শুক্রবার, ২৩শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৬ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
Admin | ২,২৬০ views | নভেম্বর ৭, ২০১৭ | মনীষীদের জীবনী | No | ৭:৪২ অপরাহ্ণ |
মানব কাননে ফুটে ওঠা প্রতিটি মানবরূহ একেকটি পুষ্পের ন্যায় প্রস্ফুটিত হয়। সবুজের সমারোহে সুরভিত হয়। নশ্বর এ ধরায় প্রতিটি মানুষই একটি সুন্দর ও বাস্তব জীবনের রঙিন স্বপ্ন নিয়ে ঊদিত হয়। সময়ের চক্রাবর্তে, যুগের আবর্তনে কেউবা আবার নিজেকে আলোকিত করেন সদ্য ফোটা গোলাপের মত। আপন জীবন ব্যয় করেন সমাজের তরে। একটি স্থিতিশীল পরিবেশ গড়ে তুলেন সমাজে। সবাইকে আহবান করেন একটি অপরূপ বাস্তবতার দিকে। শাশ্বত বিধান পালনে উদ্বুদ্ধ করে, চারিত্রিক মাধূর্যতার মাধ্যমে স্থান করে নেন মানবের মনিকোঠায়। উত্তর সিলেটের কৃতী সন্তান, মানুষ গড়ার সফল কারিগর, বরেণ্যজন আল্লামা শায়খ আব্দুল মতীন হাফিজাহুল্লাহু তাদেরই একজন।
যে সকল পীর বুযূর্গের আবির্ভাবে ধন্য হয়েছে বাংলার ভূমি, যারা নিজেদের সর্বস্ব মানব কল্যাণে উৎসর্গ করে স্মরণীয় হয়ে আছেন, আধ্যাত্মিক জগতে যারা অমর আসন দখল করে নিয়েছেন, তা’লীম-তায়াল্লুমের পাশাপাশি দ্বীনের দা’ঈ হিসেবে তাবলীগ জামাতে অঢেল সময় ব্যয় করেছেন, নিজের উপর অর্পিত দায়িত্ব পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আদায় করে সর্বমহলে স্বীকৃত ও সমাদৃত হয়েছেন- কিতাবের পাতায় পাতায় ইলমের মুক্তান্বেষণে সময় ব্যয় করা মাওলানা শায়খ আব্দুল মতীন হাফিজাহুল্লাহু তাদেরই একজন নিঃসন্দেহে তাদেরই একজন।
তিনি জীবন্ত কিংবদন্তি। প্রচারবিমুখ নববী চরিত্রের বাস্তব প্রতিচ্ছবি। আকাবির-আসলাফের পদাঙ্ক অনুসারী। সাহাবী আদর্শের উজ্জ্বল নমুনা। সরল-সঠিক পথের গগণচুম্বি মিনারা। দৃঢ় সংকল্প আর হিম্মতের উপর পর্বতসম অটল। ভ্রষ্টতার আঁধারে আচ্ছন্ন সমাজে প্রদীপ্ত মশাল। তাক্বওয়া ও আত্মশুদ্ধির মূর্তপ্রতীক। মোটকথা, তিনি আমাদের সরে তাজ; ছায়া হয়ে বেঁচে থাকা আলিম সমাজের উজ্জ্বল এক নক্ষত্র মাওলানা শায়খ আব্দুল মতীন হাফিজাহুল্লাহু।
নিরবে নিভৃতে, দ্বীনের খিদমতে যাঁর পুরো জীবন তথা মেধাশক্তি বিকশিত করেছেন, সেই কীর্তিমান ব্যক্তিসত্তা, ইলমুল ওহীর দ্বারা নিজের জীবনকে সুশোভিত করে সমাজ জীবনে এর আলো ছড়িয়ে দেয়ার কাজে এক নিবেদিতপ্রাণ মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মতীন। যিনি উত্তর সিলেটের উলামায়ে কেরাম সহ আপামর জনসাধারণ এর কাছে বড় হুজুর বা নাজিম সাব হিসেবে সুপরিচিত। ইলমে দ্বীনের খেদমতের মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার ও প্রসারে এক গতিশীল ব্যক্তিত্ব। পুরোটা জীবন নায়েবে রাসুল সৃষ্টির এই মহান কারিগর অসংখ্য ছাত্রের অন্ত:করণে ইলমে দ্বীনের নূর প্রজ্জ্বলিত করতে কাটিয়েছেন ব্যতিব্যস্থ সময়। ইলমুল ওহীর জ্ঞানকে প্রতিস্থাপিত করার মাধ্যমে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তাঁর দায়িত্বশীল জীবনে।
বহুমাত্রিক দ্বীনি খেদমত আঞ্জাম প্রদানের ক্ষেত্রেও তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। এই মহান কারিগরের হাতেগড়া কৃতি ছাত্ররা দেশ-বিদেশে অবস্থান করে বিভিন্নভাবে দ্বীনের প্রচার-প্রসারে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে আসছেন। বয়ে আনছেন সুনাম। মহান আল্লাহ তা’য়ালার সন্তুষ্ঠি অর্জনই তাঁর দীর্ঘ সময়ের শিক্ষকতা জীবনের মহান ব্রত।
তিনি একাধারে একজন বড়মাপের আলেম ও মাদরাসা শিক্ষা পরিচালক। তাছাড়া তিনি একই মাদরাসায় সিনিয়র মুদাররিস, দাওরায়ে হাদীস থাকাকালীন সময়ে মুহাদ্দিস এবং সাথে নাজিমে তা’লিমাত। একই মাদরাসায় দীর্ঘ পয়তাল্লিশ বছর ধরে দ্বীনের খিদমত ও দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়ে আসছিলেন। শুধু নাজিমে তা’লিমাত (শিক্ষাসচিব) এর মহান দায়িত্ব দীর্ঘ পঁচিশ বছর ধরে পালন করেছিলেন।
মধ্যখানে ২০০১ থেকে ২০০৩ পর্যন্ত প্রায় তিন বছর এক মাস জামেয়া ইসলামিয়া তাজুল উলুম দারুল হাদীস জাতুগ্রাম, গোয়াইনঘাট এ সিনিয়র মুদাররিস হিসেবে সুনামের সাথে শিক্ষকতা করেছেন।
এই অশীতিপর বয়স্ক শিক্ষাবিদ একই প্রতিষ্ঠানে জীবনের সিংহভাগ সময় কাটিয়ে দেয়ার নজীর অতি বিরল। বর্তমানে চলতি বছরের মাঝামাঝি থেকে বার্ধক্যজনিত ও শারীরিক বিভিন্ন অসুস্থতার কারণে সিলেট নগরীর খাসদবীরস্থ বাসায় কুরআনের তাফসীর, হাদীস ও ফিকহী কিতাবাদী মুতাল ‘আ করে এবং আত্মীয়-স্বজনকে সময় দিয়ে জীবন-যাপন করে চলছেন।
উল্লেখ, তিনি বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের গৌরব, বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান, শায়খুল ইসলাম আল্লামা মুশাহিদ বায়মপুরী রাহ.’র একান্ত ছাত্র। তাঁর নামে প্রতিষ্ঠিত ও স্মৃতিধন্য ঐতিহ্যবাহী জামেয়া মুশাহিদিয়া খাগাইল মাদরাসা (কোম্পানীগঞ্জ-সিলেট) এ বরেণ্য এই আলেমে দ্বীন খেদমত আঞ্জাম দিয়ে আসছিলেন। তিনি সিলেটের আরেক ওলীয়ে কামিল আল্লামা আব্দুল করীম শায়খে ছত্রপুরী রাহ.’র খলীফা।
মাওলানা মোহাম্মদ আব্দুল মতীন ১৯৩৮ সালে সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার নন্দির গাঁও ইউনিয়নের মানাউরা গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত দ্বীনি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
খ্যাতিমান এই আলেমে দ্বীন আমাদের মাঝে রহমতের মিনার হয়ে বেঁচে থাকুন। তাঁর ছায়া মাড়িয়ে ফয়েজ ও বরকত লাভে যেনো আমরা ধন্য হতে পারি- এই প্রত্যাশা।
আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিন যেন দ্বীনের এই খাদেমকে নেক হায়াত দান করেন, তাঁর কর্মময় জিন্দেগীতে উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি ও অশেষ বরকত এবং শারীরিক সু-স্বাস্থ্যতা দান করেন। আমিন।