রবিবার, ২৫শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
রহমাত বরকত ও মাগফিরাতের মাস মাহে রমজান। উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য এক গৌরবোজ্জল মাসের নাম রমজান। পূর্ববর্তী উম্মতীদের মাঝে শ্রেষ্ঠত্বের পার্থক্য নির্ণয়কারী মাসের নাম রমজান।
উম্মতে মুহাম্মদীর বয়স কম। গড় আয়ু আমাদের ৭০ থেকে ৮০। আর পূর্ববর্তী একেকজন উম্মতীদের বয়স হতো এক হাজার দুই হাজার বছর।
আর শক্তি? এত তুলনাই করা যায় না পূর্ববর্তীদের সাথে। পূর্ববর্তী উম্মতীরা একেজন ছিলেন পাহাড়সম শক্তির অধিকারী। সেই তুলনায় উম্মতে মুহাম্মদী দৈহিকভাবেও দুর্বল। তবু এ উম্মত সবার আগে কিভাবে জান্নাতে যাবে?
আমাদের স্বাভাবিক যুক্তি বলে এটি সম্ভব নয়। এক ব্যক্তি বাঁচলো এক হাজার বছর। আরেকজন বাঁচলো একশত বছর। উভয়জনই যদি সমান মুত্তাকী পরহেযগার হয়, তাহলে একশত বছর জীবনলাভকারী ব্যক্তি আমলের দিক থেকে কিছুতেই হাজার বছর জীবিত ব্যক্তির ধারে কাছেও যেতে পারে না। এটা সম্ভব নয়।
কিন্তু তারপরও উম্মতে মুহাম্মদী সবার আগে জান্নাতে যাবে। কিভাবে? এবং কেন?
এর মূল জবাব হল, আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ইহসান। তিনি দয়া করে এ সৌভাগ্য রাসূল সাঃ এর বদৌলতে এ উম্মতকে দান করেছেন।
কিন্তু এর একটি হিকমতও আমরা দেখতে পাই। আল্লাহ তাআলা এ উম্মতকে এমন কিছু দিন দিয়েছেন। এমন কিছু রাত দিয়েছেন, এমন মাস দিয়েছেন যা পূর্ববর্তী উম্মতকে দান করেননি। যেসব দিনে ও রাতে এবং মাসে ইবাদত করলে একজন ব্যক্তি হাজার বছরের ইবাদতকারীর চেয়ে বেশি সওয়াবের অধিকারী হয়ে যায়।
উম্মতে মুহাম্মদী ইবাদত করবে একদিন কিন্তু সওয়াব হবে সত্তর দিনের। ইবাদত করবে এক রাত, কিন্তু সওয়াব হবে হাজার রাতের। ইবাদত করবে এক মাস কিন্তু সওয়াব হবে সত্তর মাসের। এমন সব বরকতময় দিন-রাতের মহা সুযোগ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন দান করেছেন এ উম্মতকে। যেসব দিন-রাতে এ উম্মত ইবাদত করে, বয়স কম হলেও বেশি বয়সী পূর্ববর্তী উম্মতীদের চেয়ে আমলের দিক থেকে অগ্রগামী হয়ে যায়।
যেমন, জুমআর দিন। যে দিন পূর্ববর্তীদের দেয়া হয়নি।
হাদীসে ইরশাদ হচ্ছেঃ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” نَحْنُ الْآخِرُونَ الْأَوَّلُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، وَنَحْنُ أَوَّلُ مَنْ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ، بَيْدَ أَنَّهُمْ أُوتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِنَا، وَأُوتِينَاهُ مِنْ بَعْدِهِمْ، فَاخْتَلَفُوا، فَهَدَانَا اللهُ لِمَا اخْتَلَفُوا فِيهِ مِنَ الْحَقِّ، فَهَذَا يَوْمُهُمُ الَّذِي اخْتَلَفُوا فِيهِ، هَدَانَا اللهُ لَهُ – قَالَ: يَوْمُ الْجُمُعَةِ – فَالْيَوْمَ لَنَا، وَغَدًا لِلْيَهُودِ، وَبَعْدَ غَدٍ لِلنَّصَارَى “
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আমরা সবশেষে আগত উম্মত। কিন্তু কিয়ামতের দিন আমরা হবো সর্বাগ্রবর্তী। আমরাই প্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবো। তবে তাদের কিতাব দেয়া হয়েছে আমাদের পূর্বে এবং আমাদের দেয়া হয়েছে তাদের পরে। তারা বিরোধে লিপ্ত হয়ে পড়লো। কিন্তু তারা যে সত্যকে কেন্দ্র করে বিরোধে লিপ্ত হলো, সে সম্পর্কে আল্লাহ আমাদের হিদায়াত দান করেন। তা হলো সেই দিন, যে দিন সম্পর্কে তারা মতভেদ করেছে, আর আল্লাহ আমাদের সেই দিন সম্পর্কে হেদায়াত দান করেছেন। তিনি বলেন, আমাদের জন্য জুমআর দিন, ইহুদীদের জন্য পরের দিন, এবং খৃষ্টানদের জন্য তার পরের দিন। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৮৫৫] আরেক হাদীসে এসেছে
أَبَا هُرَيْرَةَ، يَقُولُ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ্রإِذَا كَانَ يَوْمُ الْجُمُعَةِ، كَانَ عَلَى كُلِّ بَابٍ مِنْ أَبْوَابِ الْمَسْجِدِ مَلَائِكَةٌ يَكْتُبُونَ الْأَوَّلَ فَالْأَوَّلَ، فَإِذَا جَلَسَ الْإِمَامُ طَوَوُا الصُّحُفَ، وَجَاءُوا يَسْتَمِعُونَ الذِّكْرَ، وَمَثَلُ الْمُهَجِّرِ كَمَثَلِ الَّذِي يُهْدِي الْبَدَنَةَ، ثُمَّ كَالَّذِي يُهْدِي بَقَرَةً، ثُمَّ كَالَّذِي يُهْدِي الْكَبْشَ، ثُمَّ كَالَّذِي يُهْدِي الدَّجَاجَةَ، ثُمَّ كَالَّذِي يُهْدِي الْبَيْضَةَ
আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জুমআর দিন এলে মসজিদে যতগুলো দরজা আছে, তার প্রতিটিতে ফেরেশতারা নিযুক্ত হন, এবং তারা আগমনকারীদের নাম ক্রমানুসারে নথিবদ্ধ করেন। ইমাম যখন (মিম্বরে) বসেন তখন তারা নথিপত্র গুটিয়ে নিয়ে আলোচনা শোনার জন্য চলে আসেন। মসজিদে সর্বপ্রথম আগমনকারী মুসল্লী উট দানকারীর সমতুল্য, তৎপরে আগমনকারী গরু দানকারীর সমতুল্য, তৎপরে আগমনকারী মেষ দানকারীর সমতুল্য, তৎপরে আগমনকারী মুরগী দানকারীর সমতুল্য, তারপর আগমনকারী ডিম দানকারীর সমতুল্য। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৮৫০] এমনিভাবে এ উম্মতকে শবে বরাতের মত গোনাহমাফীর রাত দান করা হয়েছে। যে রাতে অসংখ্য উম্মতে মুসলিমাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়। যে শবে বরাত পূর্ববর্তী কোন উম্মতীদের দেয়া হয়নি।
শবে বরাতের ফযীলতে হাদীসে এসেছেঃ
عن معاذ بن جبل عن النبي صلى الله عليه و سلم قال : ( يطلع الله إلى خلقه في ليلة النصف من شعبان فيغفر لجميع خلقه إلا لمشرك أو مشاحن
অনুবাদ-হযরত মুয়াজ বিন জাবাল রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-অর্ধ শাবানের রাতে [শবে বরাতে]আল্লাহ তাআলা তাঁর সমস্ত মাখলুকের প্রতি মনযোগ আরোপ করেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ ভাবাপন্ন ব্যক্তি ছাড়া সকলকে ক্ষমা করে দেন। {সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৬৬৫, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-২৭৫৪, মুসনাদে ইসহাক বিন রাহওয়াই, হাদীস নং-১৭০২, আল মুজামুল আওসাত, হাদীস নং-৬৭৭৬, আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-২১৫, সুনানে ইবনে মাজা, হাদীস নং-১৩৯০, মুসনাদুশ শামীন, হাদীস নং-২০৩, মুসন্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৩০৪৭৯, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৬২০৪}
শুধু তাই নয়, এ উম্মতীদের এমন এক রাত দেয়া হয়েছে যা হাজার রাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ।
পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছেঃ
لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍ [٩٧:٣] শবে-কদর হল এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। [সূরা ক্বদর-২] এক রাতের ইবাদত মানেই হাজার মাস ইবাদততুল্য! মাশাআল্লাহ। এইতো গেল একদিন ও এক রাত প্রদানের মাধ্যমে উম্মতে মুসলিমাকে সম্মানিত করা।
এবার আল্লাহ রাব্বুল আলামীন শুধু একদিন বা এক রাত নয়। পুরো এক মাসই দিয়ে দিলেন। যে পুরো মাসই হল, গোনাহ মাফীর মাস। পূর্ণ মাসটাই বরকতের মাস। পূর্ণ মাসটাই রহমাতের মাস। সুবহানাল্লাহ। যে মহান মাস আর কোন উম্মতীকে প্রদান করা হয়নি। যে মাসের প্রতিটি পরতে এ উম্মতের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ নিহিত।
কত বড় নেয়ামত এই মাস! আল্লাহু আকবার। আল্লাহর পেয়ারা নবী এ মাসের ফযীলত বিষয়ে ইরশাদ করেনঃ
১
أَبَا هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، يَقُولُ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ্রإِذَا دَخَلَ شَهْرُ رَمَضَانَ فُتِّحَتْ أَبْوَابُ السَّمَاءِ، وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ جَهَنَّمَ، وَسُلْسِلَتِ الشَّيَاطِينُ
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, রমজান মাস এলে আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়, বর্ণনান্তরে রয়েছে, বেহেশতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়, এবং দোজখের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়, আর শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। [বুখারী, হাদীস নং-১৮৯৯] ২
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ، وَمَنْ قَامَ لَيْلَةَ القَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানসহকারে এবং সওয়াবের উদ্দেশ্যে রমজান মাসের রোযা রাখবে, তার পূর্বেকার [সগীরাহ] গোনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হয়। আর যে ব্যক্তি ঈমানসহকারে এবং সওয়াবের উদ্দেশ্যে কদরের রাত্রি ইবাদতে কাটাবে, তার পূর্বেকার গোনাহসমূহ মার্জনা করা হবে। [বুখারী, হাদীস নং-২০১৪] ৩
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: ্রمَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِগ্ধ
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানসহকারে এবং সওয়াবের উদ্দেশ্যে রমজানের রাত্রি ইবাদতে অতিবাহিত করে, তার পূর্বেবার গোনাহসমূহ মার্জনা করা হবে। [মুসলিম, হাদীস নং-৭৫৯]
৪
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” كُلُّ عَمَلِ ابْنِ آدَمَ يُضَاعَفُ، الْحَسَنَةُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا إِلَى سَبْعمِائَة ضِعْفٍ، قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ: إِلَّا الصَّوْمَ، فَإِنَّهُ لِي وَأَنَا أَجْزِي بِهِ، يَدَعُ شَهْوَتَهُ وَطَعَامَهُ مِنْ أَجْلِي ”
” لِلصَّائِمِ فَرْحَتَانِ: فَرْحَةٌ عِنْدَ فِطْرِهِ، وَفَرْحَةٌ عِنْدَ لِقَاءِ رَبِّهِ وَلَخُلُوفُ فِيهِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللهِ مِنْ رِيحِ الْمِسْكِগ্ধ
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, মানু্ষরে নেক আমল তথা সৎকাজ বৃদ্ধি করে দেয়া হয়ে থাকে, প্রত্যেক নেক আমল দশগুণ হতে সাতশত গুণ পর্যন্ত; রোযা ছাড়া। কেননা রোযা আমারই জন্য, এবং আমিই রোযার প্রতিফল দান করবো। রোযাদার আমারই জন্য তার প্রবৃত্তি এবং পানাহারের বস্তু পরিত্যাগ করে। রোযাদারের জন্য দুটি [বিশেষ] খুশি রয়েছে। একটি তার ইফতারের সময়, আরেকটি জান্নাতে প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাতের সময়। নিশ্চয় রোযাদারের মুখ গহ্বর হতে নিঃসৃত গন্ধ আল্লাহর নিকট মেশকের সুঘ্রাণ হতেও অধিক সুঘ্রাণময়। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১১৫১]
عَنْ سَلْمَانَ الْفَارِسِيَّ، قَالَ: خَطَبَنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي آخِرِ يَوْمٍ مِنْ شَعْبَانَ فَقَالَ: ” يا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ أَظَلَّكُمْ شَهْرٌ عَظِيمٌ، شَهْرٌ مُبَارَكٌ، شَهْرٌ فِيهِ لَيْلَةٌ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ، جَعَلَ اللهُ صِيَامَهُ فَرِيضَةً، وَقِيَامَ لَيْلِهِ تَطَوُّعًا، مَنْ تَقَرَّبَ فِيهِ بِخَصْلَةٍ مِنَ الْخَيْرِ كَانَ كَمَنْ أَدَّى فَرِيضَةً فِيمَا سِوَاهُ، وَمَنْ أَدَّى فَرِيضَةً فِيهِ كَانَ كَمَنْ أَدَّى سَبْعِينَ فَرِيضَةً فِيمَا سِوَاهُ، وَهُوَ شَهْرُ الصَّبْرِ، وَالصَّبْرُ ثَوَابُهُ الْجَنَّةُ، وَشَهْرُ الْمُوَاسَاةِ، وَشَهْرٌ يُزَادُ فِي رِزْقِ الْمُؤْمِنِ، مَنْ فَطَّرَ فِيهِ صَائِمًا كَانَ لَهُ مَغْفِرَةً لِذُنُوبِهِ، وَعِتْقَ رَقَبَتِهِ مِنَ النَّارِ، وَكَانَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِهِ مِنْ غَيْرِ أَنْ يُنْقَصَ مِنْ أَجْرِهِ شَيْءٌ ” قُلْنَا: يَا رَسُولَ اللهِ، لَيْسَ كُلُّنَا يَجِدُ مَا يُفْطِرُ الصَّائِمَ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” يُعْطِي اللهُ هَذَا الثَّوَابَ مَنْ فَطَّرَ صَائِمًا عَلَى مَذْقَةِ لَبَنٍ أَوْ تَمْرَةٍ أَوْ شَرْبَةٍ مِنْ مَاءٍ، وَمَنْ أَشْبَعَ صَائِمًا سَقَاهُ اللهُ مِنْ حَوْضِي شَرْبَةً لَا يَظْمَأُ حَتَّى يَدْخُلَ الْجَنَّةَ، وَهُوَ شَهْرٌ أَوَّلُهُ رَحْمَةٌ، وَأَوْسَطُهُ مَغْفِرَةٌ، وَآخِرُهُ عِتْقٌ مِنَ النَّارِ مَنْ خَفَّفَ عَنْ مَمْلُوكِهِ فِيهِ غَفَرَ اللهُ لَهُ وَأَعْتَقَهُ مِنَ النَّارِ “
হযরত সালমান ফারসী রাঃ হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে শাবান মাসের শেষ দিন ভাষণে বললেনঃ হে মানবগণ! তোমাদের প্রতি একটি মহান মাস ছায়া বিস্তার করেছে। বরকতময় মাস, এমন মাস যাতে একটি রাত্রি আছে, যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। আল্লাহ পাক এর রোযাসমূহকে ফরজ এবং রাতে নামায পড়াকে নফল করেছেন। যে ব্যক্তি এই মাসে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের জন্য একটি নফল কাজ করবে, সে সেই ব্যক্তির সমান হয়ে যায়, যে অন্য মাসে একটি ফরজ আদায় করে। আর যে ব্যক্তি এই মাসে একটি ফরজ কাজ করে, সে ঐ ব্যক্তির সমান হয়, যে অন্য মাসে সত্তরটি ফরজ কাজ করে। এটি ধৈর্যের মাস। আর ধৈর্যের সওয়াব [বিনিময়] হল বেহেশত। এটি সহানুভূতি প্রদর্শনের মাস। এটা সেই মাস, যাতে মুমিনের রুটি রুজি বাড়িয়ে দেয়া হয়। যে ব্যক্তি এই মাসে কোন রোযাদারকে ইফতার করাবে তা তার জন্য তার গোনাহসমূহের প্রায়শ্চিত্ব স্বরূপ হবে এবং দোযখের আগুণ হতে মুক্তির কারণ স্বরূপ হবে। এটা ছাড়া তার সেই রোযাদার ব্যক্তির সওয়াবের সমান সওয়াব হবে। অথচ ঐ রোযাদারের সওয়াব হ্রাস পাবে না। সাহাবীগণ বলেন, আমরা আরজ করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের কেউইতো এইরূপ সামর্থ রাখি না যদ্বারা রোযাদারকে ইফতার করাতে পারবো। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যে ব্যক্তি কাউকে এক চুমুক দুধ একটি খেজুর অথবা এক চুমুক পানি দ্বারা ইফতার করাবে তাকেও আল্লাহ পাক এরূপ সওয়াব দান করবেন। আর যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে তৃপ্তিসহকারে পানাহার করায় আল্লাহ পাক তাকে হাউজে কাউসারের পানি পান করাবেন। যারপর বেহেশতে প্রবেশ করা পর্যন্ত আর কখনোও সে পিপাসা অনুভব করবে না। এটা এমন মাস, যার প্রথম ভাগ রহমত, মধ্য ভাগ মাগফিরাত আর শেষভাগ হলো দোযখ হতে মুক্তি লাভ। আর যে ব্যক্তি এই মাসে তার দাস-দাসীদের উপর হতে কাজের বোঝা কমিয়ে দিবে আল্লাহ পাক তাকে মাফ করে দিবেন এবং তাকে জাহান্নাম হতে মুক্তি দান করবেন। [শুয়াবল ঈমান, হাদীস নং-৩৩৩৬, সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-১৮৮৭]
এরকম অসংখ্য হাদীসে রমজান মাসের ফযীলত বর্ণনা করা হয়েছে। এমন মহান মাস, যে মাসে ইবাদতের সুযোগ পাওয়া মানে হাজার বছর ইবাদত করার সমপরিমাণ।
আল্লাহু আকবার! এমনি বরকতময় মাস চলছে। ইবাদতের মাস, রোনাজারীর মাস। সারা বছরের পাপ ধুয়ে মুছে সাফ করার মাস মাহে রমজান। বয়স কম পেয়েও হাজার বছর জীবিত থাকা পূর্ববর্তী উম্মতী থেকে আমলের মর্যাদায় শ্রেষ্ঠ হবার মাস পবিত্র রমজান।
তাই আসুন এ মাসকে ইবাদতের মাস হিসেবে বরণ করে নেই। বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত, তাহাজ্জুদ, তারাবীহ, রোযা-ইফতার, দান-সদকা, জিকির-সবরের মাধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভে চেষ্টা করি। আল্লাহ তাআলা আমাদের এ বরকতময় মাসের পরিপূর্ণ বরকত হাসিল করার তৌফিক দান করুন। আমীন।