বৃহস্পতিবার, ১০ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে নার্সের অবহেলায় বেডেই বাচ্চা প্রসব(ভিডিও)

ফিরদাউস হাসান

নাগেশ্বরী,কুড়িগ্রাম।

গত ১৩-৪-১৮ ইং আনুমানিক বিকাল ৪ টার সময় গর্ভবতী মোসাম্মৎ জোছনা বেগমকে, ডেলিভারির জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নাগেশ্বরী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
জোসনা বেগম নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গঞ্জ ইউনিয়নের বড়বাড়ি গ্রামের বাসিন্দা।
জোসনা বেগমকে দায়িত্বরত শান্তিলতা নামের সেবিকা পর্যবেক্ষণ করে বলেন, বাচ্চা ভালো অবস্থানে রয়েছে। তবে একটু সময় লাগবে, আশা করি, রাতেই বাচ্চা প্রসব হবে। এ সময়ে দায়িত্বরত সেবিকার অনুমতিক্রমে,গর্ভবতী ও বাচ্চার অবস্থা জানার জন্য পার্শ্ববর্তী আল মদিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে রিপোর্ট সংগ্রহ করে রোগীর স্বজনেরা। রিপোর্ট দেখে সেবিকা বলেন, রাতেই বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে রাত ৯ টার সময়,শান্তি লতার পরিবর্তে, আয়েশা নামের সেবিকা দায়িত্বে আসেন। তিনি রোগীর অবস্থা দেখে বলেন, আজ বাচ্চা হবে না। আপনারা ইচ্ছা করলে রোগী রাখতে পারেন অথবা নিয়ে যেতে পারেন। রোগীর আত্মীয়-স্বজনেরা বলে, এত রাত্রে রোগীকে নিয়ে আমরা কোথায় যাবো? রোগীকে নিয়ে হাসপাতালেই রাত কাটাতে হবে। এদিকে রাত দশটার সময় রোগীর প্রসব বেদনা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। রোগীর সঙ্গে থাকা গ্রামের গাইনি মহিলা, দায়িত্বরত আয়েশাকে ডাকলে আয়েশা তাকে ধমক দিয়ে বলে, রোগীর সম্পর্কে আপনার কতটুকু ধারণা রয়েছে? রোগীর জরায়ুর মুখ এখনো পর্যন্ত খোলেনি, আপনি চুপ থাকেন। এদিকে দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পরও আয়েশাকে যখন রোগীর পাশে পাওয়া যাচ্ছিল না, তখন রোগীর বড় ভাই আয়শাকে ডাকলে, তাকেও ধমক দিয়ে বলে, আপনারা এভাবে বিরক্ত করবেন না। আয়েশা রোগীর পাশে গিয়ে রোগীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং বলে, এভাবে চিৎকার করছো কেন? বাচ্চাহতে অনেক সময় লাগবে, ব্যথা চাপা দিয়ে রাখো। এবং সেখান থেকে প্রস্থান করে বিউটি রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। রাত১০টা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত রোগীকে একবারও দেখতে আসে নাই দায়িত্বরত আয়েশা।
এদিকে রোগীর প্রসবব্যথা রাত ২টার সময় প্রচন্ড আকারে বেড়ে যায় এবং রোগী বলতে থাকে, আমাকে ডেলিভারি রুমে প্রবেশ করানো হোক, আমার সেখানেই বাচ্চা হবে। আশপাশের রোগীরা জোসনা বেগমের চিৎকারে অতিষ্ট হয়ে আয়েশাকে ডাকতে গেলে তাদেরকেও ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দেয় এবং বলে, রোগীকে রিলিজ করে দিচ্ছি আপনারা রোগীকে নিয়ে যান। এ খবর শুনে রোগীর একজন আত্মীয়,স্বাস্থ্য সহকারীর দরজার সামনে টাঙানো ফোন নাম্বার থেকে নাম্বার সংগ্রহ করে দায়িত্বরত সেবিকাকে ফোন করলে তাকেও ধমক দেয়। এ খবর শুনে রোগীর আরেক ভাই আনুমানিক রাত ২টা ৪৫মিনিটে ডিউটি রুমের দরজার সামনে এসে বলেন, ম্যাডাম কিছু মনে নিবেন না, অনুগ্রহ করে দরজাটা খোলেন এবং আমার বোনকে দেখে যান। তিনি দরজা খুলে বলেন, আপনারা যদি এতই বোঝেন, তবে এখানে এসেছেন কেন? রোগীর ভাই, কান্নারত অবস্থায় বলেন, আমরা এত রাতে কোথায় যাব? সাথে সাথে রোগীর ভাইয়ের মুখের উপর দরজা বন্ধকরে নার্স।
এদিকে রোগীর আশপাশে থাকা রোগীদের সহায়তায়, গর্ভবতী জোছনা বেগম হাসপাতালের বেডেই বাচ্চা প্রসব করে।

 

Archives

July 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031