মঙ্গলবার, ৩১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৬ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

রবের কোন কোন নেয়ামত অস্বীকার করবে? – তারাবীহ ২৪তম পাঠ

This entry is part [part not set] of 27 in the series দরসে তারাবীহ


আজ ২৪তম তারাবিতে সূরা জারিয়াত (৩১-৬০), সূরা তুর, সূরা নাজম, সূরা কমার, সূরা রহমান, সূরা ওয়াকিআ এবং সূরা হাদিদ পড়া হবে। পারা হিসেবে আজ পড়া হবে ২৭তম পারা।

৫১. সূরা জারিয়াত: (৩১-৬০) পারার শুরুতে ফেরাউন সম্প্রদায়, আদ ও সামুদ জাতি এবং হজরত নুহ ও লুত (আ.) এর সম্প্রদায়ের পরিণতি কী হয়েছিল, তা তুলে ধরা হয়েছে। এরপর আসমান-জমিন সৃষ্টির প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করা হয়েছে। সূরার শেষাংশে জিন ও মানবজাতি সৃষ্টির উদ্দেশ্য ব্যক্ত করতে গিয়ে বলা হয়েছে, তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে একমাত্র আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করার জন্য এবং তাঁর মারেফত হাসিল করার জন্য। প্রত্যেকের রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহ তায়ালার ওপর। তবে যারা কুফর ও শিরকে লিপ্ত হবে, অচিরেই তাদের ওপর অবধারিত আজাব নেমে আসবে।

৫২. সূরা তুর: (মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ৪৯, রুকু ২) সূরায় জাহান্নামের ভয়াবহতা এবং জান্নাতে মুত্তাকিদের পুরস্কার সম্পর্কে আলোচনা রয়েছে। নবীজির দাওয়াতের বিপরীতে মোশরেকদের তুচ্ছতাচ্ছিল্যের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। তাদের এহেন আচরণের বিপরীতে নবীজিকে দাওয়াতের কাজ অব্যাহত রাখার হুকুম দেওয়া হয়েছে। সূরার শেষাংশে আল্লাহ তায়ালার প্রভুত্ব ও একত্ববাদের দলিল পেশ করা হয়েছে, কাফের-মোশরেকদের ভ্রান্ত চিন্তাধারা খ-ন করা হয়েছে এবং যারা ফেরেশতাদের আল্লাহ তায়ালার কন্যাসন্তান বলে আখ্যায়িত করে, তাদের নিন্দা জানানো হয়েছে।

৫৩. সূরা নাজম: (মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ৬২, রুকু ৩) সূরার শুরুতে রাসুল (সা.) এর সত্যবাদিতা এবং মেরাজের বিবরণ রয়েছে। (১-১৮)। যারা মূর্তির উপাসনা করে, ফেরেশতাদেরকে আল্লাহর কন্যা সাব্যস্ত করে, তাদের নিন্দা করা হয়েছে। (১৯-২৩)। এরপর বলা হয়েছে, ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেকেই নিজ কৃতকর্মের জিম্মাদার। কারও গোনাহের বোঝা অপরের কাঁধে চাপানো হবে না। (৩৮-৪১)। আল্লাহর কুদরতের বর্ণনা দিয়ে সূরার সমাপ্তি হয়েছে।

৫৪. সূরা কমার: (মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ৫৫, রুকু ৩) সূরায় মোমিনদের জন্য সুসংবাদ, নাফরমানদের জন্য সতর্কবাণী এবং বিভিন্ন হিতোপদেশের কথা আলোচিত হয়েছে। এছাড়া রিসালাত, আখেরাত, বিচার দিবস এবং তকদিরের মতো গুরুত্বপূর্ণ আকিদার আলোচনা রয়েছে সূরায়। সূরার শুরুতে কেয়ামতের আসন্নতার কথা বলার পর নবীজির বিশেষ মোজেজা তথা হাতের ইশারায় চাঁদ বিদীর্ণ হওয়ার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। সূরায় পূর্ববর্তী ধ্বংসপ্রাপ্ত বিভিন্ন জাতির আলোচনার পর বারবার প্রশ্ন করা হয়েছে, ‘বল, কেমন ছিল আমার সাজা-শাস্তি!’ এ প্রশ্ন করার পাশাপাশি আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘উপদেশ গ্রহণ করার জন্য আমি কোরআন সহজ করে দিয়েছি, সুতরাং আছে কি কোনো উপদেশগ্রহীতা?’ মুত্তাকিদের উত্তম পরিণতি, আল্লাহর সন্তুষ্টি প্রাপ্তি এবং সম্মানজনক আবাসস্থল লাভের সুসংবাদ শুনিয়ে সূরাটির পরিসমাপ্তি ঘটেছে।

৫৫. সূরা রহমান: (মদিনায় অবতীর্ণ, আয়াত ৭৮, রুকু ৩) সূরায় দুনিয়া-আখেরাতের বহু নেয়ামতের বিবরণ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় নেয়ামত হলো পবিত্র কোরআনের নেয়ামত। জাগতিক কোনো নেয়ামতের সঙ্গে এর তুলনা হতে পারে না। দুনিয়া-আখেরাতের নেয়ামতরাজির বর্ণনা প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা মোট ৩১ বার প্রশ্ন করেছেন, ‘অতএব তোমরা তোমাদের রবের কোন কোন নেয়ামত অস্বীকার করবে?’ সূরার শেষে বলা হয়েছে, তোমার প্রতিপালকের নাম খুবই বরকতময়, তিনি মহান এবং মহিমাময়। মুফাসসিরীনে কিরাম বলেন, এখানে ‘নাম’ দ্বারা সূরার সূচনায় উল্লেখিত ‘রহমান’ নামটিই উদ্দেশ্য। যেন সূরায় আরেকবার ইঙ্গিত দেওয়া হলো, জমিন-আসমানের সৃষ্টি হোক কিংবা জান্নাত-জাহান্নামের অস্তিত্ব- সবকিছু ‘রহমানের’ রহমতেরই অসীম প্রকাশ ও ফলাফল।

৫৬. সূরা ওয়াকিয়া: (মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ৯৬, রুকু ৩) সূরার আরেক নাম ‘সূরা গিনা’ অর্থাৎ সমৃদ্ধশালী করে যে সূরা। হজরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, যে ব্যক্তি প্রতি রাতে সূরা ওয়াকিয়া পাঠ করবে, তাকে কখনোই অভাব-অনটনের মুখোমুখি হতে হবে না (আল্লাহই সর্বাজ্ঞ)। কেয়ামতের সময়কার বিভিন্ন বর্ণনা রয়েছে সূরার সূচনাপর্বে। (১-৫৬)। এরপর সূরাটিতে আল্লাহর অস্তিত্ব, একত্ববাদ এবং কুদরত ও ক্ষমতার প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে এবং পুনরুত্থান ও হিসাব-নিকাশের বিবরণ দেওয়া হয়েছে। এরপর পবিত্র কোরআনের মাহাত্ম্যের বিবরণ রয়েছে। (৭৫-৮০)। বিশেষ নৈকট্যপ্রাপ্ত, সাধারণ জান্নাতি এবং কাফের- কেয়ামতের দিন এ তিন শ্রেণির মানুষের অবস্থার বিবরণ দিয়ে সূরাটি সমাপ্ত হয়েছে।

৫৭. সূরা হাদিদ: (মদিনায় অবতীর্ণ, আয়াত ২৯, রুকু ৪) ‘হাদিদ’ শব্দের অর্থ লোহা। লোহা সৃষ্টির আলোচনা থাকায় সূরার নাম ‘হাদিদ’। এ সূরায় মৌলিকভাবে তিনটি বিষয় আলোচিত হয়েছে, এক. বিশ্বে যা কিছু আছে সবকিছু আল্লাহর। তিনি সবকিছুর স্রষ্টা ও মালিক। সৃষ্টির সবকিছুই তার প্রশংসা করে। দুই. আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ঈমান আনার জন্য এবং দ্বীন ও ধর্মকে সারাবিশ্বে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য জানমাল কোরবান করার হুকুম দেওয়া হয়েছে। তিন. আল্লাহ তায়ালা মানুষের সামনে দুনিয়ার হকিকত তুলে ধরেছেন, যেন মানুষ দুনিয়ার বাহ্যিক মোহ ও সৌন্দর্য দেখে ধোঁকা না খায়। সূরার শেষে যারা আল্লাহকে ভয় করে এবং রাসুলের প্রতি ঈমান আনে, তাদের জন্য দ্বিগুণ প্রতিদান এবং বিশেষ নুর ও আলোর প্রতিশ্রুতি রয়েছে। (২৮)।

লেখক:মাওলানা রাশেদুর রহমান ।। পেশ ইমাম ও খতীব, কেন্দ্রীয় মসজিদ, বুয়েট

Series Navigation

Archives

May 2024
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031