সোমবার, ১০ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪শে রমজান, ১৪৪৬ হিজরি
মাওলানা রাশেদুর রহমান ।।
আজ তৃতীয় তারাবিতে সূরা আলে ইমরান (৯২-২০০) এবং সূরা নিসা (১-৮৭) পড়া হবে। পারা হিসেবে আজ পড়া হবে চতুর্থ পারা্র শুরু থেকে করে পঞ্চম পারার প্রথমার্ধ পর্যন্ত।
৩. সূরা আলে ইমরান: (৯২-২০০) সূরার ৯১ থেকে ১২০ নম্বর আয়াত পর্যন্ত আহলে কিতাব ও মোমিনদেরকে সম্বোধন করে মৌলিক কিছু উপদেশ দেওয়া হয়েছে। কোরআন মজিদে আহলে কিতাব ও বনি ইসরাইল বলতে তখনকার ইহুদি ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়কে বোঝানো হয়।
১২১ থেকে ১২৯ নম্বর আয়াতে বদর যুদ্ধের আলোচনা রয়েছে। বদর যুদ্ধের দিন আল্লাহর সাহায্য ও ফেরেশতা নাজিলের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। ১৩০ থেকে ১৪৩ নম্বর আয়াতে দানখয়রাতে উৎসাহিত করা হয়েছে। সুদের বিরুদ্ধে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জান্নাতে যেতে হলে, ক্ষমা পেতে হলে, আল্লাহর পথে দান করতে হবে মর্মে আদেশ দেওয়া হয়েছে।
১৪৪ থেকে ১৮০ নম্বর আয়াত পর্যন্ত ওহুদ যুদ্ধের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। মাঝে মাঝে কাফেরদের বিভিন্ন কর্মকান্ডের কঠোর সমালোচনা ও মোমিন বাহিনীর প্রশংসা করা হয়েছে। ১৮১ থেকে ১৮৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা সম্পর্কে কাফেরদের বিভিন্ন ভ্রান্ত ধরাণা খণ্ডন করা হয়েছে। মোমিনদেরকে বারবার পরীক্ষা করা হবে- এ কথাও বলা হয়েছে। সূরার শেষ রুকুতে উপসংহারস্বরূপ কিছু হেদায়েতমূলক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, বিশ্বাসীরা আল্লাহর সৃষ্টিরাজ্য নিয়ে ভাবে এবং সবমসয় আল্লাহর জিকির ও প্রশংসায় থাকে। পরস্পর ধৈর্য ধারণ করতে হবে, আল্লাহভীরু হয়ে জীবনযাপন করতে হবে; তবেই মোমিনের জীবনে সফলতা ধরা দেবে বলেই সূরার ইতি টানা হয়েছে।
৪. সূরা নিসা: (মদিনায় অবতীর্ণ, আয়াত একশ ছিয়াত্তর, রুকু চব্বিশ) ১ থেকে ১০ নম্বর আয়াত পর্যন্ত নারী ও এতিমদের অধিকার সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এতিমদের ধনসম্পদ আত্মসাৎ না করার বিষয়ে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উত্তরাধিরাকার সম্পত্তি বণ্টনের বিষয়ে মৌলিক কিছু হেদায়েত দেওয়া হয়েছে। ১১ থেকে ১৪ নম্বর আয়াতে আগের ধারাবাহিকতায় উত্তরাধিকার সম্পর্কে বিস্তারিত নির্দেশনা রয়েছে।
১৫ থেকে ২৩ নম্বর আয়াত পর্যন্ত পারিবারিক বিরোধ মীমাংসায় গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। স্ত্রী ব্যভিচারে জড়িয়ে পড়লে তার শাস্তি কী হবে, আবার তাওবার বিধান কী- এ বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, স্ত্রীদের উত্ত্যক্ত করা যাবে না। জোরপূর্বক তাদের সম্পত্তির উত্তরাধিকারীও বনে যাওয়া যাবে না।
২৩ থেকে ২৫ নম্বর আয়াত পর্যন্ত কাদেরকে বিয়ে করা হারাম- এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, যুদ্ধবন্দি নারী ও দাসীদের সঙ্গে আচরণ পদ্ধতি প্রসঙ্গে। ২৬ থেকে ৩৩ নম্বর আয়াতে মোমিনদের জন্য সাধারণ হেদায়েত দেওয়া হয়েছে। অন্যের সম্পদ জোর করে দখল না করা, কোন ধরনের গোনাহে জড়িয়ে না পড়া, অন্যের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ দেখে হিংসার বশবর্তী না হওয়া এবং লোভাতুর না হওয়া ইত্যাদি প্রসঙ্গে নসিহত করা হয়েছে।
৩৪ থেকে ৪১ নম্বর আয়াতে দাম্পত্য কলহ নিরসনের পন্থা বলে দেওয়া হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, একজন মোমিন মুসলমানের জীবনধারা কেমন হবে। কার সঙ্গে কেমন আচরণ করতে হবে। প্রত্যেককে তার প্রাপ্য অধিকার দিয়ে দিতে হবে। আর যারা আল্লাহর নাফরমানি করেছে, তাদের অবস্থা কত শোচনীয় হবে সে কথাও বলা হয়েছে।
৪৩ থেকে ৫০ নম্বর আয়াতে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় নামাজে দাঁড়াতে নিষেধ করা হয়েছে। মূলত নেশা যাবতীয় অন্যায়ের উৎস। তাই ইসলাম নেশাকে হারাম সাব্যস্ত করেছে। পবিত্রতার জন্য পানি না পেলে তায়াম্মুম করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর পর আহলে কিতাবদের উদ্দেশে ভর্ৎসনামূলক কিছু কথা বলা হয়েছে, বিশেষ করে যারা মনে করে যে জান্নাত শুধু তাদেরই প্রাপ্য, তাদের তিরস্কার করা হয়েছে।
৫১ থেকে ৭০ নম্বর আয়াতেও আগের ধারাবাহিকতায় আহলে কিতাবদের কেন্দ্র করে ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে আলোচনা করা হয়েছে। ৭১ থেকে ৮৭ নম্বর আয়াতে জিহাদের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। যারা জিহাদে অংশগ্রহণ করে, তাদের মর্যাদা এবং প্রতিদান সম্পর্কে সংক্ষেপে বলা হয়েছে। আবার যারা জিহাদের ডাক এলে ঘরকুনো হয়ে থাকে, তাদের কঠোর সমালোচনা করা হয়েছে। তাদের আচরণ ও কথাবার্তা জিহাদের আগে কেমন আর জিহাদের পরে কেমন হয়, তা বাস্তব উদাহরণসহ আল্লাহ তায়ালা বলে দিয়েছেন। সুপারিশের নীতিমালা এবং অভিবাদন বিষয়ে দিকনির্দেশনা প্রদানের মাধ্যমে আজকের তারাবির পারা সমাপ্ত হবে।
লেখক: পেশ ইমাম ও খতীবঃ কেন্দ্রীয় মসজিদ, বুয়েট