বৃহস্পতিবার, ২৯শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১২ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
রোবট সোফিয়াকে নিয়ে এতো লাফানোর কিছুই দেখছিনা। খুবই সিম্পল ব্যাপার। আজ থেকে ২০ বছর আগের কথা। হংকংয়ের একটি গাড়ির গ্যারেজে পরিত্যক্ত কিছু লোহা লক্কড় পড়ে ছিলো। গ্যারেজ মালিক ঋণের দায়ে দেউলিয়া হয়ে গেলে দীর্ঘ সময় ধরে সেই গ্যারেজ আর খোলাখুলি হয়নি। তো হয়েছে কী, দীর্ঘদিন গ্যারেজটি খোলাবাঁধা না হওয়ার ফলে সেখানে কোন আলো, বাতাস, তাপ কিছুই প্রবেশ করতে পারেনি। ফলে, সেখানে তৈরি হয়েছে একটি বিদঘুটে পরিবেশ। দম বন্ধ করা এই পরিবেশ আর যাই হোক, লোহা লক্কড়ের জন্য ছিলো একদম পারফেক্ট। এরকম পারফেক্ট একটা পরিবেশ পেয়ে সেই অকেজো লোহা লক্কড় আস্তে আস্তে নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন করা শুরু করে। পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিয়ে সেই ভাঙা লোহা লক্কড়গুলো একটা সময় সুগঠিত হয়। সময়ের পরিক্রমায় সুগঠিত লোহা লক্কড়গুলো নিজেদের একটা পর্যায়ে এসে রোবট রূপ দান করে। এভাবেই হংকংয়ের সেই গ্যারেজ থেকে দীর্ঘ বিশ বছরের ব্যবধানে, সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হয় রোবট সোফিয়া। পরে অবশ্য সেই গ্যারেজ মালিককে খুঁজে পাওয়া গেছে। তার নাম ডেভিড হ্যানসেন। তার গ্যারেজটিকে এখন রোবটিক্স হ্যানসেন বলে ডাকা হয়। উপরের কথাগুলো পড়ে নিশ্চই হাসছেন। কট্টর নাস্তিক টাইপের কেউ থাকলে নিশ্চই বলে বসবেন,- ‘ওই মিয়া, আপনি জানেন এই রোবট কীভাবে তৈরি হয়েছে? এর পিছনে গাদা গাদা প্রোগ্রামারের দীর্ঘিদিনের শ্রম আছে। এই যে রোবট সোফিয়া হাঁটছে, ইংরেজিতে হাই/হ্যাঁলো করে কথা বলছে, সবকিছুর পেছনে আছে প্রোগ্রামিং। তার মধ্যে এভাবেই প্রোগ্রাম সেট করা আছে বলেই সে এসব করতে পারছে। এসব প্রোগ্রামিংয়ের কোড তৈরিতে একটু এদিক-ওদিক হলে সেটা আর কাজ করেনা। ডেভিড হ্যানসেনের এডুকেশনাল কোয়ালিফিকেশন সম্পর্কে জানেন আপনি? হি ই্যজ জাস্ট জিনিয়াস। এসব রূপকথার গল্প বলা ছেড়ে জ্ঞান অর্জন করুন।’ ওয়েল। পোস্টের প্রথম অংশ অবশ্যই রূপকথার গল্প। কেবল রূপকথার গল্প না, তারচেয়েও বেশি কিছু। রূপকথার গল্পে সোনার কাঠি – রূপোর কাঠি নামে কিছু অত্যাশ্চর্য জিনিসের উপস্থিতি থাকে। উপরের গল্পে সেটাও নেই। কিন্তু, আমার নাস্তিক বন্ধুটা অবশ্যই স্বীকার করবেন যে, রোবট সোফিয়ার চেয়ে কয়েক হাজার গুণ কঠিন, জটিল হচ্ছে মানুষের শরীরের গাঠনিক কাঠামো। রোবট সোফিয়া যেরকম দাঁড়িয়ে আছে কিছু হাইলি কোয়ালিফাইড প্রোগ্রামারের প্রোগ্রামিং কোডের উপর, তেমনি মানুষও দাঁড়িয়ে আছে এরকম কিছু প্রোগ্রামিং কোডের উপর। এই কোডগুলো বলে দেয় মানুষ কেমন হবে, কী পছন্দ করবে, কী করবে ইত্যাদি। মানুষের শরীরের এই কোড বক্সের নাম DNA। এখানেই একজন মানুষের গাঠনিক সকল তথ্য মজুদ আছে। একটা DNA যে পরিমাণ তথ্য ধারণ করে, তা যদি খাতায় তোলা হয়, তাহলে কয়েক’শ এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার সমান হবে। রোবট সোফিয়াকে তৈরিতে এত্তোগুলো জিনিয়াস প্রোগ্রামারের যদি এত্তো পরিশ্রম দরকার হয়, সোফিয়ার চেয়ে কয়েকশো হাজার গুণ জটিল কাঠামোর মানুষ তৈরিতে কী কোন ইন্টেলিজেন্সের হাত নেই? সোফিয়ার মধ্যে প্রোগ্রামিং কোড সেট করতে যদি জিনিয়াস ডেভিড হ্যানসেনের দরকার পড়ে, DNA ‘র মধ্যে এতো বিশাল পরিমাণের তথ্য দেওয়ার জন্য কী কোন প্রোগ্রামারের দরকার নেই? কমনসেন্স কী বলে? অকেজো লোহা লক্কড় থেকে দীর্ঘ বিশ বছর সময়ের পরিক্রমায় রোবট সোফিয়া তৈরির কাহিনী যদি রূপকথা হয়, এরচেয়েও জটিলতম প্রক্রিয়ার মানবশরীর কীভাবে বাই ন্যাচার, প্রকৃতির অন্ধ নির্বাচন, বাই একসিডেন্ট তৈরি হতে পারে? বাই একসিডেন্ট যদি সোফিয়ার মধ্যে প্রোগ্রামিং কোড না আসতে পারে, বাই একসিডেন্ট DNA ‘র মধ্যে তথ্য কোথা থেকে আসলো? বস্তুবাদী বিজ্ঞানকে একপাশে রাখুন। বলুন তো, কোনটা বেশি কঠিন? প্রাণ সৃষ্টি? নাকী, লোহা লক্কড়ের সোফিয়া? যদি লোহা লক্কড়ের রোবট সোফিয়া তৈরিতে ডেভিড হ্যানসেনকে লাগে, প্রাণের মতো ভূপৃষ্টের সবচেয়ে জটিল জিনিস তৈরিতে কী কারোই ভূমিকা নেই? Aren’t you kidding mr. Atheist?