বুধবার, ২৫শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৪ই মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

উলামাদের স্থুলতা এবং বিরোধীদের নাসিকা কুঞ্চন – লুৎফর ফরায়েজী

ছাত্র জমানা থেকেই ভুরি হওয়া পছন্দনীয় ছিল না। দাওরায়ে হাদীসের আগ পর্যন্ত ছিলাম ছিপছিপে। হালকা শরীর। হালকা শরীরের যে কি আরাম তা ভারী হবার পর বুঝা যায়। দাওরা ইফতার বছর কিছুটা স্বাস্থ্য বেড়েছে। কিন্তু ভুরি নয়।

ছাত্র জমানায় না বুঝে অনেকের সাথেই তাল মিলাতামঃ হুজুররা খেয়ে খেয়ে ভুরি বিশাল করে ফেলে। [নাউজুবিল্লাহ]
গ্রামে একথার প্রচলনটা খুব বেশি। গ্রামের সাধারণ আলেম বা মুন্সিরা প্রচুর দাওয়াত খেত। এ চল এখন প্রায় উঠেই যাচ্ছে। অনেক স্থানে এখনো বলবৎ আছে। কিছু হলেই হুজুরকে ডেকে আনো। খানা খাওয়াও।
মানসিকতাটা ভাল। আলেমমুখী মানুষ অনেক ফিতনা থেকে মুক্ত থাকে।
আমার শ্রদ্ধাভাজন আব্বাজান হলেন এর চরম বিরোধী। তাই আমাদের এলাকায় তার বড় হুজুর হিসেবে খ্যাতি থাকলেও অন্যের বাড়ীতে শুধু দাওয়াত খাওয়ার জন্য বাপজানকে কখনো যেতে দেখিনি। মাহফিল থাকলে ভিন্ন কথা।
মিলাদের শিন্নি, উদ্বোধনের মিষ্টি ইত্যাদি কিছুই আব্বা গ্রহণ করতেন না। ছিলেন কট্টর বিরোধী। মৃতের নামের খানা খাবারতো প্রশ্নই উঠে না। এই মানসিকতার উপর এখনো আছেন। [আল্লাহ তাআলা আব্বাজানকে হায়াতে তাইয়্যিবাহ দান করুন]

Default Ad Content Here

তাই আমাদের এলাকায় দ্বীন না মানার বদনসীবী অনেক থাকলেও মিলাদের শিন্নি বিতরণ আর কিয়ামের বিদআত নেই বললেই চলে।
আব্বা এসব না করলেও আশে পাশের কম পড়ুয়া কিংবা আলিয়া পাশ হুজুরদের এ বিষয়ে বেশ আগ্রহী দেখেছি।
সাধারণ উলামাদের দাওয়াত খাওয়ানোর সহজাত প্রবণতাকে অনেকে বাঁকা চোখে দেখতো। উপহাস করে বলতো “মোল্লার পেট সহজে ভরে না” ইত্যাদি।
কিন্তু শহুরে হুজুররা আলাদা। তারা কম খায়। আমিও যখন গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় এলাম। আমার ভগ্নিপতীদের দেখলাম। যারা ঢাকায় থাকেন। খানা খান খুবই কম। তখন ধারণা বদলাতে থাকে। না, হুজুররা আসলে কমই খায়। কিন্তু বদনামটা রয়ে গেল।

বদনামটা বেশি করতো ভুরিটা দেখে। হুজুর মানেই ছোটখাটো ভুরি একটা থাকতে হবে। গ্রামের মোল্লা মৌলভী না হয় দাওয়াত খায় তাই তাদের ভুরি বড়। কিন্তু শহুরে উলামাদের ভুরি কেন বড়? এ প্রশ্নটা ছাত্র জমানায় ঘুরপাক খেতো খুব। উত্তর বুঝে আসতো না। বেশি খাওয়ার “বদ জন্ন” ছাড়া কোন সমাধান বুঝে আসেনি।
কিন্তু গত বছরের শেষ থেকে আমার পেটের সামনে যখন ভুরিটাকে সামনে এগুতে দেখলাম। তখন চিন্তায় পড়ে গেলাম। তাহলে আমিও কি বেশি খাই? ভুরি বাড়ে কেন?
উত্তর বুঝে আসলো খুব সহজে। খাবার মূল বিষয় নয়। আসলে যারা মাদরাসা মসজিদের চার দেয়ালে বন্দী থাকেন, সারাদিন বসে থাকাই এ ভুরি বাড়ার মূল কারণ।
আমরা ব্যায়াম করি না বললেই চলে। পরিশ্রম হয় ব্রেইনের। কিতাব মুতালাআ, লেখালেখি, দরস তাদরীস, ইমামতী, মাহফিলে বয়ান ইত্যাদিতে মানসিক পরিশ্রম হয় অনেক, কিন্তু কায়িক শ্রম হয় না। মানসিক পরিশ্রমের ফলে দ্রুত আমাদের চুল দাড়িতে পাক ধরে। আর কায়িক পরিশ্রম না থাকায় শরীরে জমে মেদ। বাড়ে ভুরি।
সুতরাং খাবারকে একমাত্র উপসর্গ মনে করে আলেম উলামাদের প্রতি খারাপ ধারণা করা গোনাহের ভাগিদার হবারই নামান্তর। কারণ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, কিছু কিছু ধারণা গোনাহ। [সূরা হুজুরাত-১২]
তাই আলেম উলামা সম্পর্কে খারাপ ধারণা করা থেকে বেঁচে থাকি।
সুযোগ থাকলে প্রতিদিনই কিছু ব্যায়াম করি। এতে শরীর মন উভয়টাই সতেজ থাকে।

Archives

July 2025
S S M T W T F
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031