বৃহস্পতিবার, ১০ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

বেপর্দা মহিলার কবরের আযাব! মাওলানা তারিক জামিল

ইমাম আবু বকর বিন আবিদ্দুনিয়া কবরের আযাব সম্পর্কে একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন। এ ঘটনাটি গিলগিট নামক অঞ্চলের। এক ব্যক্তি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল।লোকটি শুনতে পেল, যে কবরের ভেতর থেকে আওয়াজ আসছে, আমাকে বের করো। আমি জীবিত।কয়েকবার এ আওয়াজ শোনার পর লোকটি মনে করলো এটা তার শোনার ভুল হতে পারে। কিন্তু যখন আরও কয়েকবার এ আওয়াজ শুনতে পেলো তখন সে বুঝলো, এতো সত্যিই কবর থেকে আসছে।

লোকটি পাশের গ্রামে গিয়ে মানুষদেরকে বললো যে, সে কবরস্থানের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আমি কয়েকবার কবর থেকে কারও ডাক শুনতে পেলাম, কে যেন কবর থেকে বলছে আমাকে কবর থেকে বের করো।আমি জীবিত। লোকটির একথা শুনে গ্রামবাসী আশ্চর্য হলো। লোকটি বললো, চলো তোমরাও আমার সাথে কবরস্থানে যাবে।

অতএব, গ্রামবাসী কবরস্থানে গেলো। তখন গ্রামবাসীও এ আওয়াজ শুনতে পেলো।সবাই একথার উপর বিশ্বাস হলো যে এ আওয়াজ কবরের ভিতর থেকেই আসছে।

এখন সবাই নিজ কানে কবর থেকে এ আওয়াজ শোনার পর মহল্লার ইমামের কাছে গিয়ে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলো।এখন আমরা এ অবস্থায় আমরা কি কবর খুলতে পারব কিনা, ইমাম সাহেব সবকিছু বিস্তারিত শোনার পর বললেন, যদি একথা আপনাদের দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস হয় লেকটি জিন্দা তাহলে কবর খুলে দেখতে পারেন।

এরপর সাহসী কিছু লোক কবরস্থানে গিয়ে কবরটি খনন করলো। কবরের মাটি সরানোর পর যখনই একটি তখতা সরানো হলো, তারা দেখলো ভিতরে একজন মহিলা উলঙ্গ অবস্থায় বসে আছে।আর তার কাফন পঁচে গেছে এবং মহিলা বলছে, জলদি আমাকে একটা কাপড় দাও।তাকে কাপড় দেওয়া হলো।কবরের ভিতর কাপড় দেওয়ার পর মহিলা পরলো

মহিলা মাথায় ভালো করে কাপড় দিয়ে অত্যান্ত দ্রুতগতিতে কবর থেকে বের হলো।তারপর দৌড়ে নিজের বাড়িতে এক কক্ষে প্রবেশ করলো। পিছনে পিছনে লোকজনও এসে পৌছালো।লোকজন এসে দেখলো কক্ষের দরজা বন্ধ।

লোকজন মহিলাকে ডাকতে থাকলো দরজা খোলার জন্য। মহিলা জবাব দিলো দরজা খুলবো। কিন্তু যারা ভিতরে আসবে, তারা কি আমার চেহারা দেখে ঠিক থাকতে পারবে? কেননা এখন আমার যে অবস্থা, তা দেখে সহ্য করা সব মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। সুতরাং অত্যন্ত সাহসী কোনো লোক যদি থাকে,তাহলে যেন ভেতরে এসে আমার অবস্থা অবলোকন করে।

মহিলার একথা শুনে সবাই ভয় পেয়ে গেলো।কয়েকজন লোক অত্যন্ত সাহসী ছিলো তারা বললো, তুমি দরজা খোলো, আমরা ভিতরে আসবো।মহিলা দরজা খুলে দিলো, লোকগুলো ভেতরে প্রবেশ করলো।

ভিতরে মহিলা চাদর দিয়ে সম্পূর্ণ আবৃত করে বসেছিলো।লোকগুলো ভিতরে প্রবেশ করার পর মহিলা প্রথমে নিজের মাথার চাদর সরিয়ে ফেললো।লোকগুলো মহিলার মাথায় কোনো চুল দেখতে পেলো না। আর মাথায় কোনো গোসতও না, শুদু হাড্ডি। লোকগুলো মহিলাকে জিজ্ঞেস করলো, তোমার মাথার চুল কোথায়?

মহিলা জবাব দিলো, জিন্দা অবস্থায় আমি যখন ঘর থেকে বের হতাম, তখন আমার মাথায় কোনো কাপড় থাকতো না।লম্বা লম্বা চুল পরপুরুষকে দেখিয়ে বেড়াতাম। মৃত্যুপর যখন আমাকে কবরে রাখা হলো, তখন ফেরেশতারা প্রথমে আমার চুলগুলো একটি একটি করে টেনে তুলে ফেললো।প্রত্যেকটা চুলের সাথে মাথার চামড়া উঠে গেলো। সে কারণে আমার মাথায় চুলও নেই, চামড়াও নেই।অতঃপর মহিলা তার চেহারা থেকে চাদর সরালো। লোকগুলো দেখলো মহিলার ভয়ংকর চেহারা। মুে দাত ছাড়া আর কিছুই নেই। আর ঠোটের কোনো অস্তিত্বই ছিলো না।এ অবস্থায় শুধু দাতগুলো দেখা যাচ্ছিলো। এবার ভেবে দেখুন, যদি কোনো মানুষের মুখের দাতগুলো ছাড়া আর কিছু না থাকে তাহলে কেমন ভয়ানক লাগবে দেখতে?

এরপর লোকগুলো জিজ্ঞেস করলো,তোমার ঠোট কোথায়? মহিলা জবাব দিলো,আমার ঠোট লিপিস্টিক দিয়ে রাঙ্গিয়ে পরপুরুষের সামনে যাতায়ত করতাম।এর জন্যই শাস্তিস্বরূপ আমার ঠোট কেটে ফেলা হয়েছে।

তারপর মহিলা তার হাত দেখালো, পা দেখালো। লোকগুলো দেখলো তার হাতের ও পায়ের কোনো নখ নেই। মহিলাকে জিজ্ঞেস করলে, সে বললো, নখ পালিশ লাগিয়ে হাতের পায়ের আঙ্গুলগুলোকে রঙ্গিন করে পরপুরুষের সামনে যাতায়াত করতাম, তাি আমার হাত, পায়ের নখ তুলে ফেলা হয়েছে।

মহিলা বললো,দেখুন আমি জীবিত অবস্থায় সেজেগুজে মানুষকে দেখাতাম,নিজেকে বেপর্দা করে পর পুরুষের সামনে প্রদর্শন করতাম।যার শাস্তি আমাকে মৃত্যুর পর কবরে দেওয়া হচ্ছে। একথাগুলো বলে মহিলা জমিনে পড়ে গেল।দেখা গেল মহিলার প্রাণ নেই মৃত। এরপর দ্বিতীয় বার তাকে কবর দেওয়া হলো।

অতএব,ভাই ও বোনেরা! মহান আল্লাহ পাক এ ঘটনা দ্বারা এটাই দেখাতে চেয়েছেন যে দেখ, এ মহিলার কি করুণ অবস্থা হয়েছে।যাতে দুনিয়ার মানুষ শিক্ষা গ্রহণ করে।

প্রিয় ভাই ও বোনেরা! নিশ্চিত আমরা সবাই একদিন কবরবাসী হবো।আমাদের কবরে রাখা হবে। সাড়ে তিন হাত সে গর্তই আমাদের শেষ মনযিল।সেদিন আমাকে যখন দাফন করা হবে, আমাকে দাফন করতে আাসা লোকগুলোকেও আমি দেখবো। যখন তারা মাটি দেবে আমার কবরে।প্রিয়জনের কান্নার আওয়াজও কানে আসবে।কিন্তু কিছুই বলার থাকবে না।দাফন করে যখন স্বজনরা চলো যাবে তাদের পায়ের আওয়াজও কানে আসবে। এরপর ফেরেশতাগণ আসবেন।আমার আমল অনুযায়ী আমার সাথে আচরণ করা হবে।

অতএব ভাইয়েরা/বোনেরা ! দুনিয়ার জীবন খুবই সংক্ষিপ্ত। ঠিক নেই কোন সময় শেষ নিঃস্বাস ফেলি!কখন আমার জানাজা উঠে যায় স্বজনদের কাধে! আহ! আমাদের সমস্ত ইচ্ছা, শ্রম, সাধনার সমাপ্তি ঘটবে।আমার রক্ত পানি করা সম্পদ আমার সাথে যাবে না।সে সম্পদ আমার কোনো কাজেও আসবে না।

কিতাব – কবরের আযাব
মাওলানা তারিক জামিল

Archives

July 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031