সোমবার, ১৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

লোকনাথ মন্দিরে অমুসলিমদের দাওয়াতী সফরের কারগুজারী (পর্ব ০১)


দোকানে দোকানে জয় বাবা লোকনাথ লেখা চোখে পরেনি এরকম কম লোকই খুঁজে পাওয়া যাবে । বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের বারদীতে অবস্থিত উপমহাদেশের সনাতন সম্প্রদায়ের অন্যতম আধ্যাত্মিক গুরু হিসেবে খ্যাত লোকনাথ ব্রহ্মচারী মন্দির । গত ৪ তারিখ ১৩ জন সদস্য নিয়ে দ্বীনের একটি জামাত এই মন্দিরে দাওয়াতী সফরের উদ্দেশ্যে গিয়েছিল । আমি অধম ও সেই জামাতে ছিলাম । এই লোকনাথ মন্দিরে বিভিন্ন দেশ থেকে এসে ভক্তগন উপাসনা করে । বিশেষ করে ইন্ডিয়া থেকে পাপ মোচনের উদ্দেশ্যে প্রতি বছর এই মন্দিরে হাজির হয় অনেক ভক্ত । খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে প্রতি মাসে এই মন্দিরে ১২ লক্ষ টাকার শুধু আতপ চালই খরচ হয় ।

Default Ad Content Here


আমরা প্রথমেই লোকনাথ মন্দিরে প্রশাসনিক মন্দিরে যাই । সেখানে গিয়ে মন্দির ঘুরে দেখার জন্য অনুমতি নেই সেই সাথে একজন গাইডের জন্য আবেদন করি । তারা সবকিছুতেই রাজি  হয় । এরপর আমরা সবাই ভাগ হয়ে বিভিন্ন জনকে দাওয়াত দিতে থাকি ।

১ নং ছবিতে যাকে দেখতেছেন সে একজন মুসলমান । আমরা ভেবেছিলাম সে হিন্দু । কিন্তু নাম জিজ্ঞেস করতেই সে বলল, মোঃ + নাম ( নাম ভুলে গিয়েছি ) । আমরা অবাক হয়ে আবার জিজ্ঞেস করলাম । এরপর তার সাথে কুশল বিনিময় করে দাওয়াত দিতে থাকলাম । তাকে জিজ্ঞেস করলাম , কেন সে এখানে এসেছে । জবাব শুনে আরো অবাক হয়েছিলাম । সে কোন এক বাবার মুরিদ । যে কিনা মনে করে সব ধর্মেই আল্লাহ্‌ কে পাওয়া যায় ।

২ নং ছবিতে যাকে দেখতে পাচ্ছেন , তিনি এই মন্দিরের সিকিউরিটি ইনচার্জ । আশেপাশে যারা আছে তারা অনেক দূর দুরান্ত থেকে এসেছে বাবার কাছ থেকে কিছু পাবার আসায় । তাদেরকে দাওয়াত দেওয়া হয় । তারা সবাই দাওয়াত কবুল করে ।

 

 

 

৩ নং ছবিতে যাকে দেখতে পাচ্ছেন তিনি এ মন্দিরের ঠাকুর । অনুমতি নিয়ে পুজা মণ্ডপে প্রবেশ করে ঠাকুরের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয় । ঠাকুরকে আমরা জিজ্ঞেস করি , লোকনাথ কি সৃষ্টিকর্তা কিনা ?
– না ভাই লোকনাথ সৃষ্টিকর্তা না ।
– তাহলে অনেককেই তো তাকে সৃষ্টিকর্তা বলে মানে , তার কাছে চায় ।
– আসলে ভাই আপনাদের ইসলাম ধর্মে ছোটবেলা থেকেই শিশুদেরকে ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া হয় । আর আমাদের ধর্মে এই নিয়ম নাই । লোকনাথ একজন সাধারন মানুষ ছিলেন । তবে তিনি সাধনা করে সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য লাভ করেছেন । সৃষ্টিকর্তা একজন আর তাকেই মানতে হবে , এ কথা ৯০% লোকই জানেনা , আবার যারা জানে তারাও কাউকে বলেনা । এ কারনেই সবাই ভুল জানে ।

(( তাদের ধর্ম গ্রন্থে — ঋগ্বেদে আছে:-
“একং ব্রহ্ম দ্বিতীয়ং নাস্তি, নেহনা নাস্তি কিঞ্চন।
অর্থ: পরমেশ্বর এক তিনি ব্যতীত কেহ নেই।
-কট উপনিষদ ২:১:১১, কল্কিঅবতার এবং মহাম্মদ সাহেব-পৃ.৫৭

* অথর্ববেদে আছে :-
“একো হ দেবো মানসি প্রবিষ্ট:’’
অর্থ: সে ঈশ্বর এক যে ঈশ্বর সকলের অন্তরে প্রবেশ করিয়া মনের কথা জানেন।

* ঋগ্বেদে আছে:-
ত্বমগ্নে দ্রবিণোদা অরংকৃতে ত্বং দেবঃ সবিতা রতঃধা অসি।
ত্বং ভগো নৃপতে বস্ব ইশিষে ত্বং পা যুর্দমে যস্তেহ বিধৎ॥
( ঋগ্বেদ ২, ম-ল, ১ শ্লোক, ৭ নং মন্ত্র)

অর্থ:-পরমেশ্বর স্তবকারীকে ধনদানকারী এবং রত ধারণকারী সবিতা (প্রেরণকারী) দেব। তিনি মানুষের প্রতিপালনকারী, ভজনীয়, ধনের মালিক এবং গৃহে উপাসনাকারীকে রক্ষাকর্তা।

  •  না তাস্তে প্রাতীমা আস্থি ( ঋগবেদ ৩২ অধ্যায় ৩ নং অনুচ্ছেদ )
    অর্থাৎ, ঈশ্বরের কোন প্রতিমূর্তি নেই ।
  • ২. যারা নিজের বিবেক বুদ্ধি হারিয়েছে তাঁরাই মূর্তিপূজা করে ( ভগবৎগীতা অধ্যায় ৭, অনুচ্ছেদ ২০ নম্বর ) ।
    “এক জনই বিশ্বের প্রভু” (ঋকবেদ ১০;১২১;৩) ।

 

যজুর্বেদে মূর্তিপূজার বিরুদ্ধে এবং মূর্তিপূজারীর শাস্তি সম্পর্কে বিধান সম্পর্কে বলা হয়েছে-

  • অন্ধং তমঃ প্রবিশেন্তিÍ যেহসংভূতিমুপাসতে।
    ততো ভুয় ইব তে তমো য উ স্বয়ম্ভূতারতা।
    -যজুর্বেদ ৪০/৯ পৃ২০৫
    অর্থাৎ, ‘‘অন্ধকারে (নরকে) প্রবেশ করবে তারা, যারা প্রকৃতির (যেমন আগুন পানি, বাতাস) পূজা করে। আর যারা হাতে বানানো কিছুর পূজা করে, তারা আরো বেশি অন্ধকারে প্রবেশ করবে।’’ যেমন : চেয়ার, টেবিল, অর্থাৎ মানুষের বানানো বস্তু।

 

হিন্দু ধর্মগ্রন্থে অন্তিম অবতার বা শেষ রাসূল মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম‎)-এর ব্যাপারেও বলা হয়েছে –

  • অন্তিম অবতার বা শেষ রাসূলের নাম হবে ‘নরাশংস’।
    “নরাশংসং সৃধৃষ্টমমপশ্যং সপ্রথস্তমং দিবো ন সদ্মমখসম ॥ ৯
    -ঋগ্বেদ ১/১৮/৯
    আমরা একটু বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, ‘নরাশং ‘ সংস্কৃত ভাষা। যার বাংলা অর্থ হয় ‘প্রশংসিত ব্যক্তি’। যার আরবী অর্থ হয় ‘মুহাম্মদ’। আর সকল মানুষের সর্বশেষ নবীর নাম হলো মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)।

 

অন্তিম অবতারের পিতার নামঃ

  • অন্তিম অবতারের পিতার নাম হবে ‘বিষ্ণু যশা’।
    ‘সুমত্যাং বিষ্ণুযশসা গর্ভমাধত্ত বৈষ্ণবম্।’’
    -কল্কি-পুরান-১/২/১১
    এর বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, ‘বিষ্ণু যশা’শব্দটি সংস্কৃত ভাষা। যার বাংলা অর্থ হয়, ‘মালিকের দাস’। যার আরবী অনুবাদ হয় ‘আবদুল্লাহ’।
    আর সর্ব শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)-এর পিতার নাম ছিল আবদুল্লাহ।

 

অন্তিম অবতারের মাতার নামঃ
অন্তিম অবতারের মাতার নাম সম্পর্কে কল্কি পুরানে লিখা আছে যে, তার নাম হবে ‘সুমতি’।

  • ‘সুমত্যাং মাতরি বিভো। কন্যায়াংত্বন্নিদেশত:।।”
    -কল্কিপুরাণ-১/২/৪
    এর বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, ‘সুমতি’ শব্দটি সংস্কৃত ভাষা।
    যার বাংলা অর্থ হয় ‘নিরাপদ-শান্তি’।
    যার আরবী অনুবাদ হয় ‘আমেনা’। আর সর্ব শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাতার নাম ছিল আমেনা।

 

অন্তিম অবতারের জন্মস্থানঃ
অন্তিম অবতারের জন্মস্থান সম্পর্কে কল্কি পুরানে লেখা আছে, তিনি জন্ম গ্রহণ করবেন , ‘শম্ভল’ নামক স্থানে।

  • ‘শম্ভলে বিষ্ণুযশসো গৃহে প্রদুর্ভবাম্যহম।’’
    -কল্কিপুরাণ-১/২/৪
    এর বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, ‘শম্ভল’ শব্দটি সংস্কৃত ভাষা। যার বাংলা অর্থ হয়, ‘শান্তির স্থান’। যার আরবী অনুবাদ হয় ‘বালাদুল আমিন’। আর মক্কা মুকাররমার নাম হলো, বালাদুল আমিন। আর মুহাম্মদ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কায় জন্মগ্রহণ করেছেন।

 

অন্তিম অবতারের জন্ম তারিখঃ
অন্তিম অবতার ‘মাধব মাসের শুক্ল পক্ষের দ্বাদশ তারিখে জন্মগ্রহণ করবেন।’

  • ‘দ্বাদশ্যাং শুক্লপক্ষস্য মাধবে মাসি মাধবঃ।”
    -কল্কিপুরাণ-১/২/১৫
    মাধব অর্থ বৈশাখ মাস, বিক্রমী ক্যালেন্ডার মতে বৈশাখকে বসন্তের মাস বলা হয়, যার আরবী অর্থ হয় ‘রবি’। শুক্ল পক্ষ, অর্থাৎ ‘প্রথম অংশ’ যার আরবী অনুবাদ হয়, ‘আওয়াল’। একত্রে হয় ‘রবিউল আওয়াল’ দ্বাদশ তারিখ অর্থাৎ ১২ তারিখ।
    আর সর্বশেষ সকল মানুষের নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘রবিউল আউওয়াল মাসের ১২ তারিখে জন্মগ্রহণ করেছেন।

তাদের ধর্মিও গ্রন্থে আছে , জানে কিন্তু মানে না ))

— আমরা সবাই আশ্চর্য হলাম ।

এরপর তার সাথে আরো অনেক কথা হয় । তিনি বললেন ভাই আমি এখানে চাকুরি করি । টাকার বিনিময়ে । এখন পুজার সময় হয়ে গেছে তাই আপনাদের আর সময় দিতে পারছিনা । আমরাও চলে আসলাম ।

আসুন আমরা সবাই তাদের হেদায়েতের জন্য দোয়া করতে থাকি ।

Series Navigationমনপুরায় হিন্দুদের দাওয়াতী সফরের কারগুজারী (পর্ব-০২) >>

Archives

December 2024
S S M T W T F
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031