উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
বাবিয়্যাত বা বাহায়িয়্যাত ফিরক্বাটি ইসলাম বহির্ভূত একটি ভিন্ন সম্প্রদায়। হিন্দু, বৌদ্ধদের মতই আলাদা একটি মানবরচিত ধর্ম। এ কথিত ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা এবং অনুসারী সবাই কাফির। এতে কোন প্রকার সন্দেহ নেই।
দ্বীনে মুহাম্মদী এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শরীয়তের সাথে এদের কোন ন্যুনতম সম্পর্ক নেই।
ইরানের “শায়খিয়্যাহ” ফিরক্বার সাথে সম্পর্কিত “আলী মুহাম্মদ” নামের ব্যক্তি যার জন্ম ১৮১৯ ঈসাব্দে এবং মৃত্যু ১৮৫০ ঈসাব্দে। লোকটি ১৮৪৪ ঈসাব্দের দিকে দাবী করে যে, সে ইমাম মাহদী আলাহিস সালাম পর্যন্ত পৌঁছার “বাব” তথা দরজা।
ইরানী সরকার ইসলাম বিরোধী আকীদা ও দৃষ্টিভঙ্গি রাখার অপরাধে ১৮৫০ ঈসাব্দে তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করে।
এরপর “হুসাইন আলী নূরী” নামের এক শিয়া ব্যক্তি তার স্থলাভিষিক্ত দাবী করে “বাহাউল্লাহ” হবার দাবী করে।
“মীর্যা আলী মুহাম্মদ” “বাব” হবার দাবী করে যেসব ধ্যান ধারণা পোষণ করতো এবং প্রচার করতো সেটিকে “বাবিয়্যাত” নামে পরিচয় দেয়া হয়।
স্থলাভিষিক্ত দাবীদার “বাহাউল্লাহ” তার অনুসারীদের “বাহায়ী” বলে আখ্যায়িত করে।
বাহাউল্লাহ ঘোষণা করেঃ
ليس لأحد أن يتمسك اليوم إلا بما ظهر فى هذا الظهور (اقدس-80)
অর্থাৎ বাহাউল্লাহ যা কিছু বলে, তা পুরোটাই হুজ্জত বা অকাট্য দলীল, এর আগের সব কিছুই রহিত হয়ে গেছে। (আকদাস-৮০)
বাহাউল্লাহর দাবী মতে ইসলামের নতুন সংস্করণের নাম হল ‘বাহায়িয়্যাত’। তার মতে আল্লাহ ইসলাম রহিত করে ‘বাহায়িয়্যাত” ধর্ম প্রবর্তন করেছেন।
তার মতে তার রচিত বই “আকদাস” কুরআনের স্থলে নাজিল হয়েছে। (নাউজুবিল্লাহ)
ইরান সরকার বাহাউল্লাহকে ১৮৬৮ থেকে ১৮৯২ “উকা” নামক স্থানে বন্দী করে রাখে। “উকা” উত্তর ফিলিস্তিনের একটি এলাকার নাম। যেখানে বিপদজনক চোর ডাকাত ও অপরাধীদের আমৃত্যু বন্দী রাখা হয়।
চল্লিশ বছর বন্দী থাকার পর ১৮৯২ ঈসাব্দে উকায় সে মৃত্যুবরণ করে। সেখানেই তাকে মাটিতে পুতে ফেলা হয়।
এ কারণে বাহায়ীরা উকাকে তাদের “কেন্দ্র” মনে করে। মৃত্যর পূর্বে সে তার বড় ছেলে “আব্দুল বাহা আব্বাস আফিন্দী” কে তার স্থলাভিষিক্ত নির্বাচন করে। আরেক ছেলে “শুকী আফিন্দী” কে পরবর্তী গদিনিশীন নির্ধারণ করে যায়।
কিন্তু পরবর্তীতে গদিনিশীন হওয়া নিয়ে তাদের মাঝে প্রচন্ড ঝগড়া বিভেদ হয়। ফলে গদিনিশীন বাদ দিয়ে “বাইতুল আদল” নামের তাদের কমিটি তা পরিচালনার ভার নেয়।
ভারতে বাহায়ীদের বেশ ক’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। এর মাঝে দিল্লীতে তাদের সর্ববৃহৎ মন্দির রয়েছে।
দিল্লী ছাড়াও বোম্বে ইত্যাদি শহরে তাদের যথেষ্ট অনুসারী রয়েছে। বাংলাদেশেও তাদের কতিপয় অনুসারী দেখা যায়।
বাহায়ী ফিরক্বা কাফির। ইসলাম ও মুসলমানদের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই।
তাদের কয়েকটি কুফরী আকীদা সূত্রসহ উল্লেখ করা হল।
১
তাদের মতে শেষ নবী মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরও নবী আসা ও ওহী আসার সিলসিলা খতম হয়নি। (আলওয়াহ-৩৭)
২
বাহাউল্লাহ নিজেকে রাসূল হবার দাবী করেছে। [কিতাব মুবীন-৬৭, আখবারে কাউকাব-১/৪)
৩
বাহাউল্লাহ নিজেকে মসীহ মওউদ হবারও দাবী করেছে। (কাউকাবে হিন্দ-১, ১৯২৪ ঈসাব্দ)
৪
তাদের মতে দ্বীনে মুহাম্মদী ১২৬০ হিজরীতে রহিত হয়ে গেছে, এখন বাহায়ী দ্বীন আমলযোগ্য। (মি’য়ারুস সহীহ ফী মা’রিফাতি জুহুরুল মাহদী ওয়াল মাছীহ-৬৩-৬৪)
৫
তাদের মতে “কিতাবে আকদাস” নামের কিতাব তিলাওয়াত করা পূণ্যের কাজ। শুধু তাই নয়, অন্যান্য আসমানী কিতাবের চেয়ে এটি উত্তম। [কিতাবে আকদাস-৮১] এছাড়া তাদের আকীদা ও আমল এমন যার সাথে কুরআন সুন্নাহ এবং মুতাওয়াতির হাদীসের সাথে যার কোন সম্পর্ক নেই।
তাদের ইবাদত ও ধর্মীয় কালচার ইসলামী শরীয়ত থেকে আলাদা ও স্বতন্ত্র।
এরা হিন্দু বৌদ্ধদের মতই মানবরচিত আলাদা একটি ধর্মমতের অনুসারী। কাফির। পরিস্কার কাফির। এদের সাথে মুসলমাননদের আত্মীয়তার সম্পর্ক করা বৈধ নয়। তাদের মুসলমানদের কবরস্থানে দাফন করা যাবে না।
مَّا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِّن رِّجَالِكُمْ وَلَٰكِن رَّسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ ۗ وَكَانَ اللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا [٣٣:٤٠]
মুহাম্মদ তোমাদের কোন ব্যক্তির পিতা নন; বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী। আল্লাহ সব বিষয়ে জ্ঞাত। [সূরা আহযাব-৪০]
الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا ۚ [٥:٣]
আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম। [সূরা মায়িদা-৩]
هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَىٰ وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ [٦١:٩]
তিনি তাঁর রসূলকে পথ নির্দেশ ও সত্যধর্ম নিয়ে প্রেরণ করেছেন, যাতে একে সবধর্মের উপর প্রবল করে দেন যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে। [সূরা সফ্ফ-৯]
قُلْ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا الَّذِي [٧:١٥٨]
বলে দাও, হে মানব মন্ডলী। তোমাদের সবার প্রতি আমি আল্লাহর প্রেরিত রসূল, [সূরা আরাফ-১৫৮]
وَمَن يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَن يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ [٣:٨٥]
যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, কস্মিণকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে ক্ষতিগ্রস্ত। [সূরা আলে ইমরান-৮৫]
إِنَّ الدِّينَ عِندَ اللَّهِ الْإِسْلَامُ ۗ [٣:١٩]
নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম। [সূরা আলে ইমরান-১৯]
والمراد بالضروريات على ما اشتهر فى الكتب: ما علم كونه من دين محمد صلى الله عليه وسلم بالضرورة، بأن تواتر عنه واستفاض، وعلمته العامة كالوحدانية والنبوة وختمها بخاتم الأنبياء وانقطاعها بعده هذا مما شهد الله به فى كتابه وشهدت به الكتب السابقة وشهد به نبينا صلى الله عليه وسلم (مجموعة رسائل الكشميرى، اكفار الملحدين-2\3،)
دعوى النبوة بعد نبينا صلى الله عليه وسلم كفر بالإجماع (شرح فقه أكبر-202)
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
ইমেইল– [email protected]