শুক্রবার, ২১শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৪ঠা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

বাহাইরা মুসলিম নয় কাফের , এদের থেকে সাবধান!!

ইসমাইল হুসাইনঃ  বাহাই ধর্মের উৎপত্তি ও পরিচিতঃ

বাহাই ধর্মের প্রতিষ্ঠাতার নাম মির্যা হোসেন আলী ইবনে আব্বাস।পরবর্তীতে তিনি বাহাউল্লাহ(আল্লাহর ঐশী জ্যোতি) উপাধি ধারন করেন।তিনি একজন শীয়া ছিলেন। তার নামের দিকে সম্পৃক্ত করেই তার মতবাদের অনুসারীদের বাহাই বলা হয়।
.
এই ধর্মের মূল উদ্যোগতা ছিলেন মির্যা আলী মুহাম্মদ বাব।তার জন্ম ১৮২০ সালে মতান্তরে ১৮১৯ সালের অক্টোবর মাসে।তিনি খুব শীঘ্রই ইমাম মাহাদির আত্মপ্রকাশ ঘটবে বলে ঘোষনা দিয়ে পরবর্তীতে নিজেকেই ইমামে গায়েব তথা ঈমাম মাহাদি বলে দাবি করেন। ১৮৪৪ সালের ৩০ মে তিনি নিজেকে ঈশ্বরের অবতার বলে ঘোষনা দেন।তার ঈমান বিধ্বংসী কার্যকলাপে জনরোষ বৃদ্ধি পেলে রাষ্ট্রের শান্তি ভঙ্গের দায়ে ১৮৫০ সালে তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।
আলী মুহাম্মদ বাবের মৃত্যুদন্ডের পর ইয়াহিয়া নামক এক ব্যক্তি সুবহে আযল ছদ্মনাম ধারন করে বাবীদের নেতৃত্ব প্রদান করে।তার নেতৃত্বে বাবীরা সংগঠিত হয়ে ধর্মগুরুর হত্যার প্রতিশোধ নিতে ১৮৫২ সালে তৎকালীনপারস্য সম্রাটের উপর ব্যর্থ হামলা চালায়।
.
এই ব্যর্থ হামলায় হোসেন আলী ওরফে বাহাউল্লাহ ধৃত হন।কৃত অপরধের জন্য তাকে ভূগর্ভস্থ অন্ধকার কারাগারে বন্দী করা হয়।কারাগারে থাকা অবস্থায় তিনি নিজেকে এক স্বতন্ত্র শরীয়তদাতা হিসেবে দাবী করেন এবং নিজেকে ঈশ্বরের অবতার বলে ঘোষনা দেন।
.
বাহাউল্লাহ পারস্যের জনৈক প্রভাবশালী মন্ত্রী পুত্র হওয়ার ফলে বৃটিশ ও রাশিয়ান দূতাবাসের হস্তক্ষেপে তিনি অন্ধকার কারাগার থেকে মুক্ত হোন।কিন্তু জন অসন্তোষ দানা বাধায় সেখানে তার বসবাস করা সম্ভব হয়নি।তিনি তার অনুসারীদের নিয়ে ইরাকের বাগদাদে নির্বাসনে চলে যান।সেখান থেকেই তিনি বাহাই ধর্মের প্রচার প্রসার করতে থাকেন।অবশেষে ১৮৯২ সালের ২৯ মে তিনি মৃত্যুবরন করেন।তাকে ইসরাইলের কামেল পর্বতে দাফন করা হয়।সেখানে বর্তমানে তাদের তীর্থ মন্দির অবস্থিত।এই তীর্থ মন্দিরকে “ইউনিভার্সাল হাউজ অফ জাস্টিস” বলা হয়।এখান থেকেই সারা বিশ্বে বাহাই ধর্মের প্রচার প্রসার হয়ে থাকে।
.
বর্তমানে সারাবিশ্বে বাহাইরা বিস্তৃতি লাভ করেছে।নাহাইদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৯১৭ সালের মে মাস নাগাদ সারা বিশ্বের অনেক অঞ্চলে তাদের অনুসারী রয়েছে।বাংলাদেশেও তাদের অপততপরতা বিদ্যমান রয়েছে।১৯৯৯ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে ৩২ হাজার বাহাই রয়েছে। বর্তমান প্রাপ্ত তথ্যানুসারে বাংলাদেশে প্রায় ৪ লক্ষ বাহাই রয়েছে।
.
বাহাইদের ভ্রান্ত আকিদা ও মতবাদঃ
১।বাহাউল্লাহ ইসলামী শরীয়তকে রহিত বলে ঘোষণা করেছেন।
২।তার রচিত ধর্মগ্রন্থের নাম কিতাব ই আকদাস বা কিতাবে ঈক্কান।বাহাই ধর্ম মতে কিতাবে ঈক্কান একটি আসমানী গ্রন্থ।
৩। তারা ইসলামের মৌলিক বিধান হাশর নাশর,জান্নাত জাহান্নাম,হজ্ব,যাকাত ইত্যাদিকেও অস্বীকার করে।
৪। বাহাউল্লাহর দাবি মোতাবেক তিনিও অবতার রূপে খোদা।তার লেখা ও বানী ঐশী তুল্য।
৫। মির্যা আলী মুহাম্মদ বাব হলেন ইমাম মাহাদি ও ঈসা মসীহ।
৬। শ্রীকৃষ্ণ,গৌতম বুদ্ধ এরাও ঈশ্বরের অবতার বা নবী।
৭। পৃথিবীর সব ধর্ম ও মতবাদই আল্লাহ প্রদত্ত ধর্ম বা দ্বীন।
৮।তাদের বিশ্বাস মতে নবুয়্যাতের দরজা বন্ধ হয়ে যায়নি।যুগে যুগে আরো নবী আসবেন।
৯। বায়তুল্লাহর জিয়ারতকে বাহাই ধর্মে রহিত করে ইসরাইলে আকা হলো তাদের তীর্থস্থান।বাহাই ধর্মমতে বছরে ৯ দিন ইসরাইলের “ইউনিভার্সাল হাউজ অফ জাস্টিস” মন্দিরে তীর্থ করতে যাওয়া বাহাইদের জন্য ফরজ।
১০। তাদের বিশ্বাস পৃথিবীর সব জিনিসই পবিত্র।
১১। পৃথিবীর সব খাবারই জায়েজ।
১২। বীর্যপাত ঘটলে কেউ অপবিত্র হয়না।
১৩। বাহাউল্লাহর মতে দুটো ও তার পুত্র আব্দুল বাহার মতে একাধিক বিবাহ নিষিদ্ধ।
১৪। ভিন্ন ধর্মালম্বীদের বিবাহ করা বৈধ।
১৫। বাহাইরা পরস্পর সাক্ষাতে আল্লাহ আবহা বলবে।
১৬। বাহাই মেয়েরা পিতার সম্পত্তি পাবেনা।
১৭। বাহাই ধর্মে ১৯ দিনে মাস,১৯ মাসে বছর,২১ মার্চ হলো বাহাই নববর্ষ।
১৮। বছরে ৫দিন তাদের নিকট অত্যন্ত বরকতময়।
১৯। বাহাই ধর্মে পিতার স্ত্রী ছাড়া সকলকে বিবাহ করা জায়েজ।বোন,খালা,ফুফু,দুধ মা,মেয়তে নাতনী সহ সবাইকে বিবাহ করা জায়েজ।(কিতাবুল আকদাসঃ২৩৫)
২০। বাহাই ধর্মে অন্যরকম ভাবে নামাজ আদায় করা হয়।তারা ৩ ওয়াক্ত ৯ রাকআত নামাজ পড়ে।তিন ওয়াক্ত না পড়লেও চলবে তবে এক ওয়াক্ত পড়া ফরজ।
২১। এই ধর্মে নবী ৯জন।যথা-ইব্রাহীম,কৃষ্ণ,গৌতম,মুসা,বুদ্ধ,যরথ্রুষ্ট,যিশু,মুহাম্মদ,মির্যা আলী মুহাম্মদ বাব ও বাহাউল্লাহ।
২২। বাহাই ধর্মে নির্দিষ্ট কোনো কালেমা নেই।কেবল বাহাউল্লাহর উপর বিশ্বাস করলেই বাহাই বলে সাব্যস্ত হবে।
২৩। বাহাইদের ধর্ম মতে জিহাদ নিষিদ্ধ।
২৪। বাহাউল্লাহর কবরের দিকে মুখ করে প্রার্থনা করতে হবে।
২৫। তালাক ছাড়াই একজন স্ত্রী তার স্বামী পরিবর্তন করতে পারবে।
.
সুতরাং বাহাই ধর্মালম্বীরা ইসলাম ধর্মের কোনো অংশ নয়।কাদিয়ানীদের মত তারাও কাফের।বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে খৃষ্টান মিশনারী,কাদিয়ানি ও বাহাইদের অপতৎপরতা আশংকাজনকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে।সুতরাং মুসলমানের কাছে ঈমান বৃদ্ধির দাওয়াত ও অমুসলিম ভাইদের জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাতে ঈমানের দাওয়াত নিয়ে দ্বারে দ্বারে বারে বারে যাওয়ায় এখন সময়ের দবি মাত্র।

Default Ad Content Here

Archives

December 2024
S S M T W T F
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031