শনিবার, ২০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২রা রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
বাসায় ত্রিমুখী ঝগড়া শুরু হয়েছে। দুই ভাই আর তাদের মা। ছোট ভাই বসে বসে টিভি দেখছিল। হাতে কফির মগ। খেলা যতক্ষন চলবে, টিভির সামনে থেকে মনে হয় উঠার ইচ্ছে নেই তার।
ঘর থেকে বের হতে গিয়ে ছোট ভাইয়ের এ অবস্থা দেখে বড় ভাইয়ের মেজাজ যায় বিগড়ে। প্রচণ্ড ধমকা ধমকি শুরু করে। আযানের পরও কিভাবে সে বসে টিভি দেখে? একজন মুসলমান কিভাবে পারে জামাতের সময় ঘরে বসে থাকতে? চিৎকার করে এসব কথা বলছে আর তার মাকে ডাকছে।
রান্না ঘর থেকে কাজ ফেলে মা আসলেন। বড় ছেলের চিৎকার শেষ হল, সব ঘটনা শুনে মা শুধু এতটুকুই বললেন –
গত এক বছর আগে তুই কেমন ছিলি মনে আছে? এমন কোন পাপ নাই, যেটা করিস নাই। তোর ছোট ভাইকে বকছিস যোহরের জামাতে যায় না কেন, অথচ তুই তো জুম্মাও পড়তে যেতি না। মাসকে মাস নামাজ পড়তি না। মনে আছে?…………
২)
দুই বোন। বড় বোন রিসেন্টলি ধার্মিক হয়েছে। পরিপূর্ণ হিজাব করে। বাইরে বের হওয়ার সময় হাত মোজা, পা মোজা সবই আছে। ফেসবুক, ইন্সটাগ্রামে তার যত ছবি ছিল সবই সরিয়ে ফেলেছে। সম্পূর্ণ লোক চক্ষুর আড়ালে চলে গিয়েছে সে।
ছোট বোনের মাঝে তেমন কোন পরিবর্তন হয় নি এখনো। আজ একটি স্টাইলিশ ছবি নিত্যদিনের মতই সে ফেসবুকে পোস্ট করলো। লাইক কমেন্ট পড়তেও দেরি হচ্ছিল না।
মেজাজ ঠিক রাখতে পারলো না এসব দেখে বড় বোন। বোনের সাথে কথা বন্ধ করে দিল, ফেসবুক থেকে রিমুভ করে দিল। এমন নির্লজ্জ বোনের সাথে সম্পর্ক না রাখলে কি?
এত কঠোর! অথচ এই বড় বোনের মনে ছিল না দুই বছর আগের কথা। শরিরে নামে মাত্র কাপড় রেখে হাজারো ছবি দিয়ে তার সোশ্যাল মিডিয়া ভরপুর ছিল। আজ সে তার ছোট বোনের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করে ফেললো কেবল একটি স্টাইলিশ ফটো দেয়ার অপরাধে!
৩)
একবার এক মজলিসে এক যুবক এসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলল, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে যিনা করার অনুমতি দিন।’একথা শুনে উপস্থিত সবাই চমকে উঠলেন, তাকে তিরস্কার করতে লাগলেন। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে নরম ভাষায় কাছে কাছে ডাকলেন, পাশে বসালেন।
এরপর তার ঊরুতে হাত রেখে বললেন, ‘তুমি কি তোমার মায়ের জন্য এটা পছন্দ করবে?’
সে বলল, না ইয়া রাসূলুল্লাহ। আল্লাহ আমাকে আপনার প্রতি উৎসর্গিত করুন। কোনো মানুষই তার মায়ের জন্য এটা পছন্দ করবে না।’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুনরায় বললেন, ‘তাহলে তোমার মেয়ের জন্য?’
যুবকটি বলল, না, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি আপনার প্রতি উৎসর্গিত।
কোনো মানুষই তার মেয়ের জন্য এটা পছন্দ করবে না।’
নবীজী (সা) জিজ্ঞাসা করলেন, তাহলে তোমার বোনের জন্য?’ যুবক বলল, ‘না ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি আপনার প্রতি উৎসর্গিত। কোনো মানুষই তার বোনের জন্য এটা পছন্দ করবে না।’
এরপর নবী সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লাম তার শরীরে হাত রাখলেন এবং দুআ করলেন- ইয়া আল্লাহ তার গুনাহ ক্ষমা করুন, তার অন্তর পবিত্র করুন এবং তার চরিত্র রক্ষা করুন।
বর্ণনাকারী বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্দর ভাবে যুবককে শেখানোর ফলাফল এই হল যে, পরবর্তী জীবনে সে (রাস্তায় চললে) কোন দিকে চোখ তুলেও তাকাত না। – [মুসনাদে আহমদ ৫/২৫৬-২৫৭ ]
——————–
আল্লাহ তা’আলা চেয়েছেন বলেই আমি আপনি তার সামনে মাথা ঝুকাতে পারি। তিনি চেয়েছেন বলেই তার পবিত্র নাম এই পাপিদের জিহবায় উচ্চারিত হয়।
যে কোন গোনাহগারকে দাওয়াতের সময় যেন আমরা এটা ভুলে না যাই। একজন সন্তান শরিরে ময়লা লাগিয়ে ফেললে, মা যেমন সন্তানকে ছুড়ে ফেলে না, বরং ময়লাগুলো পরিস্কার করে দেয়, গোনাহগারদের প্রতিও যেন আমাদের আচরণ এমনই হয়। অসম্ভব কিছু নয়, হয়তো তার গোনাহের ময়লাগুলোও আমার আপনার সুন্দর আচরনের কারনেই পরিস্কার হয়ে যাবে।