বৃহস্পতিবার, ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

অনলাইন বন্ধুদের প্রতি ড.মাওলানা মুশতাক আহমাদ এর গুরুত্বপূর্ণ আহ্বান

news-image

লেখক, গবেষক ও মুহাদ্দিস

Default Ad Content Here

প্রিয় সুহৃদ প্রিয় সাইবার যোদ্ধা!

তোমার মত যুবকদের আমার বড় ভাল লাগে। তোমরা সময়ের সচেতন ও সাহসী যুবক। আর কোন জাতির এই সিফতের যুবকরা যখন দাঁড়িয়ে যায়; দায়িত্ব নেয়; আল্লাহ সে জাতির উপর নুসরতের স্রোতধারা প্রবাহিত করেন, সে জাতির প্রতিষ্ঠাকে তখন কেউ আর রুখতে পারে না।

সে জাতি জগতকে চ্যালেঞ্জ করে দাঁড়িয়ে যায়। তোমাদের সরব উপস্থিতি, তোমাদের সচেতন কমেন্ট, তোমাদের সংলাপ খুবেই প্রশংসনীয়। কিন্তু কয়েকটি ক্ষেত্রে একটু সংশোধনী প্রয়োজন বোধ করছি।

১. দোষচর্চা করা: দোষচর্চা এটা কোনো দিক থেকেই ভদ্রতা নয়। ক্ষেত্রবিশেষে কবিরা গুনাহ। আর দোষচর্চার দ্বারা এক জনের মনে বড়জোর বিষাক্ত ক্ষত সৃষ্টি করা যায়। তাকে ওই দোষ থেকে তুলে আনা যায় না; আর মমতার পরশ জড়িয়ে গুণের রাজ্যে প্রবেশও করানো যায় না।

দোষচর্চার দ্বারা পরিবেশ নষ্ট হয়; সকলের ব্যাপারে সকলের চোখে দোষ আর দোষ ভেসে বেড়ায়; সমাজে দোষের কাজ করার নেপথ্য দাওয়াত ঘটে; গোটা সমাজ দোষে ভরে উঠে। এক অশান্তির দাবানল সকলকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ভষ্ম করে।

পক্ষান্তরে চিন্তা করে দেখো; দোষ কার না আছে। আবার প্রত্যেক খারাপ মানুষের মধ্যে দুএকটি ভাল গুণও আছে; অস্বীকার করা যাবে না। যদি দোষগুলি থেকে চোখ সরিয়ে নেওয়া হয়; যদি মানুষের সেই গুণটির চর্চা করা হয়, কারো ছোট একটি গুণকেও বিপুল উৎসাহিত করা হয়; তাহলে দেখবে এটা কত সুন্দর! কত সুফল বয়ে আনছে।

এটা হবে ভদ্রতা; এটা হবে সওয়াবের কাজ। দেখবেে ওই মানুষ সামান্য গুণ অর্জনের পর চতুর্দিকে উৎসাহ পেয়ে নিজেকে আরো বেশি গুণী বানানোর জন্য কিভাবে সচেষ্ট হয়ে উঠছে। তুমি তখন দেখবে সমাজে সকলে সকলের কেবল গুণ খোঁজ করে; খুজে পাওয়া একটি গুণের উপর নিজেকেও প্রতিষ্ঠিত করার অভিপ্রায়ে ব্যাকুল থাকে; সকলের চোখে সকলেই কী ভদ্র, কী সুন্দর, কী গুণী, কী আদর্শ, কী সম্মানী ও মর্যাদাসম্পন্ন হিসাবে প্রতিভাত হচ্ছে তা দেখে সত্যই তোমার মন ভরে যাবে। গোটা পরিবেশ তখন সুন্দর, শান্তিময়, ভদ্র ও আনন্দঘন হয়ে যাবে।

২. আরেকটা জিনিস যেটা আমার খারাপ লাগে সেটা হল সাইবার যোদ্ধাদের মনের অনুদারতা, চিন্তার সংর্কীর্ণতা ও পরিমাপ নির্ণয় না করে কথা বলা, কমেন্ট করা। এই একটি অসাবধানতা আমাদের যুবশক্তিকে বড় দুর্বল করে দিচ্ছে।

দেখ, রাসুল সা. খুব স্বল্প মানদণ্ডের ভিত্তিতে মুসলিম ভ্রাতৃত্বের সেতুবন্ধন বজায় রাখার কৌশল প্রয়োগ করে গিয়েছেন। কেউ আমাদের মত নামাজ পড়লে, আমাদের মত কিবলাকে কিবলা জ্ঞান করলে, আমাদের যবাহকৃত পশু আহার করলে তাকে ইসলাম থেকে খারিজ করে দিও না।

আল্লাহর রাসুল সবল দুর্বল সকলকে সজ্জনতার আওতায় রেখে গোটা সমাজকে একটা সামগ্রিক মহাশক্তি হিসাবে দাঁড় করিয়ে শত্রুকে পদানত রাখার কী চমৎকার কৌশল অবলম্বন করে গিয়েছেন। আমরা কিনা সামান্য ইখতিলাফ উত্থাপন করে ভাইয়ের উপর চালিয়ে দিলাম ফতোয়ার তলোয়ার।

আরে শোন; ফুটবল খেলা এক জনে খেলে না। এগার জন মিলে এগার স্থান থেকে খেলে। এই এগার জনের প্রত্যেকে নিজ নিজ ক্ষেত্রে অসামান্য গুরুত্বপূর্ণ। তাদের কাউকে ছোট করে দেখার কোন অবকাশ নেই। কেউ একজন দায়িত্ব পালনে উদাসীন হলে গোটা টিমকে গুণতে হয় এর মাশুল। এই হেকমত অমুসলিমরা ভাল বুঝে ও সেভাবে চলে। বুঝি না কেবল আমরা। আফসুস।

সমাজে বরং গোটা পৃথিবীর মানুষ সবই আদম সন্তান। একই পিতা হজরত আদম থেকে সকলের বংশ বিস্তার। মানুষের প্রকৃত শত্রু হল নফস ও শয়তান। মানুষে মানুষে তো ভাই ভাই। তাকওয়া ও খোদাভীরুতা ছাড়া কারো উপর কারো প্রাধান্য নেই। স্নেহ মমতা ভালবাসা ও কল্যাণকামিতার দ্বারা পর্বতকেও টলানো সম্ভব।

মানুষে মানুষে বন্ধুত্ব আছে আবার শত্রুতাও আছে। আবার প্রত্যেক বন্ধুত্ব ও শত্রুতার একটা পর্যায় ও পরিমাপ আছে। বন্ধুদের কেউ কাছের, কেউ অতিকাছের কিংবা দূরের, অতিদূরের। শত্রুদেরও তদ্রুপ। কাছের দূরের অনেক রকমের।

আমাদের একটা অসাবধানতা হল, আমরা যুদ্ধ করি; তরবারি চালাই। কিন্তু প্রতিপক্ষকে ভাল করে চিনে নেই না, পরিমাপ যথাযথভাবে ঠিক রাখি না। কাছের কি দূরের পার্থক্য করি না। কার ক্ষেত্রে কোন বাক্য চলবে সেটা আমরা ঠিক রাখি না। ফলে আমাদের অনেক মূল্যবান শক্তি অহেতুক ক্ষয় হয়ে যায়। অন্যদিকে কাফের মুশরিকরা আমাদের অজ্ঞতা দেখে হাসাহাসি করে।

শোন, কারোর সাথে যদি ঈমান আকিদার পার্থক্য না থাকে তাহলে সাধারণ ফিকহের ইখতিলাফের কারণে তাকে দুশমন জ্ঞান করা ঠিক নয়। আকিদার ক্ষেত্রে কারো সাথে কোনরূপ আপোস করা যায় না। পক্ষান্তরে ফিকহের বিষয়টি এমন নয়; ফিকহের ক্ষেত্রে শরিয়ত যথেষ্ট অবকাশ রেখে দিয়েছে।

এখানে হানাফির পেছনে শাফি বা শাফির পেছনে হানাফির নামাজ বিলকুল জায়েজ। কোন অসুবিধা নেই।

৩. আমাদের মধ্যে এখনো অনেক জ্ঞানী গুণী আছেন যাদের চিন্তা চেতনা, জ্ঞান ও প্রজ্ঞা, বিতর্ক, যৌক্তিক আলোচনা, যুগপোযোগী উপস্থাপনা এমন সুন্দর ও আকর্ষণীয় যা জগৎকে হার মানিয়ে দেয়। কাফির মুশরিকরা এহেন বিজ্ঞদের জ্ঞানশক্তি দেখে ঈর্ষায় ফেটে পড়ে।

এই বিজ্ঞগণ মুসলিম মিল্লাতের জন্য মহান বিধাতার দেয়া উপহার, এরা যুগের অমূল্য সম্পদ। এদের যথাযথ কদর করা উচিৎ। কিন্তু না; আমরা কিনা টুপি পাঞ্জবির প্রশ্ন তুলে কিংবা কোর্ট- টাইয়ের বাহানা দেখিয়ে কিংবা হানাফি শাফির চশমা আরোপ করে তাঁদের বড় বেকদরি করে যাচ্ছি। আফসুস!

আবার দেখো আমাদের মধ্যে গোটা পৃথিবী সুন্দর সুশৃংখল পরিচালনার ফিকহি মহা জ্ঞানভাণ্ডার মওজুদ আছে। এমন ভাণ্ডার যা এই গ্লোবাল ওয়ার্ল্ডকে সাজানোর জন্য, কিংবা সজ্জিত রাখার জন্য যথেষ্ট। কাফির মুশরিক বা কোন পরজনের কাছে ভিক্ষা মাঙ্গার প্রয়োজন হবে না কোন দিন।

কিন্তু ওই ভাণ্ডারের তলায় আবার কোন আবু হাফিফার ছায়া লুকিয়ে আছে কিনা তা আবিস্কার করে উম্মাহর মহামূল্যবান জ্ঞানভাণ্ডার ছুড়ে ফেলছি আমরা দূরে, অতিদূরে। এসব হীনমন্নতা!

সুহৃদ, আমার বড় দুঃখ হয়! আমরা আর কতকাল এভাবে নিজেরা নিজেদের পায়ে কুঠারাঘাত করে যাবো?

সুহৃদ! আমরা কি এসব আঁধারচারিতা পরিহার করতে পারি না? আমরা কি দিবসের আলোয়ে ভেসে ভেসে নিজেদের মধ্যে সজ্জনতার অমায়িকতা আবার ফিরিয়ে আনতে পারি না?

সুহৃদ! অবশ্যই পারি। অবশ্যই পারি। ভরসা আল্লাহর উপর। একটু হিম্মত করো। আল্লাহ তোমাকে আমাকে সকলকে সাহায্য করুন। আমীন।

 

সুত্রঃ OURIslam24

Archives

December 2024
S S M T W T F
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031