাঁটু গেড়ে বসা। কেয়ামতের দিন মানুষ ভীতির কারণে আল্লাহর দরবারে হাঁটু গেড়ে বসে পড়বে। যেহেতু এই ভয়ানক অবস্থার বর্ণনা সূরায় রয়েছে, তাই এই সূরাটিকে সূরা জাসিয়া বলা হয়। সূরায় সৃষ্টিজগতের সেইসব নিদর্শনের আলোচনা রয়েছে, যার প্রতিটি আল্লাহর বড়ত্ব ও মহিমা এবং কুদরত ও একত্ববাদের জীবন্ত প্রমাণ। (৩-৬)।

আরো পড়ুন: ২৩তম তারাবি: তাকওয়াই হল শ্রেষ্ঠত্বের একমাত্র মাপকাঠি

ঐশী-বাণী শুনে যারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তাদের পরিণতির বিবরণ (৭-৯) শেষে মানবজাতিকে, বিশেষত বনি ইসরাইল জাতিকে দেওয়া আল্লাহর নেয়ামতের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নেয়ামতের কদর না করায় তারা শাস্তির যোগ্য হয়েছিল। সব যুগের কাফেরদের এই একই অবস্থা হবে। (১৬-১৭)। কেয়ামতের আলোচনার মাধ্যমে সূরা জাসিয়া ও ২৫তম পারা সমাপ্ত হয়েছে। (২৮-৩৫)।

লেখক:মাওলানা রাশেদুর রহমান ।। পেশ ইমাম ও খতীব, কেন্দ্রীয় মসজিদ, বুয়েট

Series Navigation<< আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না – তারাবীহ ২১তম পাঠতাকওয়াই হল শ্রেষ্ঠত্বের একমাত্র মাপকাঠি – তারাবীহ ২৩তম পাঠ >>

Archives

December 2024
S S M T W T F
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031