মঙ্গলবার, ৩১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৬ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

বাতিল সব কিছু মাকড়সার জালের মত – তারাবীহ ১৭তম পাঠ

This entry is part [part not set] of 27 in the series দরসে তারাবীহ


আজ ১৭তম তারাবিতে সূরা নামল (৬০-৯৩), সূরা কাসাস এবং সূরা আনকাবুত (১-৪৪) পড়া হবে। পারা হিসেবে আজ পড়া হবে ২০তম পারা।

২৭. সূরা নামল: (৬০-৯৩) পারার শুরুতে আল্লাহপাকের কুদরত ও একত্ববাদ প্রসঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। আল্লাহ সেই মহান সত্তা, যিনি আসমান-জমিন সৃষ্টি করেছেন, আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং বৃষ্টি দিয়ে সবুজ-শ্যামল সুন্দর নয়নাভিরাম বাগবাগিচা সাজান। তিনি বিশাল বিশাল পাহাড় স্থাপন করেছেন, মিঠা পানি আর লবণাক্ত পানি যাতে একসঙ্গে মিশে না যায়, সেজন্য উভয় দরিয়ার মাঝে এক কুদরতি পার্থক্যরেখা সৃষ্টি করেছেন। অসহায় অবস্থায়, দুঃখকষ্টের সময় এবং অসুস্থতার মুহূর্তে তিনিই সাড়া দেন অসহায়-নিরুপায় বান্দার ডাকে। গভীর অন্ধকারে জলে-স্থলে তিনিই দেন পথের দিশা। বৃষ্টি বর্ষণের আগ মুহূর্তে তিনি শীতল ঠান্ডা বাতাস প্রবাহিত করেন। এ মহান সত্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনই মানুষকে সৃষ্টি করেছেন, তাকে আসমান জমিন থেকে রিজিক দান করছেন আবার পুনরায় জীবিত দান করবেন। (৬০-৬৬)।

মহান আল্লাহর কুদরতের এত নিশান দেখার পর শুধু নিরেট মূর্খরাই পারে আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করতে। এরপর মৃত্যু-পরবর্তী জীবন প্রসঙ্গে আলোকপাত করা হয়েছে। কেয়ামতের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। সূরার শুরুতে কোরআনের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছিল, আর শেষে বলা হচ্ছে কোরআন কারিমের শিক্ষা মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরার মাঝেই রয়েছে মানবজীবনের চরম সফলতা এবং পরম সৌভাগ্য।

২৮. সূরা কাসাস: (মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ৮৮, রুকু ৯)

পবিত্র কোরআনের সত্যতার বর্ণনা দিয়ে সূরাটির সূচনা। এরপর সূরায় বিস্তারিতভাবে মুসা (আ.) ও ফেরাউনের আলোচনা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে এখানে যেসব বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে, সেগুলো হল, মুসা (আ.) এর জন্মের সময় বনি ইসরাইলের প্রতি ফেরাউনের নিষ্ঠুরতা, শিশু মুসাকে আল্লাহর আদেশে দরিয়ায় নিক্ষেপ, শত্রুর ঘরে অথচ মায়ের কোলে লালনপালন, যৌবনে পদার্পণ, মুসার হাতে জনৈক কিবতির হত্যা, মাদয়ানে গমন, শুআইব (আ.) এর কন্যাকে বিবাহ, নবুয়ত ও মোজেজা লাভ, মুসার বিরোধিতার জন্য ফেরাউনের নির্দেশে হামান কর্তৃক প্রাসাদ তৈরি, ফেরাউন ও তার দলবলের পরিণতি। মুসা (আ.) এর ঘটনা এবং ফেরাউনের অশুভ পরিণতির আলোচনার পরে মক্কাবাসীকে সতর্ক করা হয়েছে। (৩-৫১)।

আরো পড়ুন: এবারের রমজান মুসলমানদের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ: মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক

পূর্ববর্তী আসমানি কিতাবপ্রাপ্তদের মধ্যে যারা কোরআনের প্রতি ঈমান আনে তাদের প্রশংসা করা হয়েছে। পার্থিব ধনসম্পত্তির ধোঁকা থেকে বেঁচে থাকতে বলা হয়েছে। সূরার ৫৬ নম্বর আয়াতে নবীজিকে লক্ষ করে বলা হয়েছে, আপনি যাকে পছন্দ করেন তাকেই হেদায়েত দিতে পারবেন না, বরং আল্লাহ যাকে খুশি তাকে হেদায়েত দেন। হেদায়েত শুধু আল্লাহর হাতে।

এরপর মহান আল্লাহর অসীম কুদরত ও ক্ষমতার বিবরণ দেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গক্রমে ফেরাউনের মতো আরেক দাম্ভিক ও অবাধ্য ব্যক্তির আলোচনা করা হয়েছে। তার নাম কারুন। কারুন এত বেশি সম্পদের অধিকারী ছিল যে, তার ধনভা-ারের শুধু চাবিগুলো বহন করার জন্যই বিশাল একটি শক্তিশালী দলের প্রয়োজন পড়ত। সম্পদের প্রাচুর্য তাকে ধোঁকায় ফেলে দিয়েছিল। মুসা (আ.) তাকে বোঝালেন, সম্পদের বড়াই করো না। আল্লাহ অহংকারীদের পছন্দ করেন না। আল্লাহ যেমন তোমার প্রতি দয়া করেছেন তুমিও আল্লাহর বান্দাদের প্রতি দয়া কর। কিন্তু উপদেশ-বাণী কারুন শুনত না। সে বলত, আমি নিজ মেধা-বুদ্ধি দিয়ে এ সম্পদ কামাই করেছি। প্রত্যেক যুগের মূর্খ সম্পদশালীরা এ উত্তরই দিয়ে থাকে। দুনিয়ালোভী লোকরা যখন কারুনের ধনসম্পদ দেখত, তখন তাদের জিভে পানি চলে আসত। তারা কারুনের মতো সম্পদশালী হওয়ার কামনা করত। কিন্তু অবশেষে আল্লাহ তায়ালা কারুনকে তার বাড়িঘরসহ জমিনে ধসিয়ে দেন। আল্লাহর এ শাস্তি তৎকালীন সম্পদ পূজারিদের চোখ খুলে দিয়েছিল। তারা স্বীকার করেছিল, যদি আল্লাহ আমাদের ওপর দয়া না করতেন, তাহলে আমরাও ধসে যেতাম। (৭৬-৮২)।

আরো পড়ুন: টিভির লাইভে ইমামের অনুসরণে তারাবি, কী বলছেন ইসলামী চিন্তাবিদরা!

সূরাটির শেষ আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ ছাড়া বাকি সবকিছু ধ্বংসশীল, তাঁরই হুকুম চলবে, আর তোমাদেরকে তাঁরই কাছে ফিরে যেতে হবে।’

২৯. সূরা আনকাবুত: (মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ৬৯, রুকু ৭)

এ সূরার আলোচ্য বিষয় তাওহিদ, রিসালাত ও আখেরাত। মক্কি জীবনে মুসলমানদের একের পর এক জুলুম, অত্যাচার ও বিপদাপদের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। এক পর্যায়ে মুসলমানরা ঘাবড়ে যায়। তাদের সান্ত¡না দিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ঈমানদারদের পরীক্ষা করা আল্লাহ তায়ালার প্রাচীন রীতি, যেন সত্য ও মিথ্যার মাঝে এবং মোমিন ও মোনাফেকের মাঝে পার্থক্য হয়ে যায়। ঈমানদারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কঠিন পরীক্ষা হয়েছে নবীদের, এজন্য সূরায় নুহ, ইবরাহিম, লুত, শুআইব, হুদ ও সালেহ আলাইহিমুস সালামের কাহিনি সংক্ষিপ্তাকারে উল্লেখ করা হয়েছে। যেন ঈমানদার ব্যক্তি বুঝে নেয়, সত্যপন্থিদের পরীক্ষা আসে; কিন্তু সেটা দীর্ঘস্থায়ী হয় না। হকপন্থিরাই শেষ পর্যন্ত বিজয়মাল্য পরিধান করেন, আর তাদের বিরোধীদের পরিণাম হয় কেবল ধ্বংস ও বিনাশ।

আরো পড়ুন: ১৬তম তারাবি: রহমানের বান্দা যারা

পারার শেষে মোশরেকদের দেব-প্রতিমা এবং মূর্তিগুলোকে ‘আনকাবুত’ তথা মাকড়সার জালের সঙ্গে উপমা দেওয়া হয়েছে। মাকড়সার জাল যেমন দুর্বল, মোশরেকদের দেব-প্রতিমাও তেমনি দুর্বল, না কোনো ক্ষতি থেকে বাঁচাতে পারে, আর না কোনো উপকার পৌঁছাতে পারে।

লেখক: ইমাম ও খতিব, বুয়েট কেন্দ্রীয় মসজিদ।

লেখক:মাওলানা রাশেদুর রহমান ।। পেশ ইমাম ও খতীব, কেন্দ্রীয় মসজিদ, বুয়েট

Series Navigation

Archives

May 2024
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031