শনিবার, ২০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২রা রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
বর্তমান বিশ্বের সকল দেশে সমাদৃত ও সর্বজন স্বীকৃত অত্যন্ত কার্যকরী পন্থায় জনসাধারণের মাঝে দ্বীন-ইসলামের দাওয়াতী মিশন পরিচালনাকারী জামাতের নাম তাবলীগ জামাত।
আর এই তাবলীগ জামাতে ৩ চিল্লা ( চার মাস ) সময় লাগানোর পর অন্ধকারাচ্ছন্ন জীবন থেকে বেরিয়ে আলোর পথ খুঁজে পাওয়া আব্দুর রহমান নামে এক ব্যক্তি বলেন, তাবলীগ জামাত হচ্ছে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ট মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র।
ইনসাফ টোয়েন্টিফোর ডটকমের নেত্রকোনা প্রতিনিধি সোহেল আহম্মেদের সাথে সাক্ষাৎকার প্রদানকালে তিনি এ কথা বলেন।
গৃহীত সাক্ষাৎকারটি ইনসাফ পাঠকদের জন্য আংশিক ভাষাগত পরিবর্তনসহ হুবহু তুলে ধরা হল-
ইনসাফ : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ্।
আব্দুর রহমান : ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ্।
ইনসাফ: কেমন আছেন আপনি?
আব্দুর রহমান : আলহামদুলিল্লাহ্ ভাল, আপনি কেমন আছেন?
ইনসাফ : আলহামদুলিল্লাহ্ ভাল। তাবলীগ জামাতে আপনি কত সময় দিয়েছেন?
আব্দুর রহমান : প্রথমে ৩ দিন তারপর ১ চিল্লা অবশেষে আল্লাহ তাআলা ৩ চিল্লা ( ৪মাস) সময় লাগানোর তাওফিক দান করেছেন।
ইনসাফ : তাবলীগ জামাতে চিল্লা দেওয়ার আগে আপনার জীবন যাপন কেমন ছিল বলবেন কি?
আব্দুর রহমান : কি আর বলব? অতীত মনে হলে আমার গা শিওরে উঠে। এই আমি কি ছিলাম আর মহান আল্লাহ্ তাআলা আমাকে কি বানিয়েছেন। সবই মালিকের ইচ্ছা। শহরের সন্নিকটে একটি ঐতিহ্যবাহী গ্রামের সম্ভান্ত এক ফ্যামেলিতে জন্ম হয়েছে আমার। ছাত্রজীবনে নিজের অজান্তেই জড়িয়ে পড়ি রাজনীতির সাথে । তবে সুস্থ ধারার রাজনীতি নয় অত্যন্ত নোংরা এক রাজনীতির সাথে জড়িয়ে যাই আমি।
আর তারই ফলশ্রুতিতে আমার জীবনে নেমে আসে ঘন কাল অন্ধকার। আস্তে আস্তে বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত হয়ে গেলাম। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের নেশা, অবৈধ যৌনাচার আর দাঙ্গা হাঙ্গামায় কেটে যেত আমার সময়। জীবনের কত রাত নেশাগ্রস্ত অবস্থায়, ভয় ও আতংকে অলিতে গলিতে, ঝুপ ঝাড়ে অনিদ্রায় কেটে গেছে তার হিসাব মিলানো বড় কঠিন।
এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে প্রায় সময়ই মারামারি হত। আর এসব মারামারিতে দা-রামদা নিয়ে আমি থাকতাম সবার আগে। এক পায়ে এখনো রড ভরা আছে।
পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে উত্তারাধিকার সূত্রে পাওয়া শহরের বাসা বাড়িসহ লাখ লাখ টাকা নিজের হাতে নিঃশেষ করে দিয়েছি।
আমার উশৃঙ্খল জীবন যাপনে অতিষ্ট হয়ে প্রানপ্রিয় স্ত্রীও একদিন কোলের শিশুটিকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে যায়। সেই যে গেছে আর কোনদিন ফিরে আসেনি। মেয়ে বড় হয়েছে, মাঝে মধ্যে ফোনে কথা হয়।
বিবি বাচ্চা হারিয়ে ডজন খানেক মামলার আসামী হয়ে চরম অনিশ্চয়তা আর উৎকন্ঠায় একাকীত্বের যন্ত্রনা সয়ে সয়ে কেটে যায় জীবনের অনেকগুলি বছর।
এলাকার সব মানুষ ঘৃনা করত আমাকে। কিন্তু তারপরও কারো সাথে সামনা সামনি দেখা হলে ভয়ে ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া চেহারায় কৃত্রিম হাসি নিয়ে জিজ্ঞেস করতো কেমন আছেন ভাই?
একটা সময় নিজের জীবনের প্রতি সৃষ্টি হয় চরম অনীহা। নিজেকে শেষ করে দেওয়ার দ্বারপ্রান্তে চলে যাই আমি।
ঠিক এমন সময় আল্লাহর অসীম কুদরতে তার এক প্রিয় বান্দার সুদৃষ্টি পড়ে আমার উপর। তিনি একজন যোগ্যতা সম্পন্ন আলেম ও তাবলীগের জিম্মাদার সাথী। অবিরাম মেহনত চালালেন আমার উপর।প্রায় প্রতিদিনই দেখা করতেন আমার সাথে। দ্বীনের দাওয়াত দিতেন, শান্তনা দিতেন, বুঝ দিতেন। কখনো কখনো আদর করে নাস্তা করাতেন, হাদিয়া দিতেন ছোট খাটো জিনিস।
এভাবেই এক সময় আমার জীবনে পরিবর্তনের পালা শুরু হয়। মাঝে মধ্যে অল্প অল্প করে সময় লাগাতে থাকি তাবলীগ জামাতে । অবশেষে ৩ চিল্লা দেই।
ইনসাফ : আচ্ছা এখনো কি মাঝে মধ্যে নেশার ভুত চেপে বসে আপনার উপর?
আব্দুর রহমান : নাউযু বিল্লাহ্ মিন জালিক। আল্লাহ্ হেফাজত করুন। আরে ভাই তাবলীগ জামাত হচ্ছে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ট মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র। চিল্লা দেওয়ার পর থেকে নেশা জাতীয় দ্রব্য আমার নিকট পায়খানার চেয়েও নিকৃষ্ট হয়ে গেছে। বিড়ি সিগারেট থেকেও আল্লাহ্ তাআলা আমাকে হেফাজত করেছেন আলহামদুলিল্লাহ্।
ইনসাফ : আচ্ছা বর্তমানে কি কোন রাজনৈতিক দলের সাথে আপনার সম্পৃক্ততা আছে?
আব্দুর রহমান : জ্বী একটা দলের সাথে সম্পৃক্ততা আছে। তবে সেটি কোন রাজনৈতিক দল নয়। সে দলে কোন নোট ও ভোট নেই, নেই কোন সহিংসতা ও প্রতিহিংসা। সে দলের কর্মীরা প্রতিনিয়ত মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে মানুষকে হাতে পায়ে ধরে আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের কথা, আখিরাতের কথা বলে বলে দাওয়াত দেয়। আর সে দলের নাম তাবলীগ জামাত।
এই তাবলীগের কাজে লাগার পর আল্লাহর মেহেরবানীতে মামলা মুকাদ্দমাসহ সমস্ত পেরেশানী থেকে মুক্তি পেয়েছি।
ইনসাফ : আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
আব্দুর রহমান : কুরবানী ও মুজাহাদার সাথে মউত পর্যন্ত দাওয়াতের কাজে লেগে থাকা।
ইনসাফ : ইনসাফ পাঠকদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।
আব্দুর রহমান : মেরে ভাই ও দোস্ত বুযূর্গ, দুনিয়া ক্ষনস্থায়ী আখিরাত চিরস্থায়ী। ক্ষনস্থায়ী দুনিয়ার মোহে না পড়ে আসুন আমরা আল্লাহর হুকুম মেনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তরীকায় জীবন যাপন করি। তাহলে আল্লাহ্ তাআলা আমাদেরকে উভয় জাহানে শান্তি ও সফলতা দান করবেন।
ইনসাফ : ইনসাফকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ও অজস্র শুভ কামনা।
আব্দুর রহমান : আপনাদেরকেও ধন্যবাদ । আল্লাহ আপনাদের মঙ্গল করুন। আমীন।
insaf24