বৃহস্পতিবার, ১০ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

আশুরা উপলক্ষে আমাদের করনীয় ও বর্জনীয় 

Khutbah Tv 

আশুরা’র অর্থ যদিও দশম৷ তবে সাধারণভাবে আশুরা বলতে মুহাররমের দশ তারিখকেই বুঝানো হয়৷

ইতিহাসের সব কালজয়ী উপাখ্যানের সাক্ষী এদিন৷ যার ফজিলাত সর্বজনবিদিত৷ তাইতো রমজানের পর রোযার দিক থেকে সর্বত্তমদিন আশুরাই৷ এমনকি উম্মতে মুহাম্মাদীর ওপর রমজানের পূর্বে আশুরার রোজা ফরজও ছিলো৷

হাদিস শরিফের মধ্যে রয়েছে , ‘রমজান মাসের রোজার পর সর্বোত্তম রোজা আল্লাহর মাস মহররমের আশুরার রোজা।’ সুনানে কুবরা-৪২১০

এ মর্যাদাপূর্ণ রোজা উম্মাতে মুহাম্মাদীর ওপর ফরজ হওয়া সম্পর্কে বর্ণিত আছে, যখন নবি কারিম সা. মদিনায় তাশরিফ আনেন; দেখেন, ওখানকার ইহুদিরা এদিনে রোজা রাখে৷ তাদের এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে বললো, আমরাই তো এদিনে রোজা রাখবো৷ কেননা এটা আমাদের জন্য এক আনন্দের দিন৷

কারণ আল্লাহ তা’লা মুসা আ. এবং তার উম্মত বনি ইসরাইলকে এদিনে ফেরাউনের বর্বর নির্যাতন থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন৷

তখন রাসুলে কারিম সা. বললেন মুসা আ. এর ব্যপারে তাদের থেকে আমরাই বেশি হকদার৷ তখন থেকেই এ রোজার নির্দেশ দেন তিনি৷ বুখারি—৩৩৯৭, মুসলিম—১১৩৯

এক হাদিসে হজরত জাবের রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. আমাদের আশুরার রোজা রাখার নির্দেশ দিতেন এবং তার প্রতি উৎসাহিত করতেন।

এ বিষয়ে নিয়মিত আমাদের খোঁজ-খবরও নিতেন। যখন রমজানের রোজা ফরজ করা হলো, তখন আশুরার রোজার ব্যাপারে তিনি আমাদের নির্দেশও দিতেন না নিষেধও করতেন না। এমনকি এ বিষয়ে আমাদের খবরও নিতেন না। মুসলিম শরিফ-১১২৮

অন্য হাদিসে হজরত ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসুল সা. আশুরা ও রমজানের রোজা সম্পর্কে যেরূপ গুরুত্ব প্রদান করতেন, অন্য কোনো রোজা সম্পর্কে সেরূপ গুরুত্বারোপ করতেন না। বুখারি ও মুসলিম

অপর হাদিসে হজরত হাফসা রা. বর্ণনা করেন৷ চারটি কাজ রাসুল সা. কখনো ছেড়ে দিতেন না। তার মধ্যে একটি আশুরার রোজা। নাসায়ি শরিফ

এসব হাদিস দ্বারাই আশুরার পূর্ণ গুরুত্ব ও মর্যাদা অনুধাবিত হয়৷ যার ফজিলাত আরো স্পষ্ট হয় হজরত আবু কতাদা রা. এর হাদিস দ্বারা৷

তিনি বলেন, রাসুল সা. কে আশুরার রোজার ফজিলত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি উত্তর দিলেন, এই রোজা বিগত বছরের গুনাহ মুছে দেয়। মুসলিম-১১৬২

রব্বুল আলামানির কত বড় নেয়ামতের দিন ধার্য করেছেন আমাদের জন্য৷ এ কারণেই আমাদের যথাসাধ্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে৷ যেনো কোনপ্রকার অলসতা ব্যতিত আমলে মনোনিবেশ করতে পারি৷

তবে এ দিনে সামর্থানুযায়ী ভালো খাবারের ব্যবস্থা করাও দোষণীয় নয়৷ এ সম্পর্কে তাবরানি শরিফে ‘হজরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, নবি করিম সা. বলেন, যে ব্যক্তি আশুরার দিনে আপন পরিবার-পরিজনের মধ্যে পর্যাপ্ত খানাপিনার ব্যবস্থা করবে, আল্লাহপাক পুরো বছর তার রিজিকে বরকত দান করবেন। (৯৩০৩)

উল্লিখিত হাদিস সম্পর্কে আল্লামা ইবনুল জাওযিসহ অনেক মুহাদ্দিস আপত্তিজনক মন্তব্য করলেও বিভিন্ন সাহাবি হাদিসটি বর্ণিত হওয়ায় আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতিসহ অনেক মুহাক্কিক আলেম হাদিসটিকে গ্রহণযোগ্য ও আমলযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন। জামিউস সগির-১০১৯

অতএব নিজ সাধ্যানুযায়ী যতদূর সম্ভব এসব হাদিসের ওপর আমল করা৷ তবে বাড়াবাড়ি থেকে বিরত থাকাই কাম্য৷ যেন নফল আদায় করতে গিয়ে বেদায়তের মধ্যে ঢুকে না পড়ি৷ কেননা প্রত্যেক বেদয়াতই পথভ্রষ্টতা আর প্রত্যেক পথভ্রষ্টতাই জাহান্নাম৷

আল্লাহ তা’লা সঠিকটা বোঝার এবং মানার তৌফিক দীন করুন৷

Archives

July 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031