শনিবার, ২০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২রা রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

পশুপাখির জীবনচক্রে রয়েছে বহু শিক্ষা – তারাবীহ ১১তম পাঠ

This entry is part 11 of 27 in the series দরসে তারাবীহ


আজ ১১তম তারাবিতে সূরা হিজর এবং সূরা নাহল পড়া হবে। পারা হিসেবে আজ পড়া হবে ১৪তম পারা।

Default Ad Content Here

১৫. সূরা হিজর: (মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ৯৯, রুকু ৬) এ সূরায় ‘হিজর’ উপত্যকায় বসবাসকারী কওমে সামুদের আলোচনা থাকায় সূরার নাম হিজর। হিজর উপত্যকা মদিনা ও শামের মধ্যখানে অবস্থিত। সূরার সূচনা হুরুফে মুকাত্তাআত দিয়ে এবং প্রথম আয়াতে কোরআনের পরিচয় ও গুণাগুণ বর্ণনা করা হয়েছে। সূরাটির মাঝে ইসলামের বুনিয়াদি আকিদার দৃঢ়তা বর্ণনা করা হয়েছে।

এ সূরার গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাগুলো হলো : ১. কেয়ামতের দিন কাফেররা শাস্তির কঠোরতা দেখে আকাক্সক্ষা করবে, ‘হায়, যদি মুসলমান হতাম।’ কিন্তু তাদের সেদিনের এ আকাক্সক্ষা কোনো কাজেই আসবে না। দুনিয়ায় তারা নবীজিকে পাগল বলছে এবং তাঁর ঈমানি দাওয়াত গ্রহণ না করে পূর্ববর্তীদের মতো অস্বীকারের পথ বেছে নিয়েছে। সুতরাং আগামীকাল তাদের হাশর তাদের জাহান্নামি বন্ধুদের সঙ্গেই হবে। (২-৬)। ২. কোরআন কারিম একমাত্র আসমানি গ্রন্থ, যা হেফাজতের দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ নিয়েছেন। তাই কোরআন চিরকাল অবিকৃত থাকবে। (৯)।

৩. সূরার ১৬ থেকে ২২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালার কুদরত ও একত্ববাদের প্রমাণ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ৪. তাওহিদসংক্রান্ত প্রমাণাদি বর্ণনার পর মানুষ সৃষ্টির সূচনালগ্নের কাহিনি বর্ণনা করা হয়েছে। আদম (আ.) এর সৃষ্টির সময় থেকেই ইবলিস মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। তাই শয়তানের পথ পরিহার করে মুত্তাকিদের পথ অবলম্বনের ফায়দা বর্ণনা করা হয়েছে। মুত্তাকিদের ঠিকানা হলো জান্নাত। (২৬-৪৮)।

৫. জান্নাতের আলোচনার পর সূরা হিজর বান্দার প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহের আলোচনা করেছে। বান্দা যত গোনাহ করুক, নিরাশ হওয়ার কিছু নেই। রবের রহমতের দুয়ার তার জন্য সদা উন্মুক্ত। অবশ্য এ কথাও মনে রাখা চাই, তাঁর শাস্তিও বড় কঠিন (৪৯-৫০)। ৬. বুড়ো বয়সে ইবরাহিম (আ.) এর সন্তান লাভ (৫১-৫৬), গোনাহের কারণে নবী লুত ও সালেহ (আ.) এর সম্প্রদায়ের ধ্বংস (৫৮-৮৪) প্রসঙ্গে আলোচনার পর বলা হয়েছে, ‘কোরআনের’ নেয়ামত যে পেল, সম্পদশালীদের প্রতি দৃষ্টি প্রসারিত করা তার শান ও মানের খেলাফ, উচিতও নয়। পূর্ববর্তী সূরা ইবরাহিমের মতো এ সূরার সূচনা ও সমাপ্তিতেও রয়েছে কোরআনের আলোচনা। (৮৭-৯৪)।

১৬. সূরা নাহল: (মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত সংখ্যা ১২৮, রুকু ১৬) নাহল বলা হয় মৌমাছিকে। যেহেতু এ সূরায় মৌমাছির আলোচনা রয়েছে, সেদিকে ইঙ্গিত করে সূরার নাম রাখা হয়েছে নাহল। মৌমাছি সাধারণ মাছির মতোই। কিন্তু আল্লাহর হুকুমে সে বিস্ময়কর সব কর্ম সাধন করে। চাক বানানো, আপসে বিভিন্ন দায়িত্ব বণ্টন করা, দূরে বহুদূরে অবস্থিত বৃক্ষলতা, গাছপালা, বনবনানি ও ফসলি খেত থেকে ফোঁটা ফোঁটা করে মধু সংগ্রহসহ কত কিছু যে করে ছোট্ট এই প্রাণীটি। তার সব কাজই বড় বিস্ময়কর। ‘চিন্তাশীলদের জন্য এতে রয়েছে চিন্তার বহু খোরাক।’ (৬৯)। যদি কোনো উদার মনের মানুষ শুধু মৌমাছির জীবনচক্রের ব্যাপারে চিন্তা করে, তাহলে সে আল্লাহর অস্তিত্ব, তাঁর অসীম কুদরত ও সূক্ষ্ম হিকমতের স্বীকারোক্তি না করে পারবে না।

সূরা নাহলের অপর নাম সূরা নি’আম। কেননা এ সূরায় অনেক বেশি পরিমাণে আল্লাহর নেয়ামতের কথা আলোচিত হয়েছে। সূরার শুরু থেকে অধ্যয়ন করলে দেখা যায়, প্রথমে কেয়ামত ও ওহির আলোচনা করা হয়েছে। মুশরিকরা তা অস্বীকার করত। এরপর আল্লাহ তায়ালার অসংখ্য নেয়ামতের ধারাবাহিক বর্ণনা শুরু হয়েছে। তিনি পৃথিবীকে বিছানা আর আসমানকে ছাদ বানিয়েছেন। মানুষকে বীর্য থেকে সৃষ্টি করেছেন, চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছেন। এগুলোতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের উপকার। তিনিই সৃষ্টি করেছেন ঘোড়া, গাধা ও খচ্চর। এগুলো মানুষের বোঝা বহনের কাজে আসে এবং তার জন্য হয় সৌন্দর্যের প্রতীক। বৃষ্টি তিনিই বর্ষণ করেন, তারপর সেই বৃষ্টি থেকে জয়তুন, খেজুর, আঙুরসহ আরও বহু ফলমূল ও লতাগুল্ম তিনিই সৃষ্টি করেন। রাত-দিন, চাঁদ-সূর্য সবই তাঁর সৃষ্টি। এগুলোকে তিনি সর্বদা মানুষের সেবায় নিয়োজিত রেখেছেন। দরিয়ায় তাজা মাছের মাংস এবং অলংকার তিনিই প্রস্তুত করেন। সাগরের বুকে জাহাজ তাঁরই হুকুমে চলে। রক্ত ও গোবরের মাঝখান থেকে সাদা দুধ তিনিই বের করে আনেন।

উল্লেখিত ও অন্যান্য বহু নেয়ামতের আলোচনা প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘যদি তোমরা আল্লাহর নেয়ামত গণনা করতে চাও, তাহলে গুনে শেষ করতে পারবে না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলা মহা ক্ষমাশীল, অনেক বড় মেহেরবান।’ (১৮)।

এ সূরায় সেই প্রসিদ্ধ আয়াতটি রয়েছে, যা সম্পর্কে নবীজির প্রিয় সাহাবি আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা.) বলেছেন, কোরআন কারিমের এই আয়াতে দুনিয়ার যাবতীয় বিষয়ের পূর্ণাংগ দিকনির্দেশনা রয়েছে। খলিফা ওমর ইবন আবদুল আযিয (রহ.) এর খেলাফতের সময়ে প্রত্যেক খতিব জুমার খুতবায় ব্যাপক অর্থবোধক এই আয়াতটি পাঠ করতেন এবং বর্তমানেও প্রতি জুমার খুতবায় পাঠ করা হয়। এটি সূরার ৯০ নম্বর আয়াত। এ আয়াতে ইনসাফ, সদ্ব্যবহার এবং নিকটাত্মীয়দের দান করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে সব ধরনের নিকৃষ্ট কথা ও কাজ, শরিয়তের অপছন্দীয় কর্মকা- এবং জুলুম ও ঔদ্ধত্য থেকে নিষেধ করা হয়েছে।

সূরার শুরুর আয়াতগুলো ছিল তাদের প্রশ্নের জবাবে, যারা রাসুলের কাছে দ্রুত আজাব নিয়ে আসার তাগিদ জানাত। এসব বেহুদা দাবির কথা শুনে নবীজি (সা.) এর মন খারাপ হতো। তাই সূরার শেষের আয়াতগুলোতে নবীজিকে সবরের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।

লেখক:মাওলানা রাশেদুর রহমান ।। পেশ ইমাম ও খতীব, কেন্দ্রীয় মসজিদ, বুয়েট

Series Navigation<< পবিত্র কোরআন অকাট্য, নির্ভুল এবং ধ্রুব সত্য – তারাবীহ ১০ম পাঠদাজ্জালের ফেতনা থেকে বাঁচার উপায় – তারাবীহ ১২তম পাঠ >>

Archives

October 2024
S S M T W T F
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031