শুক্রবার, ১৯শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১লা রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
Admin | ৩,১৩৬ views | নভেম্বর ২৯, ২০১৭ | মনীষীদের জীবনী | No | ৬:২০ অপরাহ্ণ |
হিন্দুস্তানের আবু হানিফাখ্যাত ইমাম আবদুল হাই লখনোবি রহ. : সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তান্ত
[১২৬৪-১৩০৪ হিজরি, ১৮৪৮-১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দ]
.
আল্লামা আবদুল হাই লখনোবি রহ. নিকট অতীতের এক অনন্য সাধারণ ইসলামি স্কলার, লেখক, যুগশ্রেষ্ঠ ফকিহ, বিদগ্ধ পণ্ডিত ও ক্ষণজন্মা মহামনীষী ছিলেন, যার দৃষ্টান্ত পূর্ববর্তী আলেমদের মাঝেও কদাচিৎ পাওয়া যায়।
অসাধারণ প্রতিভা ও প্রজ্ঞা, বিস্ময়কর স্মৃতিশক্তি, অগাধ পা-িত্য ও অভাবনীয় কর্মদক্ষতা দিয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁকে মাটির এ ধরাধামে প্রেরণ করেন।
.
নাম ও বংশপরিচয় :
ক্ষণজন্মা এই মহাপুরুষের নাম মুহাম্মদ আবদুল হাই, উপনাম আবুল হাসানাত। তাঁর পিতার নাম মুহাম্মদ আবদুল হালিম। বংশপরম্পরা এরূপ : আবুল হাসানাত আবদুল হাই বিন আবদুল হালিম বিন আমিনুল্লাহ বিন মুহাম্মদ আকবর বিন আবদুর রহিম বিন মুহাম্মদ ইয়াকুব বিন আবদুল আজিজ বিন মুহাম্মদ সাইদ বিন শহিদ কুতুব উদ্দিন আনসারি সাহালুবি লখনোবি। এভাবে তাঁর বংশপরম্পরা প্রসিদ্ধ সাহাবি হযরত আবু আইউব আনসারি রা. পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছে।
আল্লামা লখনোবি রহ. স্বরচিত জীবনীগ্রন্থে লেখেন : আমাদের খান্দানের পূর্বপুরুষরা মদিনা মুনাওয়ারা থেকে হেরাত, হেরাত থেকে দিল্লি, অতঃপর দিল্লি হতে লখনোর একটি এলাকা সাহালায় এসে বসত শুরু করেন; যেখানে কুতুব উদ্দিন শহিদ সমাহিত আছেন। পরবর্তীতে সাহালা থেকে অনেক দূরে লখনোর একটি এলাকায় এসে বসতি স্থাপন করেন, যা কালক্রমে ‘ফিরিঙ্গি মহল্লি’ হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করে। এই মহল্লা যদিও খৃস্টানদের বাসস্থান ছিল, কিন্তু ওলামায়ে কেরাম, বুযুর্গানে দীন এবং আওলিয়াদের আবাসস্থলও ছিল; যে কারণে তা বিশ্বখ্যাতি লাভ করে। [বর্তমানে এই জায়গাটি লখনো শহরের মধ্যস্থলে অবিস্থত]; তিনি এই ফিরিঙ্গি মহল্লির ফুলবাগানের একটি সুগন্ধিময় তাজা ফুল ছিলেন।
.
জন্ম ও জ্ঞানার্জন :
তিনি ১২৬৪ হিজরির জিলকদ মাস মোতাবেক ১৮৪৮ খৃস্টাব্দে উত্তরপ্রদেশের ‘বান্দা’ নামক অখ্যাত ছোট্ট শহরে জন্মগ্রহণ করেন। পাঁচ বছর বয়সেই পড়ালেখায় ‘বিসমিল্লার’ আনুষ্ঠানিকতা সেরে কুরআন শরিফের বিশুদ্ধ তেলাওয়াত শিখে পবিত্র কুরআন হিফজ করার গৌরব অর্জন করেন। এবং প্রথমবার জৌনপুরের জাঁকজমকপূর্ণ মসজিদে পুরো কুরআন শুনান। এ বৎসরই তিনি স্বীয় পিতার নিকট মাকুলাত ও মানকুলাতের সকল দরসি ও গায়রে দরসি কিতাব পড়েন। জ্যোতির্বিদ্যা ও ইলমে রিয়াজত আপন নানা হযরত মুফতি নেয়ামাতুল্লাহ লখনোবি রহ. এর কাছে শিক্ষালাভ করেন; যিনি সংশ্লিষ্ট বিষয়ের একজন অভিজ্ঞ শিক্ষক ছিলেন।
.
পাঠদান ও গ্রন্থরচনা :
যৌবনের সূচনালগ্নেই মাত্র সতের বছর বয়সে জ্ঞানার্জনের পাট চুকিয়ে শিক্ষাদানের মসনদে আরোহণ করেন। এবং অতি দ্রুত সময়ে সাধারণ মানুষ ও তালিবুল ইলমের সম্মেলনকেন্দ্র ও ঠিকানা হয়ে যান। শিক্ষকতার প্রারম্ভিককালে হায়দারাবাদের ডেকানে দীর্ঘদিন দরস ও তাদরিসের সাথে সম্পৃক্ত থাকেন।
অধ্যয়ন ও পড়ালেখায় এত গভীরতা ও মনোযোগিতা ছিল যে, অধ্যয়নের স্বাদে প্রচ- প্রাকৃতিক প্রয়োজনও অনেক সময় ভুলে যেতেন। শায়খে তরিকত হযরত মাও. কারি সিদ্দিক আহমদ বান্দুবি রহ. স্বীয় প্রসিদ্ধগ্রন্থ ‘আদাবে মুতাআল্লিমিন’ -এ যে ঘটনা বর্ণনা করেছেন, তা দ্বারা অধ্যয়নের সে গভীরতার খানিকটা অনুমান করা যায়। তিনি লিখেন :
একদিন আল্লামা লখনোবি রহ. নিজের রুমে অধ্যয়ন করছিলেন। অধ্যয়নের মাঝে পানি চাইলেন। তাঁর পিতা হযরত মাও. আবদুল হালিম সাহেব রহ. কামরায় উপস্থিত ছিলেন। তিনি ভাবলেন পড়ার সময় ছেলের চিন্তা অন্যদিকে কীভাবে গেল? বুঝা যাচ্ছে সে পড়ছে না। তিনি খাদেমকে পানির পরিবর্তে সেখানে রক্ষিত কেরোসিন তেল দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। আবদুল হাই লখনোবি তেলভর্তি গ্লাস মুখে লাগিয়ে পান করে ফেলেন। টের পান নি পানি পান করেছেন, না-কি তেল! এরপর পড়ালেখায় মনোযোগ দিলেন। তাঁর পিতার দুঃশ্চিন্তা দূর হয়ে যায় এবং বললেন, আশা করা যায় সে পড়ালেখা করতে পারবে। পিতা অত্যন্ত উঁচু মাপের ডাক্তার ছিলেন; তাই ওষুধ খাইয়ে ছেলের পেট থেকে তেলের প্রতিক্রিয়া দূর করে দেন।
আল্লামা লখনোবি রহ. এর এই গভীর ও প্রশস্ত অধ্যয়নের ফলাফল এই ছিল যে, কিতাব পড়া থেকে ফারেগ হয়েই তা পড়াতে শুরু করতেন। স্বপ্রণীত জীবনীগ্রন্থে লিখেন :
و كلما فرغت من تحصيل كتاب شرعت فى تدريسه فحصل لى الاستعداد فى جميع العلوم بعون الله الحى القيوم ولم يبق تعسر فى اى كتاب كان من اى فن كان حتى انى درست ما لم اقرءه على حضرة الاستاذ كشر الاشارات للطوسى والافق المبين وقانون الطب ورسائل العروض.
অর্থ : “আমি যে কিতাব পড়ে শেষ করতাম, তা পড়াতে শুরু করতাম। সমস্ত ইলমে আমার যোগ্যতা পাকাপোক্ত হয়ে যায়। চিরঞ্জীব ও সুপ্রতিষ্ঠিত আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সাহায্যে আমার কোনো কিতাব বুঝাতে কোনো সমস্যা হয় না; চাই যে-কোনো কিতাব ও যে-কোনো বিষয়ের কিতাব হোক। এমনকি এই মেহনতের বদৌলতে আমি এমন কিতাবও পড়িয়েছি, যা আমি উস্তাদের কাছে পড়ি নি। যেমন : তুসির শরাহ ‘ইশারাত’, ‘উফুকুল মুবিন’, চিকিৎসাবিদ্যার ‘কানুনে শায়খ’ এবং আরুজের গ্রন্থ।”
আল্লাহ তাআলা তাঁকে দুইবার হারামাইন শরিফাইনের জিয়ারতে ধন্য করেছেন। ১২৭৯ হিজরিতে প্রথমবার স্বীয় পিতার সাথে। এবং দ্বিতীয়বার ১২৯২ হিজরিতে পিতার তিরোধানের পর। পবিত্র এই সফরের সময় তিনি বিশিষ্ট মুহাদ্দিস সাইয়েদ আহমদ ইবনে যাইন দাহলান শাফেয়ি, মুফতি মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ হাম্বলি মাক্কি, শায়েখ মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ আল-গারবি শাফেয়ি, শায়েখ আবদুল গনি বিন আবু সাইদ মুজাদ্দেদি হানাফি দেহলবি মাদানিদের রহ. মতো আকাবিরে ওলামা এবং ইলমের ধারক-বাহকদের কাছ থেকে সেসব ইলমের ইজাযত লাভ করেন, যার ইজাযত তিনি ইতোপূর্বে স্বীয় উস্তাদদের থেকে হাসিল করেছিলেন।
তাঁর ইলমের ঝরনা থেকে পৃথিবীবাসী উপকৃত হয়েছে। তাঁর লিখিত কিতাবাদি আজও আরব-অনারবের ওলামা ও বিশেষজ্ঞগণ স্বীয় অধ্যয়নের প্রথম সারিতে রেখেছেন এবং তাঁর ইলমি ও তাহকিকি ররত্নভাণ্ডার থেকে ফায়দা লাভ করছেন।
প্রকৃতপক্ষে তিনি ছিলেন ইলমের অতল দরিয়া। এবং অস্বাভাবিক মেধাবী, বুদ্ধিমান ও উপস্থিত উত্তর প্রদানে অত্যন্ত পারঙ্গম। মাসায়েল ও ফতোয়া দেওয়ার ক্ষেত্রে পুরো উপমহাদেশে তাঁর একটি একক এবং বিশেষ স্থান ও মর্যাদা ছিল। আরবের প্রসিদ্ধ আলেম মুহাক্কিকুল আসর আল্লামা জাহেদ কাওসারিও রহ. নিজের বিভিন্ন কিতাবের ভূমিকা ও টীকায় তাঁর জ্ঞানের গভীরতা এবং অধ্যয়নের প্রশস্ততার ভূয়সী প্রশংসা করেন ও তাঁকে মোবারকবাদ জানান। এবং নিকট অতীতের আরববিশ্বের প্রসিদ্ধ মুহাক্কিক আলেম আল্লামা আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ আল্লামা লখনোবিকে অত্যন্ত উঁচু মাপের গবেষক আলেম বলে উল্লেখ করেছেন; আর তাঁর অনেক কিতাব তাখরিজ করে আরবের বিভিন্ন নামকরা প্রকাশনা থেকে প্রকাশের ব্যবস্থা করেছেন।
আল্লামা লখনোবি রহ. এত বেশি পাঠদান করেছেন এবং কিতাব লিখেছেন যে, স্বীয় জীবদ্দশাতেই তাঁর ইলম ও জ্ঞানের প্রচার-প্রসার এবং সুখ্যাতি পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি ‘খিলআতে মুজাদ্দিদিয়তে’র মুকুট তাঁর মাথায় রাখা হয়।
তিনি সব বিষয়ে পাণ্ডিত্য রাখতেন। সকল ইলমের ক্ষেত্রে তিনি সনদের পর্যায়ে ছিলেন। ইলমে হাদিস হোক কিংবা ইলমে সনদ ও আসমায়ে রিজাল, ইলমে তাফসির হোক অথবা ইলমে ফিক্হ ও ফাতাওয়া, দর্শন কিংবা রিয়াজি ও হায়আতÑ মোটকথা এসব বিষয়ে তাঁর লিখিত বিভিন্ন কিতাবাদি তাঁর ইলমি প্রশস্ততার উৎকৃষ্ট প্রমাণ। তিনি কিতাআদির একটি বিরাট ও মূল্যবান ভাণ্ডার রেখে গেছেন। তাঁকে যদি অধিক গ্রন্থ রচনার ক্ষেত্রে আল্লামা ইবনে জারির তাবারি, ইবনুল জাওযিয়্যাহ, ফখরুদ্দিন রাযি এবং আল্লামা সুয়ুতি রহ. প্রমুখ পূর্ববর্তী খ্যাতনামা আলেমদের সমমর্যাদাসম্পন্ন আখ্যায়িত করা হয়, তাহলে নিশ্চিত তা যথোপযুক্ত, সঙ্গত ও মুনাসিব হবে। কেননা, তাঁর জীবনীকারগণ বলেন, যদি তাঁর লিখিত গ্রন্থের পৃষ্ঠাকে তাঁর জীবনের দিনসমূহের ওপর বণ্টন করা হয়, তাহলে জীবনের দিনের চেয়ে গ্রন্থের পৃষ্ঠা পরিমাণে অনেক বেশি হয়।
শায়েখ জাকারিয়া রহ. এর ভাবশিষ্য, জামিআ মাজাহিরুল উলুম সাহারানপুরের শায়খুল হাদিস আল্লামা শায়েখ ইউনুস রহ. আল্লামা লখনোবির উচ্চকিত প্রশংসা করে বলেন : ‘তিনি যদি ভারতের পরিবর্তে মিসরে জন্মগ্রহণ করতেন, তবে তাঁর সুখ্যাতি ও প্রসিদ্ধি আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানির চেয়ে কোনো অংশে কম হতো না।’
মুহাদ্দিসুল আসর শায়েখ আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রহ. এর ভাষ্যমতে, অধিক গ্রন্থপ্রণেতাদের আলোচনা আসলেÑ যাদের গ্রন্থ পঞ্চাশটিরও বেশিÑ আল্লামা লখনোবিকে রহ. নির্দ্বিধায় ও বিনাবাক্যে প্রথম সারিতে স্থান দেওয়া যাবে।
‘আহওয়ালে ওলামা ফিরিঙ্গি মহল্লি’তে তাঁর লিখিত কিতাবাদির সংখ্যা মোট ৯৫টি বলা হয়েছে। ‘সাওয়ানেহে আখে মুআজ্জমে’ সর্বমোট গ্রন্থ ১০৮টি উল্লেখ আছে। শায়েখ আল্লামা আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রহ. অতিরিক্ত গবেষণা, অনুসন্ধান ও যাচাই-বাছাইয়ের পর এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, তাঁর গ্রন্থের সংখ্যা ১২০টি। যদি তাঁর অল্প বয়সের [৩৯] প্রতি দৃষ্টিপাত করা হয়, তাহলে এই সংখ্যা অত্যধিক বেশি মনে হয়। এই বিপুল পরিমাণ গ্রন্থ কেবল তাঁর কয়েক বছরের প্রচেষ্টার ফল। কেননা, খুব অল্প বয়সেই তিনি গ্রন্থ রচনা শুরু করেছিলেন এবং জীবনের শেষ বিকেল পর্যন্ত এই খেদমত আঞ্জাম দিয়ে যান।
এ হিসেবে আশ্চর্য মনে হয় যে, তাঁর ব্যস্ততা শুধু বই লেখা ও গ্রন্থ রচনাই ছিল না, বরং দরস-তাদরিস, পারিবারিক কাজ, ওয়াজ-নসিহত এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা, নিত্যনতুন মাসায়েলের সমাধান, বিরোধপূর্ণ বিষয়ে মীমাংসা প্রদান এবং কঠিন, বিদঘুটে মাসায়েলের উত্তর দেওয়াও তাঁর কাজ ছিল; অথচ এসব কাজের জন্য পৃথক ব্যক্তির প্রয়োজন। কিন্তু আল্লামা লখনোবি এ সকল দায়িত্ব ও কাজ একাই অত্যন্ত দক্ষতা, বিচক্ষণতা ও নৈপুণ্যতার সাথে আঞ্জাম দিয়েছেন। পাশাপাশি এসব অমূল্য গ্রন্থ রচনা করে গেছেন, কাল যার দৃষ্টান্ত পেশ করতে অক্ষম।
ايں سعادت بزور بازو نيست يختص برحمته من يشاء
-এই সৌভাগ্য গায়ের জোরে লাভ করা যায় না, একমাত্র খোদা তাআলার অনুগ্রহ বৈ কিছু নয়।
অতি অল্প বয়সেই তিনি গ্রন্থ রচনার এই কঠিন কাজ শুরু করেছিলেন। তাঁর সব কিতাবই অত্যন্ত মূল্যবান ও ইলমি মণিমুক্তায় ভরপুর। যৌবনের শুরুতেই সম্ভবত সর্বপ্রথম তিনি زجر الشبان و الشيبة عن ارتكاب الغيبة গিবতের বিষয়ে একটি বিস্তারিত ও প্রামাণ্য গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর আরো গ্রন্থ :
عمدة الرعاية حاشية شرح الوقاية. الرفع والتكميل فى الجرح التعديل. القول الجازم فى سقوط الحد بنكاح المحارم. النافع الكبير لمن يطالع جامع الصغير. الفوائد البهية فى تراجم الحنفية. امام الكلام فيما يتعلق بالقراءة خلف الامام. زجر الناس على انكار اثر ابن عباس. دافع الوسواس فى اثر ابن عياس. الاثار المرفوعة فى الاخبار الموضوعة. القنطرة فى احكام البسملة. تحفة الاخيار فى احياء سنة سيد الابرار. الكلام المبرور فى رد القول المنصور. ابراز الغى. تذكرة الراشد. اقامة الحجة على ان الاكثار فى التعبد ليس ببدعة. السعاية فى كشف ما فى شرح الوقاية.
ইত্যাদি বিশ্ববিখ্যাত ও দরকারি গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর লিখিত কিতাবাদির মধ্যে তাঁর মূল্যবান ফাতাওয়া যা ‘মাজমুআয়ে ফাতাওয়া’ নামে প্রকাশ পেয়েছে; এবং ফাতাওয়ার অন্য কিতাব نفع المفتى والسائل بجمع متفرقات المسائل একটি মূল্যবান ইলমি খাযানাও বটে, এবং গ্রন্থকার অতল নদীতে ডুব দিয়ে সেসব হীরা, মণি-মুক্তা ও জওহর খোঁজে এনেছেন, যা কেয়ামত পর্যন্ত ইলমি দুনিয়ায় একটি বিশেষ মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্যম-িত স্থান দখল করে রাখবে। শাখাগত ও বিক্ষিপ্ত দীনি মাসায়েল সম্পর্কে তাঁর এই তাহকিকি ও ইলমি চয়নিত সঙ্কলন, তাঁর ফেকহি দূরদর্শিতা, পা-িত্য এবং গভীর বুঝশক্তির ওপর প্রমাণ বহন করে। লেখক কাগজের পৃষ্ঠায় বিক্ষিপ্ত মোতিকে একটি দৃষ্টিনন্দন মালায় গেঁথে দিয়েছেন। ইলমি ও তাৎপর্যপূর্ণতা এবং বিষয়বস্তুর বিচারে ‘অল্প স্থানে বেশি বিষয়ের সংস্থান’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া যায়।
মোটকথা, ক্ষণজন্মা এই মহামনীষী স্বীয় জিন্দেগি দীন এবং খেদমতে খালকের নিমিত্তে উৎসর্গ করে অস্থায়ী নিবাস থেকে চিরস্থায়ী নিবাসের পথে পাড়ি জমান।
شادم از زندگى خويش كه كارے كردم
মৃত্যু : কালজয়ী এই মহাপুরুষ মাত্র ঊনচল্লিশ বছর বয়সে এই দুনিয়াকে বিদায় জানান। ১৯ রবিউল আউয়াল, ১৩০৪ হিজরি মোতাবেক ১৮৮৬ খৃস্টাব্দের শনিবার দিন লখনোতে ইনতেকাল করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
মানুষ মরণশীল। আগের কেউ নেই, এখন যারা আছে একসময় তারাও কেউ থাকবে না। থাকবে না আগামী প্রজন্মের কেউই। তবু কোনো কোনো মরণ সৃষ্টি করে অসীম শূন্যতা, বয়ে আনে এমন ক্ষতি, যা অপূরণীয়। আল্লামা লখনোবির মরণে সৃষ্টি হল তেমন শূন্যতার, তেমন ক্ষতির।
সাইয়েদ আবদুল আলি শারফি পঙ্ক্তিতে তাঁর মৃত্যুতারিখ উল্লেখ করেন :
ها ۓ مولانا محمد عبدالحى شادر در خلد از ميان ما برفت
آستائش سجده گاه خلق بود قبلۀ هندوستان ما برفت
گفت شرعى مصرعه سال وفات داى استاذ زمان ما برفت
এবং মৌলবি মুহাম্মদ সাইদ আজিমাবাদি তাঁর মৃত্যুর সন এভাবে বের করেন :
كرد رحلت جناب عبدالحى فاضل لكنونى فطين و ذكى
گفت سال وفات او حسرت شد فرنى محل ز علم تهى
আল্লাহ তাআলার দরবারে প্রার্থনা, আকাবিরে ওলামাদের ইলমি খেদমত কবুল করে আমাদের সবার নাজাতের ওসিলা বানিয়ে দেন; এবং তিনি যেন কেয়ামত পর্যন্ত এই দীন-ইসলামের সাহায্যকারী ও মদতগার হন। আর আল্লামা লখনোবি রহ. এর কবরকে করুন নুরে রহমতে পূর্ণ, করুণা ও কল্যাণশিশিরে সিক্ত। আমিন।