শনিবার, ২০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২রা রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

নাফ নদীতে মরণফাঁদ, আমাদের দৃঢ়তা ও আল্লাহ তা’আলার সাহায্য

আল মুহাজির শাইখ

৩দিন বহুত যাঁচাই-বাছাই করে অবশেষে নাইক্ষংদিয়া সীমান্তে আটকে পড়া ভাইদের উদ্ধারের জন্য গতকাল ৩টি নৌকা ভাড়া করা হয়েছিলো। কথা পাকাপাকি করে দক্ষিণপাড়া থেকে ১ম নৌকাটি ছেড়ে যায়।

কিছুদূর গিয়ে শাহপুরী দ্বীপের একপাশ থেকে কয়েকজন রোহিঙ্গা ভাইকে তুলে এনে আমাদের সামনে নামিয়ে দিয়ে বলে ‘এই দেখেন, নিয়ে এলাম। এবার টাকা দিন।’

Default Ad Content Here

আমাদের পাশ থেকে তুলে এনে আবার আমাদের সামনেই নামিয়ে দিলো। বিষয়টি আঁচ করতে বেগ পেতে হয় নি। কিন্তু আমরাতো নিরুপায়। ঘিরে ধরলো সিণ্ডিকেট। খুব ঠাণ্ডা মাথায় হাসিমুখে ‘নেচারাল এক্টিং’ করতে করতে বিজিবি পর্যন্ত পৌঁছে গেলাম। গিয়ে বুঝলাম, শুধু বিজিবিই নয়, এলাকার পাতি-মাস্তান থেকে শুরু করে এমপি পর্যন্ত এই টাকা ভাগাভাগি করছে। কোটি কোটি টাকার ব্যবসা এভাবে আমরা খেয়ে ফেলবো, সেটা কোনভাবেই মানতে পারছে না সিণ্ডিকেট। তবুও বিজিবি ভাইটি লোকদেখানো দরদ দেখিয়ে আমাদের পার করে দিলো।

দ্রুত স্থান ত্যাগ করে একটু দূরে আরেকটি নৌঘাটিতে গেলাম। এখান থেকেই ২য় নৌকাটি রওয়ানা হয়েছে। এখানে শর্ত ছিলো, নৌকার সাথে আমাদেরও একজন প্রতিনিধি থাকবে। বেশ কিছুক্ষণ নাফ নদীতে ঘুরঘুর করে নাইক্ষংদিয়া সীমান্তের পাশে ছোট্ট একটি জায়গায় নৌকা থামলো। এখানে মাত্র ৭ জন শীর্ণকায় রোহিঙ্গা পড়ে আছেন। তাদেরকে তোলার পর প্রতিনিধি বললো, নৌকায়তো এখনো অনেক জায়গা খালি। নাইক্ষংদিয়া চলেন। আপনার সাথে তো নাইক্ষংদিয়া যাওয়ার চুক্তি হয়েছে। মাঝি কোনভাবেই রাজী নয়। বাক-বিতণ্ডার এক পর্যায়ে পাটাতনের নিচ থেকে বড় বড় অস্ত্র দেখিয়ে বলেছে, আরেকটি আওয়াজ করলে গুলি করে নদীতে ফেলে দিবো।

ব্যাকসাইডে পড়ে থাকা এই ৭ জনের কাছে হয়তো কেউ যেতো না। হয়তো মৃত্যুই ছিলো তাদের একমাত্র বাসনা। মরে গিয়েই হয়তো তারা এই বিপন্নতা থেকে বাঁচতে চেয়েছিলো। মাত্র ৭ জনের পিছনে ৩০ হাজার টাকা ব্যয় করে শুধু এতটুকুই শান্তনা পেলাম।

পরিস্থিতি বিবেচনা করে ৩য় নৌকাটি আর ছাড়ি নি। প্রথমেই ধাক্কা খেলাম। কিন্তু হাল ছাড়লে তো চলবে না। জীবন-মরণ প্রশ্ন। কারো কারো মত হলো, আমাদের একজনের জীবনের বিনিময়েও যদি এতগুলো জীবন রক্ষা হয় তাহলে কম কিসে? আবারো আবেগের জোরে বিবেকের পরাজয়। তাকে থামিয়ে দিলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম, এভাবে নয়। তবে যেভাবেই হোক, মুসলিম ভাই-বোনদেরকে রক্ষা করতেই হবে। আল্লাহর সাহায্য চাইলাম। তিনি হতাশ করেন নি। রাস্তা খুলে দিলেন। মাথায় নতুন কিছু চিন্তা ও কৌশল ঢেলে দিলেন।

টেকনাফের হ্নীলা মাদরাসার প্রবীন শাইখুল হাদীস আল্লামা হানিফ রাগেব আরাকানী হাফিযাহুল্লাহর কাছেও পরামর্শ চাইলাম। পরামর্শ ও আল্লাহর সাহায্য নিয়ে এখন এগুচ্ছি। কৌশলগত কারণে তা আপাতত উল্লেখ করা সমীচিন মনে হচ্ছে না। কখন কোন ঘাঁটি থেকে কিভাবে আমাদের কার্যক্রম চলছে তা অপারেশন শেষে কারগুজারীর আকারে জানাবো ইনশা আল্লাহ।

যারা এই একই উদ্যোগ নিয়ে এগুচ্ছেন বা এগুতে চাচ্ছেন তাদেরকে চূড়ান্ত সতর্কতা ও সাবধানতা অবলম্বনের অনুরোধ করছি। কেউ যদি নিরাপদ কৌশল অবলম্বন করতে চান তাহলে আমাকে ইনবক্স করতে পারেন। শুধু জানার জন্য ‘ইনবক্স’ না করার অনুরোধ রইলো।

Archives

October 2024
S S M T W T F
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031