বুধবার, ৮ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে রজব, ১৪৪৬ হিজরি
Admin | ১,১৮৫ views | এপ্রিল ২৭, ২০২০ | দরসে তারাবীহ,দরসে তারাবীহ,Religion,Quran,নামাজ | No | ৪:২৮ অপরাহ্ণ |
আজ চতুর্থ তারাবিতে সূরা নিসার ৮৮-১৪৬ এবং সূরা মায়িদার ১-৮২ নম্বর আয়াত পর্যন্ত পড়া হবে। পারা হিসেবে আজ পড়া হবে পঞ্চম পারার দ্বিতীয়ার্ধ এবং পুরো ষষ্ঠ পারা।
Default Ad Content Here
৪. সূরা নিসা: (৮৮-১৪৬) পারার দ্বাদশ রুকুতে মুসলমানদেরকে মোনাফেকদের ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোরআন মোনাফেকদের গোপন ষড়যন্ত্র ও হীন চক্রান্তের কথা ফাঁস করে দিয়ে তাদের ব্যাপারে চূড়ান্ত ফয়সালা শুনিয়ে দিয়েছে। ত্রয়োদশ রুকুতে কোনো মোমিনকে ইচ্ছাকৃত হত্যা করার শাস্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে। ইচ্ছাকৃত হত্যার শাস্তি সম্পর্কে আলোচনা করার পর সূরায় দ্বিতীয়বার জিহাদের গুরুত্ব এবং মুজাহিদদের ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে।
সূরাটিতে বারবার জিহাদের প্রসঙ্গ এসেছে, এর কারণ কী? এর কারণ হলো, জিহাদ মুসলিম জাতির সম্মান ও সৌভাগ্যের সোপান। যদি উম্মত জিহাদ-বিমুখ হয়ে যায় তাহলে লাঞ্ছনা ও অপদস্থতা থেকে কেউ তাদের উদ্ধার করতে পারবে না। জিহাদের সঙ্গে সঙ্গে হিজরতের আলোচনা এসেছে। কেননা ঈমান আমল রক্ষার জন্য অনেক সময় হিজরতেরও প্রয়োজন পড়ে।
চতুর্দশ রুকুতে যারা আত্মপ্রবঞ্চনায় ভুগছে এবং ঈমান বাঁচানোর জন্য যারা হিজরত করছে না, তাদের প্রতি সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে। তবে যারা দুর্বল, যাদের সামনে কোনো পথ খোলা নেই তাদেরকে মহান আল্লাহর ক্ষমার কথা শুনানো হয়েছে।
পঞ্চদশ রুকুতে সফরে এবং যুদ্ধের ময়দানে নামাজ আদায়ের পদ্ধতি ও বিধান প্রসঙ্গে আলোচনা রয়েছে। সময়মতো নামাজ আদায়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। ষোড়শ রুকুতে নবী-জীবনের একটি প্রসিদ্ধ ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে এবং খেয়ানতকারীদের পক্ষ অবলম্বনের ব্যাপারে নিষেধ করা হয়েছে। অষ্টাদশ রুকুতে বলা হয়েছে, আল্লাহ তায়ালার কাছে ঘোরতর অপরাধ হলো কুফর ও শিরক। এ অবস্থার ওপর যার মৃত্যু হবে তার ক্ষমার কোনো সুযোগ নেই। ঊনবিংশতম রুকুতে সূরায় দ্বিতীয়বার নারীদের আলোচনা এসেছে। এখানেও নারীদের প্রতি জুলুম এবং তাদের অধিকার হরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, যদি স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে বিবাদ দেখা দেয়, তাহলে পারস্পরিক সমঝোতা করে নেওয়া উচিত। আর সমঝোতার উত্তম পন্থা হলো ‘সুলহ’ বা সন্ধি।
একবিংশ রুকু অর্থাৎ পঞ্চম পারার শেষ রুকুতে ফের মোনাফেকদের ভর্ৎসনা করা হয়েছে এবং তাদের কঠিন শাস্তির ধমক শোনানো হয়েছে। পরবর্তী আয়াতগুলোতে ইহুদিদের অপরাধের বিবরণ দেওয়া হয়েছে। মূলত কাফের ও মোনাফেক কুফরি ও ভ্রষ্টতার ক্ষেত্রে ছিল একে অপরের চেয়ে অগ্রগামী। ইহুদিদের জঘন্য অপরাধগুলোর মধ্যে একটা হলো, তারা ঈসা (আ.) কে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তাকে হেফাজত করেছেন এবং সম্মানের সঙ্গে আকাশে উঠিয়ে নিয়েছেন। সূরা নিসার শেষাংশে সে একই বিষয়ের পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে, যা প্রথমাংশে করা হয়েছিল। অর্থাৎ নারীদের অধিকার এবং তাদের মিরাস প্রদানে যত্নবান হতে হবে।
৫. সূরা মায়িদা: (মদিনায় অবতীর্ণ, আয়াত একশত বিশ, রুকু ষোল) সূরাটিতে দস্তরখান সম্পর্কিত একটি ঘটনা থাকায় এর নামকরণ করা হয়েছে ‘মায়িদা’ বা দস্তরখান।
সূরা মায়িদার শুরুতে মোমিনদের প্রত্যেক জায়েজ অঙ্গীকার ও চুক্তি পূর্ণ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। জাহেলি যুগে যা কিছু অবাধে ভক্ষণ করা হতো ইসলাম সেগুলোর অনেক কিছুকে অখাদ্য বলে চিহ্নিত করেছে এবং তা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। সূরার তৃতীয় রুকুতে ইহুদিদের হঠকারিতা, অবাধ্যতা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ এবং ফেতনা-ফ্যাসাদের বিবরণ এসেছে। তাদের এসব দুশ্চরিত্রের আলোচনার মাধ্যমে সতর্ক করা হচ্ছে যে, তোমরা এগুলো থেকে বেঁচে থাকো।
চতুর্থ রুকুতে বলা হয়েছে, ইহুদিদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহগুলো স্মরণ করিয়ে দিয়ে মুসা (আ.) তাদের পবিত্র ভূমিতে (ফিলিস্তিনে) প্রবেশের নির্দেশ দেন। কিন্তু উত্তরে তারা মূসা (আ.) এর সঙ্গে তামাশা শুরু করে দেয়। পঞ্চম রুকুতে হত্যার বিধান আলোচিত হয়েছে। ষষ্ঠ ও সপ্তম রুকুতে ইহুদিদের পাশাপাশি খ্রিষ্টানদের ভ্রান্তি ও ভ্রষ্টতার বর্ণনা দেওয়ার পর বলা হয়েছে, তাদেরকে তাওরাত এবং ইঞ্জিল দান করা হয়েছিল। কিন্তু তারা কিতাবের ফয়সালা মানেনি, কিতাবের নির্দেশনা অনুযায়ী চলেনি।
অষ্টম ও নবম রুকুতে ইহুদি-খ্রিষ্টানদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। তারা পরস্পর পরস্পরের সহযোগী। দশম রুকুতে এক আল্লাহর ইবাদতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং যারা ঈসা (আ.) কে আল্লাহর পুত্র মনে করে তাদের দাবির অসারতা প্রমাণ করা হয়েছে।
ষষ্ঠ পারার সর্বশেষ রুকুতে ইহুদি জাতি অভিশপ্ত হওয়ার কারণ বর্ণনা করা হয়েছে। আর তা হলো ইহুদিরা আল্লাহ তায়ালার অবাধ্যতা করেছিল এবং সীমালঙ্ঘন করেছিল আর তারা পরস্পরকে সেসব গর্হিত কাজ থেকে নিষেধ করত না, যা তারা করত।
লেখক:মাওলানা রাশেদুর রহমান ।। পেশ ইমাম ও খতীব, কেন্দ্রীয় মসজিদ, বুয়েট