সোমবার, ১লা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৩ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
ইমাম আহমদ রহ : তার ছেলেকে উপদেশ দেন :
(এ নসিহতগুলো আসলেই ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বাল এর কিনা সন্দেহজনক।ওলামায়ে কেরাম বলেন, এ নসিহতগুলোতে অনেক আধুনিক শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। ইমাম সাহেবের সময়ে এ শব্দগুলোর ব্যবহার ছিলো না।তাছাড়া নির্ভরযোগ্য কোন রেফারেন্স পাওয়া যায়না । তবেও কথাগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ।)
প্রথম বিষয় :
কখনই সুন্নতের বাইরে স্ত্রীর কাছে কিছু আশা করবে না। সব সময় সুন্নতকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে মেনে চলবে। স্ত্রীকেও সুন্নত অনুযায়ী চলার গুরুত্ব বুঝাবে। সুন্নতের মধ্যেই প্রকৃত সুখী সংসার।
দ্বিতীয় বিষয় :
স্ত্রীরা প্রেম ও ভালোবাসাপূর্ণ আচরণ পছন্দ করে। তারা ভালোবাসার সুস্পষ্ট উচ্চারণ শুনতে চায়। অতএব তোমার স্ত্রীর সাথে এ ব্যাপারে কার্পণ্য করবে না। এ বিষয়ে যদি অবহেলা করো, তবে তুমি তার ও নিজের মধ্যে নির্দয়তার একটি দেয়াল টেনে দিলে। স্বামী-স্ত্রীর নির্মল ভালোবাসার ব্যাকরণে ভুল করলে।
তৃতীয় বিষয় :
স্ত্রীরা কঠোর ও অনড় স্বভাবের পুরুষদের একদম পছন্দ করে না। আর দুর্বল ও কোমল হৃদয়ের পুরুষদের ব্যবহার করে। অতএব প্রতিটি গুণকে স্বস্থানে রাখবে। কারণ এটি ভালোবাসা ডেকে আনে এবং প্রশান্তি ত্বরান্বিত করে।
চতুর্থ বিষয় :
মেয়েরা স্বামীর কাছে তা-ই প্রত্যাশা করে যা তারা স্ত্রীদের কাছে আশা করে থাকে । যেমন : ভদ্রোচিত কথা, সুন্দর চেহারা, পরিচ্ছন্ন বসন ও সুগন্ধি। অতএব তোমার প্রতিটি অবস্থায় এসবের প্রতি লক্ষ্য রাখবে।
নিজের মতো করে কাছে পেতে স্ত্রীর কাছে ঘেঁষবে না যখন তোমার শরীরে ঘাম ঝরে । ময়লা কাপড়ে কাছে যেও না । এসব করলে হয়তো সে তোমার আনুগত্য দেখাবে। কিন্তু তার হৃদয় তোমার প্রতি বিতৃষ্ণ হয়ে ওঠবে। ফলে তার শরীর তোমার ডাকে সাড়া দেবে ঠিকই । তবে দিল তোমার কাছ থেকে পালিয়ে বেড়াবে ।
পঞ্চম বিষয় :
ঘরে নারীদের রাজত্ব। ঘরে তারা নিজেদের সিংহাসনে সমাসীন দেখতে চায়। সেখানকার নেতা মনে করে। তাই তার সাজানো এই প্রশান্তির রাজ্যটিকে তুমি তছনছ করতে যেও না। ভুলেও এ আসন থেকে তাকে নামাবার চেষ্টা করো না। যদি তা-ই করো, তখন যেন তুমি তাকে তার রাজত্ব থেকে উচ্ছেদ করলে। আর কোনো রাজার জন্য তার চেয়ে বড় শত্রু আর কেউ হতে পারে না যে কি-না তার রাজত্ব নিয়ে টানাটানি করে। হয়তো সে প্রকাশ্যে তোমাকে কিছু বলবে না। কিন্তু এতে করে পারস্পরিক বিশ্বাস ও ভালোবাসার পরিবেশ দূষিত হবে।
ষষ্ঠ বিষয় :
নারী যেমন চায় তার স্বামীকে পেতে; তেমনি তার পরিবারকেও সে হারাতে চায় না। অতএব তুমি কিন্তু তার পরিবারের সঙ্গে নিজেকে এক পাল্লায় মাপতে যেও না। যদি এমনটাই করতে যাও তখন সে হয়তো তোমার হবে। নয়তো পরিবারের। সে কোন সময় তোমাকেই অগ্রাধিকারও দিতে পারে। কিন্তু মনে মনে ঠিকই বিষণ্ন হবে। যার ভার সে তোমার দৈনন্দিন জীবন পর্যন্ত বয়ে আনবে।
সপ্তম বিষয় :
নিশ্চয় নারীকে সবচেয়ে বাঁকা হাড় দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে। এটি তার দোষ নয়। এতে তার সৌন্দর্যের রহস্য লুকায়িত। যেমন ভ্রুর সৌন্দর্য তার বক্রতায়।
কখনও যদি ভুল করে ফেলে, তার ওপর নির্দয়ভাবে হামলা চালাতে যেও না । বাঁকাকে সোজা করতে গেলে তুমি তা ভেঙ্গেই ফেলবে। এর পরিণতি তালাক পযন্ত পৌঁছবে।
পক্ষান্তরে ভুলগুলো প্রশ্রয় দিলে তার বক্রতা বেড়েই চলবে। সে নিজেকে নিজের মধ্যে গুটিয়ে নেবে। ফলে সে তোমার জন্য যেমন নরম হবে না। তেমনি শুনবে না তোমার কোন কথা।
অষ্টম বিষয় :
নারীদের সৃষ্টিই করা হয়েছে স্বামীর অকৃতজ্ঞতা এবং উপকার অস্বীকারের স্বাধীনতা দিয়ে। তুমি যদি যুগযুগ ধরে তাদের কারো প্রতি সহৃদয়তা ও সদাচার দেখাও তারপর শুধু একটিবারও তার সঙ্গে মন্দ ব্যবহার কর তবে সে বলে ওঠবে, তোমার কাছে আমি জীবনে ভালো কিছুই পেলাম না।
অতএব তাদের এ বৈশিষ্ট্য যেন তোমায় তাকে অপছন্দ বা ঘৃণায় প্ররোচিত না করে। কারণ, তোমার কাছে তার এ বৈশিষ্ট্যটি খারাপ লাগলেও তার মধ্যে ভাল লাগার মত অনেক গুণ দেখতে পাবে।
নবম বিষয় :
বহুবিধ শারীরিক দুর্বলতা ও মানসিক ক্লান্তির মধ্য দিয়েই নারীর জীবন বয়ে চলে। এ দিকে লক্ষ্য রেখেই আল্লাহ পাক তাদের জন্য কিছু ফরয আমলও ক্ষমা করে দিয়েছেন। রক্তস্রাব ও সন্তান প্রসবকালে সালাত মাফ করে দিয়েছেন। এ সময়দুটোয় রোজাও স্থগিত করে দেয়া হয়েছে। শরীরিক সুস্থতা ফিরে না আসলে ও মেজাজ স্বাভাবিক না হলে ….যেও না ।
অতএব এ সময়গুলোয় তুমি আল্লাহ পাকের প্রতি খুব বেশি মনোনিবেশ করো এবং ইবাদতে খুব বেশি মনোযোগ দাও । কারণ, তার জন্য আল্লাহ পাক যেমন ফরযকে হালকা করে দিয়েছেন, তেমনি কাছ থেকে তোমার চাহিদা ও নির্দেশও হালকা করে দিয়েছেন।
দশম বিষয় :
মনে রাখবে স্ত্রী কিন্তু তোমার কাছে একজন বন্দিনীর মতো। অতএব তার বন্দিত্বের প্রতি সদয় থাকবে এবং তার দুর্বলতাগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবে।
তাহলে সে হবে তোমার জন্য সর্বোত্তম সম্পদ। সে হবে তোমার সর্বোৎকৃষ্ট সঙ্গী । আল্লাহ পাক তোমার কল্যাণ করুন।