বৃহস্পতিবার, ১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
Admin | ১,৫৫৫ views | এপ্রিল ২৭, ২০২০ | নির্বাচিত,মনীষীদের জীবনী | ২ | ১১:১২ পূর্বাহ্ণ |
আল্লামা মুফতী আব্দুল মালেক হাফিজাহুল্লাহ
খলিফাঃ শায়খুল হাদীস আল্লামা জমিরউদ্দীন নানুপুরী রহ.
এই মহান মণীষীর জন্ম ১৯৬৯ সালে কুমিল্লায়। পিতা মাওলানা সামছুল হক রহ.। বিদ্যা, প্রজ্ঞা ও মার্জিত আচরণের জন্য যিনি গোটা উপমহাদেশের আলিম সমাজের কাছে অতি পরিচিত। শুধু উপমহাদেশ কেনো, আরব বিশ্বের কাছেও যিনি গবেষক ও জ্ঞানপিপাসুর খেতাব জিতে নিয়েছেন। ধ্যান-জ্ঞান ও একাগ্রতাই ছিলো যার সারা জীবনের শিক্ষা। শিক্ষাজীবন শুরু হয় চাঁদপুর শাহরাস্তির খেড়িহর কওমী মাদরাসা দিয়ে।
তারপর পাকিস্তানের করাচি বিননূরী টাউন জামিয়াতুল উলূমিল ইসলামিয়া থেকে তাকমীল সমাপ্ত করেন। তারপর সেখানেই শায়খ আব্দুর রশিদ নু’মানীর তত্ত্বাবধানে তিন বছর হাদীসশাস্ত্রে তাখাস্সুস করেন। তাখাস্সুস শেষ করেন ১৯৯১ সালে। তারপর দু’ বছর দারুল উলূম করাচিতে শায়েখ তাকী উসমানীর তত্ত্বাবধানে ফিকাহশাস্ত্রে তাখাস্সুস শুরু করে ১৯৯৩ সালে সমাপ্ত করেন।
তাখস্সুস সমাপনী শেষে সৌদি আরবের রিয়াদে শায়খ আব্দুল ফাত্তাহ আবূ গুদ্দাহ-এর তত্ত্বাবধানে প্রায় আড়াই বছর ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত হাদীসশাস্ত্রসহ বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণার কাজ করেন।
জ্ঞান সাধনায় অনুরাগ ও একাগ্রতার উদাহরণ পাওয়া যায় একটি ঘটনায়-পরম একাগ্রতা ও আত্মনিবিষ্ট হয়ে অধ্যয়ন করছিলেন দারুল উলূম করাচির লাইব্রেরীতে। এদিকে লাইব্রেরীয়ান নির্ধারিত সময় দায়িত্ব পালন শেষে লাইব্রেরীয়ান তালাবন্ধ করে চলে যায়।
ওদিকে তিনি লাইব্রেরীতে বসে তিনি অধ্যয়ন করছেন। পড়া-শোনায় এতটাই নিমগ্ন ছিলেন যে. লাইব্রেরী খোলা না বন্ধ ওদিকে খেয়ালই আসেনি। পরে উস্তাদগণ খোঁজা-খুজি করে তাঁকে লাইব্রেরী থেকে আবিষ্কার করেন। একটি বিষয় সমাধানের জন্য ঘেঁটেছেন হাজার হাজার গ্রন্থ। সমাধান ও আবিষ্কারের প্রতি এই শায়খের আগ্রহ অদম্য ও ঈর্ষণীয়। চোখে পড়ার মতো।
১৯৯৬ সালে তিনি ও তার বড় ভাই মুফতী আবুল হাসান আব্দুল্লাহ এবং মুফতী দিলাওয়ার সাহেব মিলে ঢাকায় উচ্চতর ইসলামী শিক্ষা ও দাওয়া প্রতিষ্ঠান ‘মারকাযুদ দাওয়াহ আল-ইসলামিয়া’ প্রতিষ্ঠা করেন।
বর্তমানে তিনি এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাসচিব এবং উলূমুল হাদীস অনুষদের প্রধান। ২০০৫ সাল থেকে মারকাযুদ দাওয়াহ আল-ইসলামিয়ার মুখপত্র মাসিক আল-কাউসারের প্রকাশনা শুরু হয়। তখন থেকে আজ অবধি এই জনপ্রিয় ম্যাগাজিনের তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
তাছাড়া তিনি ঢাকার শান্তিনগর আজরুন কারীম জামে মসজিদের খতিবের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ২০১২ সালে গঠিত বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা কমিশনেরও তিনি একজন সদস্য।
তিনি মাসিক আল-কাউসারসহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ফিকহ, হাদীস, তাফসীর ও আকীদাসহ বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণালব্ধ যেসব প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও ভূমিকা লিখেছেন তার সংখ্যাও কম নয়। দীর্ঘকালের গবেষণা ও শ্রমলদ্ধ সাধনার পর যে সারাংশ ও সারনির্যাস উপস্থাপন করেছেন তা মণি-মানিক্যের চে’ বহুগুণে দামি ও মূল্যবান।
যা আমাদের মতো সাধারণ ছাত্রদের সমাধান করতে বেশ সময় লেগে যাবে। তার রচনা ও গ্রন্থাবলীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো,।
১. তালিবুল ইলমের পথ ও পাথেয়
এই বইটি মূলত ছাত্রদের বিভিন্ন বিষয় ও গ্রন্থে আরোপিত আপত্তি ও জটিল সমস্যা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে মাসিক আল-কাউসারে যে সব প্রশ্ন করা হয়েছে তার খোলাখুলি সমাধান দেওয়া হয়েছে এবং ক্ষেত্র বিশেষে বিশদভাবে জ্ঞানমূলক তথা অ্যাকাডেমিক বিশ্লেষণ করা হয়েছে। যার ফলে এই বইটি একজন তালিবুল ইলম তথা শিক্ষার্থী ও আলেম উভয়ের জন্য এক অতুলনীয় নাযরানা।
২. উম্মাহর ঐক্য: পথ ও পন্থা
এটি মূলত ‘উম্মাহের ঐক্য’ শিরোনামে একটি সেমিনারের ভাষণের লিখিত রূপ। একশ্রেণীর মানুষ আছেন যারা হাদিসের কিছু বই পড়ে গড়গড় করে ফাতাওয়া দিতে থাকেন। যারা মাযহাব মানেন তাদেরকে এবং তাদের আমলকে ঢালাওভাবে ভুল বলতে থাকেন । আহলে হাদীস বা গায়রে মুকাল্লিদ নামে যারা বেশ পরিচিত।
শতবর্ষব্যাপী উম্মাহের দলিলসিদ্ধ স্বীকৃত নিয়ম ও সুন্নাহকে পর্যন্ত অস্বীকার করে দিতে একটুও চিন্তা করেন না তারা। বিশেষতঃ তাদের এমন কর্মের ভয়াবহ পরিণতির দিকে আলোকপাত করেছেন । গায়রে মুকাল্লিদ ভাইদের প্রতি এবং যারা মাযহাব মানেন তাদের প্রতিও তিনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জোড়ালো চিন্তা-ভাবনার পরামর্শ দিয়েছেন বক্ষমাণ বইটিতে।
৩. প্রচলিত ভুল
এটি মূলত মাসিক আল-কাউসারে প্রকাশিত সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন ভূল, কুসংস্কার ও হাদীসের নামে প্রচলিত বানোয়াট গাল-গল্প ইত্যাদি এসব বিষয় নিয়ে যা কিছু লেখা হয়েছে তার সংকলন। এই বইটি সকল পাঠকের জন্য সমান উপকারী।
৪. হাদীস ও সুন্নায় নামাযের পদ্ধতি, ৫. তারাবীর রাকাআত সংখ্যা ও ঈদের নামায, ৬. ঈমান সবার আগে
৭. তাছাউফ ও তত্ত্ব বিশ্লেষণ, ৮. প্রচলিত জাল হাদিস, ৯. প্রবন্ধ সমগ্র ১, ২, ১০. আল-মাদখাল ইলা উলূমিল হাদীসিশ শরীফ (আরবি)।
এই বইটি উলূমুল হাদিস বিষয়ক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যা বিভিন্ন গ্রন্থে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে শায়েখ এতে সেগুলো একত্রিত করে দিয়েছেন। তাছাড়া শায়খ আব্দুর রশিদ নুমানী রহ.-এর মূল্যবান একটি ভূমিকাও আছে এতে।
আরবের একজন খ্যাতনামা বিদ্যান শায়খ আওয়ামা দা.বা. ভূয়সী প্রশংসা করেছেন এই বইটির। এই বইটি আফ্রিকা সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন মাদরাসার উলূমুল হাদিস অনুষদে পাঠ্যতালিকার গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।
তাকে আমার জীবনে কয়েকবার দেখার এবং তার আলোচনা শোনার সৌভাগ্য হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ তায়ালা এ মহান মনিষীর ছায়াকে আমাদের উপর দীর্ঘ করুন।
…
সংগৃহীত!