শনিবার, ২৭শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি

পবিত্র কোরআন অকাট্য, নির্ভুল এবং ধ্রুব সত্য – তারাবীহ ১০ম পাঠ

This entry is part 10 of 27 in the series দরসে তারাবীহ


আজ দশম তারাবিতে সূরা ইউসুফের ৫৩-১১১ আয়াত, সূরা রাদ ও সূরা ইবরাহিম পড়া হবে। পারা হিসাবে আজ পড়া হবে ১৩তম পারা।

Default Ad Content Here

১২. সূরা ইউসুফ: (৫৩-১১১) সংক্ষিপ্তাকারে নবী ইউসুফ (আ.) এর কাহিনি আমরা গতকাল পড়েছিলাম। কাহিনিটির যে অংশ আজ শুনব- মিসরের বাদশা ইউসুফ (আ.) এর কাছে স্বপ্নের সঠিক ব্যাখ্যা শুনে তাকে জেল থেকে মুক্ত করে দিলেন। মুক্তির আগে ইউসুফ (আ.) সবার সামনে নিজের নির্দোষিতার প্রমাণ করতে চাইলেন। আজিজে মিসরের স্ত্রী নিজের অপরাধের কথা স্বীকার করল। ইউসুফ (আ.) নির্দোষ, এ কথাও সে অকপটে বলল। জেল থেকে বেরিয়ে ইউসুফ (আ.) মিসরের অর্থ বিভাগের দায়িত্ব গ্রহণ করলেন।

সে সময় মিসর ও তার আশপাশের এলাকাগুলোয় দুর্ভিক্ষ শুরু হয়। এ কারণে ইউসুফ (আ.) এর ভাইয়েরা বিশেষ দান সংগ্রহের জন্য মিসরে আসে। এক-দুই সাক্ষাতের পর ইউসুফ (আ.) ভাইদের জানিয়ে দেন, আমি তোমাদের ভাই ইউসুফ। এরপর ইউসুফ (আ.) এর বাবা-মাও মিসর চলে আসেন এবং এখানেই বসতি স্থাপন করেন। নবী ইউসুফের শৈশবে দেখা স্বপ্ন সত্যে পরিণত হয়।

সূরা ইউসুফ শেষ হয়েছে এ বার্তা দিয়ে, ‘এসব মহামনীষীর ঘটনায় রয়েছে জ্ঞানীদের জন্য বহু শিক্ষা ও নসিহত।’ (১১১)।

১৩. সূরা রাদ: (মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ৪৩, রুকু ৬)

এ সূরায় তাওহিদ, রিসালাত ও কেয়ামত নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সূরার প্রথম আয়াতে কোরআনের সত্যতার আলোচনা রয়েছে। পরবর্তী আয়াতে মহান আল্লাহর অস্তিত্ব ও একত্ববাদের দলিল প্রমাণ উল্লেখ করা হয়েছে। আসমান-জমিন, চাঁদ-সূর্য, রাত-দিন, পাহাড়-পর্বত ও নদীনালা, লতাগুল্ম, বৈচিত্র্যময় স্বাদ এবং বিভিন্ন রঙের ফলমূলের স্রষ্টা তো একমাত্র তিনিই। জীবন-মরণ এবং উপকার ও ক্ষতিসাধন একমাত্র তাঁরই হাতে। এরপর কেয়ামতের পুনরুত্থান ও প্রতিদানের আলোচনা করা হয়েছে।

ফেরেশতাদের দিয়ে আল্লাহ তায়ালা মানুষকে হেফাজত করেন, সুরক্ষিত রাখেন- এ প্রসঙ্গের আলোচনার পর একটি মূলনীতি বলা হয়েছে। তা হলো, ‘আল্লাহ তায়ালা কোনো জাতির অবস্থা ততক্ষণ বদলান না, যতক্ষণ না সে জাতি নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে।’ (১১)।

মুসলিম জাতি সম্মান পেতে চাইলে, লাঞ্ছনার পথ পরিহার করে মর্যাদার পথ অবলম্বন করতে হবে। বাতিল ও ভ্রান্ত জিনিসের উপমা দেওয়া হয়েছে ঢেউয়ের ওই বুদবুদের সঙ্গে, যা বাহ্যত সব জিনিসের ওপর ছেয়ে থাকে। কিন্তু অবশেষে বিলুপ্ত ও বিলীন হয়ে যায়। আর হক ও সত্যপন্থিদের ওই সোনা-চাঁদির সঙ্গে উপমা দেওয়া হয়েছে, যা ঢেউয়ের সঙ্গে সঙ্গে ভেসে যায় না, বরং জমিনের মাঝেই থেকে যায়। তারপর আগুনে উত্তপ্ত করলে তা একেবারে খাঁটি সোনায় পরিণত হয় এবং খাদ ও ময়লা তা থেকে পৃথক হয়ে যায়। (১৭)।

মুত্তাকি এবং সত্যিকার বুদ্ধিমানদের আটটি গুণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে আলোচ্য সূরায়। সেগুলো হলো, প্রতিশ্রুতি রক্ষা, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা, আপন প্রতিপালকের ভয়, মন্দ হিসাবের ব্যাপারে শঙ্কা, ধৈর্যধারণ, সালাত কায়েম, প্রকাশ্যে এবং গোপনে দান, মন্দের জবাবে ভালো ও উত্তম চরিত্র প্রদর্শন করা। মূলত এসব গুণের অধিকারী ব্যক্তিরাই হবে জান্নাতু আদনের বাসিন্দা। (২০-২৪)।

নবীরা মানুষই, তাঁদেরও ঘর-সংসার ছিল। পার্থক্য শুধু এতটুকু যে, তাদের কাছে ওহি আসত (৩৮)- এ বিষয়ে আলোকপাতের পর নবী মুহাম্মদ (সা.) এর নবুয়তের সাক্ষ্য দিয়ে সূরাটির সমাপ্তি ঘটেছে। (৪৩)।

১৪. সূরা ইবরাহিম: (মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ৫২, রুকু ৭)

সূরার সূচনাপর্বে কোরআন কারিম নাজিলের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে। আর তা হলো মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে বের করে আনা। সূরাটিতে তাওহিদ, রিসালাত ও আখেরাত- মৌলিকভাবে এ তিনটি বিষয়ে আলোচনা রয়েছে। ২, ৩ ও ২৩ নম্বর আয়াতে কাফেরদের নিন্দা জানানো হয়েছে।

সূরায় বিভিন্ন সম্প্রদায় তাদের নবীদের সঙ্গে কেমন আচরণ করেছে এর কিছু নমুনা তুলে ধরা হয়েছে। বিভিন্ন যুগের অস্বীকারকারী গোষ্ঠী সাধারণত চার ধরনের সন্দেহের কথা বলত এবং বর্তমানেও বলে। সন্দেহগুলোর উল্লেখপূর্বক জবাব দেওয়া হয়েছে, ‘আল্লাহর অস্তিত্বের ব্যাপারে সন্দেহ’, অথচ একটু চোখ মেলে তাকালেই দেখা যায়, রাব্বুল আলামিনের অস্তিত্বের অসংখ্য প্রমাণ। ‘রাসুল মানুষ হবেন কেন?’ মানুষের জন্য মানুষ রাসুল পাঠানোই তো বেশি যৌক্তিক। ‘বাপ-দাদাদের ধর্ম ছেড়ে নতুন ধর্ম কেন গ্রহণ করব?’ কেউ যদি ভুল পথে থাকে; তবু কি তাকে অনুসরণ করা হবে? ‘মোজেজার দাবি করা মাত্রই সেগুলো নবীরা কেন প্রদর্শন করেন না?’ মোজেজা দেখানো নবীদের ইচ্ছাধীন নয়, মোজেজা তো আল্লাহ তায়ালার হাতে। (৯-১২)। সত্যসন্ধানী মানুষের কাজ হলো সন্দেহের পথ পরিহার করা এবং মহান আল্লাহর বান্দা হিসেবে তাঁর কৃতজ্ঞ হয়ে থাকা। কেননা আল্লাহ কৃতজ্ঞদেরকে তাঁর নেয়ামত আরও বাড়িয়ে দেন, আর অকৃতজ্ঞদের জন্য রয়েছে তার কঠিন শাস্তি। (৭)।

সূরার দ্বিতীয়, তৃতীয় ও শেষ রুকুতে কেয়ামতের দৃশ্যের অবতারণা করা হয়েছে এবং জাহান্নামের ভীষণ ভয়ংকর আজাবের আলোচনা করা হয়েছে। কেয়ামতের ময়দানে নিজ অনুসারীদের থেকে শয়তানের পলায়ন প্রসঙ্গে বলা হয়েছে এবং হক-বাতিলের চমৎকার একটি উপমা পেশ করা হয়েছে।

এ সূরায় বিশেষভাবে হজরত ইবরাহিম (আ.) এর ওইসব দোয়া উল্লেখ করা হয়েছে, যেগুলো তিনি করেছিলেন বায়তুল্লাহ বিনির্মাণের পর মক্কাবাসী, নিজের সন্তানসন্ততি ও পরবর্তী বংশধর এবং মানবতার জন্য। দোয়ায় তিনি নিরাপত্তা, রিজিকের ব্যবস্থা, মক্কার প্রতি সবার অন্তরের টান, সালাত কায়েম করা এবং মাগফিরাতের দরখাস্ত করেছিলেন। (৩৫-৪১)। সূচনাপর্বের মতো সূরার শেষেও পবিত্র কোরআনের আলোচনা রয়েছে। (৫২)।

লেখক:মাওলানা রাশেদুর রহমান ।। পেশ ইমাম ও খতীব, কেন্দ্রীয় মসজিদ, বুয়েট

Series Navigation<< পবিত্র কোরআন অকাট্য, নির্ভুল এবং ধ্রুব সত্য – তারাবীহ ৯ম পাঠপশুপাখির জীবনচক্রে রয়েছে বহু শিক্ষা – তারাবীহ ১১তম পাঠ >>

Archives

January 2025
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031