বুধবার, ২৯শে ফাল্গুন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ৩রা রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

স্বপ্নযোগে আব্দুল হাই পাহাড়পুরী রহঃ : শিষ্যদের প্রেরণা

মাওলানা আবু তাহের রাহমানীঃ মাওলানা ইউসুফ ৷ নূরিয়া মাদরাসার দীর্ঘ দিনের শিক্ষাসঙ্গী ৷ আমার জুনিয়র হলেও আমাদের পারস্পরিক সম্পর্কটা ছিল অত্যন্ত গভীর ৷ নূরিয়া জীবনের অসংখ্য স্মৃতি জড়িয়ে আছে আমাদের এই সম্পর্কের মাঝে ৷ ছাত্রকালে তুমি করেই ডাকতাম ৷ আমাদের পরম মুহসিন ও মুশফিক উস্তাদ শাইখুল হাদীস আল্লামা আব্দুল হাই (হযরত পাহাড়পুরী হুজুর) রহঃ এর অন্যতম ঘনিষ্ট খাদেমও ছিলেন তিনি ৷ একজন ছাত্র উস্তাদের খেদমতে কত নিবেদিত প্রাণ হতে পারে তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ এই মাওলানা ইউসুফ ৷ তার দুইটি সন্তান ৷ দুজনই আমাদের মাদরাসাতুস সুফফার ছাত্র ৷ বড় ছেলেটি শুরু থেকে জালালাইন জামাত পর্যন্ত মাদরাসাতুস সুফফায় লেখা পড়া করেছে ৷ সে সুবাদে আমার প্রতি ও মাদরাসাতুস সুফফার প্রতি মাওলানা ইউসুফের বাড়তি টান রয়েছে ৷ সময় সুযোগ হলেই সুদূর কুমিল্লা থেকে ছুটে আসেন আদরের সন্তানদয়ের স্নেহশীল উস্তাদগনের মুলাকাতে ৷
এখন তিনি কুমিল্লা জেলার চান্দিনা থানাধীন ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘আবেদা-নূর কমপ্লেক্স’ এর কওমী মাদরাসায় ইহতিমামের দায়িত্বে রয়েছেন ৷ গতকাল দুপুরে হঠাত করেই তিনি আমাদের মাদরাসায় এসে উপস্থিত হলেন ৷ বললেন, ‘ভাই! বেশ কিছুদিন যাবৎ আপনি অসুস্থ আছেন শুনেছি ৷ পোলার কাছ থেকে খবর নিয়েছি এতদিন ৷ প্রাতিষ্ঠানিক ব্যস্ততার কারণে আসার জন্য সুযোগ করতে পারি নি ৷ কিন্তু আজ একটা ঘটনার পর আমি আর না এসে পারলাম না ৷ দেরি না করে ছুটে এলাম আপনার সাক্ষাতে ৷’
দুপুরের খাবার আমরা একসাথে খেলাম ৷ এরপর মাওলানা ইউসুফ ঘটনার বিস্তারি বললেন ৷ আমারও খুব কৌতুহল ছিল; কি এমন ঘটনা যা তাকে সুদূর কুমিল্লা থেকে আমার কাছে নিয়ে এসেছে ৷ মাওলানা ইউসুফ আগের রাতে সুন্দর একটি স্বপ্ন দেখেছেন; আমাদের পরম মুহসিন উস্তাদ শাইখুল হাদীস আল্লামা আব্দুল হাই পাহাড়পুরী হুজুর রহঃ মাদরাসাতুস সুফফায় এসেছেন ৷ হুজুর মাদরাসায় এসে আমার থাকার রুমে বসেছেন ৷ হুজুরের ডান পাশে আমি, বাম পাশে মাওলানা ইউসুফের বড় ভাই মাওলানা অহিদুল হক সাহেব ৷ (যিনি তার ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে হুজুরের অন্তীম মুহূর্ত পর্যন্ত তাঁর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বহুবিদ খেদমতে নিরবচ্ছিন্ন ও সর্বতভাবে নিয়োজিত ছিলেন ৷) আমাদের তিনজন ব্যতীত অজ্ঞাত আরো একজন উপস্থিত ছিলেন ৷ পাহাড়পুরী হজুর আমাদেরকে নিয়ে মিষ্টি খাচ্ছিলেন ৷ এমন সময় মাওলানা ইউসুফ এসে উপস্থিত হলে হুজুর তাকে বলে উঠেন ‘তুই এতো দেরি করলি কিয়ারে…?’
স্বপ্ন এ পর্যন্তই ৷ এই স্বপ্ন দেখার পর গতকাল দুপুরেই মাওলানা ইউসুফ সুফফায় ছুটে আসেন ৷ তিনি আমাকে বললেন, ‘ভাই! এই স্বপ্ন দেখে আমার মনে হয়েছে, পাহাড়পুরী হুজুর রহঃ কবরে শায়িত থেকেও আপনাকে এবং আপনার মাদরাসাকে রূহানী তাওয়াজ্জুহ দিয়ে যাচ্ছেন ৷ নিঃসন্দেহে এটা আপনার জন্য আপনার এ সময়ে অনেক বড় শান্ত্বনা ৷’
তার স্বপ্নের বিবরণ শুনে আমি আপ্লুত হলাম ৷ আমার দু’চোখ থেকে অঝোরে অশ্রু ঝড়লো ৷ শান্তনা বোধ করলাম, আমার জীবনের এই কঠিন সময়েও হুজুরের রূহানী তাওয়াজ্জুহ আমার সাথে শামেলে হাল রয়েছে ৷ যেমন তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর পরম ইহসান, শফকত ও মায়া-মমতা আমি এবং আমার ন্যায় তাঁর অসংখ্য শাগরিদের প্রতি ছিলো ৷ সাথে সাথে হুজুরের বড় সাহেবজাদা মাওলানা আশরাফুজ্জানকে ফোন করে এই স্বপ্নের বিবরণ বললাম ৷ মাওলানা আশরাফও এ স্বপ্ন শুনে আপ্লুত হলো, কেঁদে ফেলে ৷
ফিরে গেলাম তিন যুগ পূর্বের স্মৃতিময় জীবনে ৷ পাহাড়পুরী হুজুর রহঃ তার জীবদ্দশায় পরম স্নেহ মমতা ও গভীর মুহাব্বত-ভালোবসায় আমাদেরকে মানুষ করেছেন, পথচলা দেখিয়েছেন, মহান আদর্শ উস্তাদ রূপে আমাদেরকে নিরবচ্ছিন্ন তরবিয়ত করেছেন ৷
আল্লাহ হুজুরকে কবর জগতে সুখে ও শান্তিতে রাখেন ৷ তার কবরকে জান্নাতের আলোয় আলোকিত করে দেন ৷ জান্নাতের অফুরন্ত নাজ-নেয়ামত তাঁর কবরে পৌছার ব্যবস্থা করে দেন ৷
ইয়া রাব ! তুমি হুজুরের সাথে আরশে আজীমের ছায়ার নিচে আমাদের স্থান করে দিও ৷ জান্নাতে হুজুরের ইলমি দরসগাহে বসার সুযোগ করে দিও ৷ জান্নাতে তুমি মওলানা ইউসুফের উল্লেখিত স্বপ্নের বাস্তব প্রতিফলন ঘটিয়ে দিও ৷ শুধু মিষ্টি কেন, জান্নাতের অফুরন্ত নাজ নেয়ামতের দস্তরখানে তুমি আমাদেরেকে হুজুরের সাথে বসার ব্যবস্থা করে দিও ৷
রাব্বে করীম ! আমাদের এ ফরিয়াদ কবুল করুণ ৷ আমীন ‼
__________________
আবু তাহের রাহমানী |
মাদরাসাতু সুফফা আল-ইসলামিয়া ঢাকা ৷
২৩.১১.২০১৭ | বৃহস্পতিবার, রাত ১০: ৫৮ ৷

Archives

March 2024
S S M T W T F
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031