বৃহস্পতিবার, ১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
২২/১২/১৭ ছিলো চাঁদপুর মধুসূদন হাইস্কুল মাঠের তিনদিন ব্যাপী ঐতিহাসিক ইসলামী মহাসম্মেলনের শেষদিন। শেষদিনের শেষ অধিবেশনের বয়ান ছিলো আমার। গত বছরও এই ময়দানে শেষদিনের শেষ বয়ান ও আখেরী মুনাজাত আমিই করেছিলাম। এ বছর নাকি গত বছরের চেয়ে লোক সমাগম কয়েকগুন বেশী হয়েছে। প্যান্ডেলের পরিধিও বেড়েছে। সম্মেলনটার একটা ঐতিহ্য আছে। চাঁদপুর পুরান বাজার মাহফিল বললেই সবাই চিনে। দীর্ঘ ৪৪বছর পর্যন্ত চলে আসছে এই মোবারক আয়োজন। বাংলাদেশের প্রখ্যাত সব ওলামা-মাশায়েখ ও ওয়ায়েজীনে কেরামের মিলনমেলা ঘটে এই সম্মেলনে। এই বছর প্রধান অতিথি ছিলেন আমীরে হেফাজত আল্লামা শাহ আহমদ শফী দা.বা.। হুজুর অসুস্থ থাকায় তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে বয়ান করেন আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী দা.বা.। হুজুর বাদ জুমা বয়ান পেশ করেন। শুনেছি বর্তমান বিশ্বের অস্থিরতা নিয়ে মহাগুরুত্বপূর্ণ বয়ান করেছেন তিনি। ডোনাল ট্রাম্পকে সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন তিনি।
বাদ জুমা রওয়ানা হই ঢাকা হতে। সালাহুদ্দীন মাসউদ ভাই ও সাইমুম সাদী ভাইও সফরসঙ্গী হবার কথা ছিলো। কিন্তু দু’জনেরই যৌক্তিক কিছু সমস্যার কারণে তা আর হয়ে ওঠেনি। পূর্ব ওয়াদানুযায়ী সফরসঙ্গী হলেন Akon ভাই ও আসাদ। দাউদকান্দীর এক্সপীড পাম্পে আসর পড়ি। এসময় সাক্ষাত হয় মাওঃ কামাল উদ্দিন দায়েমী ও ছোট ভাই জাবের-এর সাথে। বাদ আসর রওয়ানা হই মতলব ফেরীঘাটের রাস্তা ধরে। পথে অপেক্ষা করছিলেন কুমিল্লা পীর সাহেব হুজুর রহ.-এর সাহেবজাদা মাওলানা আফসার উদ্দীন ও শরিয়তপুরের আনোয়ার ভাই। ফোনে যোগাযোগ রাখছিলেন চাঁদপুরের সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেম মাওলানা নূরুল আমীন যশোরী সাহেব। ওদিকে সম্মেলন কর্তৃপক্ষর পক্ষ হতে নিয়মিত খোঁজ-খবর নিচ্ছিলেন ছাত্র জমানার বড় ভাই ও ছাত্র আন্দোলনের সহকর্মী কে.এম ইয়াসিন রাশেদসানী ভাই এবং সহপাঠী Abul Basharভাই। পাশাপাশি কমিটির পারভেজ ভাইর দরদী কণ্ঠের কিছুক্ষণ পরপরই সালাম বিনিময় তো আছেই।
চাঁদপুরে যখন ছাত্র রাজনীতি করেছি, তখন গভীর রাতের দেয়াল লিখুনীর দুই নিশাচর ছিলেন ইয়াসিন ভাই ও বাশার ভাই। আমি ও ইয়াসিন ভাই লিখতাম আর বাসার ভাই রংয়ের বালতি টানতো। গাড়ী টেনে সরাসরি জাফরাবাদ জামিআ কাসেমুল উলূম হাফিজিয়া মাদরাসায় চলে যাই। এই মাদরাসায় শরহে বেকায়া পড়েছি আমি। জামিআর মেহমানখানায় বসতেই আরো যোগদান করেন চাঁদপুরের প্রবীন রাজনীতিবীদ ইকবাল তালুকদার ভাই, সোহাগ, মুনমুন, নাসির ও আব্দুল্লাহ আল মামুন ভাইসহ আরো অনেকে। কিছুক্ষণ স্মৃতিচারণ ও জম্পেস গল্প হলো আমাদের। কখন যে সময় পেরিয়ে গেলো বুঝতেই পারিনি। পারভেজ ভাইর ফোন- দশটায় বয়ান। এশা পড়ে বয়ানের উদ্দেশ্যে বের হই জামিআ হতে। সুবহানাল্লাহ! এ এক মহামিলন চাঁদপুরের পুরান বাজারে। তৌহিদী জনতার মহামিলন। মাঠে ঢুকতেই মুহুর্মুহু শ্লোগানে প্রকম্পিত পুরো ময়দান। মনে হলো চাঁদপুর শহর কাঁপছে। স্বেচ্ছাসেবক ও প্রশাসনের ভাইদের সহযোগিতায় চ্যাপ্টা হয়ে হলেও মঞ্চে উঠতে সমর্থ হই। আফসার ভাইর ঘোষণায় তখন উত্তাল পুরো ময়দান। বয়ান শুরু করলাম জিহাদ ও সন্ত্রাস এবং উস্কানী ও প্রতিবাদ কী তা নিয়ে।
আলোচনার বিষয়বস্তু মূলত-
إن الله يحب الذين يقاتلون في سبيله صفا كانهم بنيان
مرصوص
-এই আয়াতে কারীমাকে কেন্দ্র করে। স্টেজ থেকে নামতেই শ্রোতাদের ভালোবসায় বন্দি হয়ে গেলাম। ২০জন স্বেচ্ছাসেবক মিলেও সেই বন্দিদশা থেকে বের করতে পারছিলো না আমাকে। পরিস্থিতি যখন এমন, তখন মনে হয়েছিলো গাড়ী পর্যন্ত পৌঁছুতে ঘন্টার উপর লেগে যাবে। পুরো মাঠের মানুষ আমাদের সামনে। সবার কাছে দোআর আরজি জানালাম। স্বেচ্ছাসেবকদের বললাম, আপনারা আপনাদের মতো চলে যান। আমার মতো আমি যাচ্ছি। আমার সাথে কেউ আসবেন না। আমি তাৎক্ষণিক গতিপথ পাল্টে সোজা মাঠের মাঝখান দিয়ে গাড়ীতে চলে যাই। এবার গন্তব্য ঐতিহাসিক পুরানবাজার শাহী মসজিদ। খানার পর্ব। সভাপতি সাহেব অপেক্ষা করে চলে গেছেন নানুপুর হুজুরের খেদমতে। পারভেজ ভাই বললেন- ভাই আগামী বছরের দাওয়াত ফাইনাল করতে বলেছেন সভাপতি সাহেব। ২৮ডিসেম্বর’১৮ ইং, শেষদিন। এরমধ্যে চলে এলেন মসজিদের খতীব বন্ধুবর মুফতী শাহাদাত ভাই। অবাক করে দিয়ে হাজির হলেন বহু পুরনো বন্ধু মুফতী আমীর হোসাইন বিননূরী ভাইও। প্রত্যেককে একটি করে আমার লিখিত ‘পাশ্চাত্যের মেকাবেলায় নববী আদর্শ’ বইটি হাদিয়া দিলাম। খানা শেষে বিদায়ের পালা। বন্ধুরা সবাই এগিয়ে দিলেন বাবুরহাট পর্যন্ত। বাবুরহাট মোড়ে কিছুক্ষণের জন্য বসলো চা-আড্ডা। মাওলানা নূরুল আমীন সাহেবসহ সবার উপস্থিতিতে হলো গুরুত্বপূর্ণ কিছু আলোচনাও।
১৪ফেব্রুয়ারী’১৮ইং চাঁদপুর হাসান আলী হাইস্কুল মাঠে ছাওতুল কুরআন ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত হবে ঐতিহাসিক ইসলামী মহাসম্মেলন। সম্মেলন বাস্তবায়নে কিছু প্ল্যান-প্রোগ্রাম নিয়ে আলোচনা হলো। আশাকরি চাঁদপুরের একটি আলোচিত সম্মেলন হবে এইটা ইনশাআল্লাহ। প্রোগ্রামের তারিখ চূড়ান্ত করা হয়েছিলো আরো অনেক আগেই। নতুন করে চূড়ান্ত করা হলো ছোট ভাই জাবেরের দাওয়াতও। ইনশাআল্লাহ! আমরা দুই ভাই থাকবো। থাকবেন আরো ওলামায়ে কেরামও। আপনাদের প্রতি আন্তরিক দাওয়াত রেখে আজ এখানেই শেষ করলাম।