শনিবার, ১লা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ই রমজান, ১৪৪৬ হিজরি
আরাকানের মুসলমানদের উপর মায়ানমার সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বে মঘদস্যুদের নির্যাতন-নিপীড়ন ইতিহাসের সকল সীমা ছাড়িয়ে গেছে ৷ দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা নির্যাতনের এবারের পর্বে মনে হচ্ছে মুসলমানদেরকে সেখান থেকে সমূলে উৎখাত করাই তাদের লক্ষ ৷ হাজার বছরের একটি জাতিকে তাদের আপন জন্মস্থান ও ভিটিমাটি থেকে এভাবে দিনে-দুপুরে ঝেটিয়ে বিদায় করার এমন লোমহর্ষক দৃশ্য তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে গোটা বিশ্ব, কিন্তু প্রতিকারের কোনো উদ্যোগ নেই ৷ আরাকানের এই ঘটনা বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার স্বরূপ উদ্ঘাটন করে দিল অত্যন্ত নগ্নভাবে ৷ আর এ থেকে স্পষ্টতই এ কথা প্রমাণিত হল যে, পৃথিবীর প্রত্যেক ধর্মাবলম্বী জাতিই কেবল স্বধর্মীয় জাতির ব্যপারে স্বোচ্চার এবং শান্তির ধ্বজাধারী ৷ হিন্দুদের জন্য ভারত, বৌদ্ধদের জন্য চীন, খ্রীষ্টানদের জন্য আমেরিকাসহ পশ্চিমাবিশ্ব আর ইহুদীদের জন্য ইস্রায়েল ৷ উপরোক্ত প্রতিটি শক্তিই বিশ্বব্যবস্থার উপর প্রভাব তৈরির ক্ষমতা রাখে ৷ ব্যতিক্রম কেবল মুসলিম জাতি ৷ তারা আজ সংখ্যায় প্রচুর হলেও তাদের অবস্থা হচ্ছে নবীজ্বী সঃএর ভাষায় স্রোতে ভাসমান খরকুটোর মত ৷ আজকে খ্রীষ্টান কিংবা ইহুদীদের উপর যদি আরাকানের মুসলিমদের মত জুলুম চলত, তাহলে নিশ্চিতভাবেই পশ্চিমা বিশ্ব শুধু মৌখিক নিন্দাবাদ আর ত্রাণ তৎপরতার মধ্যে নিজেদের ভূমিকাকে সীমাবদ্ধ রাখত না ৷ মায়ানমারের উপর তারা সামরিক হস্তক্ষেপ করত ৷ হিন্দুদের ব্যপারে মায়ানমার এতটা সংযত, কারণ পাশে হিন্দুদের ভারত আছে ৷ মুসলিম বলেই রোহিঙ্গাদেরকে জুলুমের এত দীর্ঘ দাস্তান সইতে হয়েছে ৷ আর শেষ পর্যন্ত নিজেদের ভিটেমাটিটুকুও ছাড়তে হচ্ছে ৷ মুসলিম উম্মাহর জন্য এটা চরম লজ্জাজনক বিষয় ৷ মুসলমানদের অন্তর্কলহ আর সামরিক পশ্চাদপদতাই এ জন্য দায়ী ৷
মায়ানমার এবং মঘবৌদ্ধরা জাতিগতভাবেই কতটা হিংস্র, রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞের বিভৎসতায় সেটা ফুটে উঠেছে ৷ এহেন প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের জন্য নতুন করে ভাবনার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে ৷ এমন হিংস্র দানবের পাশে থাকতে হলে নিজেদের নিরাপত্তাব্যবস্থা শক্তিশালী করা জরূরী ৷ বাংলাদেশের আকাশসীমা লংঘনের যে মহড়া মায়ানমার দিয়েছে তাতে শংকা জাগে, কোন দিন আবার কোন অযুহাতে বাংলাদেশের ভিতরে ঢুকে সামরিক অপারেশন চালানো শুরু না করে দেয় ৷ আর তাই, আরাকানের নির্বাসিত লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তু মুহাজিরদের উত্তম আশ্রয় দান, তাদেরকে স্বদেশের মাটিতে অধিকারসহ ফেরানোর লক্ষ্যে কুটনৈতিক পদক্ষেপ জোরদার করণের পাশাপাশি নিজেদের নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য সামরিক শত্তি বৃদ্ধিতে নজর দিতে হবে বাংলাদেশকে ৷
সৌজন্যে:
মাসিক রাহমানী পয়গাম
অক্টোবর’১৭