রবিবার, ২১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩রা রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
আলী আজমঃ ফেসবুক ছিল সামাজিক যোগাযোগের সহজ এবং বিকল্প জনপ্রিয় এক মাধ্যম। হাজার মাইল দূরে থেকেও ফেসবুকের সাহায্যে মুহূর্তের মধ্যে বন্ধু-বান্ধব স্বজনদের সাথে আড্ডায় মেতে ওঠা, মনের ভাব প্রকাশ করা, খবরাখবর নেওয়ার ক্ষেত্রে ফেসবুকের অবদান অনস্বীকার্য। ফেসবুক যোগাযোগের নতুন দ্বার খুলে দিয়েছে দুনিয়াবাসীকে। ফেসবুক যুগের চাহিদা মিটিয়েছে শতভাগ। বিজ্ঞানের এযুগে এমন যোগাযোগ মাধ্যম আমাদের চাওয়া ছিল। নতুন যুগের সূচনা ঘটিয়েছে ফেসবুক। সেক্ষেত্রে ফেসবুকের কাছে ঋণী আমরা।
.
ফেসবুক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে আমাদের মাঝে আত্মপ্রকাশ করলেও কালের বিবর্তনে ধীরেধীরে তা বিকল্প সংবাদ মাধ্যম হিসেবেও পরিচয় লাভ করে। ‘বিনোদন’ ফেসবুকের অন্যতম বৈশিষ্ট বললেও ভুল হবে না। কারণ ফেসবুকের কল্যাণে মানুষ হার হামেশা বিনোদনে লিপ্ত। সেই হিসেবে ফেসবুক বিনোদনরেও মাধ্যম। তথ্য আদানপ্রদানেও ফেসবুক নতুন দিগন্তের সূচনা ঘটিয়েছে। বঞ্চিতদের অধিকার আদায়ে ফেসবুকের অবদান অস্বীকার করার অবকাশ নেই। ফেসবুক বঞ্চিতদের কথা বলেছে। ফেসবুক মাজলুমের মিডিয়ায় রূপান্তরিত হয়েছে। ফেসবুক নির্যাতিতদের মিডিয়া।
.
যখন মাজলুমদের পক্ষে কোনো মিডিয়া এগিয়ে আসেনি তখন মাজলুমরা ফেসবুককে নিজেদের একমাত্র প্রচার মাধ্যম হিসেবে পাশে পেয়েছে। তাদের আকুতি কিঞ্চিৎ পরিমাণ হলেও বিশ্ববাসীর কাছে তোলে ধরেছে ফেসবুক। নাস্তিক্যবাদ প্রচারের পাশাপাশি দ্বীন প্রচারের ক্ষেত্রেও ফেসবুকের অবদান অনস্বীকার্য। নাস্তিক্যবাদ সূত্রধরে বাতিল দমনে হক্ব তথা এদেশের ওলামায়ে কেরাম এককথায় কওমীপন্থীদের ফেসবুকে আগমন ঘটেছে উল্লেখযোগ্যহারে। নাস্তিক্যবাদ ইস্যু প্রকাশ পাওয়ার আগপর্যন্ত ফেসবুকে ইসলামীস্টদের পদচারণ তেমন একটা ছিল না বললে ভুল হবে না।
.
আসল কথায় আসা যাক।
ফেসবুক আমাদের অনেক উপকার করেছে যা বলে শেষ করা যাবেনা। তবে যে পরিমাণ ক্ষতি করেছে তা কিয়ামাতের আগেও পূরণ হবে বলে মনে হয় না। ফেসবুক আমাদের সোনালী ইতিহাস ঐতিহ্য ধ্বংস করেছে। ফেসবুক কওমী অঙ্গনের ঈর্ষার প্রতীক ভ্রাতৃত্ব, শ্রদ্ধা, স্নেহ, ভালবাসা, উদারতা নামক প্রশংসনীয় শব্দগুলোকে চিরতরে ছিনিয়ে নিয়েছে! ফেসবুক আমাদের মাঝে চরম রেষারেষি ঘেঁষাঘেঁষি হিংসা বিদ্বেষের জন্ম দিয়েছে। ফেসবুক সোনালী ঐক্যের মাঝে বিধ্বংসী ফাটল ধরিয়েছে। যা রক্ষা করা আমাদের পক্ষে অনেকটা অসম্ভব বলা চলে।
.
ফেসবুক আমাদের মাঝে অনৈক্যের কাঁটা বিশিষ্ট যে বীজ রোপণ করেছে সে বীজ আজ শক্তিশালী বিঁষাক্ত ফলের বৃক্ষে রূপান্তরিত হয়েছে। সে বৃক্ষের বিষাক্ত ফল খেয়ে আজ কমবেশি সবাই রীতিমত নৈতিক অবক্ষয়ের শিকার হয়েছে। ছোটরা বড়দের নিয়ে যাচ্ছেতাই বকছে। বড়রা ছোটদের রেষারেষি ঘেঁষাঘেঁষি বেয়াদবির সবক দিচ্ছে। সে সুযোগে ছোটরা বড়দের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করছে। ওস্তাদকে ওস্তাদের সম্মান দিচ্ছেনা। সম্মানীরা বারবার অপদস্থ লাঞ্ছনা আর বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। বড়রা ছোটদের তিরস্কারের শিকার হচ্ছে। ছোটরা নিজেদের সবজান্তা ভাবতে শুরু করেছে।
.
অতি ক্ষুদ্র বিষয় নিয়েও ছোটরা বড়দের সমালোচনা করছে লাগামহীনভাবে! বড়দের ইজ্জৎ সম্মানের বারোটা বাজাচ্ছে দ্বিধাহীনভাবে। সর্বদা ব্যস্ত বড়দের ছিদ্রান্বেষণে। ইস্যুর পর ইস্যু সৃষ্টি করে মাতামাতি লাফালাফি করছে মাতালের মত। সবাই নিজেদের হক্বানী আর নিজের মতাদর্শে সঠিক প্রমাণ করতে গিয়ে অন্যদের জাহান্নামেও পৌঁছে দিচ্ছে অনায়াসে। মত পথের বিপরীত হলেই অযাচিত সব মন্তব্য করা হচ্ছে যে কাউকে নিয়ে। নিজের পছন্দের ব্যক্তিকে তুলতে তুলতে আসমান পর্যন্ত তুলে ফেলছে! আর অপছন্দের ব্যক্তিকে ঘৃণা আর ধিক্কার দিতে দিতে ধ্বংসের অতল গহ্বর পৌঁছে দিচ্ছে!
.
আফসোস! শতসহস্র আফসোস! এসব একমাত্র ফেসবুকের কল্যাণেই সম্ভব হচ্ছে। ফেসবুক তার নিজস্ব স্বকীয়তা হারিয়েছে। বিতর্ক আর ফিতনার মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। অনৈক্য আর দূরত্বের মাধ্যমে পরিণত ফেসবুক। ফেসবুক আমাদের নীতিনৈতিকা কেড়ে নিয়েছে। ফেসবুকের জন্ম না হলে এসব ধ্বংসাত্মক কালো অধ্যায়েরও সূচনা হতো না।
ফেসবুক আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্য ধ্বংস করে দিয়েছে। তাই এবার আমিও ফেসবুকের ধ্বংস কামনা করছি। ফেসবুক তুই ধ্বংস হ!