মঙ্গলবার, ৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ৯ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

জীবন-মরণ সবই আল্লাহর জন্য – তারাবীহ ৫ম পাঠ

This entry is part [part not set] of 27 in the series দরসে তারাবীহ


 

আজ পঞ্চম তারাবিতে সূরা মায়িদা (৮৩-১২০) ও সূরা আনআম পুরোটা এবং সূরা আরাফ (১-১১) পড়া হবে। পারা হিসেবে আজ পড়া হবে সপ্তম পারা এবং অষ্টম পারার প্রথমার্ধ।

৫. সূরা মায়িদা: (৮৩-১২০) সপ্তম পারার শুরুতে আহলে কিতাবদের মধ্যে যারা সত্যানুরাগী, তাদের প্রশংসা করা হয়েছে। ৮৭ থেকে ৯৩ নম্বর আয়াতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিধান দেওয়া হয়েছে। কসম-শপথ ভাঙার কাফফারা প্রসঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। ঘৃণ্য ও শয়তানের কাজ হওয়ায় মদ-জুয়া, মূর্তি পূজার বেদী ও ভাগ্যনির্ণায়ক তীরকে প্ররিত্যাগ করতে বলা হয়েছে।

১৩তম রুকুতে বলা হয়েছে, ইহরাম অবস্থায় শিকার। কেউ যদি ইহরাম অবস্থায় শিকার করে ফেলে; তবে তার কাফফারা কী হবে, তা-ও বলা হয়েছে এ রুকুতে। ১০১ থেকে ১০৬ নম্বর আয়াতে অহেতুক প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, অহেতুক প্রশ্ন তোমাদের জন্য অকল্যাণ ডেকে আনতে পারে। তাই এ থেকে বিরত থাক। আরও বলা হয়েছে, মৃত্যুর সময় অসিয়ত প্রসঙ্গে। আর অসিয়তের সময় যেন দুজন সাক্ষী রাখা হয়। সাক্ষীদের থেকে যদি মিথ্যার আশঙ্কা থাকে অথবা অন্য কেউ যদি দাবি করে আমাকে ভিন্নরকম অসিয়ত করা হয়েছে- এমন নাজুক পরিস্থিতি মোকাবিলায় করণীয় সম্পর্কে বলা হয়েছে।

১০৯ থেকে ১২০ নম্বর আয়াতে হজরত ঈসা (আ.) এর মোজেজা, কেয়ামতের দিন ঈসার সঙ্গে আল্লাহ তায়ালা কী কথা বলবেন, খ্রিষ্টানদের সম্পর্কে কী জিজ্ঞেস করবেন- এ কথা বলে সূরার ইতি টানা হয়েছে।

৬. সূরা আনআম: (মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত একশত পঁয়ষট্টি, রুকু বিশ) সূরার ১ থেকে ৪১ নম্বর আয়াত পর্যন্ত কাফেরদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব প্রদানের পর তাদের হঠকারী আচরণের তীব্র নিন্দা করা হয়েছে। তাদের বলা হয়েছে, তোমরা একটু চোখ মেলে দেখ ও ভাব। তোমরা যা বলছ ও করছ তা কতটুকু সঠিক? ৪২ থেকে ৯০ নম্বর আয়াত পর্যন্তও আগের ধারাবাহিকতায় আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস ও ঈমানের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এখানেও কাফেরদের মনে জাগা ও মুখে তোলা অনেক প্রশ্নের জবাব দেওয়া হয়েছে। মাঝে মাঝে পার্থিব জীবনের ক্ষণস্থায়িত্ব ও আখেরাতের স্থায়িত্বের কথা উল্লেখ করে মোমিন সম্প্রদায়কে নসিহত করা হয়েছে। এক পর্যায়ে ইবরাহিম (আ.) এর আলোচনা এসেছে। কীভাবে তিনিআপন সম্প্রদায়কে দাওয়াত দিয়েছিলেন, তা বলা হয়েছে বিস্তারিতভাবে।

৯১ থেকে ৯৪ নম্বর আয়াতে বান্দার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে কিতাব নাজিলের প্রয়োজনীয়তা ও বাস্তবতা এবং অন্যদিকে কোরআনের সাথে কাফের সম্প্রদায়ের আচরণ প্রসঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। ৯৫ থেকে ১১০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা নিজেই নিজের পরিচয় দিয়েছেন। তিনি কীভাবে বিশ্বরাজ্য পরিচালনা করছেন, এর কয়েকটি উদাহরণ দিয়ে তাঁর প্রতি ঈমান আনার উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়েছে। এরপরও যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে না, তাদের শাস্তি কী হবে, তা বলা হয়েছে।

১১১ থেকে ১২৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, চোখের সামনে এতসব নিদর্শন দেখেও অনেকেই আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে না। তারা উল্টো হঠকারী আচরণ করবে। এদের পরকালীন জীবন কত কষ্টকর ও যন্ত্রণাদায়ক হবে, তা বলা হয়েছে। ১৬ ও ১৭তম রুকুতে মানুষকে কিছু বিশেষ নসিহত করা হয়েছে, যাতে মানুষ আল্লাহ তাআলা, কিতাব, নবী ও আখেরাতের প্রতি ঈমান আনতে পারে।

১৩০ থেকে ১৫৪ নম্বর আয়াতে উম্মতে মুহাম্মদির জন্য আল্লাহ তায়ালা কী খাদ্য হারাম করেছেন, আর ইহুদিদের জন্য কী হারাম করেছিলেন, তার একটা তুলনামূলক পর্যালোচনা করা হয়েছে। এরপর আল্লাহ তায়ালা বিকৃত ইহুদি ধর্মের সঠিক রূপ বলে দিয়েছেন। ওই ধর্মে বাস্তবে কী কী নিষিদ্ধ ছিল, তা স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। ১৫৫ থেকে ১৬৫ নম্বর আয়াতে কোরআনের স্বার্থকতা ও উপকারিতার কথা তুলে ধরা হয়েছে। আমার সলাত, কুরবানী, যাবতীয় ইবাদত-বন্দেগী এবং জীবন-মরণ সবই আল্লাহর জন্য- এ মর্মে ঘোষণা দিতে বলা হয়েছে। এরপর মানব-জীবনের সবকিছুই যে পরীক্ষা- এ বিষয়ক আলোচনার মাধ্যমে সূরা আনআম সমাপ্ত হয়েছে।

৭. সূরা আরাফ: (মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত দুইশত ছয়, রুকু চব্বিশ) ১ থেকে ১০ নম্বর আয়াতে কোরআন নাজিলের উদ্দেশ্য বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, এ কিতাব মানুষের হেদায়েতের জন্য নাজিল করা হয়েছে। এরপর বলা হয়েছে, অতীতে যারাই আল্লাহর কালাম অমান্য করেছে, তাদের বিভিন্ন আজাব দিয়ে দুনিয়া থেকে নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে। এখনও যারা আল্লাহর কিতাব মানবে না, তাদেরও একইভাবে শাস্তি দেওয়া হবে। ১১ নম্বর আয়াতে মানব সৃষ্টির ইতিহাস সম্পর্কে আলোচনা রয়েছে।

লেখক:মাওলানা রাশেদুর রহমান ।। পেশ ইমাম ও খতীব, কেন্দ্রীয় মসজিদ, বুয়েট

Series Navigation

Archives

March 2024
S S M T W T F
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031