শুক্রবার, ১৯শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১লা রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

নবীজির প্রতি দুরুদ ও সালাম – তারাবীহ ১৯তম পাঠ

This entry is part 19 of 27 in the series দরসে তারাবীহ


আজ ১৯তম তারাবিতে সূরা আহজাব (৩১-৭৩), সূরা সাবা, সূরা ফাতির এবং সূরা ইয়াসিন (১-২১) পড়া হবে। পারা হিসেবে পড়া হবে ২২তম পারা।

Default Ad Content Here

৩৩. সূরা আহজাব: (৩১-৭৩) একুশতম পারার শেষাংশে নবীপত্নীদের সম্পর্কে কিছু আলোচনা ছিল। সে ধারাবাহিকতায় ২২তম পারার শুরুতেও নবী পরিবারকে হেদায়েতমূলক কিছু নসিহত করা হয়েছে। নবীজীবনের শেষ দিকে মুসলমানদের আর্থিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে নবীপত্নীরা ভরণপোষণ একটু বাড়িয়ে দেওয়ার আবেদন জানান। তখন তাদের বলা হয়, যদি সম্পদের প্রাচুর্য চাও তাহলে নবীজি থেকে পৃথক হয়ে যাও, আর আখেরাতের চিরস্থায়ী নেয়ামত চাইলে কষ্ট সহ্য করে নবীজির সঙ্গেই থাক। নবীপত্নীরা নবীজির সাহচর্য ও আখেরাতকে প্রাধান্য দেন।

এরপর নবীপত্নীদেরকে এবং নারী জাতীকে লক্ষ করে কিছু নসিহত করা হয়েছে, ‘(প্রয়োজনে) পুরুষদের সঙ্গে কথা বলতে হলে কোমলতা অবলম্বন করবে না, ঘরেই থাকবে, অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের হবে না, জাহেলি যুগের নারীদের মতো নিজেদের বেশভূষা জাহির করে বের হবে না, সালাত কায়েম করবে, জাকাত আদায় করবে, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করবে এবং কোরআন তেলাওয়াত ও হাদিসের চর্চা অব্যাহত রাখবে।’ (২৮-৩৪)।

আরো পড়ুন: এবারের রমজান মুসলমানদের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ: মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক

এরপর দশটি গুণের কথা বলা হয়েছে। গুণগুলো যাদের মধ্যে থাকবে তাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও বিশেষ পুরস্কার। গুণগুলো হল, ইসলাম, ঈমান, সদা আল্লাহর আনুগত্য, সততা ও সত্যবাদিতা, ধৈর্য, বিনয়-খুশু, সদকা, সিয়াম, লজ্জাস্থানের হেফাজত, বেশি বেশি আল্লাহর জিকির। (৩৫)।

এরপর পালকপুত্রের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীকে বিয়ে (৩৭), নবীজির খতমে নবুয়ত (৪০), নবীজির বহুবিবাহ (৪৯-৫২) প্রসঙ্গে আলোকপাত করা হয়েছে। সূরায় বিশেষ কিছু আদব ও শিষ্টাচারের কথা বলা হয়েছে, ‘কারও ঘরে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করো না। কারও বাড়িতে দাওয়াতে গেলে খাওয়াদাওয়া শেষ করে স্থান ত্যাগ করো, অনর্থক কথাবার্তায় মশগুল হয়ে মেজবানের সময় নষ্ট করা উচিত নয়। যাদের সঙ্গে পর্দা করা ফরজ, এমন নারীর কাছে কোনো জিনিস চাওয়ার প্রয়োজন হলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে।’ (৫৩-৫৪)।

এরপর নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দরুদ ও সালাম পাঠের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। (৫৬)। ৫৭-৫৯নং আয়াতে মোমিন নর-নারীকে উত্যক্ত করার শাস্তি প্রসঙ্গে আলোচনার পর সূরার শেষে বলা হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআন এবং বিভিন্ন আমানত পালনের দায়িত্ব বিশেষভাবে মানুষকে দান করেছেন। পাহাড়-পর্বত, আসমান-জমিন এই আমানতের দায়িত্ব গ্রহণ করতে অক্ষমতা প্রকাশ করেছিল। সুতরাং আমানত পালনে যে কোন ধরনের অবহেলা মানুষকে জাহেল ও জালেমে পরিণত করবে।

৩৪. সূরা সাবা: (মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ৫৪, রুকু ৬)

আল্লাহর প্রশংসার কথা উল্লেখ করে সূরার সূচনা। এরপর সূরায় আখেরাত ও পুনরুত্থান দিবস প্রসঙ্গে আলোচনা রয়েছে। এরপর দাউদ ও সুলাইমান (আ.) এবং সাবাবাসীকে প্রদত্ত আল্লাহর নেয়ামত প্রসঙ্গে আলোকপাত করা হয়েছে। নবীরা ছিলেন কৃতজ্ঞ আর সাবাবাসী ছিল অকৃতজ্ঞ। কৃতজ্ঞ ও অকৃতজ্ঞদের পরিণাম সম্পর্কে বলা হয়েছে। (১০-২১)। সূরায় মুশরিকদের কিছু ভ্রান্ত বিশ্বাস রদ করা হয়েছে। (২২-২৭)।

আরো পড়ুন: টিভির লাইভে ইমামের অনুসরণে তারাবি, কী বলছেন ইসলামী চিন্তাবিদরা!

পার্থিব জীবনে সম্পদের প্রাচুর্য দেখে যারা আল্লাহকে ভুলে যায় তাদের নিন্দা করা হয়েছে। আর বলা হয়েছে, রিজিকের মালিক একমাত্র আল্লাহ তায়ালা, সম্পদের প্রাচুর্যদান বা সংকোচন তো তারই হাতে। (৩৬)। কেয়ামতের দিন কাফেরদের অসহায়ত্বের আলোচনা করে সূরাটি সমাপ্ত হয়েছে। (৫৪)।

৩৫. সূরা ফাতির: (মক্কায় অবতীর্ণ আয়াত ৪৫, রুকু ৫)

সূরায় আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদ এবং সঠিক দ্বীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকার ব্যাপারে তাগিদ প্রদান করা হয়েছে। মুশরিকদের ভ্রান্ত কিছু যুক্তি খ-ন করে আল্লাহ তায়ালার অস্তিত্ব প্রসঙ্গে বিভিন্ন প্রমাণ পেশ করা হয়েছে। (৯)। ১৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে, “হে লোকসকল, তোমরা সকলে আল্লাহর কাছে মুখাপেক্ষী, আর আল্লহই হলেন নির্মুখাপেক্ষী, চিরপ্রশংসার্হ”। ঈমান ও কুফরের মাঝে পার্থক্য বিধান করার লক্ষ্যে এক অনুপম দৃষ্টান্ত পেশ করা হয়েছে- ‘অন্ধ-চক্ষুষ্মান, আঁধার-আলো, রোদ-ছায়া যেমন কখনও সমান হতে পারে না, তেমনই ঈমান ও কুফরও সমান হতে পারে না।’ (১৯-২২)।

আল্লাহর নেয়ামতের বর্ণনা দিয়ে বলা হয়েছে, বিভিন্ন রং ও স্বাদের ফুল-ফলাদি, সাদা-কালো এবং লাল-নীল রঙের সারি সারি পাহাড়, বিভিন্ন রং, ভাষা এবং স্বভাবের মানুষ, হাজারো ধরনের পশুপাখি, মাছ ও চতুষ্পদ জন্তু- সবই মহান আল্লাহ তায়ালার কুদরতের সুস্পষ্ট দলিল। এরপর কোরআন তেলাওয়াতকারীদের ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে। (২৯-৩০)।

আরো পড়ুন: ১৮তম তারাবি: কোরআন আল্লাহ তাআলার সত্য কালাম এবং জীবন্ত মোজেজা

সঙ্গে উম্মাতে মুহাম্মদির প্রশংসা করা হয়েছে। আল্লাহ এ উম্মতকে কোরআনের মতো মহানেয়ামত দান করেছেন। কিন্তু কোরআন নাজিলের পর কোরআনের বিধান রক্ষা করে চলার ক্ষেত্রে এ উম্মত তিনভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। জালেম, যাদের নেকির তুলনায় গোনাহের পরিমাণ বেশি। মধ্যম শ্রেণি, যাদের নেকি-বদির পাল্লা প্রায় বরাবর। এবং অগ্রগামী, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.) এর তাঁবেদারির ক্ষেত্রে যারা অগ্রগামী। তবে আল্লাহর রহমতে এ তিন শ্রেণির সর্বশেষ ও চিরস্থায়ী ঠিকানা হবে জান্নাত। কেউ বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে আর কেউ পাপের শাস্তি ভোগ করার পর।

সূরার শেষাংশে আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহ ও সহনশীলতার কথা তুলে ধরা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা দুনিয়ায় গোনাহগার বান্দাদের তাৎক্ষণিক সাজা দেন না। যদি এমনই হতো, তাহলে পৃথিবীতে কোনো গোনাহগার-পাপী বেঁচে থাকতে পারত না। ৩৬. সূরা ইয়াসিন (মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ৮৩, রুকু ৫) ‘নবী মুহাম্মদ (সা.) সত্য রাসুল’ সূরার শুরুতে কোরআনের কসম খেয়ে আল্লাহ তায়ালা এ কথা বলেছেন। (২-৪)।

এরপর কুরাইশ-কাফেরদের আলোচনা করা হয়েছে। তারা কুফুর ও ভ্রষ্টতায় সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল, ফলে তারা আল্লাহর ক্রোধের পাত্র হয়। এরপর বলা হয়েছে, উপদেশ বাণী শুনে শুধু বিশ্বাসীরাই সতর্ক হয়। এ কথার পরিপ্রেক্ষিত আল্লাহ তায়ালা একটি জনপদের বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসী লোকদের দৃষ্টান্ত টেনেছেন। ঘটনাটির পূর্ণ বিবরণ আগামীকাল আলোচিত হবে। (১১-২১)।

লেখক:মাওলানা রাশেদুর রহমান ।। পেশ ইমাম ও খতীব, কেন্দ্রীয় মসজিদ, বুয়েট

Series Navigation<< কোরআন আল্লাহ তাআলার সত্য কালাম এবং জীবন্ত মোজেজা – তারাবীহ ১৮তম পাঠকোরআনের উপদেশ সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য – তারাবীহ ২০তম পাঠ >>

Archives

October 2024
S S M T W T F
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031