শনিবার, ৩০শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
(১)
ইনি হযরত আশরাফ আলী থানভী রহঃ।
তিনি একজন হাকীমুল উম্মত ছিলেন।
হযরত হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজেরে মক্কী রহঃ এর খলীফা ছিলেন। হাজী সাহেব রহঃ এর ইন্তেকালের পর তিনি আমৃত্যু হযরত গঙ্গুহী রহঃকে নিজের শায়েখ ও মুরুব্বি মেনে চলেছেন।
বলা হয় হযরত থানভী রহঃ এর এক হাত ছিলো দীনের প্রত্যেক বিষয়ে লিখনীর কলমের ওপর
অপর হাত ছিলো উম্মতের শিরার উপর (তাদের এসলাহের ফিকির)। এশিয়া মহাদেশে হকের উপর যতো দীনের মেহনত চলছে তার বেশীরভাগই হযরত থানভী রহঃ এর নিসবতের সাথে সম্পর্কিত।
এখনও আলহামদুলিল্লাহ্ চলছে।
সুতরাং এর সাথে নিসবতওয়ালারাও হকের ওপর আছেন, দীনের মেহনতের সাথেই আছেন।
(২)
ইনি হলেন হযরত ইলিয়াস ছাহেব রহঃ।
পুরো বিশ্বে দাওয়াত ও তাবলীগের এ হেদায়েতের পদ্ধতির আবিষ্কারক ছিলেন।
ছিলেন আলেম, এবং খানকাহওয়ালা।
আশ্চর্য হবার কিছুই নেই। তার শায়েখ ও মোর্শেদ ছিলেন (প্রথমদিকে) হযরত রশীদ আহমাদ গঙ্গুহী রহঃ, এবং পরবর্তীতে হযরতের ওফাতের পর তিনি হযরত খলীল আহমাদ সাহারানপুরী রহঃ এর হাতে
বায়াত হন। এবং খেলাফত পান।
সুতরাং তাবলীগের মেহনত এবং হক্বপন্থী পীর মাশায়েখের মেহনতের গোড়া একই।
উদাহরণস্বরূপ চরমোনাই এর সিলসিলার শাজারাহ দেখুন,
হযরত এছহাক ছাহেব রহঃ এর শায়েখ ও পীর ছিলেন হযরত ক্বারী ইবরাহীম রহঃ(উজানী সিলসিলা)। আর ক্বারী সাহেবের পীর ছিলেন হযরত রশীদ আহমাদ গঙ্গুহী রহঃ।
এবার তাবলীগের মেহনতের প্রথম মুরুব্বী হযরত ইলিয়াস রহঃ এর প্রথম পীর কিন্তু এই হযরত গঙ্গুহী রহঃ-ই ছিলেন। আবার দ্বিতীয় পীর ছিলেন হযরত সাহারানপুরী রহঃ, যিনি হযরত গঙ্গুহী রহঃ এর খলীফা ছিলেন।
চরমোনাই ও তাবলীগ ভিন্ন কিছু নয়।
বরং একই ডালের দুটি ফুল। সুতরাং তিনিও বায়াত ছিলেন, তারও ছিলো পীর ও মোর্শেদ।
(৩)
ইনি হলেন হযরত শায়খুল হাদীস আল্লামা যাকারিয়া ছাহেব রহঃ। ছিলেন বড়ো বড়ো বুজুর্গদের স্নেহধন্য।
ফাজায়েলে আ’মল, ফাজায়েলে সাদাকাত কিতাবের লেখক তিনি। যা তিনি হযরত ইলিয়াস সাহেব রহঃ এর অনুরোধে লিখেছিলেন।
ছিলেন তাবলীগের অন্যতম মুরুব্বি।
হযরত ইলিয়াস সাহেব রহঃ এবং হযরত যাকারিয়া সাহেব রহঃ আপন চাচা ভাতিজা ছিলেন।
ছিলেন একই পীরের(হযরত সাহারানপুরী রহঃ) এর খলীফা। তবে শায়খুল হাদীস রহঃ দ্বারা আল্লাহপাক দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ যেমন নিয়েছেন, ঠিক তেমন হাদীসের খেদমত নিয়েছেন, নিয়েছেন পীর মুরিদের লাইনেও।
যার আপবিতী (আত্মজীবনী) কিতাবে সকলের উপযোগী এবং নানান প্রশ্নের জবাবে সমৃদ্ধ।
তাবলীগ করলে মাদরাসার খেদমত করা যাবে না, বা আত্মশুদ্ধির পথের পথিক হলে তাবলীগে মেহনত করা যাবে না, এসব সংশয়ের বাস্তব নমুনা ছিলেন এই বুজুর্গ।
(৪)
ইনি হলেন শায়খুল ইসলাম আওলাদে রাসূল হযরত হোসাইন আহমাদ মাদানি রহঃ।
যিনি একাধারে ছিলেন পীর, উস্তাদ, ইংরেজ খেদাও আন্দোলনের সিপাহি, ইসলামী রাজনীতির প্রকাশ্য সফল নেতা।
যিনি আঠারো বছর (ভুল হতে পারে) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রওজার পাশে হাদীসের দরস দিয়েছেন।
হযরত মাদানী রহঃ ছিলেন হযরত রশীদ আহমাদ গঙ্গুহী রহঃ এর খলীফা।
হিশেব অনুযায়ী হযরত থানভী রহঃ, হযরত ইলিয়াস সাহেব রহঃ এবং শায়খুল হাদীস রহঃ এরা প্রত্যেকেই ছিলেন পীরভাই।
চরমোনাই দরবার বা দাওয়াত ও তাবলীগের মেহনত বা উজানী দরবার বা দেওবন্দ মাদরাসার জন্ম বা চলমান হকপন্থী ইসলামী রাজনীতি বা খানকাহওয়ালা এদের প্রত্যেকের শাজারাহ একজনের নিকট গিয়ে মিলিত হয়।
তিনি হলেন সাইয়্যেদুত্তায়েফা হযরত হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজেরে মক্কী রহঃ।
এরা প্রত্যেকেই দীনের কাজের সাথে সম্পর্কীত ছিলেন। ছিলেন আল্লাহপাকের রহমে হকের ওপর।
খেদমতের ধরন হয়তো আলাগ হতে পারে, তবে দিলে ছিলো ওপর খেদমতের প্রতি শ্রদ্ধা, মমত্ব এবং শোকরিয়াবোধ।
এ চার বুজুর্গের মেহনতের ফসলই এখন বিশ্বের আনাচেকানাচে দীনের কাজ চলছে।
হয় সেটা মাদরাসার দরসে তাদরীসরূপে, বা ময়দানে ইসলামের ঝান্ডা লাগিয়ে হকের স্লোগানে, বা খানকাহতে তাযকিয়া ও আত্মশুদ্ধির নামে বা প্রতিটি মানুষের নিকট দীনের ফিকির নিয়ে দাওয়াত ও তাবলীগের নামে।
যেটাই বলুন, সবই আমাদের আকাবিরদের অংশগ্রহণ ও মেহনতের বাহ্যিক রূপ।
সুতরাং আমরা ভিন্ন কেউ নই।
আমরা একি ডালের পুষ্প বা একি পিতার ঔরসজাত সন্তান।
এ চার বুজুর্গের জীবনী পড়া থাকলে, ইনশাআল্লাহ সে ব্যক্তি কখনো দল বা জামাতের নামে ফেতনায় পড়বে না।
পড়ুন জানুন এবং সামনে চলুন দীনকে সাথে নিয়ে।
-বান্দা মুহাম্মাদ রাশেদ আহমাদ