শনিবার, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২১শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
Md Abul Bashar | ২,১৮৪ views | জুন ৮, ২০১৮ | আলোর পথে | No | ১১:০৪ পূর্বাহ্ণ |
একদিন সকাল এগারটার সময় যায়নাব ঐ আয়শার কাছে গেল। তার চেহেরা আনন্দে চমকাতে ছিল। শুক্রবারের দিন ছিল, সে বলল, আপনাকে একটি খুশির কথা শোনাবো, এখন আল্লাহর সাথে সাক্ষাত ও জান্নাতে যেতে আর কোনো অপেক্ষা করতে হবে না। রাতে আমি স্বপ্নে দেখলাম আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম এলেন, আমাকে বললেন, আয়শা! এই দুনিয়া তো জেলখানা কতদিন পর্যন্ত এখানে থাকবে? সোমবারে আমি তোমাকে জান্নাতে নিয়ে আসব। এ কথা বলে সে খুব হাসল। যায়নাব আরো তিনদিন আছে। সেখানে আবার দেখা হবে। সেখানে খুব সস্তির সাথে আনন্দের সাথে সোমবারে আসরের পর সে হঠাৎ করে বলতে লাগল, আমার নবী তো আমাকে নিতে এসে গেছেন। জোরে জোরে দরুদ শরীফ পড়তে লাগল। উঠতে চাইল কিন্তু পারল না। হটাৎ কালেমা শাহাদাত পড়ল, হেঁচকি এল এবং মৃত্যুবরণ করল।
Default Ad Content Here
আসমা আমাতুল্লাহ: আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু!
যায়নাব চৌহান: ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু!
আসমা আমাতুল্লাহ: যায়নাব আপা! আপনি আসাতে খুবই খুশি হয়েছি। আপনার সত্তাটাই আল্লাহ তাআলার হেদায়েতের এক বিস্ময়কর দৃষ্টান্ত। আব্বুর কাছে যখন আপনার গল্প শুনতাম মনে হতো যেন রূপকথা শুনছি। আপনাকে দেখার খুব আগ্রহ ছিল। আল্লাহ তায়ালা সাক্ষাতের সুযোগ করে দিয়েছেন। আব্বু আমাকে বলেছেন, আপনার ইসলাম গ্রহণের কাহিনী সরাসরি আপনার মুখ থেকে শুনে যেন আরমুগানের পাঠকদের খেদমতে তুলে ধরি।
যায়নাব চৌহান: সত্যি বোন আসমা! তোমাদের ছোটবেলার গল্প যখন হযরতের কাছে শুনেছি তখন আমাদের মতো জাহান্নামের পথের পথিকদের জন্য তা ঈমানের উপলক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্তত দুই বার হযরতের আলোচনায় আমি তোমাদের কথা শুনেছি। আমার একটা আফসোস ছিল তোমাদের দেখার। আল্লাহ তায়ালা আমার পুরনো ইচ্ছা পূরণ করেছেন।
আসমা আমাতুল্লাহ: এটা আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ তিনি আমাদের উভয়ের বাসনাই পূরণ করেছেন। আপনাকে হয়তো আব্বু বলেই দিয়েছেন, আরমুগানের জন্য আপনার সাথে আমি কিছু কথা বলবো, সেজন্য আপনাকে কিছু প্রশ্ন করবো।
যায়নাব চৌহান: হ্যাঁ, আজ দিল্লীতে এ জন্য এসেছি।
আসমা আমাতুল্লাহ: প্রথমে আপনার বংশিয় পরিচয় সম্পর্কে কিছু বলুন!
যায়নাব চৌহান: আমি রাজস্থানের চুরু জেলার এক রাজপুত খান্দানের মেয়ে। আমার জন্ম ১৯৬৮ সালের ২০ শে এপ্রিল। আমার পিতাজী ছিলেন হাই স্কুলের প্রিন্সিপ্যাল। আমার প্রাথমিক লেখাপড়া হয়েছে গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে। পরে চুরুতে একটি ডিগ্রি কলেজ থেকে বি এ করি। হনুমানগড়ের একটি শিক্ষিত খান্দানে আমার বিয়ে হয়। সে সময়টা ছিল ১৯৯০ সালের ৬ জুন। আমার স্বামী মধ্যপ্রদেশে রতলামে নায়েবে তহশিলদার ছিল। তাছাড়া সে ছিল চমৎকার হকি খেলোয়াড়। তার চাকরির সূত্রও ছিল এটা। বিয়ের পর আমি আমার শ্বশুরালয়ে ২ বছর থাকি।
তারপর আমরা রতলাম জেলার একটি তফশিলে থাকতে থাকি যেখানে আমার স্বামী চাকরি করতো। বদলির সুবাদে আজীনে পরে মন্দসুরে ছয় বছর থাকি। এই সময়ে আমার ২টি পুত্রসন্তান ও একটি কন্যাসন্তান জন্ম নেয়। ২০০০ সালে আমার স্বামীর প্রমোশন হয়। তারপর তহশিলদার হয়ে সপরিবারে আমরা ভুপাল চলে যাই। আমাদের পরিবার ছিল খুবই চমৎকার। পরস্পর ভালোবাসা, আস্থা কোনটারই কমতি ছিল না। হঠাৎ করে কী হলো, কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না। আমাদের প্রতি কারও নজর লাগলো কিনা! যদি বলি আমাদের ঘরে হেদায়েতের বাতাস লেগেছিল তাহলেই মনে হয় ভালো হয়। আমার অবস্থা খুবই বিস্ময়কর। বিপর্যয় আমার জীবনকে সাজিয়ে দিয়েছে।
আসমা আমাতুল্লাহ: হ্যাঁ, এ কথাই তো শুনতে চাইছি। কীভাবে আপনি ইসলামের পথে আসলেন, কে আপনাকে এ পথ দেখালো? একটু খুলে বলুন।
যায়নাব চৌহান: আমার স্বামীর অফিসে একজন ব্রাহ্মণ ক্লার্ক ছিল। দেখতে যেমন অপূর্ব সুন্দরী, কাজকর্মেও তেমন অ্যাকটিভ। আমি যদি তাকে ওভার অ্যাকটিভ বলি তাহলেই মনে হয় ঠিক বলা হয়। মেয়েটির চালচলন, আকার-আকৃতি, গলার স্বর এক কথায় তার সব কিছুতেই ছিল ভয়ানক জাদু। বোন আসমা! আমার স্বামীর দোষ দেব না। বরং এই মেয়েটিই এমন ছিল, যার পরশে এলে পাথরও মোমের মতো গলে যেতে বাধ্য। আমার স্বামী নিজেকে বাঁচাতে চেষ্টা করেছে। নিজেকে সামলানোর খুব চেষ্টা করেছে। কিন্তু আল্লাহ তায়ালাই তো নারী-পুরুষের মধ্যে পরস্পর এক অদৃশ্য টান রেখেছেন। এই অদৃশ্য টান থেকে সে শেষ পর্যন্ত নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। তার সাথে ধীরে-ধীরে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তার ভালোবাসায় হারিয়ে যেতে থাকে। আমার একশ’ ভাগ বিশ্বাস বিয়ে না করা পর্যন্ত তাদের মধ্যে শারিরীক কোনো সম্পর্ক হয়নি। কিন্তু এ-ও তো সত্য একটি শরীরে দুটি অন্তর তো আর থাকে না। তার সাথে সম্পর্ক গড়ে ওঠার পর আমার প্রতি ভালোবাসায় ভাটা পড়তে থাকে। প্রথমে সে অনেকভাবেই চেষ্টা করে বিষয়টি গোপন রাখতে, কিন্তু অবশেষে বিষয়টি গোপন থাকে না। আমি জানতে পারি তার অফিসের সকলেই বিষয়টি জেনে গেছে। এমন একটি বিষয় মেনে নেয়া আমার পক্ষে কোনো মতেই সম্ভব ছিল না। এভাবে আমাদের সম্পর্ক ধীরে ধীরে চরম অবনতির দিকে যেতে থাকে। অবশেষে আমার স্বামী সিদ্ধান্ত নেয় আমাকে ছেড়ে দিয়ে তাকে বিয়ে করবে। এ উদ্দেশ্যেই আমার স্বামী আমাকে হনুমানগড়ে রেখে আসে।
২০০০ সালের মে মাস। আমার সন্তানদের ছুটি চলছিল। আমার স্বামী দিল্লীতে চলে গেল। যাওয়ার সময় বলে গেল, সেখানে একটি ট্রেনিংয়ে তাকে বেশ কিছুদিন থাকতে হবে। দিল্লীতে পৌঁছার পর সে তার বন্ধবী আশা শর্মাকে ডেকে পাঠায়। আশা শর্মা দিল্লীতে এসে তার সাথে হোটেলে একই কক্ষে থাকতে অস্বীকৃতি জানায়। দাবি করে আগে বিয়ে তারপর একসাথে থাকা। বাধ্য হয়ে আমার স্বামী হোটেলে দুটি কক্ষ ভাড়া নেয় এবং দুজন আলাদা কক্ষে থাকতে শুরু করে। তারপর উকিলদের সাথে পরামর্শ করে। একজন উকিল তাকে এই মর্মে পরামর্শ দেন, আইনি বিপদ থেকে বাঁচার সহজ পথ হলো তোমরা উভয়ে মুসলমান হয়ে যাও, তারপর বিয়ে কর। পরামর্শটি তার বেশ পছন্দ হয়। আশাকেও সে রাজি করিয়ে ফেলে। অবশ্য শুরুর দিকে এক সপ্তাহ পর্যন্ত মুসলমান হতে সে অস্বীকৃতি জানায়। অবশেষে আমার স্বামীর পীড়াপীড়িতে রাজি হয়ে যায়। তারা উভয়ে দিল্লী জামে মসজিদে চলে যায়। সেখানকার ইমাম বোখারী সাহেব তাদের মুসলমান করতে অস্বীকৃতি জানান। তারপর আমার স্বামী আশাকে নিয়ে বিভিন্ন মসজিদে যায়। কিন্তু কোনো ইমামই তাদের মুসলমান করতে এবং কালেমা পড়াতে রাজি হননি।
তখন একজন উকিল আমার স্বামীকে পরামর্শ দেন, পুরনো দিল্লীতে সরকারি রেজিস্টার্ড কাজী আছে। তারা বিয়ে পড়ান। আমার স্বামী সেই কাজীর ঠিকানা নিয়ে পুরান দিল্লীতে চলে যায়। কাজী সাহেব আমার স্বামীকে বলেন, প্রথমে আপনারা উভয়ে ইসলাম গ্রহণের হলফনামা সরকারি উকিলের মাধ্যমে তৈরি করে নিয়ে আসুন, তারপর বিয়ে হবে। আমার স্বামী বলে, আপনি আমাদের মুসলমান করুন তারপর হলফনামার ব্যবস্থা করবো। কাজী সাহেব তাদের মুসলমান বানাতে অস্বীকার করেন এবং পরামর্শ দেন আপনারা মাওলানা কালিম সিদ্দীকির কাছে চলে যান। সেখান থেকে ঠিকানা নিয়ে তারা ফুলাত চলে যান। ফুলাত যাওয়ার পর জানতে পারেন হযরত দিল্লী চলে গেছেন। সেখানে অবস্থানরত এক মাওলানা তাদের কালেমা পড়িয়ে দেন এবং বলেন কালেমা পড়ার জন্য মাওলানা সাহেবের উপস্থিতি জরুরী নয়। এবার আপনারা মিরাঠ অথবা দিল্লী গিয়ে সরকারি কোনো নোটারির মাধ্যমে কাগজপত্র তৈরি করে নিন। সাথে মিরাঠের গুপ্তাজির ঠিকানাও বলে দেন। ঠিকানা নিয়ে তারা মিরাঠ চলে যায়। হলফনামা তৈরী করার পর কাজী সাহেব তাদের বিয়ে পড়িয়ে দেন। এ-ও বলে দেন, আদালতে গিয়ে আপনাদের বিয়ের বিষয়টি রেজিস্টার্ড করিয়ে নিন।
আশা শর্মা তখন আমার স্বামীকে বলে, মুসলমান যখন হলামই তখন তো ইসলাম সম্পর্কেও জানা দরকার। তারপর সে বাজার থেকে হিন্দি ও ইংরেজিতে লেখা বেশ কিছু বই সংগ্রহ করে। হিন্দী ভাষায় অনূদিত একটি কুরআন শরীফও সংগ্রহ করে। জনৈক ব্যক্তি তখন তাকে মাওলানা কালিম সিদ্দিকী সাহেবের সাথে দেখা করতে বলে। উখলায় কোনো একটি মসজিদে অনুসন্ধানের পর হযরতের সাথে দেখা হয়। মাওলানা তাকে ‘আপকি আমানত’ বইটি পড়তে দেন। আর বলেন, নিশ্চয়ই নিজের খান্দান, ফুলের মতো সন্তান এবং এমন একজন সৎ স্ত্রীকে ছেড়ে আসা খুবই বিস্ময়কর। কিন্তু আপনারা যদি সত্য দীলে মুসলমান হয়ে থাকেন তাহলে এই বিপর্যস্ত জীবনের মালিক যিনি তিনি চাইলে এই জীবনে আবার সৌন্দর্যও ফিরিয়ে দিতে পারেন।
বিশেষভাবে আমার স্বামীকে বলেন, আপনার উচিত আপনার প্রথম স্ত্রী, আপনার সন্তান এবং পরিবারের লোকদের ইসলামের দাওয়াত দেয়া। আর এখন থেকেই তাদের জন্য অন্তত হেদায়েতের দুআ শুরু করে দিন। আমার স্বামী বলেছে, মাওলানা সাহেব তাকে কুরআন শরীফের একটি আয়াত উদ্ধৃত করে বলেছেন, যে কোনো পুরুষ কিংবা নারী ঈমানদার হওয়ার পর যদি নেক আমল করে তাহলে আল্লাহ তায়ালা তাকে পবিত্র জীবন দান করেন।
আসমা আমাতুল্লাহ: হ্যাঁ, কুরআন শরীফে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-
مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً
যায়নাব চৌহান: আয়াতটির তরজমা একটু আমাকে বলুন।
আসমা আমাতুল্লাহ: “যে কোনো পুরুষ কিংবা নারী নেক আমল করবে এবং সে ঈমানদার তাহলে অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা তাকে পবিত্র জীবন দান করেন।”
যায়নাব চৌহান: হ্যাঁ, একেবারে এ আয়াতটিই। আমার স্বামী বলেছে, এই আয়াতটি তার জীবনকে আলোকিত করে দিয়েছে। পুরো আয়াতটি তার মুখস্থ।
আসমা আমাতুল্লাহ: হ্যাঁ, তারপর বলুন আপনি কিভাবে মুসলমান হলেন? এটা তো আশা শর্মার ইসলাম গ্রহণের গল্প বললেন।
যায়নাব চৌহান: হ্যাঁ বোন, আমার ইসলাম গ্রহণের কাহিনী আশার ইসলাম গ্রহণের সাথেই তো জড়িয়ে আছে। পরে যা ঘটেছে তা হল এই- আমার স্বামী ইসলাম সম্পর্কে পড়াশোনা করার তেমন কোনো সুযোগ পেল না। কিন্তু ইসলামকে জানার আগ্রহ আশার মধ্যে ছিল অসামান্য। সে এ সম্পর্কে যতই পড়ছিল ইসলাম ততই তার অস্তিত্বের গভীরে বিস্তার করছিল। তারপর আমার সন্তানদের ছুটি শেষ হলো। স্বামীরও ছুটি শেষ। ছুটির পর সে ভুপাল চলে গেল। কিন্তু আমাকে রেখে গেল হনুমানগড়েই। আমার সাথে তার যোগাযোগও কমে গেল। আমি খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম। শেষে আমার ছোট ভাইকে ভুপাল পাঠালাম।
কাকতালীয়ভাবে সেদিন রাতে আশা ঘরেই ছিল। তার ইসলামী নাম আয়েশা। আমার ভাই আমার স্বামীকে জিজ্ঞেস করলো, আপনার ঘরে রাতের বেলা এই মেয়েটি কে? আমার স্বামী বললো, আমার অফিসে কাজ করে। অফিসিয়াল কাজে তাকে ডেকেছি। আমার ভাই এর প্রতিবাদ করে এবং তার সাথে রীতিমত ঝগড়াঝাটি হয়। তৃতীয় দিন ফোন করে সে আমাকে ভুপাল যেতে বলে। আমি আমার পিতাজীকে সাথে নিয়ে ভুপাল যাই। কয়েকদিন পর্যন্ত আমাদের লড়াই চলতে থাকে। অবশেষে আমার স্বামী ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কিত তার কাগজগুলো আমার সামনে ছড়িয়ে দেয়। আমার জন্য এর চেয়ে বড় দুঃখের বা বেদনার আর কী হতে পারে! আমার পিতাজী উকিলদের সাথে পরামর্শ করলেন। এফ আর আই করলেন। কয়েকদিন আদালতে গেলেন। পুলিশ আসলো এবং তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেল। কয়েকদিন পর সে জামিনে মুক্তি পেল। কিন্তু খেসারতস্বরূপ তাকে চাকরি হারাতে হলো।
আমার ভালোবাসায় আমার পরিবারের লোকেরা আমার স্বামীর শত্র“ হয়ে উঠলো। তার বিরুদ্ধে নানা ধরনের মামলা দায়ের করলো। জীবনটা তখন তার জন্য বিভীষিকা হয়ে উঠলো। এ সময় আশার একমাত্র চিন্তা ও চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছিল ইসলাম। সে গভীর মনোযোগসহ ইসলাম সম্পর্কে পড়াশোনা করছিল এবং সে পরম ধার্মিক হয়ে উঠলো। ইতোমধ্যে তার চাকরিও চলে গিয়েছিল। ফলে ঘরে বসে সে কুরআন শরীফ পড়া শিখলো। মুসলমান মেয়েদের সাথে যোগাযোগ করলো। তাদের ধর্মীয় সভা-সমাবেশে যাওয়া আসা-যাওয়া করতে লাগলো। পর্দা করতে লাগলো।
এদিকে আমার পরিবারের পক্ষ থেকে আমার স্বামীর বিরুদ্ধে লড়াই ছিল তুমুল। আমার শ্বশুরালয়ও ছিল আমার পক্ষে। অবস্থা যখন এমন তখন আমার স্বামী ও আয়েশা মিলে পরামর্শ করলো বিষয়টি দিল্লী গিয়ে মাওলানা কালিম সিদ্দিকীর সাথে আলোচনা করা দরকার। তারা দিল্লি চলে গেল। আয়েশা হযরতকে বললো, হযরত! আলহামদুলিল্লাহ আমি ইসলাম সম্পর্কে মোটামুটি ভালোই ধারনা লাভ করতে পেরেছি। আমার অবস্থা এখন এমন যদি পুরো জীবনটা জেলখানায় কাটাতে হয়; কিংবা যে কোনো ধরনের বিপদাপদে কাটাতে হয় আমার ঈমান নিরাপদ থাকবে এবং আমি এর বিনিময়ে পরকালে যে বেহেশত লাভ করবো সেই তুলনায় এ কষ্ট খুবই সামান্য।
এজন্য আমার মনের কথা হলো, এর প্রথম স্ত্রী যার সাথে এ দীর্ঘ একটা সময় পার করেছে, তাদের পরস্পরে আস্থা ও ভালোবাসা ছিল। এখানে বেচারীর কোনো দোষ নেই। সুতরাং আমার স্বামীর উচিত তার প্রথম স্ত্রীর সাথে গিয়ে থাকা। আমার মনের কামনা একটাই তাঁর ঈমান যেন মজবুত থাকে। সে যেন তার স্ত্রীকেও মুসলমান বানানোর চেষ্টা করে এবং মুসলমান বানিয়ে নিয়ে পুনরায় বিয়ে করে। তারপর আমাকে চাইলে রাখতে পারে আর না চাইলে ছেড়ে দিতে পারে। এজন্য আমি মনে করি কিছুদিনের জন্য আমার স্বামী জামাতে চলে যাক। যেন স্ত্রীর কাছে গিয়ে আবার মুরতাদ না হয়ে যায়।
আয়েশার কথা শুনে মাওলানা সাহেব খুব প্রশংসা করেন এবং তার কথায় একমত হন। তারপর আমার স্বামীকে চল্লিশ দিনের জামাতে নিযামুদ্দীন পাঠিয়ে দেন। তার জামাত গুজরাটে কাজ করে। জামাতের অধিকাংশ সদস্যই ছিল হায়দারাবাদের। তাদের সাথে তার সময় চমৎকার কাটে।
এ সময় খুব ভালো-ভালো স্বপ্ন দেখে। আলহামদুলিল্লাহ ইসলাম তার অন্তরে স্থান করে নেয়। জামাত থেকে ফিরে আসার পর সে আয়েশার কাছে যায়। আয়েশা তাকে হনুমানগড়ে গিয়ে আলোচনা করতে বলে। কিন্তু আমার স্বামী এতে সাহস করে না। এদিকে আয়েশা একজন ভালো দা‘য়ী হয়ে যায়। এরই মধ্যে ওর প্রচেষ্টায় ওর ছোটবেলার কয়েকজন সখী মুসলমান হয়ে গিয়েছিল। অবশেষে আয়েশাই আমাকে ফোন করে। ফোনে বলে “আপনি মাসুদ সাহেবের (আমার স্বামীর ইসলামী নাম) সাথে আর কতদিন লড়াই করবেন? আর কতদিন আপনাদের মধ্যে মামলা-মোকদ্দমা চলবে? আপনি দশ মিনিট আমার কথা শুনুন। একদিনের জন্য ভুপাল চলে আসুন। আমি মাসুদ সাহেব থেকে আলাদা হতে প্রস্তুত আছি।” শুরুর দিকে আমি তাকে খুব গালাগালি করতাম। কিন্তু আল্লাহর এই বান্দী ছিল অত্যন্ত সাহসী এবং দৃঢ় চিত্তের অধিকারী। সে আমাকে বারবার ফোন করতে থাকে। আমি যখন কোনমতেই তার কথা মানতে রাজি হচ্ছিলাম না তখন সে আমাকে বললো, ঠিক আছে আমি আমার আল্লাহকে বলে তোমাকে ডেকে পাঠাবো।
পরে আয়েশার কাছে জেনেছি সে দুই রাকাত সালাতুল হাজত নামায পড়েছে। আল্লাহ তাআলার কাছে এই বলে প্রার্থনা করেছে, হে আমার আল্লাহ! আমি তোমার প্রতি ঈমান এনেছি। নিশ্চয়ই তুমি আমাকে ভালোবাস। তুমি তার অন্তরকে নরম করে দাও। হে আল্লাহ! তুমি তার হেদায়েতের ফায়সালা করে দাও। তুমি তাকে আমাদের এখানে পাঠিয়ে দাও।
তারপর থেকে সে সবসময় তাহাজ্জুদ পড়ে আমার জন্য দুআ করে। কী বলবো বোন আসমা! এই বান্দীর সাথে আল্লাহ তায়ালার সম্পর্ক ছিল অভিমানের। তার দুআ আমার জন্য গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়ালো। তিন দিন পর আমার মন তার সাথে দেখা করার জন্য অস্থির হয়ে উঠলো। আমি আমার সন্তানদের রেখে আমার ভাইকে সঙ্গে করে সেখানে চলে গেলাম। আমার সাথে আমার স্বামীর সাক্ষাত করার সাহস ছিল না। আয়েশাই আমার কাছে এলো। আমাকে ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দিল। আমাকে সে বুঝালো, আপনাকে আপনার স্বামীর সাথে থাকার একটাই পথ ইসলাম। আগে ইসলাম গ্রহণ করুন। তারপর পুনরায় বিয়ে সম্পাদন করে তার সাথে থাকুন। এতে প্রয়োজনে আমি নিজেকে আপনার স্বামীর পাশ থেকে সরিয়ে নিতে প্রস্তুত আছি। সে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে আমার পা জড়িয়ে ধরলো, আমাকে বিভিন্নভাবে বুঝাতে লাগলো। জান্নাত-জাহান্নামের কথা শোনাতে লাগলো। তার কথাগুলো ধীরে-ধীরে আমার অন্তরে প্রবেশ করতে শুরু হলো। ভাবলাম আমি মুসলমান হয়ে যাই। আমি তাকে বললাম, আমি মুসলমান হতে প্রস্তুত। সে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমার স্বামীকে ফোন করে নিয়ে এলো। একজন মহিলা এবং তার স্বামীকে ডেকে পাঠালো। মহিলার স্বামী একজন হাফেয। তারা এসে আমাকে কালেমা পড়ালো এবং মোহরে ফাতেমী দিয়ে পুনরায় বিয়ে পড়ালো। তারপর সে একটি আলাদা কামরা যোগাড় করে আমার ঘর ছেড়ে চলে গেল। কয়েকদিন ফাতেমা আপা যার ঘরে নিয়মিত এজতেমা হতো তার ঘরে থাকলো।
তারপর নিজে ছোট একটি বাড়ি ভাড়া নিল। এক সপ্তাহ পর্যন্ত সামান্য সময়ের জন্য সে আমার ঘরে আসতো। আমার খোঁজ-খবর নিত। আমাকে মোবারকবাদ জানাতো। সে বলতো! বোন যায়নাব! তুমি যে কত ভাগ্যবতী। আল্লাহ তায়ালা তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। তোমাকে ঈমানের আলোয় আলোকিত করেছেন। এর উপহার অসামান্য। কিন্তু এই ঈমান তখনই মূল্য পাবে যখন তুমি তাকে জানবে, পড়বে। আসলে আয়েশা ছিল এক অদ্ভূত ধরনের মেয়ে। তার আত্মা তখনই ছিল বেহেশতে। কেবল শরীরটা ছিল দুনিয়াতে। সে এই পার্থিব জীবনকে একটি ধোঁকার ঘর এবং সামান্য সময়ের একটি সফরের বেশি মনে করতো না। তার কথায় সততা, আন্তরিকতা এবং ভালোবাসা এমনভাবে উপচে পড়তো, এক সময় আমার কাছে মনে হতো এই মেয়ে ‘পৃথিবীতে আমার সবচে’ কল্যাণকামী।
এক সপ্তাহ পার হবার পর সে বললো, আজ থেকে আমি আর এই ঘরে আসবো না। এখন থেকে আপনি আমার ঘরে আসবেন। আমি তার ঘরে যেতে লাগলাম। এরই মধ্যে আমার স্বামীর বিরুদ্ধে যত মামলা ছিল সব তুলে নিলাম। আমার স্বামী যখন অফিসে থাকতো, তখন কয়েক ঘন্টা আমি আয়েশার কাছে কাটাতাম। সে আমাকে কুরআন শরীফ শিখিয়েছে। উর্দূ শিখিয়েছে। একদিন সকাল এগারটার সময় আমি তার ঘরে গেলাম। তার চেহারা তখন আনন্দ উজ্জ্বল। সেদিন ছিল শুক্রবার। সে আমাকে বললো, তোমাকে একটি খুশির খবর দিচ্ছি। আল্লাহ তায়ালার সাথে সাক্ষাত এবং বেহেশতে যাওয়ার জন্য আমাকে আর অপেক্ষা করতে হবে না।
গত রাতে স্বপ্নে দেখেছি; আমাদের হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাশরিফ এনেছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, আয়েশা! এই দুনিয়া হলো কয়েদখানা। এখানে তুমি আর কতদিন পড়ে থাকবে? সোমবার আমি তোমাকে বেহেশতে নিয়ে যেতে আসবো। এ কথা বলে সে খুব হাসলো এবং বললো, বোন যায়নাব! আর মাত্র তিন দিন। তারপর সাক্ষাত হবে বেহেশতে। সেখানে আমরা খুব সুখে থাকবো। সেখানে কোনরূপ দুশ্চিন্তা থাকবে না। তার কথাবার্তায় আমি খুবই বিস্মিত হচ্ছিলাম। পরের দিন আমি তার ঘরে গেলাম। তাকে বেশ উজ্জ্বল এবং উচ্ছ্বসিত মনে হচ্ছিল। আমাকে কুরআন শরীফ পড়ালো। বললো, আল্লাহ তায়ালা আমাদের ঈমান দিয়েছেন। এখন আমাদের চেষ্টা করতে হবে দাওয়াতের মাধ্যমে অন্যদের জাহান্নাম থেকে বের করে আনার।
সোমবার যখন আমি তার ঘরে গেলাম, দেখলাম একটি চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে। আমি ডাকলাম। বললাম, আয়েশা তোমার কী হয়েছে? আয়েশা বলল, সকাল থেকে জ্বর। আমি তাকে খুব পীড়াপীড়ি করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম। ওষুধ খাওয়ালাম। বললাম, তুমি বললে আমি এখানে থেকে যাই অথবা আমার ঘরে তুমি চলো। জ্বর নিয়ে একাকী থাকা ঠিক নয়। সে বললো, ঈমানদার একা হবে কেন? তারপর সে এই কবিতা পড়লো-
তুম মেরে পাস্ হোত হো, জব দোসরা কোয়ী নেহী যেতা।
“যখন আমি থাকি একা, পাশে থাকো তুমি।”
আসমা আমাতুল্লাহ: আসলে কবিতাটা হবে, তুম মেনে পাস হোতা হো, গোয়্যা জব কোয়ী দোসরা নেহী হোতা।
যায়নাব চৌহান: হ্যাঁ, হ্যাঁ তাই। সে যাই হোক, আমি সেখান থেকে চলে এলাম। আমি স্বপ্নে
দেখলাম তার সাথে আমি ঘরেই অবস্থান করছি। হঠাৎ অনিন্দ সুন্দর এক রূপময় হযরত আগমন করলেন। তাঁর সাথে মাওলানা কালিম সিদ্দিকীও আছেন। আমাকে বলা হলো ইনি আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আয়েশাকে নিতে এসেছেন। তারপর তিনি আয়েশার হাত ধরে নিয়ে গেলেন। আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সর্বপ্রথম স্বপ্নে দেখার কারণে আমার মধ্যে যে আনন্দ থাকার কথা তা ছিলো না, বরং ভেতরে ভেতরে প্রচন্ড বেদনা অনুভূত হতে লাগলো। রাত তখন তিনটা। উঠে তাহাজ্জুদ পড়লাম।
আল্লাহ তায়ালার কাছে খুব কান্নাকাটি করলাম। ভোরে আয়েশার ঘরে চলে গেলাম। দেখলাম প্রচন্ড জ্বর। মাথায় পানির পট্টি দিলাম। আয়েশা আমাকে বললো, বোন যায়নাব! আমি আপনার জীবনকে বিরান করে দিয়েছি। আমাকে মাফ করে দেবেন, আল্লাহর দোহাই আমাকে মন থেকে ক্ষমা করে দেবেন। কিন্তু এই কষ্ট ও সংকটের পর আপনি যে ঈমান লাভ করেছেন, খুবই সহজে লাভ করেছেন। আপনার প্রতি আমার জীবনের শেষ অনুরোধ রইলো, আপনার তিন সন্তানকেই আলেম বানাবেন। আল্লাহর পথের দা‘য়ী বানাবেন। এরা দুনিয়াতে দীনের কাজ করবে। মৃত্যুর পর আপনি আপনার আমলনামায় নেকীর এক বিশাল ভান্ডার পাবেন। আমি তাকে কিছু খেতে বলি। সে দুধ পান করতে চায়। আর বলে, আমাদের নবীজি বলেছেন, দুধ খুবই উত্তম রিযিক। একই সাথে খাবার এবং পানীয়ের কাজ করে। আমি তাকে দুধ দিলাম। দুধ গরম ছিল। সে বললো, একটু ঠান্ডা করে দিন। হাদীস শরীফে অতিরিক্ত গরম খেতে নিষেধ করা হয়েছে।
আমি দুধ ঠান্ডা করে দিলাম। আস্তে আস্তে শরীরের দুর্বলতা বাড়তে লাগলো। মাথায় যন্ত্রণা হচ্ছিল। তার মাথা কোলে তুলে আমি দাবাতে লাগলাম। আসরের পর হঠাৎ করে বলে উঠলো, এই দেখুন! আমার নবী আমাকে নিতে এসেছেন। তারপর সে চিৎকার করে দরূদ শরীফ পড়তে থাকে। ওঠে বসার চেষ্টা করে। কিন্তু তার শরীরে বসার মতো শক্তি ছিল না। হঠাৎ কালেমায়ে শাহাদাত পড়ে দুইবার হেঁচকি তুলে শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়লো।
আসমা আমাতুল্লাহ: তারপর কী হলো?
যায়নাব চৌহান: জানিনা, কিভাবে যেন ফাতেমা আপা এসে উপস্থিত হলো। তিনি সবাইকে খবর দিলেন। তার কফিন থেকে আশ্চর্য ধরনের সুগন্ধি ছড়াচ্ছিল। শুধু ঘর নয়, পুরো মহল্লা যেন সুগন্ধিতে ভেসে যাচ্ছিল। জানাযায় প্রচুর লোক হয়েছিল।
আসমা আমাতুল্লাহ: আপনার স্বামী কি আয়েশাকে তালাক দিয়েছিলেন?
যায়নাব চৌহান: আসলে আয়েশা আমার স্বামীকে চাপ দিচ্ছিলেন তালাক দেয়ার জন্য। কিন্তু সে তালাক দেয়নি। তার ইন্তেকাল আমার স্বামীকে চরমভাবে আহত করেছে বলতে পারি। তার জীবনটাই খামুশ হয়ে গেছে।
আসমা আমাতুল্লাহ: আপনার কেমন লেগেছে?
যায়নাব চৌহান: এটা একটা বিস্ময়কর ব্যাপার। পৃথিবীর যে কোনো নারীর জন্যই সতীন হলো জীবনের সবচে’ বড় কাঁটা, কিন্তু আল্লাহ তায়ালা ভালো করেই জানেন, আয়েশার ইন্তেকালে আমি বেশি দুঃখ পেয়েছি না আমার স্বামী! তবে আমি অবশ্যই একথা বলতে পারি আমাকে যদি একশ’বার কসম দিয়ে বলা হয় এই পৃথিবীতে আমার কাছে সর্বাধিক প্রিয় মানুষ কে, তাহলে আমি কোনরকম চিন্তা-ভাবনা ছাড়াই বলবো, এই পৃথিবীতে আমার সবচে’ প্রিয় এবং সবচে’ কল্যাণকামী মানুষ হযরত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর আয়েশা। আয়েশা ছিল মাটির পৃথিবীতে একজন জীবন্ত ওলী। বোনা আসমা! সত্যি কথা কি, আমার স্বামীর সাথে সাময়িক বিচ্ছেদের সময় আমি যে পরিমাণ কান্নাকাটি করেছি, আয়েশার ইন্তেকালে তারচে’ একশ’গুণ বেশি কেঁদেছি।
আসমা আমাতুল্লাহ: আপনার সন্তানদের কী লেখা-পড়া শিখিয়েছেন?
যায়নাব চৌহান: আমার সন্তানদের স্কুল থেকে ছাড়িয়ে এনেছি। দুই ছেলের নাম রেখেছি হাসান ও হুসাইন। তাদের উভয়কে একটি বড় মাদ্রাসায় ভর্তি করেছি। আলহামদুলিল্লাহ! হাসান ছাব্বিশ পারা ও হুসাইন চার পারা মুখস্থ করেছে। আর মেয়েটার নাম ফাতেমা। সে-ও ষোল পারা হেফয করেছে। আমার আশা তারা আলেম হবে। হযরত খাজা মঈনুদ্দীন আজমিরী রহ.-এর মতো মানুষের মাঝে ইসলাম প্রচার করবে।
আসমা আমাতুল্লাহ: আপনার স্বামী সম্পর্কে কিছু বলুন।
যায়নাব চৌহান: আয়েশার ইন্তেকালে সে প্রচন্ড রকমের আঘাত পেয়েছে। বারবার শুধু বলে দুনিয়া থেকে অন্তর উঠে গেছে। এখন আল্লাহ তায়ালা ঈমানের সাথে মৃত্যু দিলেই ভালো। যখন খুব বেশি পেরেশান হয়ে পড়ে তখন হযরতের কাছে পাঠিয়ে দিই। তিনি তাকে দাওয়াতের প্রতি উৎসাহিত করেন। এবারও সঙ্গে করে নিয়ে এসেছি। ওয়াদা করেছে আমাদের সাথে হাসিখুশি থাকবে।
আসমা আমাতুল্লাহ: আপনার স্বামী কি আব্বাজানের কাছে আসা-যাওয়া করেন?
যায়নাব চৌহান: হ্যাঁ, আয়েশাও আপনার আব্বাজানের মুরীদ ছিল। আমি এবং আমার বাচ্চারাও মুরীদ। আমি প্রথমে যখন মুরীদ হওয়ার কথা বলি তখন তিনি অস্বীকার করেন। বলেন, মুরীদ অবশ্যই হওয়া চাই কিন্তু কোনো কামেল পীর এবং আল্লাহ ওয়ালার হাতে। শারীরিক অসুস্থতার জন্য মানুষ যেমন সবচে’ ভালো চিকিৎসক খোঁজে তেমন অন্তরের চিকিৎসার জন্যও সবচে’ ভালো পীর সন্ধান করা উচিত।
তিনি এও বলেন, যে নিজেই চরম পর্যায়ের অসুস্থ সে কিভাবে অন্যের চিকিৎসা করবে। আমি তো আমার পীরের নির্দেশে মানুষকে তাওবা পড়াই। হয়তো তাদের বরকতে আল্লাহ তায়ালা আমার গুনাহগুলো মাফ করে দেবেন। আমার স্বামী তখন বলে, হযরত আপনার বরকতে আল্লাহ তায়ালা আমাদের কুফর ও শিরক থেকে মুক্তি দিয়েছেন। আপনাকে ছাড়া আমরা চিকিৎসা পাব কোথায়? অনেক পীড়াপীড়ির পর তিনি আমাদের মুরীদ করেন।
আসমা আমাতুল্লাহ: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। সত্যিই আপনার জীবন এক বিস্ময়কর উপাখ্যান।
যায়নাব চৌহান: বোন আসমা! সত্যিই আমার জীবন এক বিস্ময়কর উপাখ্যান। আমার জীবনে এমন অনেক বিস্ময়কর ঘটনা আছে, যদি সেগুলো বলি তাহলে দীর্ঘ রচনা হয়ে যাবে। আমাদের গাড়ি ছাড়ার সময় হয়ে গেছে। অন্য কোনো সাক্ষাতে বিস্তারিত বলবো ইনশাআল্লাহ।
আসমা আমাতুল্লাহ: অবশ্যই আবার যখন আসবেন, কয়েক দিনের জন্য আসবেন। আমরা এখানে আরও কিছু মেয়েকে একত্রিত করবো। তারা সরাসরি আপনার কথা শুনবে।
যায়নাব চৌহান: না বোন! এটা কেবলই তোমাকে বলতে পারি। অন্য মেয়েদের সামনে আমি বলতে পারি না। তাছাড়া আমি তো কোনো মাওলানা সাহেব নই। আমি এমনিতেই ভীতু স্বভাবের।
আসমা আমাতুল্লাহ: আচ্ছা ঠিক আছে। আল্লাহ হাফেয, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু!
যায়নাব চৌহান: ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
সাক্ষাৎকার গ্রহণে
আসমা আমাতুল্লাহ
মাসিক আরমুগান, মার্চ- ২০০৯