শনিবার, ১০ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৬শে জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

বক্তা ও আয়োজকের যে কষ্ট পরস্পর বুঝতে চায় না – লুৎফর ফরায়েজী

বক্তা ও আয়োজকের যে কষ্ট পরস্পর বুঝতে চায় না!

লুৎফর রহমান ফরায়েজী

Default Ad Content Here

শুধু কয়েকটি ঘটনা লিখবো। সত্য ঘটনা। লিখা উচিত বলেই মনে হল। অনেকের ভুল ধারণা ভাঙ্গার আশায় লিখছি। বুঝার সুবিধার্তে ঘটনাগুলো দুইভাগে লিখছি! ঘটনা লিখতে গিয়ে কিছু স্থানের নাম লিখা হবে। স্থানগুলো প্রতীকী ধরে নিন।

ক)

দেশের একজন নামকরা বক্তা ও বড় আলেমকে ফোন দিলাম। হযরত! আমাদের এলাকায় আমরা একটি মাহফিল করি। এবার নিয়ত করেছি আপনাকে মেহমান করবো। একটি ডেট দিলে খুশি হতাম।
বক্তার জবাবঃ আমাকে নিতে পারবা না। আমাকে গাড়ি দিয়ে নিতে হবে আবার দিয়ে যেতে হবে। আবার দশ হাজার টাকা গাড়ি ভাড়া ছাড়াই হাদিয়া দিতে হবে।
“জি হুজুর” বলে কেটে দিলাম। ঘটনাটি আরো চার পাঁচ বছর আগের। মনটা খারাপ হয়েছিল। শুরুতেই টাকার কথা! এমন বক্তা দিয়ে শ্রোতার কি ফায়দা হবে?


একটি ছোট্ট মাদরাসা। বার্ষিক মাহফিল। বক্তা চমৎকার বয়ান করলেন। ঢাকার নামকরা এক মাদরাসার মুহাদ্দিস পদবী ধারণ করে আছেন। বয়ান শেষে হযরতের হাতে তুলে দেয়া হল পনের হাজার টাকা। বক্তা গুণলেন। প্রবল রোষে টাকা ছুড়ে মারলেন আয়োজকের মুখে। এটা কী দিলেন? আরো দশ হাজার দিন।
লজ্জায় মুষরে গেল আয়োজক মাওলানা। খুঁজে খুঁজে আরো আট হাজার এনে দিলেন। এবার বক্তা খানিক খুশি মনে গাড়িতে উঠলেন।

এমন অনেক ঘটনা আছে। আর না হয়, না’ই বললাম।

খ)

ব্যস্ত একজন মানুষ। লেখালেখি দরস তাদরীস তার মূল পেশা। দাওয়াত দেয়া হল কুষ্টিয়া জেলার এক থানায়। বক্তার আর্জি আগের দিন কিশোরগঞ্জ আর পরের দিন চট্টগ্রাম মাঝখানে কুষ্টিয়া কিভাবে যাবে? প্রাইভেট কার ছাড়াতো কোন গতি নেই।
আয়োজকঃ আপনাকে আসতেই হবে। গাড়ি নিয়ে আসেন।
প্রাইভেট কার ভাড়া আট হাজার। মাহফিল শেষে বক্তার হাতে ধরিয়ে দেয়া হল, দুই হাজার টাকা। বক্তা খুশি মনে সেই টাকা আয়োজককে ফেরত দিলেন। আয়োজক তা গ্রহণও করলেন। বিদায় নিলেন বক্তা ঢাকার পথে। মাদরাসা থেকে পাওয়া বেতন থেকে জরিমানা আট হাজার টাকা।

গন্তব্য ফটিকছড়ি। কার ভাড়া আট হাজার। বক্তার হাতে আয়োজক মুসাফাচ্ছলে তুলে দিলেন ছয় হাজার। বক্তা না দেখেই ঢাকার পথে। জরিমানা দুই হাজার।

বক্তার মাহফিল সুনামগঞ্জ। গাড়ি ভাড়া আট হাজার। আয়োজকের মুসাফাহা চার হাজার। জরিমানা চার হাজার।

গন্তব্য মোমেনশাহীর ফুলপুর। গাড়ি ভাড়া চার হাজার। আয়োজকের হাদিয়া দুই হাজার।

এইভাবে গাঁটের টাকা ব্যয়ে কয়দিন মাহফিল করবে?
সমাধান কি?
চুক্তি করে নিজের জাত্যাভিমান খুয়াবে?
কন্ট্রাক্ট করে স্বকীয়তা বিসর্জন করবে?
বয়ান করা ছেড়ে দেয়াই উত্তম নয় কি?
দূরের বক্তা দাওয়াত না দিয়ে নিকটস্থ যোগ্য উলামাদের দাওয়াত দেয়াই কি সমীচিন নয়?
কন্ট্রাকী বক্তা বাদ দিয়ে মুত্তাকী বক্তাকে যথাযোগ্য সম্মান রক্ষায় উদ্যোগী হওয়া উচিত নয় কি?

আসলে সমস্যাগুলো জটিল। সমাধান সম্ভব কি? বক্তা আয়োজক উভয়ের সচেতনতায় দূর হতে পারে এ জটিলতা। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সহজ করে দিন। দ্বীন প্রচারের “মাহফিল” মাধ্যমকে আরো কার্যকরী ও যুৎসহই বানান। আমীন। ছুম্মা আমীন।

Archives

May 2025
S S M T W T F
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31