মঙ্গলবার, ৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ৯ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

মুহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী


বাইবেলে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের আবির্ভাবের ভবিষ্যদ্বাণী ইসলামের সত্যতারই একটা প্রমাণ। এ ছাড়া সেটা বাইবেলে বিশ্বাসী মানুষদের চোখের সামনেও মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওতের একটা প্রমাণ।

Deutaronomy (দ্বিতীয় বিবরণ) এর ১৮ তে বলা হয়েছে, মুসা আ. বলেন: আল্লাহ তা‘আলা আমাকে বললেন: “তাদের জন্য তাদের ভাইদের মধ্য থেকে তোমার মত একজন নবীকে প্রেরণ করা হবে। আমি তার মুখে আমার কথা দিয়ে দেব। তিনি আমার নির্দেশিত বাণী দিয়ে কথাবার্তা বলবেন। আর যারা তার মুখস্থিত আমার কথা না শুনবে তাদেরকে আমি জিজ্ঞাসাবাদ করব।” (দ্বিতীয় বিবরণ, ১৮ : ১৮-১৯)

উক্ত উক্তির সারাংশ হলো— আবির্ভূত ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে:

১. তিনি হবেন মুসা আ. এর মত।

২. তিনি ইসরাইলীদের ভাইদের তথা ইসমাইলিয় বংশ থেকে আসবেন।

৩. আল্লাহ তা‘আলা নিজ বাণীকে তার মুখে দিয়ে দিবেন। তিনি তার নির্দেশিত বিষয়সমূহ মানুষকে জানিয়ে দিবেন।

এবার আসুন! আমরা এই বৈশিষ্ট্যগুলোকে একটু গভীরভাবে বিশ্লেষণ ও চিন্তা করি।

১. মুসা আ. এর মত নবী:

মুসা আ. ও মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের মধ্যকার যেমন মিল রয়েছে অন্যান্য নবীদের মধ্যে সে রকম মিল অন্য দু‘জন নবীর মধ্যে খুঁজে পাওয়া খুবই কষ্টকর। তারা উভয়েই পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান নিয়ে এসেছেন। তারা প্রত্যেকেই শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করে আশ্চর্যজনকভাবে বিজয়ী হয়েছেন। তাদের প্রত্যেকেই ছিলেন নবী ও রাষ্ট্রপ্রধান। এবং তারা প্রত্যেকেই নিজের মাতৃভূমি থেকে তাদের বিরুদ্ধে হত্যার ষড়যন্ত্রের কারণে হিজরত (যাত্রা) করেছেন।

ঈসা আ. ও মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের মধ্যে উপরের মত মিল নেই এবং অন্যান্য ক্ষেত্রেও মিল নেই যেমন— স্বাভাবিক জন্ম, পারিবারিক জীবন এবং মুসা আ. ও মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের মত স্বাভাবিক মৃত্যু; যেহেতু ঈসা আ. ইন্তেকালই করেন নি।

মুসা আ. ও মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রত্যেকের উম্মতেরা তাদেরকে যেমন আল্লাহ তা‘আলার নবী মনে করেন; ঈসা আ. এর অনুসারীরা তাকে তেমন নবী মনে করে না বরং আল্লাহ তা‘আলার পুত্র মনে করে। এ ছাড়া মুসলিমরা ঈসা আ. কেও আল্লাহ তা‘আলার নবী বলে বিশ্বাস করে।

উপরের আলোচনা থেকে এ কথা বলা যায় যে, বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে মিলে যায়; ঈসা আ. এর সাথে নয়। কারণ, মুসা আ. এর সাথে ঈসা আ. এর তুলনায় মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাদৃশ্যই বেশি।

অপরদিকে, “গসপেল অব জন” থেকে জানা যায় যে, ইহুদিরা তিনটি স্বতন্ত্র ভবিষ্যদ্বাণীর অপেক্ষা করছিল। সেগুলো হল-

১. ঈসা আ. এর আবির্ভাব

২. ইলিয়ার (Elija) আবির্ভাব।

৩. মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের আবির্ভাব।

জন দ্য ব্যাপ্টিস্ট (ইয়াহিয়া আ.) -কে জিজ্ঞাসা করা তিনটি প্রশ্ন থেকেই এটা স্পষ্ট হয় যে, তারা তিনটি ভবিষ্যদ্বাণীর অপেক্ষা করছিল: “এই হলো জনের সাক্ষ্য, যখন জেরুজালেমের ইহুদিরা পাদ্রীদেরকে পাঠাল এই প্রশ্ন করতে যে, ‘কে আপনি? তিনি নিজের পরিচয় দিলেন, অস্বীকার করেন নি। তিনি তাদেরকে বললেন: আমি খ্রিষ্ট নই। তারা জিজ্ঞাসা করল: তাহলে আপনি কি ইলিয়‘? উত্তরে বললেন: না। তারা বলল: আপনি কি সেই নবীতিনি বললেন: না” (জন ১: ১৯-২১)

যদি আমরা বাইবেলের পাতার পার্শ্ব-টীকার দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাই যে, সেখানে (জন ১:২১) উল্লেখিত “Prophet” শব্দটি Deutaronomy (দ্বিতীয় বাণী) এর 18 : ১৫ এবং ১৮ : ১৮ তে উল্লেখিত ভবিষ্যদ্বাণীর সাথে সম্পৃক্ত। উক্ত আলোচনার পর এখন আমরা বলতে পারি যে, Deutaronomy (দ্বিতীয় বাণী) এর 18 : ১৮ তে উল্লেখিত নবী বলে ঈসা আ. কে বুঝানো হয় নি।

২. ইসরাইলীদের ভ্রাতৃবর্গ থেকে:

ইব্রাহীম আ. এর ছিল দুই সন্তান; ইসমাইল ও ইসহাক আ. (Genesis বা আদিপুস্তক ২১)। ইসমাইল আ. হলেন আরবদের পূর্বপুরুষ। আর ইসহাক আ. ইহুদি জাতির পূর্বপুরুষ। আর যে নবীর ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে তিনি ইহুদীদের মধ্য থেকে আসবেন না। বরং তিনি আসবেন তাদের ভ্রাতৃবর্গদের মধ্য থেকে, তথা ইসমাইল আ. এর বংশ থেকে। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামও ইসমাইল আ. এর বংশ থেকে এসেছেন। সুতরাং, তিনিই বাইবেলে উল্লিখিত আকাঙ্ক্ষিত নবী।

বাইবেলের ইশাঈয়া ৪২ : ১-১৩ তে আলোচনা করা হয়েছে একজন আল্লাহর বান্দা “যাকে নির্বাচন করা হয়েছে” এবং “রাসূল (দূত)” সম্পর্কে। বলা হয়েছে যে, তিনি শরীয়ত তথা জীবনবিধান নিয়ে আসবেন। “তিনি তা পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা না করা পর্যন্ত ক্ষান্ত বা পিছপা হবেন না। দ্বীপের অধিবাসীরা তার আনিত জীবনবিধানের জন্য অপেক্ষায় থাকবেন।” (ইশাঈয়া ৪২ : ৪) ১১ নং উক্তিতে রাসূল বা দূতকে “কেদারের” বংশ থেকে আবির্ভাব হবে বলে বলা হয়েছে। Genesis (আদিপুস্তক) ২৫:১৩ অনুসারে কেদার হলেন— ইসমাইল আ. এর দ্বিতীয় পুত্র ও মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের পূর্বপুরুষ।

৩. আল্লাহ এই নবীর মুখে তার বাণী রাখবেন:

আল্লাহ তা‘আলা তার বাণী কুরআন মাজীদকে বাস্তবিকই তার মুখে দিয়ে দিয়েছেন। তিনি জিবরাইল আ. কে পাঠিয়েছেন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তার বাণী শিক্ষা দেবার জন্য। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাহাবীদের দিয়ে জিবরাইল আ. এর কাছ থেকে যেমন শুনতেন তেমনি লিখিয়ে নিতেন। সুতরাং, কুরআনের বাণী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা নয়। তার নিজের চিন্তা-প্রসূত নয়। বরং, তা জিবরাইল আ. এর মাধ্যমে তার মুখে রাখা হয়েছে। আর মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশাতেই এবং তার নিজের পরিচালনাতেই সাহাবীরা কুরআনকে লিপিবদ্ধ ও কণ্ঠস্থ করেছেন।

 

লক্ষ করুন, Deutaronomy (দ্বিতীয় বর্ণনা) -এ বলা হয়েছে, “আর যারা তার মুখস্থিত আমার কথা না শুনবে আমি তাদেরকে আমি জিজ্ঞাসাবাদ করব।” (দ্বিতীয় বর্ণনা ১৮:১৯) এর অর্থ হচ্ছে যে, যে ব্যক্তি বাইবেলে বিশ্বাস করবে, তাকে অবশ্যই এই নবীর কথা বিশ্বাস করতে হবে। আর এ নবী হচ্ছেন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

Archives

March 2024
S S M T W T F
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031