বুধবার, ৯ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ই মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

ইসলাম প্রশ্নে চীনের চরিত্র – মুসা আল হাফিজ

‘আমরা কি ধর্মীয় স্বাধীনতা সমর্থন করি? হ্যাঁ, করি । আমরা কি ধর্মীয় বিশ্বাস নস্যাৎ করতে চাই ? হ্যাঁ, চাই ।’
চীনা কমিউনিস্টদের অন্যতম নীতিগ্রন্থ ‘জেন মিন জিহ পাও’ এ কমিউনিস্ট চীনের এ দৃষ্টিভঙ্গি প্রচার করা হয় । পরস্পর বিরোধি এ নীতি মূলত একই বিষয়ে ‘হ্যাঁ ’ ও ‘না’ । বিষয়টি ধর্মীয় স্বাধীনতা । একে চীনা কমিউনিজম সমর্থন করতে চায় আবার নস্যাৎও করতে চায় । উভয়টি এক সাথে কীভাবে সম্ভব ?
চীন উভয়টিকেই সম্ভব করে তুলে।সে একই সাথে ধর্মকে ঘরে থাকতে দেয় এবং দেয় না। একই সাথে ধর্মকে ‘হ্যাঁ’ বলে এবং ‘না’ও।চেয়ারম্যান মাও সে তুং ভালো নজির। চায়না কম্যুনিজমের সংবিধানতূল্য তার নীতিগুলো এখনো চীনের চরিত্র ঠিক করে দেয়।
” যারা ধর্মে বা ভাববাদে বিশ্বাস করেন, রাজনীতিতে তাদের সাথে যৌথ ফ্রন্ট হয়ে আমরা কাজ করতে পারি।যারা দার্শনিক ভাববাদী- ধার্মিক, তাদের সাথে আমাদের কোনো লেনদেন নেই” ( মাও সে তুং: নতুন গণতন্ত্র, সরোজ কুমার দত্ত অনূদিত,কলকাতা,১৯৪৫)
শুধু ভাববাদ আর দার্শনিক ভাববাদের ফারাকটা কোথায়? নিশ্চয় সে ফারাক প্রকাণ্ড বলেই একটার সাথে দহরম- মহরম চলে,আরেকটার মুখ দেখাও হয়ে যায় হারাম। মাও সে তুং ফারাক খোলাসা করেন নি। তাহলে কী দিয়ে আমরা বুঝবো দুই ভাববাদের ভেদ? ও মার্কস! ও এংগেলস!
এই ভেদ মার্কস – এংগেলসে পাবো কই? এটা চায়না ” চানক্যের” এক বিশেষ প্রকাশ, যাকে কাজে লাগায় তারা ধর্মপ্রশ্নে বিশেষ রূপকে আড়াল করার জন্যে।
কী সেই বিশেষ রূপ?
১৯৫৪ সালে পিকিং থেকে প্রকাশিত গণচীনের শাসনতন্ত্র এর ৮৮ নম্বর ধারা স্পষ্ট ঘোষণা করে, ‘ গণচীনের নাগরিকগণ ধর্মীয় বিশ্বাসের স্বাধীনতা ঘোষণা করে।’ এ কোন বিশ্বাস?- মাও সে তুং কথিত ধর্মশাসিত ‘ভাববাদী’ বিশ্বাস না ‘দার্শনিক ভাববাদী’ বিশ্বাস? প্রথমটি যদি হয়,কম্যুনিস্ট চীন তাকে সহ্য করবে, কিন্তু পরেরটিকে সহ্য করবে না। অথচ উভয়টিই মাও সে তুং এর কাছে ধর্মীয় বিশ্বাস! তাহলে কম্যুনিস্ট চীনে ধর্মীয় বিশ্বাসের স্বাধীনতা আছে, কথাটার অর্থ কী?
মাও যাকে বলেছেন ‘ সহনীয়’ তাকে কিন্তু সহনীয় বলে মানেনি বেইজিংপন্থী কম্যুনিস্ট কর্মপন্থা। সে ধর্ম বলতে সব কিছুকেই এক কথায় প্রত্যাখান করেছে, কুসংস্কার বলেছে। লি উই হান এর ঘোষণা-
” আমরা,কম্যুনিস্টরা জড়বাদী,কোনোই ধর্ম মানি না,প্রত্যাখান করি।’ ১৯৫৬ সালে চীনা কম্যুনিস্টদের অষ্টম পার্টি কংগ্রেস এ ঘোষণায় একাত্মতা জানায় পুরোপুরি। হো চে জিয়াং ঘোষণা করেন ” যখন আমরা স্কুলে বিজ্ঞান ও সাধারণ জ্ঞান শেখাই,ধর্মকে সেখানে কুসংস্কার হিসেবে দেখাই।এ আমাদের নীতি।” হো চেং ছিলেন চীনা কম্যুনিস্ট পার্টির ধর্মবিষয়ক ব্যুরো প্রধান। তার এ ঘোষণা বাস্তবায়িত হচ্ছিলো এবং হচ্ছে।
তাহলে মাও এর ‘ ভাববাদ’ সহ্য করা কিংবা শাসনতন্ত্রে বর্ণিত ‘ ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ’ কথাটা রহস্যময় ঠেকছে না?
হ্যাঁ, এ রহস্য চীনের রাজনীতি ও কৃৎকৌশলের বিশেষ দিক। যেখানে তাকে আপনি চিনতে পারবেন না। এই চিনতে না পারা চীনকে করে অধরা, যার ফলে সে একই প্রশ্নে ” আছি ” এবং ” নেই” এর অভিনয় করে যেতে পারে অবলীলায়।
কিন্তু ইসলামপ্রশ্নে? এখানে ধুম্রজাল কম। পাড় কম্যুনিস্টরা ইসলামকে ‘ ভাববাদ’ হিসেবে নয় বরং মাও কথিত ” দার্শনিক ভাববাদ”রূপে দেখে। যাকে সহ্য না করার নীতি পূর্বঘোষিত।
তাকে হুমকি হিসেবে দেখা হবে এবং ধর্মীয় অধিকারে সহনশীলতার প্রশ্ন কারো বিবেকে জাগ্রত হলে কম্যুনিস্ট মন বলবে ‘ ইসলাম তো কোনো ধর্ম নয়,একটি প্রতারণা।’চীনা কম্যুনিজম সেই মন তৈরীতে যত্নবান। অতএব লু হং চির ঘোষণা বার বার উদ্বৃত হয়” আপনারা সেই মুহম্মদকে জানেন, যিনি এক হাতে তলওয়ার ও এক হাতে ধর্মীয় কেতাব রাখতেন।কিন্তু আপনারা সেই মুহম্মদকে চিনেন না, যিনি এক হাতে বন্দুক রেখে অন্য হাতে অর্থ গ্রহণ করতে পারতেন।হ্যাঁ,তার আরোও একটি হাত ছিলো,যে হাতে তিনি নীতিবাক্য ধরে রাখতেন। অর্থাৎ তার ছিলো তিনটা হাত।” ( অসমাপ্ত)

Archives

July 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031