বৃহস্পতিবার, ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৬ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

আপোষহীন অপ্রতিরোধ্য মুফতী আমিনী রহ. – শাখাওয়াত রাজি


আপোষহীন অপ্রতিরোধ্য মুফতী আমিনী রহ.
৪ঠা এপ্রিলের হরতাল একটি উদাহরণ মাত্র

     মুফতী শাখাওয়াত হোসেন রাজি 
————————————————-
দেশে অনেক সংগঠন আছে, আছেন অনেক নেতা। তারপরও কেন মানুষ সময়ে সময়ে আল্লামা মুফতী আমিনীকে স্মরণ করেন? কেন তারা বলেন? আজ মুফতী আমিনীর বড় প্রয়োজন। কারণ, এদেশে যখন কোন ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড হয়, নেতা এবং সংগঠন নিজেকে এবং সংগঠনের ব্যানারকে প্রচারের সুবর্ণ সুযোগ মনে করে। কিছুদিন মিছিল মিটিং করে, অতপর গর্তে ঢুকে পড়ে। অপেক্ষায় থাকে আবার কবে নতুন ইস্যু তৈরি হবে। নিজের ও দলের র‍্যাংকিং একটু বাড়িয়ে নেবে। তাইতো একের পর এক ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড হচ্ছে, দলগুলোও মিছিল মিটিং-এর জন্য প্রস্তুত আছে।
পক্ষান্তরে মুফতী আমিনী রহ. দল কিংবা সংগঠনের পূজা করেন নি। “আমি জীবিত থাকব আর দ্বীনের ক্ষতি হবে” এই চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়তেন।
কুরআনের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক নারী নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য এ দেশের শাসকগোষ্ঠীরা প্রায়ই চেষ্টা করেছে। মঈনউদ্দিন-ফখরুদ্দিন সরকারের আমলেও চেষ্টা করা হয়েছে। আল্লামা মুফতি আমিনী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তখনো প্রতিবাদ করেছেন। জরুরী অবস্থায় মিছিলের ডাক দিয়েছিলেন। সর্বশেষ ২০১১-এর মার্চে আওয়ামী সরকার যখন নারী নীতিমালা চূড়ান্ত করে, আল্লামা মুফতি আমিনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এক মাসের আল্টিমেটাম দিয়ে ৪ঠা এপ্রিল দেশব্যাপী হরতালের ডাক দেন। বাধা, প্রলোভন, ভয়-ভীত, হুমকি-ধমকি মোকাবেলা করে আল্লামা মুফতি আমিনী ছিলেন আপোষহীন অপ্রতিরোধ্য। তিনি স্পষ্টভাষায় বলে দিয়েছিলেন, নারী নীতিমালা স্থগিত কর তাহলেই হরতাল স্থগিত হবে। মানুষ নানা আশঙ্কায় আপোষ করে ফেলে। আল্লামা মুফতি আমিনী সন্তান গুম’ হয়ে যাওয়ার পরেও কোন ধরনের আপোষরফা করেন নি।
২০০১ সালে হাইকোর্ট থেকে ফতোয়াবিরোধী রায় দেয়া হল। আল্লামা মুফতি আমিনী দুই বিচারপতিকে মুরতাদ ঘোষণা করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পাল্টা ফতোয়া দিলেন। সারাদেশে আন্দোলন শুরু হল। আলেম-ওলামাদের ওপর চালানো হল নির্যাতন। দেয়া হলো মিথ্যা মামলা। মুফতি আমিনী থেমে যাননি। সর্বশেষ তাকেও কারাবরণ করতে হয়েছে।
সংবিধান থেকে মহান আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস বাদ দিয়ে দেয়া হলো। ফিরিয়ে আনা হল ধর্মনিরপেক্ষতা। মুফতি আমিনী এক বক্তৃতায় বললেন, এই সংবিধান ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলা হবে। ফলে তাকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা মোকাবেলা করতে হয়েছে।
ইসলামবিরোধী শিক্ষানীতি, কোরআনবিরোধী নারীনীতি মালার বিরুদ্ধে তিনি গর্জে উঠেছিলেন। শেষ অবধি তাকে আমৃত্যু গৃহবন্দী থাকতে হয়েছে।
আমরা ভালো আছি, বেশ আরামে আছি, দীর্ঘ পরিকল্পনায় নিজেদেরকে জড়িয়ে ফেলেছি। বড় বড় স্বপ্ন দেখছি। পদ থেকে পদোন্নতির কথা ভাবছি। অথচ-
১৩দফা আন্দোলন হয়েছে, আন্দোলন শেষ দফাও শেষ। কখনো মনেই হয় না যে, আমরা দফা দিয়েছিলাম। বাল্যবিবাহ আইন হয়েছে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার মত কাউকে দেখা যায়নি। হাতিরঝিলে মসজিদ ভেঙে ফেলেছে প্রতিহত করতে কেউ দাঁড়ায় নি। জাতীয় মসজিদে বেদাতি খতিব, ফাউন্ডেশনে আজব ডিজি। কই আমরা কী করতে পেরেছি? আমরা হয়তো কেয়ামত পর্যন্ত বড় বড় সভা-সমাবেশ করতেই থাকব, কিন্তু কী লাভ? আমার মিটিং মিছিলে তো তাদের কর্ণে পৌঁছে না। বরং রাতে টেবিলটক দিনে গরম বক্তৃতা গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য উপকারী!

Archives

November 2023
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930