শুক্রবার, ১লা চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ৫ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি
Admin | ৩,১১৭ views | অক্টোবর ১৫, ২০১৭ | প্রশ্ন ও উত্তর,মাসালা মাসায়েল | No | ৯:৫২ পূর্বাহ্ণ |
০००بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْم००০
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
টুপি মুসলিম উম্মাহর ‘শিআর’ জাতীয় নিদর্শন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন ও তাবে তাবেয়ীনের যুগ থেকে প্রতি যুগে এর উপর ব্যাপকভাবে আমল ছিল। কিন্তু, যেমনটা আমি বিভিন্ন জায়গায় লিখেছি, ‘আমলে মুতাওয়ারাছে’র (উম্মাহর ও অবিচ্ছিন্ন কর্মের) সূত্রে বর্ণিত সুন্নাহ্র দলীল যখন সনদসহ বর্ণনারসূত্রে খোঁজ করা হয় তখন কখনো কখনো এমনও হয় যে, তা সংশ্লিষ্ট স্থানগুলোতে পাওয়া যায় না যা পাওয়া যায় তার সনদ সহীহ হয় না। এ কারণে যারা দু’ চার কিতাবের দু’ চার জায়গায় দেখেই কোনো বিষয়কে ভিত্তিহীন বলে দিতে অভ্যস্থ তারা খুব দ্রুত এ ধরণের সুন্নাহকে অস্বীকার করে বসেন। টুপির ক্ষেত্রেও এ ব্যাপার ঘটেছে।
💠
আযীযম মাওলানা ইমদাদুল হক কুমিল্লায়ী এ বিষয়ে কিছু হাদীস-আছার একত্র করেছে। এ বিষয়ে আরো দলিল আছে এবং এমন রেওয়ায়েতও আছে, যার সনদ সব রকমের আপত্তির উর্ধ্বে। এ প্রবন্ধ তার সংকলনের প্রথম ধাপ। অবশিষ্ট রেওয়ায়াত ইনশাআল্লাহ আগামী কোনো অবসরে পেশ করা হবে।-আব্দুল মালেক
‘‘টুপি পরা সুন্নত’’ কথাটি শৈশব থেকেই শুনে আসছি এবং সুন্নতের অনুসারী আলিম-উলামা ও দ্বীনদার মানুষকে তা পরতে দেখেছি। এই ব্যাপক অনুসৃত সুন্নাহর বিষয়ে কখনোই মনে সংশয় জাগেনি। একসময় উচ্চস্তরের পড়াশোনার জন্য গ্রাম থেকে চলে এলাম দেশের অন্যতম প্রাচীন ও বড় মাদরাসায়। সেখানে গিয়েই ছাত্রভাইদের কাছে প্রথম শুনলাম টুপি নিয়ে ভিন্ন কথা, সংশয় সন্দেহ। টুৃপি নাকি হাদীসে নেই। তাই কোনো কোনো আলেম তা পরেন না। শুধু রুমাল ব্যবহার করেন।
এদিকে কিছু প্রবাসী ভাই যারা আরব দেশগুলোতে থাকেন তারা এসে বলেন, আরবে নাকি টুপির গুরুত্ব বা রেওয়াজ নেই। খালি মাথায়ই তারা নামায পড়ে। কারণ হিসেবে উল্লেখ করে সেই একই কথা-হাদীসের ভান্ডারে টুপির কথা নেই!
ইদানিং আবার আমাদের দেশে একটি মহল তৈরী হচ্ছে, যারা নির্দিষ্ট কিছু হাদীসের উপর আমল করে আর অন্যগুলোকে বিভিন্ন খোঁড়া অজুহাত দেখিয়ে এক প্রকার অস্বীকার করে। দ্বীনের অনেক স্বতসিদ্ধ বিষয় এবং নবী-যুগ থেকে অবিচ্ছিন্ন কর্মধারায় সর্বযুগে বিদ্যমান অনেক বিষয়কে স্থুল ও মুখরোচক কিছু অজুহাত দেখিয়ে ভ্রান্ত বলে আর নিজেদের ছাড়া অন্য সকলকে বাতিল বলতে থাকে। ওদের তরফ থেকেও ‘টুপি নেই’ জাতীয় কথা মিডিয়াতেও প্রচারিত হয়েছে। এসব কারণে এ বিষয়ে কিছু কিতাব ঘাঁটাঘাঁটি করলাম যা কিছু সংগ্রহ হল পাঠক মহলের নিকট পেশ করার ইচ্ছা করলাম।
টুপি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরেছেন, সাহাবায়ে কেরাম পরেছেন, তাবেয়ীন তাবে-তাবেয়ীন পরেছেন এবং পরবর্তীতে সব যুগেই মুসলিমগণ তা পরিধান করেছেন। টুপি, পাগড়ীর মতোই একটি ইসলামী লেবাস। হাদীসে, আছারে ও ইতিহাসের কিতাবে এ বিষয়ে বহু তথ্য আছে এবং অনেক আলিম-মনীষীর বক্তব্য আছে। এমন প্রতিষ্ঠিত একটি বিষয়কেও যারা ভিত্তিহীন মনে করেন তাদের জ্ঞান ও প্রজ্ঞার উপর সত্যিই করুণা হয়। নিম্নে এ সম্পর্কে কিছু দলীল পেশ করছি। প্রথমে হাদীস থেকে।
《
হাসান বিন মেহরান থেকে বর্ণিত-
عن رجل من الصحابة : قال : أكلت مع رسول الله صلى الله عليه وسلم، ورأيت عليه قلنسوة بيضاء
একজন সাহাবী বলেছেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে তাঁর দস্তরখানে খেয়েছি এবং তাঁর মাথায় সাদা টুপি দেখেছি’ (আল ইসাবাহ ৪/৩৩৯)
এ হাদীসটি ইমাম ইবনুস সাকান তার কিতাবুস সাহাবায় সনদসহ বর্ণনা করেছেন। তবে তাঁর এ বর্ণনায় সাহাবীর নাম আসেনি। তা এসেছে তাঁর অন্য বর্ণনায় এবং ইমাম বুখারী ও ইমাম আবু হাতেমের বর্ণনায়। তাঁর নাম ফারকাদ। (দ্র. আততারীখুল কাবীর ৭/১৩১; কিতাবুল জারহি ওয়াত তা’দীল ৭/৮১) উল্লেখ্য, ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. ইমাম ইবনুস সাকানের উপরোক্ত বর্ণনার দ্বারা আবু নুআইম আল আসবাহানী রহ.এর এ দাবি খন্ডন করেছেন যে, ফারকাদ সাহাবী আল্লাহর নবীর দস্তরখানে খাবার খাননি। বরং হাসান ইবনে মেহরান খাবার খেয়েছেন সাহাবী ফারকাদের সাথে। (মারিফাতুস সাহাবা ৪/১০৪)
হাফেজ ইবনে হাজার রহিমাহুল্লাহ বলেন, এ ক্ষেত্রে আবু নুআইমই ভুলের শিকার হয়েছেন। প্রমাণ হিসেবে তিনি ইমাম ইবনুস সাকানের উপরোক্ত বর্ণনাটি উল্লেখ করেন। এতে প্রমাণিত হয় এ বর্ণনা সহীহ। অন্যথায় প্রমাণ-গ্রহণ শুদ্ধ হতো না। এবং আবু নুআইম এর মত ইমাম এর কথাকে খন্ডন করা যেত না।
তাছাড়া সাহাবী ফারকাদ রা.এর আল্লাহর নবীর দস্তরখানে খাবার খাওয়ার কথা ইমাম বুখারী, ইমাম আবু হাতেম ও ইবনু আবদিল বারও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন।
《
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেন
أن النبي صلى الله عليه وسلم كان يلبس من القلانس في السفر ذوات الآذان، وفي الحضر المشمرة يعني الشامية.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফর অবস্থায় কান বিশিষ্ট টুপি পরতেন আর আবাসে শামী টুপি পরতেন। (আখলাকুন নুবুওয়্যাহ, আল জামে লি আখলাকির রাবী ওয়া আদাবিস সামে পৃ. ২০২)
এ হাদীসের সকল রাবী ‘‘ছিকা’’। উরওয়া ও হিশাম তো প্রসিদ্ধ ইমাম। আর মুফাদদাল ইবনে ফাদালা নামে দুইজন রাবী আছেন। একজন মিসরী, তিনি অনেক বড় ইমাম ছিলেন। মিসরের কাযী ছিলেন। সর্বসম্মতিক্রমে তিনি ‘‘ছিকা’’। আসমাউর রিজালের কিতাবাদি থেকে প্রতীয়মান হয় সনদে উল্লেখিত ব্যক্তি ইনিই। কারণ তিনিই হিশাম ইবনে উরওয়া ও ইবনে জুরাইজ থেকে রেওয়ায়েত করেন যা আল্লামা ইবনে আদী ও আল্লামা মুহাম্মাদ বিন হাসান বিন কুতায়বা তার কিতাবে উল্লেখ করেছেন। (আল-কামিল ৭/৪০৯ ইকমালু তাহযীবিল কামাল ১১/৩৩৮)
অপর জন বসরী। তাঁর স্মৃতিশক্তির বিষয়ে কিছু আপত্তি থাকলেও ইবনে হিববান তাকে ছিকা রাবীদের মধ্যে গণ্য করেছেন।
আবু হাতেম বলেছেন يكتب حديثه
আর ইমাম ইবনে আদী তার একটি বর্ণনাকে ‘মুনকার’ হিসেবে চিহ্নিত করে বাকিগুলো সম্পর্কে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন-
‘তার অন্য বর্ণনাগুলো সঠিক।’ সুতরাং সনদে উল্লেখিত রাবী যদি বসরীও হন তবুও তার এ বর্ণনা সঠিক।
《
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, একবার আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বসা ছিলাম। ইতিমধ্যে একজন আনসারী সাহাবী তাঁর কাছে এলেন। এবং তাঁকে সালাম দিলেন। তিনি ফিরে যাওয়ার সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আনসারী! আমার ভাই সাদ ইবনে উবাদাহ কেমন আছে? আনসারী বললেন, ভাল আছে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের কে কে তাকে দেখতে যাবে? অতপর তিনি দাঁড়ালেন আমরাও দাঁড়ালাম। আমরা সংখ্যায় দশের অধিক হব। আমাদের পায়ে মোজাও ছিল না। চপ্পলও না। গায়ে জামাও ছিল না, টুপিও না। ঐ কংকরময় ভূমিতে আমরা চলছিলাম। অবশেষে আমরা সাদ এর নিকট পৌঁছলাম তখন তার পাশ থেকে মানুষজন সরে গেল। অতপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সঙ্গীরা প্রবেশ করলেন।
এখানে সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. এর বাক্য ‘‘আমাদের পায়ে মোজাও ছিল না, চপ্পলও না। গায়ে জামাও ছিল না টুপিও না’’ থেকে বোঝা যায়, ঐ যুগে টুপিও ছিল লিবাসের অংশ এবং কোথাও যাওয়ার জন্য সেগুলো রীতিমত আবশ্যকীয় এর ন্যয় ছিল। তাই এখানে এগুলো না থাকায় হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর তা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন।
বিষয়টি ঠিক এরকম যেমন ইমাম বুখারী রহ. সহীহ বুখারীতে বুরনুস প্রমাণ করেছেন। সহীহ বুখারীতে কিতাবুল লিবাসে باب البرانس নামে শিরোনাম দাঁড় করেছেন আর দলীল হিসেবে উল্লেখ করেছেন হজের একটি হাদীস।
لا يلبس المحرم القميص ولا العمائم ولا البرانس
‘‘ইহরাম গ্রহণকারী জামাও পরবে না, পাগড়ীও না, বুরনুস (এক প্রকার টুপি)ও না।’’
আল্লামা আবু বকর ইবনুল আরাবী এ হাদীস থেকে পাগড়ী প্রমাণ করেছেন। তিনি বলেন, এ হাদীস প্রমাণ করে যে, তৎকালে পাগড়ী পরিধানের রীতি ছিল। এ কারণে ইহরাম অবস্থায় তা পরিধান করা নিষেধ করেছেন।
একইভাবে আলোচিত হাদীস দ্বারাও টুপি ও তার প্রচলন প্রমাণে কারো দ্বিমত থাকার কথা নয়।
《
উমর ইবনে খাত্তাব রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন-
الشهداء ثلاثة : رجل مؤمن … ورفع رسول الله صلى الله عليه وسلم رأسه حتى وقعت قلنسوته أو قلنسوة عمر.
শহীদ হল তিন শ্রেণীর লোক : এমন মুমিন … এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথা তুললেন। তখন তাঁর টুপি পড়ে গেল। অথবা বলেছেন উমরের টুপি পড়ে গেল। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস : ১৪৬ জামে তিরমিযী, হাদীস : ১৬৪৪ ইত্যাদি)
হাদীসটির ক্ষেত্রে ইমাম তিরমিযী বলেছেন, ‘হাসানুন গারীবুন।’
হাদীসটির সনদ এই,
عن عبد الله بن لهيعة عن عطاء بن دينار أبي يزيد الخولاني عن فضالة بن عبيد عن عمر بن الخطاب رضي الله عنهم
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে লাহিয়া এর ক্ষেত্রে যদিও মুহাদ্দিসীনদের বিভিন্ন রকম বক্তব্য আছে, কিন্তু এ হাদীসটি তাঁর থেকে বর্ণনা করেছেন আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক। আর এক্ষেত্রে ইমামগণ এক মত যে ইবনে লাহিয়া থেকে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক কর্তৃক বর্ণনাকৃত হাদীসগুলো সঠিক।
উপরন্তু আব্দুল্লাহ ইবনে লাহিয়ার একজন ‘মুতাবি’ও আছেন সায়ীদ ইবনে আবী আইয়ূব। যা ইমাম বুখারী ও ইমাম আবু হাতিম এর কথায় পাওয়া যায়।
قال الترمذي : سمعت محمدا يقول : قد روى سعيد بن أبي أيوب هذا الحديث عن عطاء بن دينار عن أشياخ من خولان، ولم يذكر فيه عن أبي زيد.
وقال أبو حاتم : وروى سعيد بن أبي أيوب عن عطاء بن دينار عن أشياخ من خولان عن فضالة عن عمر.
আর এ সনদের আরেকজন রাবি, আবু ইয়াযিদ আল খাওলানী। মুতাআখখিরীনদের মাঝে কেউ কেউ তাকে মাজহুল বলেছেন।
এক্ষেত্রে প্রথম কথা এই যে, হাদীসটি শুধু তিনিই বর্ণনা করেননি; বরং খাওলান শহরের আরো অনেক মুহাদ্দিস তা বর্ণনা করেন, যা ইমাম বুখারী ও ইমাম আবু হাতেম এর উপরোক্ত কথায় পাওয়া যায়।
দ্বিতীয় কথা এই যে, ইমাম বুখারী, ইমাম আবু হাতেম, ইমাম তিরমিযীসহ মুতাকাদ্দিমীন ইমামগণের কেউ তাকে মাজহুল বলেন নি; বরং সকলে তাঁর জীবনীতে তাঁর নাম উল্লেখ করে এ হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। কেউ তাঁর সম্পর্কে ভালোও বলেননি মন্দও বলেননি। এটাকে হাদীস শাস্ত্রের পরিভাষায় বলা হয় سكوت المتكلمين في الرجال অর্থাৎ ইমামগণের নীরব থাকা। এই কারণে রাবী মাজহুল হওয়া আবশ্যক নয় বরং এটাকে এক প্রকার তা’দীল হিসেবে ধরা হয়। বিশেষত রাবী যদি তাবেয়ী স্তরের হন। আর এখানেও তা ঘটেছে। সম্ভবত এ নিশ্চুপ থাকাকেই পরবর্তীদের কেউ মাজহুল বলে দিয়েছেন, যা ঠিক নয়।
থাকল এ বিষয় যে, উপরোক্ত হাদীসে কি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর টুপি সম্পর্কে বলা হয়েছে না ওমর রা.এর টুপি সম্পর্কে? যদি ধরেও নেয়া হয় যে, ওমর রা. এর টুপি সম্পর্কে তাহলেও তো একজন খলীফায়ে রাশেদের টুপি পরা প্রমাণিত হচ্ছে। আর খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাহ তো আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাহ্রই অংশ, বিশেষত যখন একাধিক হাদীসে স্বয়ং আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এরও টুপি পরা প্রমাণিত হচ্ছে।
আপাতত এ চারটি হাদীস উল্লেখ করা হল। হাদীসের কিতাবসমূহে এ বিষয়ে আরো হাদীস আছে এবং টুপি নিয়ে আলাদা শিরোনামও আছে। আসহাবুস সিয়ার তথা সীরাত প্রণেতা ইমামগণও আল্লাহর নবীর পোষাকের অধ্যায়ে তাঁর টুপির জন্যও আলাদা পরিচ্ছেদ কায়েম করেন। যেমন করেছেন ইবনে হাইয়ান, ইবনুল কায়্যিম, ইবনে আসাকির, ইবনুল জাওযী, গাযালী, শায়খ ইউসুফ সালেহী, আল্লামা দিময়াতী, বালাযুরীসহ আরো অনেক ইমাম। সকলের বক্তব্য তুলে ধরলে আলোচনা অনেক দীর্ঘ হয়ে যাবে তাই শুধু আল্লামা ইবনুল কায়্যিম রহ. এর বক্তব্য তুলে ধরছি। তিনি তাঁর সুপ্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘‘যাদুল মাআদে’’ লেখেন, তাঁর একটি পাগড়ি ছিল, যা তিনি আলী রা. কে পরিয়েছিলেন। তিনি পাগড়ি পরতেন এবং পাগড়ির নিচে টুপি পরতেন। তিনি কখনো পাগড়ি ছাড়া টুপি পরতেন। কখনো টুপি ছাড়াও পাগড়ি পরতেন। (যাদুল মাআদ ১/১৩৫)
《
জানা কথা যখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম টুপি পরেছেন তখন সাহাবায়ে কেরামও পরবেন। বরং কোনো হাদীসে আল্লাহর নবীর টুপির উল্লেখ না এলেও যদি সাহাবায়ে কেরামের টুপি পরা প্রমাণিত হয় তাহলে তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর টুপি পরিধানেরই প্রমাণ বহন করবে। হাদীস ও আছারের কিতাবে সাহাবায়ে কেরামের টুপি পরার অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে, যা একত্র করলে একটি পুস্তিকা হয়ে যাবে। এখানে সামান্য কিছু বর্ণনা উল্লেখ করা হল।
1.《
وكان القوم يسجدون على العمامة والقلنسوة
তাঁরা (সাহাবায়ে কেরাম গরমের দিনে) পাগড়ি বা টুপির উপর সিজদা করতেন।-সহীহ বুখারী, কিতাবুস সালাত ‘প্রচন্ড গরমের কারণে কাপরের উপর সিজদা করা’ অধ্যায়।
উল্লেখ্য, হাসান বসরী রাহ. অনেক বড় মনীষী তাবেয়ী, যিনি অনেক সাহাবীকে দেখেছেন এবং তাদের সাহচর্য গ্রহণ করেছেন।
2.《
أدركت المهاجرين الأولين يعتمون بعمائم كرابيس سود وبيض وحمر وخضر وصفر، يضع أحدهم العمامة على رأسه ويضع القلنسوة فوقها، ثم يدير العمائم هكذا على كوره لا يخرجها من ذقنه
আমি প্রথম সারির মুহাজিরগণকে দেখেছি তাঁরা সুতির পাগড়ি পরিধান করতেন। কালো, সাদা, লাল, সবুজ, হলুদ ইত্যাদি রংয়ের। তারা পাগড়ির কাপড় মাথায় রেখে তার উপর টুপি রাখতেন। অতপর তার উপর পাগড়ি ঘুরিয়ে পরতেন।-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ১২/৫৪৫
3.《
قدمت الرقة فقال لي بعض أصحابي : هل لك في رجل من أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم؟ فقلت : غنيمة. فدفعنا إلى وابصة، فقلت لصاحبي : نبدأ فننظر إلى دله فإذا عليه قلنسوة لا طية ذات أذنين.
আমি রাক্কায় গিয়েছিলাম তখন আমার এক সাথী আমাকে বললেন, তুমি কি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাললাম-এর একজন সাহাবীর নিকট যেতে ইচ্ছুক? আমি বললাম, ‘এ তো গনীমত।’ তারপর আমরা ওয়াবেছা রা.-এর নিকট গেলাম। আমি আমার সাথীকে বললাম, দাঁড়াও, প্রথমে আমরা তাঁর আচার-আখলাক দেখব। তাঁর মাথায় দুই কান বিশিষ্ট টুপি ছিল, যা মাথার সঙ্গে মিশে ছিল।-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৯৪৯
4.《
رأيت على ابن الزبير قلنسوة
আমি ইবনে যুবায়ের রা.-এর মাথায় টুপি দেখেছি।-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ২৫৩৫৩
5.《
أن أبا موسى خرج من الخلاء وعليه قلنسوة،
আবু মুসা আশআরী রা. হাম্মাম থেকে বের হলেন। তার মাথায় টুপি ছিল।-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ১০/৫১০
6.《
رأيت على أنس بن مالك قلنسوة بيضاء
আমি আনাস ইবনে মালেক রা.-এর মাথায় একটি সাদা টুপি দেখেছি।-তবাকাতে ইবনে সাদ ৫/১২১
7.《
كانت قلنسوة علي لطيفة
হযরত আলী রা.-এর টুপি ছিল পাতলা।-তবাকাতে ইবনে সাদ ৩/২৩
ইবনে সাদ আলী রা.-এর জীবনীতে তাঁর পোশাকের আলোচনায় তার টুপি সম্পর্কে আলাদা শিরোনাম এনেছেন।
8.《
9.《
10. رأيت على علي قلنسوة بيضاء مصرية
আমি আলী রা.-এর মাথায় সাদা মিসরী টুপি দেখেছি।-তবাকাতে ইবনে সাদ ৩/২৩
11. 《
رأيت أنس بن مالك أتى الخلاء، ثم خرج وعليه قلنسوة بيضاء مزرورة
আমি আনাস ইবনে মালেক রা. কে দেখেছি, তিনি হাম্মাম থেকে বের হলেন। তার মাথায় বোতাম বিশিষ্ট সাদা টুপি ছিল।-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ১/১৯০
12.《
সাহাবায়ে কেরামের টুপি ব্যবহারের প্রমাণ স্বরূপ আপাতত এ কয়টি আছার উল্লেখ করা হল। প্রথম দুই বর্ণনা ব্যাপকভাবে সাহাবায়ে কেরামের টুপি ব্যবহারের প্রমাণ বহন করছে। আর পরবর্তী বর্ণনাগুলোতে অনেক সাহাবীর টুপি ব্যবহার উল্লেখিত হয়েছে। টুপির শুধু ব্যবহার নয়, ব্যাপক প্রচলন এ বর্ণনাগুলো দ্বারা প্রমাণিত হয়। এ প্রসঙ্গে আরেকটি বর্ণনা উল্লেখ করে তাবেয়ী-যুগের বর্ণনায় যাব, যার পর অতি সংশয়গ্রস্ত লোকেরও সংশয় থাকা উচিত নয়।
দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমর রা.-এর যুগে যখন ‘নাজরান’ শহরের খৃস্টানরা সন্ধিতে রাজি হল এবং কর দিতে সম্মত হল তখন তারা হযরত উমর রা.-এর সাথে একটি চুক্তিনামা করেছিল। সেই চুক্তির অংশবিশেষ এই-
بسم الله الرحمن الرحيم، هذا كتاب لعبد الله عمر أمير المؤمنين من نصارى مدينة كذا كذا، لما قدمتم سألناكم الأمان لأنفسنا وذرارينا وأهل ملتنا وشرطنا لكم على أنفسنا أن لا نحدث في مدينتنا ولا فيما حولها ديرا ولا كنيسة … ولا نتشبه بهم (المسلمين) في شيء من لباسهم من قلنسوة ولا عمامة.
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
এ অমুক শহরের নাসারাদের পক্ষ থেকে আল্লাহর বান্দা আমীরুল মুমিনীন উমরের সাথে লিখিত চুক্তি। যখন আপনারা (মুসলমানগণ) আমাদের শহরে এলেন তখন আমরা আপনাদের নিকট আমাদের, আমাদের সন্তান-সন্ততি ও স্বধর্মের লোকদের জন্য নিরাপত্তা প্রার্থনা করেছি। আমরা নিজেদের উপর এ শর্ত গ্রহণ করছি যে, এ শহরে এবং এর আশপাশে আমরা কোনো গির্জা তৈরি করব না … এবং আমরা মুসলমানদের পোশাক-টুপি, পাগড়ি ইত্যাদিতে সাদৃশ্য গ্রহণ করব না …।-সুনানে কুবরা, বায়হাকী, হাদীস : ১৯১৮৬
চুক্তিনামার এ অংশে কয়েকটি বিষয় লক্ষ্যণীয় :
এক. টুপিকে মুসলমানদের পোশাক বলা হয়েছে। যেমন পাগড়িকে বলা হয়েছে। একটি বস্ত্তর কতটুকু প্রচলন হলে তা একটি দল বা গোষ্ঠীর সাথে সম্বন্ধ করা হয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
দুই. টুপিকে একটি রাষ্ট্রীয় চুক্তিনামায় উল্লেখ করা দ্বারা সহজেই অনুমান করা যায়, সে যুগে মুসলমানদের নিকট টুপির গুরুত্ব কেমন ছিল এবং তার প্রচলন কত ব্যাপক ছিল।
তিন. এ চুক্তিনামা যখন লেখা হয় তখন বহু সাহাবী জীবিত ছিলেন। ইতিহাসে এমন একটি বর্ণনাও নেই যে, তাদের কেউ এ বিষয়ে আপত্তি করেছেন; বরং পরবর্তী খলীফাগণও এ চুক্তি বলবৎ রেখেছেন। এমনকি হযরত আলী রা.-এর যুগে এ নাসারারা এ চুক্তির কোনো একটি বিষয়ে কথা বলতে এসেছিল। তখন তিনি তাদেরকে সাফ বলে দেন-
إن عمر كان رشيد الأمر، لن أغير شيئا صنعه عمر
নিশ্চয়ই উমর সঠিক জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। তিনি যা করেছেন আমি তার কিছুই কোনোরূপ পরিবর্তন করতে পারব না।
হযরত উমর রা.-এর এ চুক্তিনামাটিকে যিম্মীদের ক্ষেত্রে শরীয়তের অনেক গুরুত্বপূর্ণ উসূল বা মানদন্ড হিসেবে ধরা হয়। পরবর্তী যুগের আলিম-মনীষী ও মুসলিম খলীফাগণ যিম্মিদের সাথে কোনো চুক্তিনামা করলে এর শর্তগুলোকে মানদন্ড হিসেবে সামনে রাখতেন।
আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম রাহ. বলেন, এ শর্তগুলো এতই প্রসিদ্ধ যে, এগুলোর সনদ উল্লেখের প্রয়োজন নেই। কেননা ইমামগণ তা সাদরে গ্রহণ করেছেন এবং তাদের কিতাবে উল্লেখ করেছেন ও এগুলো দ্বারা প্রমাণ গ্রহণ করেছেন। আর হযরত উমর রা.-এর এসব শর্ত ছিল তাঁদের কিতাবে ও মুখে মুখে। পরবর্তী খলীফাগণ তা বলবৎ রেখেছেন এবং এর অনুসরণ করেছেন। -আহকামু আহলিয যিম্মাহ, পৃষ্ঠা : ৪৫৪
আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম রাহ. এ কিতাবটি শুধু হযরত উমর রা.-এর এ চুক্তিনামার শরহ বা ব্যাখ্যাতেই প্রণয়ন করেছেন।
যাহোক, উপরোক্ত উদ্ধৃতি থেকে বোঝা যায়, সকল যুগেই টুপি মুসলমানদের পোশাক ছিল। আশা করি, খিলাফতে রাশিদা-যুগের এ চুক্তিনামা দেখার পর কারো কোনো সংশয় থাকবে না। কোনো হাদীস বা আছারে টুপির কথা উল্লেখিত না হলেও এ দলীলটি আলোচ্য বিষয়ে যথেষ্ট হত।
তাবেয়ীগণের টুপি
যখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম টুপি পরেছেন, সাহাবায়ে কেরাম পরেছেন এবং তা ছিল মুসলিমদের পোশাকের অংশ তখন জানা কথা, তাবেয়ীগণও তা পরেছেন। উপরের আলোচনা থেকেই তাবেয়ীন-যুগও পরবর্তী যুগেও মুসলিম-সমাজে টুপির সুন্নাহ প্রতিষ্ঠিত থাকা প্রমাণিত হয়। তাই আলাদাভাবে তাবেয়ীদের টুপি প্রমাণের আর প্রয়োজন থাকে না। এরপরও কিছু নমুনা পেশ করছি।
1.《
رأيت على علي بن الحسين قلنسوة بيضاء لاطئة
আমি আলী ইবনে হুসাইন রাহ.-এর মাথায় একটি সাদা টুপি দেখেছি, যা মাথার সাথে মিলিত ছিল।-তবাকাতে ইবনে সাদ ৩/২৪৩
2.《
رأيت نافع بن جبير يلبس قلنسوة سماطا وعمامة بيضاء
আমি নাফে ইবনে জুবাইরকে পুঁতিবিশিষ্ট টুপি ও সাদা পাগড়ি পরতে দেখেছি।-তবাকাতে ইবনে সাদ ৫/২০৬ (শামেলা)
3.《
رأيت على سالم قلنسوة بيضاء
আমি সালেম রাহ.-এর মাথায় সাদা টুপি দেখেছি। (সালেম হলেন সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-এর পুত্র)।-তবাকাতে ইবনে সাআদ ৫/১৯৭; সিয়ারু আলামিন নুবালা ৪/৪৬৪ (শামেলা)
4.《
رأيت على القاسم بن محمد قلنسوة من خز
আমি কাসিম ইবনে মুহাম্মাদ রাহ.-এর মাথায় পশমের টুপি দেখেছি।-তবাকাতে ইবনে সাদ ৫/১৮৯; হিলইয়াতুল আওলিয়া ২/১৮৫ (শামেলা)
5.《
رأيت سعيد بن المسيب يعتم وعليه قلنسوة لطيفة بعمامة بيضاء
আমি সায়ীদ ইবনুল মুসাইয়িবকে একটি পাতলা টুপির উপর পাগড়ি বাঁধতে দেখেছি।-তবাকাতে ইবনে সাদ, ৫/১৩৮; সিয়ারু আলামিন নুবালা ৪/২৪২ (শামেলা)
6.《
رأيت على الضحاك قلنسوة ثعالب
অর্থ : আমি যাহহাক রাহ.-এর মাথায় একটি চামড়ার টুপি দেখেছি।-তবাকাতে ইবনে সাদ ৬/৩০১ (শামেলা)
7.《
رأيت أبا إسحاق السبيعي وهو يصلي بنا، يأخذ قلنسوته من الأرض فيلبسها أو يأخذها عن رأسه فيضعها.
আমি আবু ইসহাক আসসাবীয়ীকে দেখেছি তিনি আমাদের নিয়ে নামায পড়েছেন। তিনি টুপি খুলে মাটিতে রাখছেন কিংবা তা উঠিয়ে মাথায় পরছেন।-তবাকাতে ইবনে সাদ ৬/৩১৪ (শামেলা)
8.《
رأيت إبراهيم النخعي يلبس قلنسوة ثعالب
আমি ইবরাহীম নাখায়ী রাহ.-এর মাথায় চামড়ার টুপি দেখেছি।-তবাকাতে ইবনে সাদ ৬/২৮০ (শামেলা)
9.《
10.《
11.《
12.《
13.《
14.《
15.《
16.《
17.《
উল্লেখ্য, কারো কারো ধারণা, ঐ যুগে টুপি এত লম্বা ছিল যে, তা দিয়ে সুতরাও দেওয়া যেত। আসলে তা নয়। সুতরার ক্ষেত্রে এ কথাও আছে যে, সুতরা দেওয়ার মতো কোনো কিছু পাওয়া না গেলে কমপক্ষে একটি রেখা হলেও যেন টেনে দেওয়া হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতেই তারা রেখা না টেনে কমপক্ষে টুপিটা হলেও রাখতেন। যেন কিছু একটা রাখা হয়। এটা টুপি লম্বা হওয়া বা ছোট হওয়া আবশ্যক করে না।
তাবেয়ীনের টুপি সম্পর্কে আপাতত এ কয়েকটি রেওয়ায়েত উল্লেখ করা হল।
বিজ্ঞ পাঠক আমাদের বরাতগুলো দেখে সম্ভবত অনুমান করতে পেরেছেন যে, হাদীস ও তারীখের দু’ চারটি কিতাব থেকেই তা সংগ্রহ করা হয়েছে। যদি হাদীস-আছার ও তারীখের কিতাবাদিতে ব্যাপক অনুসন্ধান চালানো হয় তাহলে এ বিষয়ে বিশাল সংগ্রহ প্রস্ত্তত হবে। কিন্তু আমরা এখানে এতটুকুই যথেষ্ট মনে করছি।
আমরা এখানে সতেরজন তাবেয়ীর বরাত উল্লেখ করেছি। এদের মধ্যে আছেন হুসাইন রা.-এর পুত্র, যিনি আহলে বাইতের একজন। আছেন সালেম ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে উমর, যিনি মক্কা নগরীর ফকীহদের একজন। আরো আছেন সায়ীদ ইবনুল মুসাইয়্যিব ও সায়ীদ ইবনে জুবাইর এবং ইবরাহীম নাখায়ীর মতো অকুতোভয় ফকীহ ইমাম।
তাঁদের মতো মনীষী ব্যক্তিত্ব কোনো বিষয়ে একমত হবেন আর তা নবী ও সাহাবীদের যুগে থাকবে না তা কি চিন্তা করা যায়?
《
মুজতাহিদ ইমামগণ হলেন কুরআন-সুন্নাহর ভাষ্যকার এবং কুরআন-সুন্নাহর বিধানের সংকলক। গোটা মুসলিম জাহানের অধিকাংশ মুসলিম তাঁদের ব্যাখ্যা অনুসারেই কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক আমল করেন। তাই তাদের টুপি ব্যবহারের বিষয়টিও উল্লেখ করছি।
《
ইমাম আবু হানীফা উঁচু টুপি পরতেন।-আলইনতিকা, পৃষ্ঠা : ৩২৬; উকুদুল জুমান, পৃষ্ঠা : ৩০০-৩০১
《
كان مالك بن أنس إذا أراد أن يخرج يحدث توضأ وضوءه للصلاة … ولبس قلنسوته ومشط لحيته …
অর্থ : ইমাম মালেক রাহ. যখন হাদীস বর্ণনার জন্য বের হতেন তখন অযু করতেন, টুপি পরতেন ও দাঁড়ি আঁচড়ে নিতেন।-আলজামে, খতীব বাগদাদী ১/৩৮৮, বর্ণনা : ৯০৩
《
ফযল ইবনে যিয়াদ বলেন-
رأيت على أبي عبد الله (الإمام أحمد) … عليه عمامة فوق القلنسوة … وربما لبس القلنسوة بغير عمامة.
অর্থ : আমি ইমাম আহমদকে টুপির উপর পাগড়ি পরিহিত অবস্থায় দেখেছি। … তবে কখনো কখনো তিনি পাগড়ি ছাড়া টুপি পরেছেন।-সিয়ারু আলামিন নুবালা ১১/২২০ (শামেলা)
এ পর্যন্ত আমরা টুপির ক্ষেত্রে নবী-যুগ, সাহাবা-যুগ ও তাবেয়ী-যুগের ইতিহাস পেলাম। আল্লাহর রহমতে আমরা সংশয়হীনভাবে বুঝতে পারলাম যে, এসব যুগে টুপি ছিল এবং মুসলমানদের পোশাক হিসেবে অন্যান্য পোশাকের মতো টুপিরও ব্যাপক প্রচলন ছিল। বলাবাহুল্য, প্রত্যেক প্রজন্ম তার পূর্ববর্তী প্রজন্ম থেকেই দ্বীন শেখে।
সুতরাং তাবেয়ীন থেকে তাবে তাবেয়ীন তাদের থেকে তাদের পরবর্তীগণ এভাবে নবী-যুগ, সাহাবা-যুগের এ সুন্নাহ আমাদের পর্যন্ত এসে পৌঁছেছে। দ্বীনের অন্যান্য বিষয়ের মতো এ বিষয়েও আমরা আমাদের স্বর্ণোজ্জ্বল অতীতের সাথে যুক্ত।
《
《