বৃহস্পতিবার, ১৫ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৮শে রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
Admin | ৯৬৯ views | মে ১৪, ২০২০ | নির্বাচিত,Quran,দরসে তারাবীহ | No | ১১:২১ অপরাহ্ণ |
আজ ২১তম তারাবিতে সূরা জুমার (৩২-৭৫) আয়াত, সূরা মোমিন, সূরা হামিম সাজদা (১-৪৬) পঠিত হবে। পারা হিসেবে আজ পড়া হবে ২৪তম পারা।
Default Ad Content Here
৩৯. সূরা জুমার: (৩২-৭৫) পারার শুরুতে মোমিন ও কাফেরের শেষ পরিণতি প্রসঙ্গে আলোকপাত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, বান্দার জন্য তো আল্লাহই যথেষ্ট। এরপর রয়েছে মানুষের মৃত্যু ও কেয়ামত প্রসঙ্গে আলোচনা। অপরাধী, গোনাহগার, এমনকি কাফের-মোশরেকদের জন্যও আল্লাহর রহমত ও মাগফেরাতের দরজা সদা খোলা, বান্দা তওবা করলেই আল্লাহ তাআলা তা কবুল করেন- এ কথা বলার পর সূরার শেষে আবারও কেয়ামত প্রসঙ্গে আলোচনা রয়েছে।
কেয়ামতের দিন কাফের ও মোশরেকদের টেনেহিঁচড়ে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে আর মুত্তাকিদের জান্নাতে প্রবেশের জন্য আহ্বান করা হবে। ফেরেশতারা তাদের অভ্যর্থনা জানাবেন, তাদের খেদমতে সালাম পেশ করবেন আর তারা আল্লাহর প্রশংসা করতে করতে আপন নিবাস জান্নাতে প্রবেশ করবেন। (৬০-৭৩)।
৪০. সূরা মোমিন: (মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ৮২, রুকু ৯)
এ সূরার আরেক নাম সূরা গাফির। সূরাটির আদ্যোপান্ত পাঠ করে দেখা যায়, সূরায় হক-বাতিল এবং হেদায়েত ও গোমরাহির মধ্যে বিরাজমান সংঘাতের বিবরণ স্পষ্টরূপে ফুটে উঠেছে। কোরআন কারিমের আলোচনার মাধ্যমে সূরাটির সূচনা। কোরআন নাজিল করেছেন সেই মহান সত্তা, যিনি পাপ মোচনকারী, তওবা কবুলকারী, কঠিন শাস্তিদাতা এবং আপন বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত অনুগ্রহশীল। ঈমানদারদের জন্য আল্লাহ তায়ালার আরশবহনকারী ফেরেশতাদের বিশেষ দোয়ার বিবরণ রয়েছে সূরায়। (৭-৯)।
আরো পড়ুন: ২০তম তারাবি: কোরআনের উপদেশ সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য
মোমিন বান্দার জন্য ফেরেশতাদের দোয়ার বিষয়টি আলোচনার পর জাহান্নামে কাফের-মোশরেকদের কী করুণ অবস্থা হবে, তা তুলে ধরা হয়েছে। (১০-১২)। কাফেরদের প্রতি আল্লাহ তায়ালার শাস্তির বিষয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে মুসা (আ.) ও ফেরাউনের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ফেরাউন-পরিবারের জনৈক মোমিন ব্যক্তির আলোচনা করা হয়েছে। তিনি ফেরাউন ও তার সভাসদদের মুসা নবীর অনুসরণের দাওয়াত দিয়েছিলেন। কিন্তু ফেরাউন ঠাট্টা-বিদ্রুপ করেই তার কথা উড়িয়ে দেয়। সে তার উজির হামানকে বলে, একটা প্রাসাদ বানাও, সেখানে চড়ে আমি দেখব মুসার ইলাহকে দেখা যায় কি না! মোমিন লোকটির সঙ্গে ফেরাউনের ঘটনার বিশ্লেষণ করলে সব যুগের জালেম, ধূর্ত ও চালাক শাসকদের একটি মূলনীতি বুঝে আসে। তা হলো জালেম শাসকরা কখনও হুমকি-ধমকির পথ অবলম্বন করে, আবার কখনও বিরোধীদের রায়, মতামত ও বক্তব্যকে জনগণের সামনে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে পেশ করে। এতে মানুষের কাছে বিরোধীদের বক্তব্য ও মতামতের গুরুত্ব হ্রাস পায়। অবশ্য হকপন্থিরা হুমকি-ধমকি বা ঠাট্টা-বিদ্রুপের কোনো পরোয়া করেন না। তারা তাদের কাজ করে যান।
আরো পড়ুন: করোনায় রমজান: তারাবির আওয়াজে গুঞ্জরিত লাখো ঘর
ওই মোমিন ব্যক্তিটিও ফেরাউনের তুচ্ছতাচ্ছিল্য এবং হাসি-তামাশাকে একটুও আমলে নেননি; বরং তিনি দাওয়াতের কাজ অব্যাহত রেখেছিলেন। শেষে ফলাফল এই হয়েছিল যে, মোমিন ব্যক্তিটি আল্লাহ তায়ালার শাস্তি থেকে রক্ষা পেয়েছেন আর ফেরাউন ও তার সহযোগীরা সাজাপ্রাপ্ত হয়েছে। এ আজাব কবরেও তাদের পিছু ছাড়বে না। সকাল-সন্ধ্যা তাদের ওপর পেশ করা হবে। আর আখেরাতে তো তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি। (২৭-৪৬)।
সূরার ৬০নং আয়াতে বলা হয়েছে, “তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব”। এরপর মহান আল্লাহকে চেনার জন্য তাঁর কিছু নেয়ামত এবং মানবসৃষ্টির বিভিন্ন ধাপের বিবরণ দেওয়া হয়েছে। (৬১-৬৯)। নবীজিকে সবরের নির্দেশ এবং দুনিয়া-আখেরাতে কাফেরদের পরিণতির বিবরণ দিয়ে সূরাটি সমাপ্ত হয়েছে। (৭৫-৮৫)।
৪১. সূরা হামিম সাজদা: (মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ৫৪, রুকু ৬)
সূরাটির আরেক নাম ফুসসিলাত। পবিত্র কোরআনের আলোচনা দিয়ে সূরাটির সূচনা। এরপর আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহের বিপরীতে মানুষের অকৃতজ্ঞতা প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে আদ ও সামুদ জাতির আলোচনা করা হয়েছে। এরপর বলা হয়েছে, কেয়ামতের দিন মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গই মানুষের পক্ষে-বিপক্ষে সাক্ষী দেবে।
আরো পড়ুন: আজ মাগরিবের আগেই মসজিদে প্রবেশ করবেন ইতিকাফকারীরা
এরপর কেয়ামতের দিন কাফেরদের কী অবস্থা হবে, তার বিবরণ শেষে মোমিন বান্দাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘তারা একবার মনেপ্রাণে আল্লাহকে রব বলে মেনে নিলে আমরণ এ বিশ্বাসের ওপর অটুট-অবিচল থাকে। মৃত্যুর সময় এবং কেয়ামতের দিন ফেরেশতারা তাদের বলবেন, ভয় পেও না, জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ করো। দুনিয়া ও আখেরাতে আমরা হলাম তোমাদের বন্ধু। জান্নাত তোমাদের জন্য, তোমাদের মন যা চায়, এমন সবকিছুই আছে সেখানে।’ (৩০-৩১)।
মন্দের প্রতিকারের উত্তম পন্থা সম্পর্কে বলা হয়েছে, মন্দ আচরণের বিপরীতে তুমি উত্তম আচরণ উপহার দাও। এরপর আল্লাহকে চেনার কিছু নিদর্শন বর্ণনা করা হয়েছে। নবীজিকে সবরের কথা বলা হয়েছে। এরপর কোরআনের প্রতি কাফেরদের আচরণ প্রসঙ্গে আলোচনা রয়েছে।
পারার শেষাংশে আল্লাহ তায়ালার ন্যায়ানুগ ফয়সালার বিষয়টি আলোচিত হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘যে নেক আমল করবে, সে নিজের কল্যাণের জন্যই করবে। আর যে মন্দকাজ করবে তার প্রতিফল সে নিজেই ভোগ করবে। তোমার প্রতিপালক বান্দাদের প্রতি মোটেই জুলুম করেন না।’ (৪৬)।
লেখক:মাওলানা রাশেদুর রহমান ।। পেশ ইমাম ও খতীব, কেন্দ্রীয় মসজিদ, বুয়েট