শুক্রবার, ২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২৪শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে আগতদের প্রতি সতর্কবার্তা – মাওঃ আলী আজম

Khutbah Tv

বাস্তুহারা মাজলুম রোহিঙ্গা মুসলিম ভাই-বোনদের পাশে আনসারের ভূমিকায় দাঁড়াতে কক্সবাজার টেকনাফ ও উখিয়াতে সম্প্রতি দেশের দূর-দূরান্তর থেকে অসংখ্য জনদরদি মানবতাবাদী ভাই-বন্ধুরা সদলবলে দলমত নির্বিশেষে এগিয়ে আসছেন। যা অত্যন্ত প্রশংসার দাবি রাখে। তবে সেখানকার বর্তমান পরিস্থিতি ও রোড-ঘাট সম্পর্কে ওয়াকিবহাল না হওয়ার কারণে তাদেরকে নানান অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তারই প্রেক্ষিতে আমার এই সতর্কবার্তার অবতারণা।

প্রথমে আমাদের প্রতিবেশী টেকনাফগামী এক ত্রাণ কাফেলার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা বলছি। গত পরশু রাতে তাদের কাফেলা হাটহাজারী থেকে টেকনাফের দিকে রওয়ানা হয়। গভীর রাতে ফজরের আজানের কাছাকাছি সময়ে তাদের বহনকারী গাড়িটি উখিয়া নয়াবাজারের সামান্য আগে পৌঁছলে তারা দেখতে পায় একদল বিপথগামী কুচক্রী ডাকাতবাহিনী ঠেলাগাড়ি দিয়ে রাস্তা ব্লক করে হাতে অস্ত্র নিয়ে রাস্তার উপর বসে রয়েছে। উদ্দেশ্য ত্রাণবাহী গাড়ি আটকিয়ে লুট করা।

ড্রাইভার এমতাবস্থায় গাড়ি না থামিয়ে আল্লাহর উপর ভরসা রেখে মনোবল শক্ত করে ডাকাতদলের পাশ কাটিয়ে দ্রুত সম্মুখে এগিয়ে গিয়ে কোনোপ্রকার অপ্রীতিকর দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেলেও ডাকাতদলের ছুড়ে মারা পাথরটি ঠিকই গাড়িতে আঘাত করে। এই ঘটনায় যারা জড়িত তারা স্থানীয়ই হবে। সম্ভবত তারা পেশাদার। তারা জানে এই জনপদে এখন যারা আসছে তারা বড় অংকের অর্থ ও ত্রাণসামগ্রী নিয়েই আসছে। মুজাহিরদের হক্ব মেরে দিতেই তাদের এই পন্থা।

তাই কেউ এমন পরিস্থিতির শিকার হলে ভুলেও গাড়ি থামাবেন না। গাড়ি থামালেই বিপদ। অত্রাঞ্চলের কুচক্রী মহল নানানভাবে এখন মাঠে-ঘাটে সক্রিয়। গভীর রাতে সেদিকটা না যাওয়াই উচিৎ। কারণ কক্সবাজার থেকে টেকনাফের পথটি দুর্গম ঝুঁকিপূর্ণ ও পাহাড়ি। রাত্রিবেলা মানুষের আনাগোনা, গাড়ি তেমন একটা চোখে পড়েনা। এখন যা যাচ্ছে তার প্রায়ই ত্রাণবাহী। ফলে দুষ্কৃতকারীরা সুযোগটা কাজে লাগাতে মরিয়া। এমনভাবে যাত্রা শুরু করবেন যাতে সেদিকটা ফজরের পরে পৌঁছতে পারেন।

দ্বিতীয়ত কেউ ভুলেও দয়াপরবশ হয়ে সেখানে যারতার হাতে অর্থ, ত্রাণ তুলে দেবেন না। কারণ আমি আবারো বলছি সেখানকার কুচক্রীরা এখন মাঠে-ঘাঠে সক্রিয়। তারা নানানভাবে ধোঁকা দিয়ে আপনার অনুদান কেড়ে নিতে চাইবে। তারা রোহিঙ্গা সেজে বিভিন্ন জায়গায় সম্প্রতি এভাবে ধোঁকাবাজি করছে। আর কেউ ভুলেও রাস্তা-ঘাটে খোলামেলা অর্থ, ত্রাণ বিতরণ করতে যাবেন না। প্লিজ! এর ফলে হয়তো অপ্রীতিকর ঘটনার সাক্ষী হতে হবে নয়তো আপনার অনুদান হক্বদাররা পাবে না।

তৃতীয়ত বিরক্তিকর দিক হলো এখন শরণার্থী ক্যাম্পের প্রবেশপথ ও তার আশপাশের এলাকাগুলতে কাঁধে ব্যাগ এবং পরিষ্কার কাপড় পরে চলাচল করাও দুষ্কর। পরিষ্কার কাপড়ের কাউকে দেখলেই সেখানকার ছোট-ছোট শিশু থেকে নিয়ে মহিলা বৃদ্ধ এমনকি যুবকরাও হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। সাহায্যের জন্য হাত পাতছে। পিছু নিচ্ছে। এমন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি থেকে রেহাই পাওয়া কঠিন। এদের অনেকে বাধ্য হয়ে আবার কেউকেউ পেশা হিসেবে বহিরাগতদের এভাবে বিরক্ত করছে।

কথায় আছে অভাবে স্বভাব নষ্ট। মুহাজিরদের বেলায়ও তাই হয়েছে। ভাগ্যবিড়ম্বিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বৃহৎ একটি অংশ ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়ছে। কোনো গাড়ি দেখলে তার পিছু নিচ্ছে। যার কারণে সহজে সঠিক ত্রাণ বিতরণ সেখানে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আবার উশৃঙ্খল কিছু মানুষের কারণে অভিভাবকহীন সুশৃঙ্খল রক্ষণশীল পরিবারগুলো ত্রাণ না পেয়ে ক্ষুধা-তৃষ্ণায় নীরবে কেঁদে যাচ্ছে। বাস্তব অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম। আল্লাহ রোহিঙ্গা ভাই-বোনদের সহায় হোন।

Archives

December 2023
S S M T W T F
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031