বৃহস্পতিবার, ১০ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

রোহিঙ্গা উপাখ্যান : ফিরে দেখা ২০১৭

হাসান হাফিজঃবার্মার উত্তরাঞ্চল আরাকানে যুগ যুগ ধরে জান্তা সরকার ও তাদের দোষর দ্বারা নির্যাতিত নীপিড়িত হওয়া রোহিঙ্গা মুসলমানদের হৃদয়ের লালিত আশা ছিল গণতন্ত্রপন্থী নোবেল বিজয়ী বার্মিজ নেত্রী অংসান সূচীকে ক্ষমতায় দেখা । রোহিঙ্গারা স্বপ্ন বুনতো সূচী ক্ষমতার মসনদে বসলে, রোহিঙ্গাদের আর দূদর্শা থাকবেনা। তারা আশায় বুক বেঁধেছিল সূচী বার্মার শাষনভার পেলে, স্বদেশে শান্তিতে নাগরিক অধিকার নিয়ে জিবন যাপন করতে পারবে রোহিঙ্গারা।

২০১৫ সালের ৮ নভেম্বর । বার্মার রাজনীতির আকাশে উদিত হয়েছিল গণতন্ত্রের সূর্য। গণতন্ত্রপন্থী নোবেল বিজয়ী বার্মিজ নেত্রী অংসান সূচীর দল ক্ষমতার মসনদে আরোহন করে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিও আনন্দ বানে ভাসে। তাদের মননে এবার শান্তির পায়রা উড়বে আরাকানের আকাশে ।

কিন্তু রোহিঙ্গাদের স্বপ্নগুলো আর আড়মোড়া দিয়ে জাগেনি । বার্মার রোহিঙ্গা বিদ্বেষী  সেনাবাহিনী ও সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ মিলিশিয়াকে খুশি রাখতে সূচী এড়িয়ে চলে রোহিঙ্গা প্রসঙ্গটি। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহল প্রচেষ্টা চালালেও রোহিঙ্গা বিষয়ে কথা বলতে তিনি নারাজী জাহির করেন ।

২০১৬ সালের ৯ অক্টোবরের রোহিঙ্গা গণহত্যার লেশ না কাটতে ২০১৭ সালে ইতিহাসের ঘৃণ্যতম বর্বরতা শুরু করে বার্মিজ বাহিনী । অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায় এ গণহত্যা । রোহিঙ্গাদের জন্য সবচেয়ে খারাপ সময়ের সাক্ষি হয়ে থাকবে ২০১৭ । ক্যালেন্ডারের পাতায় অন্তিমলগ্নে থাকা বছরটিতে রোহিঙ্গা সংশ্লিষ্ট উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলী ফিরে দেখা যাক ।

১লা জানুয়ারী ২০১৭ 

রোহিঙ্গা গণহত্যার ভিডিও প্রকাশে বিশ্বব্যাপী তোলপাড়

বার্মিজ বাহিনী রোহিঙ্গাদের হত্যালীলা চালালেও তার সরাসরি ফুটেজ পাওয়া দুষ্কর ছিল । কেননা আরাকানে সংবাদ মাধ্যমের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করেছে সরকার । ফলে বার্মিজ বাহিনীর এক সদস্যের ধারণ করা একটি ভিডিও ফুটেজ বিশ্বব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি করে ।  ফুটেজটিতে দেখা যায় ব সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের দশ বছরের বাচ্চা থেকে শুরু করে  পুরুষদেরকে প্রহার করতে করতে একটি জায়গায় সবাইকে জড়ো করে বসিয়ে পৈশাষিক নির্যাতন চালাচ্ছে। বার্মা সরকার রোহিঙ্গা নিপীড়ন অস্বীকার করলেও এই ভিডিও ফুটেজটিকে মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিতে পারেনি । এটিকে গণহত্যার গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট বলে সচেতন মহল মনে করেন । প্রশাসন পরবর্তীতে ফুটেজ ধারণকারীকে চিহ্নিত করে শাস্তি দিলেও, রোহিঙ্গা নির্যাতনের জন্য কাউকে বিচারের আওতায় নেয়নি ।

♦ ২৮ জানুয়ারী ২০১৭

মুসলিম আইনজিবী উ কোনী হত্যা

ইয়াঙ্গু‌ন বিমানবন্দ‌রে অস্ত্রধারীর গু‌লি‌তে পরিকল্পিতভাবে হত্যার শিকার হন  ক্ষমতাসীন রাজ‌নৈ‌তিক দল এনএল‌ডির আই‌নী উপ‌দেষ্ঠা ও মুসলিম আইনজিবী উ কো‌নি । উ কো নি ছিলেন মুসলিম আইনজীবী  এবং ২০০৮ সালের বিতর্কিত সংবিধানের বিশেষজ্ঞ। ২০১৬ সালে ক্ষমতায় আসার আগে সংবিধান সংশোধনী প্রস্তুতে তিনি এনএলডি’র অন্যতম ব্যক্তিত্ব হিসেবে কাজ করেন । হত্যার সাথে সংশ্লিষ্ট ৫ আসামী ধৃত হয়েছে । মামলাটি এখনো আদালতে প্রক্রিয়াধীন ।

♦ ২৯ জানুয়ারী ২০১৭

রোহিঙ্গাদের মুখ থেকে নির্যাতনের কথা শুনেছেন কফি আনান কমিশনের সদস্যরা 

বার্মার সেনাবাহিনীর নির্যাতন নীপিড়ন থেকে বাঁচতে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের অবস্থা সরেজমিনে দেখতে কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালি নতুন রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন কফি আনান কমিশনের ৩ সদস্য। এ সময় তারা রোহিঙ্গাদের মুখ থেকে নির্যাতনের বর্ণনা শুনছেন।এর আগে কফি আনান কমিশন আরাকান পর্যবেক্ষণ শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে দেয়া বিবৃতিটি আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়ে। এ বিবৃতিটি বার্মা সরকারকে খুশি করতে দেয়া হয়েছে এমন অভিযোগও করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

♦ ১০ ফেব্রুয়ারী ২০১৭

রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ নিয়ে বার্মা ও বাংলাদেশে মালয়েশিয়ান জাহাজ

মালয়েশিয়ার ফুড ফ্লুটিলা (ত্রাণবাহী জাহাজ) রোহিঙ্গাদের জন্য সাহায্য নিয়ে ইয়াঙ্গুন বন্দরে নোঙ্গর করেন । সেখানে কিছু ত্রাণ বার্মা সরকারকে বুঝিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন । পরে ১৪ ফেব্রুয়ারী এটি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায় । ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবরের ট্রাজেডির শিকার ৭০ হাজার রোহিঙ্গার জন্য সাহায্য নিয়ে আসে এ জাহাজ ।

♦ ৪ এপ্রিল ২০১৭

সূচীর দপ্তর কর্তৃক রোহিঙ্গা হতাহতের হাস্যকর পরিসংখ্যান প্রতিবেদন 

২০১৬ সালের ৯ অক্টোবরের পর আরাকানে সেনাসৃষ্ট গণহত্যায় রোহিঙ্গা হতাহতের একটি পরিসংখ্যানিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে বার্মার স্টেট কাউন্সিলরের দপ্তর ।  প্রকাশিত এ প্রতিবেদনটি বানোয়াট, উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও হাস্যকর বলে মনে করেছেন বিশ্লেষকরা । এ প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ৯ অক্টোবরের পর থেকে ৩ এপ্রিল ২০১৭ পর্যন্ত আরাকানে সামরিক অভিযানে মারা গেছে মাত্র ২৩ জন রোহিঙ্গা । আর নিখোঁজ রয়েছে ১০ জন।অতচ ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবরের পর সাড়ে চারশো রোহিঙ্গা হত্যার শিকার হয়। ধর্ষণের শিকার হয়েছে অগণিত রোহিঙ্গা নারী ।

♦ ২৫ এপ্রিল-২০১৭

 রাচীদং-এ শতবর্ষী পুরনো মসজিদে অগ্নিসংযোগ করে উগ্রপন্থীরা !

আরাকান প্রদেশের রাজধানী সিত্তুয়ের পার্শ্ববর্তী নগর রাচীদং-এর কয়েক শতবর্ষী একটি পুরনো মসজিদে অগ্নিসংযোগ করে উগ্রপন্থী বৌদ্ধরা।  রোহিঙ্গা মুসলমানদের ঐতিহ্যের বাহক ও প্রাক আরাকানের নিদর্শন স্বরূপ ঐতিহাসিক এ মসজিদটি ধ্বংস করার জন্য মুখিয়ে ছিল বৌদ্ধরা। তাই রোহিঙ্গা মুসলমানদের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি আরাকান ভূমি থেকে ধুলিস্যাৎ করতে রাতের আঁধারে মসজিদটিতে অগ্নিসংযোগ করে তারা । পরে মসজিদের ইমামকেই আসামী বানিয়ে কারাগারে পাঠায় পুলিশ ।

♦ ২৯ এপ্রিল ২০১৭

ইয়াঙ্গুনে ২টি মসজিদে তালা লাগিয়ে দেয় উগ্রপন্থি বৌদ্ধারা

বার্মার সাবেক রাজধানী ইয়াঙ্গুনের তাগাড়া নামক শহরের ২টি মসজিদে তালা লাগিয়ে দিয়েছে উগ্রপন্থি বৌদ্ধরা । এসময় স্বয়ং পুলিশ উপস্থিত থাকলেও কোন প্রকার হস্তক্ষেপ ও বাঁধা দেয়নি । শহরটির ২টি প্রসিদ্ধ জামে মসজিদে জুমু’আর নামাজ চালাকালীন সদলবলে মুসল্লিদের উপর হামলা করে উগ্রপন্থিরা । এ ঘটনায় ইমামসহ বেশ ক’জন আহত হয় । পরে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের একাংশ ভিক্ষোভ মিছিল সহকারে এসে ২টি মসজিদে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এসময় প্রশাসন তাদের কোন প্রকার বাঁধা দেয়নি ।

♦ ৩১ মে ২০১৭

 রোহিঙ্গা নির্যাতনের ঘটনা তদন্তে জাতিসংঘের তদন্ত কমিটি

জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল আরাককন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেন ।

ভারতের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সাবেক সিডও সদস্য ইন্দিরা জয়সিংকে তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন শ্রীলঙ্কার মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারপারসন রাধিকা কুমারাস্বামী ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকারবিষয়ক পরামর্শক ক্রিস্টোফার ডমিনিক সিডোটি। অবশ্য ১লা জুলাই ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিশনকে প্রত্যাহার করে তাদের ভিসা বন্ধ করে দেয় বার্মা সরকার ।

♦ ২৩ আগস্ট ২০১৭

আনান কমিশেনর প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেয়ার পরামর্শ

আরাকান কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন বার্মার প্রেসিডেন্টের কাছে হস্তান্তর করার পর  ২৪ আগস্ট  তা সবার জন্য প্রকাশ করা হয় । এতে রোহিঙ্গাদের উপর আরোপিত রাষ্ট্রীয় বিধি নিষেধ প্রত্যাহারের  আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, বিশ্বের সব থেকে নীপিড়িত জনগোষ্ঠি হিসেবে পরিচিত রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিন, নয়তো আরাকানে জঙ্গিবাদ বাড়তে পারে ।

৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বার্মার সরকারের প্রতি যেমনভাবে সুপারিশ করা হয়েছে তেমনভাবে সতর্কও করা হয়েছে । সু চি সরকার আগেই বলে রাখে, কফি  আনান কমিশনের তদন্তে যা বের হয়ে আসবে তা তারা মেনে নেবে।  তবে প্রতিবেদন প্রকাশের পর উল্টে যায় সরকার । উপরন্তু রোহিঙ্গা নিধনে শেষ ছোবল মারার চক্রান্ত করে ।

♦ ২৫ আগস্ট  ২০১৭

  ঘুমন্ত রোহিঙ্গাদের উপর সেনা আক্রমণ , মৃত্যুপুরী আরাকান 

২৫ আগস্ট (শুক্রবার) পূর্ববর্তী রাতে ঘুমন্ত রোহিঙ্গাদের উপর আক্রমণ চালায় বার্মিজ সেনাবাহিনী । রাতের আঁধারে লন্ডভন্ড করে দেয় আরাকানের রোহিঙ্গা মুসলমান অধ্যুষিত এলাকাগুলো । যত্রতত্র পড়ে  থাকে রোহিঙ্গাদের লাশ আর লাশ । নারী ও শিশুদের গগন বিদারী কান্না আর আহাজারীতে ভারি হয়ে ওঠে আরাকানের পরিবেশ । মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয় আরাকান ।

গোলা-বারুদ, মেশিনগান, মর্টারসহ ভারি অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে ঘুমন্ত নিরীহ রোহিঙ্গাদের উপর আক্রমণ করে সেনারা ।

। মংডু, বুথিদং এবং রাথিদং এর সর্বত্র একযোগে সিরিজ হামলা চালিয়েছে সৈন্যরা । অবশ্য রোহিঙ্গাদের একটি বিদ্রোহী দলের সদস্যরা সেনাদের প্রতিঘাত করার চেষ্টা করে । ২৫ আগস্ট শুরু হওয়া এ হামলায় ৭ হাজারের অধিক রোহিঙ্গাকে হত্যা করে সৈন্যরা । অগণিত নারী ও শিশুকন্যাকে ধর্ষণ করে । মায়ের কোলের নবজাতককে কেড়ে নিয়ে নিক্ষেপ করে অগ্নিকুন্ডে । ৫০ হাজারের অধিক বসতবাড়ি পুড়িয়ে দেয় ।  ৭ লক্ষ রোহিঙ্গা জীবন বাঁচাতে পালিয়ে যায় বাংলাদেশে । পালানোর সময় নদীতে ডুবে মারা যায় ২ শতাধিক মানুষ ।

♦ ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭

 আন্তর্জাতিক আদালতে দোষী সাব্যস্ত বার্মার সরকার

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগে বার্মা সরকারকে দোষী সাব্যস্ত করে আন্তর্জাতিক পারমানেন্ট পিপলস ট্রাইব্যুনাল।  বার্মার রোহিঙ্গা, কাচিনসহ সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে গণহত্যার বিভিন্ন নথি, বিশেষজ্ঞদের প্রমাণ এবং ২শ ভুক্তভোগীর সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে সাত বিচারপতির একটি ট্রাইব্যুনাল প্যানেল শুক্রবার বার্মার সরকারের বিরুদ্ধে ওই রায় ঘোষণা করে। মালয়েশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী আদালতে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন ।

♦ ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ 

                                                                                                                        রোহিঙ্গা গণহত্যার প্রতিবাদে সোচ্চার বিশ্ববাসী

আরাকানে রোহিঙ্গা গণহত্যার প্রতিবাদে সোচ্চার সেপ্টেম্বর মাসে সোচ্চার ছিলেন বিশ্ববাসী । সারাবিশ্বের তিন চতুর্থাংশ দেশের মানুষ রোহিঙ্গা গণহত্যা বন্ধ ও রোহিঙ্গাদের নাগরিত্ব নিশ্চিতের দাবিতে প্রতিবাদ করেন । বিভিন্ন দেশে সমাবেশ, বার্মা দূতাবাস ঘেরাও, মানববন্ধন, বিক্ষোভ কর্মসূচী, প্রেস রিলিজ, খোলা চিঠিসহ নানাভাবে প্রতিবাদ করে শান্তিকামী মানুষ । সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে, সামাজিক-অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকদলসহ  মানবাধিকার সস্থা এবং বিভিন্ন দেশ রাষ্ট্রীয়ভাবে নিন্দা জানিয়েছে বার্মার বৈষম্যনীতি ও রোহিঙ্গা গণহত্যাকে ।

♦ ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ 

                                                                                                               জাতিসংঘে বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখহাসিনারপ্রস্তাব

দ্রুত রোহিঙ্গা সংকট উত্তোরণ ও সমস্যাটির স্থায়ী সমাধানে জাতিসংঘ ও  আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আশু পতক্ষেপ কামনা করে জাতিসংঘে ৫ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দাতা রাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতিসংঘের  ৭২ তম সাধারণ অধিবেশনে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে শেখ হাসিনা তার প্রস্তাব তুলে ধরেন। অবশ্য এর আগে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ দুই দুইবার জরুরী বৈঠক করেও ফলপ্রসূ কোন পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হন । শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার পর স্বশরীরে তাদের দুঃখ-দূর্দশা দেখতে যান । গণমাধ্যম বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীকে ‘মাদার অব হিউমিনিটি’  হিসেবে আখ্যা দেয় ।

♦ ২৩ নভেম্বর ২০১৭ 

                                                                                                                           বার্মা-বাংলাদেশ চুক্তি

প্রস্তাব পাল্টা প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে অবশেষে বাংলাদেশ-বার্মার মধ্যকার রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরাতে বহুল প্রতিক্ষিত সমঝোতা চুক্তি সই হয় । অবশ্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সাথে না রেখে হুট করে এ পদক্ষেপ নেয় বাংলাদেশ । স্টেট কাউন্সিলর  অফিসে  সমঝোতা স্বারকে স্বাক্ষর করে দুদেশ। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এবং বার্মার পক্ষ থেকে ইউনিয়ন মন্ত্রী চ টিন্ট সোয়ে স্বাক্ষর করেন। চুক্তিতে রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার ও ক্ষতিপূরণের বিষয়টি উপেক্তি ছিল । এ চুক্তির পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে ১৯ ডিসেম্বর ৩০ সদস্যের যৌথ কমিটি গঠিত হয় ।

 

কক্সবাজারে এক টুকরো আরাকান

বাংলাদেশের কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ এখন রোহিঙ্গার ভারে নুয়ে পড়ছে  । অল্প জায়গাতে প্রায় ১০ লক্ষ রোহিঙ্গা এখন আশ্রয় নিয়েছে । ২০১৬ সালের অক্টোবর ও ২০১৭ সালের আগস্টে আরাকানে গণহত্যার পর প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় । এর আগে ২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার অবস্থান ছিল বাংলাদেশের ক্যাম্পে । ড্রোন ক্যামেরায় তোলা ছবিতে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়স্থলগুলো দেখলে মনে হবে বিস্তৃত অঞ্চলটি এক টুকরো আরাকান ।

 

২০১৭ সাল রোহিঙ্গাদের জন্য একটি বিভিষিকাময় বছর । উল্লেখিত ঘটনাবলী ছাড়াও আটক বাণিজ্য, গুম, চাঁদাবাজি, বিচারবহির্ভূত হত্যা, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ, লুটপাট, অবরোধ, হামলা ও ধর্মীয় বিষয়াদীর মানহানীকর কাজ করে রোহিঙ্গাদের নিপীড়ন চালিয়েছে সৈন্যরা । বার্মা সরকার ও সেনাবাহিনী সর্বদা রোহিঙ্গা বিরোধী মিথ্যাচারে লিপ্ত ছিল ।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো আরাকানে জাতিগত নিধনের প্রমাণসহ প্রতিবেদন দাখিল করে । জাতিসংঘ উদ্বেগ-উৎকন্ঠা জানালেও কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেয়নি । বিভিন্ন রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান, এনজিও, ব্যক্তি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক সাহায্য দানে এগিয়ে আসে । তবে রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানোটা ছিল ভালবাসার অনন্য দৃষ্টান্ত ।

সুত্রঃ  আরাকান টিভি

Archives

July 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031